বেজান শহর, ইট পাথর
তৃষ্ণা মেটায়, ভিজিয়ে কাঁকর।
অবাক জ্যোৎস্না, চায়ের কাপে
হৃদ মাজারে, দুঃখ মাপে।
তবুও চুমুক, আলোর মিছিল
মন এখানে, শান্ত শিথিল।
ভুলের পথে, মুচকি হাসে
উড়ছে ঘুড়ী, কার আকাশে?
মুখের মাঝে, মুখোশ আঁকে,
পথের ধারে, প্রতি বাঁকে!
জ্যোৎস্না বিলাশ, মেকির ফাঁদে
মিথ্যে রাজাই, দেখিয়ে কাঁদে!!
হাঁ বন্ধু-স্বজনরা, মিথ্যে রাজাই দেখিয়ে কাঁদে! কি অবাক তাই না? গত দুদিন ধরে, সন্ধ্যা থেকে আজ এই নিশিথী রাত পর্যন্ত, যখন নিউজ রুমে বসে দেখছি, কিংবা ব্রেকিং নিউজ আসছে একের পর একঃ সেই সাথে আমাদের একেকজনের বুকে কষ্টের পাহাড় জমছে। কি দেখছি আমরা। এইটাই কি হবার কথা ছিল ত্রিশ লক্ষ মা বোন আর শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের এই প্রানের বাংলাদেশ এবং তার মাটিতে। না ছিল না! কিন্তু তাই হয়ে চলেছে! কি অপরাধ ছিল শিশু রাজনের কিংবা সামান্য এক যাকাতের বস্ত্রো নিতে আসা মানুষগুলোর। একটু চিন্তা করে দেখুন যারা নিশংস ভাবে হত্যা করছে একটি ছোট্ট ছেলেকে, আবার ভিডিও করছে। একবারো কি এই নরপিশাচদের আশেপাশের মানুষগুলোর মনে হয়নি এদের বাধা দিতে, ৪ ঘন্টা একটা বাচ্চাকে আঘাতের পর আঘাতে ক্ষতবিক্ষত করে মৃত্যুর কোলে ঠেলে দিচ্ছে আর পাশে দাঁড়িয়ে কিংবা দূরে থেকে লোকালয়ের মানুষ মজা দেখেছে, তাই তারাও অপরাধী আমার কাছে। তবে আজ বোঝা কিছুটা হালকা হচ্ছে, রাজনের হত্যাকারী প্রধান আসামীদের ধরা হয়েছে। তার মধ্যে একজনকে ধরা হয়েছে জেদ্দায়, সেখানে বাংলাদেশের প্রবাসিরা তাকে ধরেছেন, আমাদের জেদ্দা প্রবাসী বাঙ্গালীদের অভিবাদন, অন্তত বিদেশ থেকেও বাঙ্গালীর আসল পরিচিয় ভুলেন নি, ভুলেননি অন্যায় এবং অন্যায়কারীকে বাধা দিতে হয়, আর আমরা আশায় বুক বাঁধতে পারি যে এদের যথাযথ শাস্তি হবে, এই সব ক্ষেত্রে আসামী ধরা পড়ার পরও, তাদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির ব্যাপারে, যত বার আমরা সমীকরনের সুত্র মিলাতে গেছি, উত্তর হিসেবে একটি প্রশ্নই বার বার এসেছে সমাপ্তিতেঃ আসলেই কি হবে?
এই তো গেল এক প্রসঙ্গ, এবার অন্য এক প্রসঙ্গে আসিঃ আর সেটা হল যাকাতের কাপড় দেওয়ার নামে মিথ্যে রাজা সাজা কিছু মানুষের গল্পেঃ একটু চিন্তা করে দেখুন সামান্য একটি বস্ত্রের জন্য পদদলিত হচ্ছে কিছু শরীর আর একটি একটি করে চলে গেল ২৭ টি প্রান! আর তখন থেকেই শুধু আমার মনের কোনে একটি কথাই ধ্বনিত, প্রতিধ্বনিত হচ্ছে, কবির মত(তবে একটু ভিন্ন শব্দে)র সংযোগেঃ ওরাও অ-মানুষ, তারাও অ-মানুষ, তফাত শুধু কাজের ধারায়!!
আমার ক্ষুদ্র ধর্মীয় জ্ঞানে, আমি কোথাও পাইনে যে (কোরআন, হাদিস, কোথাও না), এভাবে মাইকিং করে, পোষ্টার ছাপিয়ে লোক জড়ো করে একরকম মৃত্যু ফাঁদ তৈরি করে যাকাত দেওয়ার কোন কথা বলা আছে। কিন্তু বাংলাদেশে এখন ক্ষমতা আর লোক দেখানো সংস্কৃতি, এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে, আজ তথাকথিত মিথ্যে রাজাদের ঐতিহ্যে পরিনত হয়েছে। কি বিচিত্র এই দেশ আমাদের, ধর্ম নিয়ে ব্যাবসা চলছে তো চলছেই!! কিন্তু আর কত? আমাদের কি জেগে উঠার সময় হয়নি? প্রশ্নগুলো সবার কাছে রেখে গেলাম।
বিশেষ সংবাদঃ যে সংবাদটি গতকাল একটু চাপা পড়ে ছিল, আর তা হল, ফেলানী হত্যা নিয়ে ভারতের আদালতে এমেনেষ্টি ইন্টারন্যাশনালের রিটের বিষয়টিঃ এমেনেষ্টি ইন্টারন্যাশনাল গতকাল ভারতের আদালতে চারটি বিষয়কে সংযুক্ত করে একটি রিট দাখিল করে, যেখানে বলা হয়ঃ ফেলানী হত্যা আন্তরজাতিক আইন, মানবাধিকার, জেনাভা কনভেনশন বিরোধী এবং বিচারের নামে প্রহসন করা হয়েছে। এতে জেনাভা কনভেনশনের ২ টি ধারা ৮ এবং ২৯ উল্ল্যেখ করা হয়। এখন আমরা অপেক্ষা করি কি হয় দেখার জন্য। আশাকরি এবার বিচার সঠিক বিচার পাবো আমরা, আর আমাদের লিখতে হবেনা আক্ষেপ করেঃ
সেখানে তোমার লাশ,
শুধু ঝুলে নেই,
ঝুলছে বাঙ্গালী, বাংলাদেশ!
এক মায়ের চোখের জলে,
ভিজে গেছে মানচিত্র,
একাকার স্রোতস্বিনী জন্মভূমি।
ফেলানী সে আমাদের ফেলানী।
সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। সামাজিক ভাবে আমাদের মানবতা বোধ জাগ্রত হোক।
সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা।
২২টি মন্তব্য
স্বপ্ন
গত দুদিন যাবত শিশু রাজনের মুখটি সরাতে পারছি না চোখের সামনে থেকে।এর পূর্বে যাকাত প্রদানের নামে মানুষ হত্যা।মানবতা আজ প্রশ্নের সম্মুখীন।ভালো লাগছেনা কিছুই ভাইয়া।
সীমান্ত উন্মাদ
দুঃখজনক হলেও সত্যি যে মানবতা শুধু আজ না গত কয়েক দশক ধরেই প্রশ্নের সম্মুখীন। তবুও আমাদের এগিয়ে যেতে হবে, খুঁজে বের করতে হবে আসল উত্তর কারন দিনের শেষে ে দেশটাতো আমাদেরই।
অনেক অনেক ধন্যবাদ এবং শভকামনা থাকলো আপনার জন্য।
ছাইরাছ হেলাল
এখানে এই প্রথমবার এমন নৃশংসতা তা কিন্তু না। আগের গুলো আমাদের মনে নেই।
কেউ সাজা পেয়েছিল কিনা জানিও না। এমনটি এবারে না ঘটুক সেটিই আমরা চাই। হত্যার সাথে জড়িত সবাই যেন
বিচারের আওতায় আসে তা দেখার অপেক্ষায় আছি। যদিও কী দেখব জানি না।
সীমান্ত উন্মাদ
না আগের অনেক গুলোরই এখনো সাজা হয় নাই। তবুও রাজনের বিষয়টা আমাদের মনে দাগ ফেলেছে কারন আগের ঘটে যাওয়া ঘটনার ঘটার সময়কালের নিঃসংশয়তা আমরা দেখতে পাইনি, পেয়েছি হয়ত ক্ষত বিক্ষত লাশ। কিন্তু এযে রাজনের প্রতি যে বর্বরতা করা হয়েছে তা দেখতে পেয়েছি আমরা ঘটনা ঘটার সময়কালে। তবে আজকে যাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ তাকে তার বাবা ধরিয়ে দিয়েছে, এই পিশাচ নিসংশয়তার ভিডিও করেছে। তাই। হা আমরা প্রত্যেকে চাই সমস্ত নিশংসতার বিচার হোক যথা সময়ে।
অনেক অনেক ধন্যবাদ এবং শুভকামনা আপনার জন্য।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
তিনটি গুরুত্ত্বপূূর্ণ বিষয় তুলে ধরেছেন,,,,যা মর্মস্পী -{@ দেখি কি হয়।
সীমান্ত উন্মাদ
শুধু দেখলে হবেনা আলোচনায়ও রাখতে হবে মনির ভাই। আমরা ভুলে গেলে প্রশাসনও ভুলে যাবে।
অনেক অনেক শুভকামনা আপনার জন্য মনির ভাই।
আর্বনীল
রাজন হত্যার মত ঘটনা আমাদের দেশে হরহামেশাই ঘটছে। কিছু আমাদের চোখে পড়ছে। কিছু পড়ছে না। আর কিছু কিছু চোখে পড়লেও না দেখার মত এড়িয়ে যাওয়া হয়…
যাইহোক, সুন্দর লিখেছেন… সাথে কবিতা দুইটা বেশী জোশ! (y)
সীমান্ত উন্মাদ
আমার প্রশ্ন সেখানেই কেন এই এড়িয়ে যাওয়া। কেন মুখ ফিরিয়ে নেওয়া। কিছু হবে না বলে সবাই যদি বসেই থাকে ঘরে কিংবা ব্যাস্ত থাকে নিজেকে নিয়ে তাহলে দায়িত্বপ্রাপ্ত থেকে শুরু করে সবাই আরো সুযোগ পাবে। হরহামেশা ঘটছে বলেই মেনে নিতে হবে ভাই। কেন? যার যার যায়গা থেকে কেন সব সময় সোচ্চার থাকিনা আমরা। আমরা সাধারন মানুষ যারা সংখ্যায় বেশি তারাই ভুলে যাই,আর কাজের দায়ভার যাদের উপর তারা সে দায়ভার এড়াতে ভুলতে চাইবে আরো আগেই।
অনেক অনেক শুভকামনা আপনার জন্য।
জিসান শা ইকরাম
আমাদের মানুষ হতে এখনো কয়েক শতাব্দি সময় লাগবে।
সীমান্ত উন্মাদ
সেটাই মনে হচ্ছে মামা। তবে আমি অনেক আশাবাদী তাই নিরাশ নই। একদিন পরিবর্তন আসবেই।
অনেক অনেক ধন্যবাদ এবং শুভকামনা নিরন্তর।
অনিকেত নন্দিনী
রাজন, যাকাত এবং ফেলানী – এই তিনটা এখনকার সবচেয়ে স্পর্শকাতর ইস্যু।
এক রাজনের অমন মৃত্যুতে টাকাওয়ালাদের কী আসে যায়? খুনীদের ধরা হলেই কী? রানাপ্লাজার মালিক রানা এখন কোথায় আছে জানেন?
যাকাত। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি। সুষ্ঠুভাবে যাকাত আদায় করা একটি উত্তম ইবাদত। আমাদের দেশে প্রাচীন জমিদারি ধাঁচে ঢ্যাঁড়া পিটিয়ে যে শাড়ি লুঙ্গি দেয়া হয় তার নাম কী? এইটা কি আদতে কোনো ইবাদতের আওতায় পড়ে? যারা এসব করছে তাদের কাছে যাকাত মানে কী? কমদামী নিকৃষ্ট মানের কিছু শাড়ি লুঙ্গির বিলি-বন্টন?
ফেলানী। হতভাগী মরেও যে উলটো হয়ে ঝুলে ছিলো তা কি মিথ্যা? মৃত্যুর (মৃত্যু না খুন?) পরেও একটা মেয়েকে এমন করে নাজেহাল করে এখন উলটোরথ চালানো হচ্ছে। দেখা যাক, কোথাকার পানি কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়।
আমাদের মানবতা জাগবে কবে?
সীমান্ত উন্মাদ
আমাদের মানবতা জাগবে হয়ত আগামীকালের কোন এক মুহূর্তে অথবা লেগে যেতে পারে কয়েক শতাব্দি তবুও আশা রাখি আশায় বুক বাঁধি।
অনেক অনেক শুভকামনা এবং ধন্যবাদ আপনাকে।
লীলাবতী
অবশ্য এক সময় এই সব ইস্যুতে মরিচা ধরবে এবং আমরা এসব ভুলে যাবো যেমন গিয়েছি অতীতে বহু কিছু বহুবার।
বিপন্ন মানবতা।
সীমান্ত উন্মাদ
আপু আপনার সাথে আমি একমত তবে আমার একটা কথা আছেঃ আমরা সাধারন মানুষরা সংখ্যায় অনেক বেশি, আর আমরা ভাবি আমাদের কথা কে শুনবে, এখানে আমার প্রশ্ন আমরা যদি একটা বিষয় নিয়ে সব সময় বলতে থাকি তবে তা এক সময় না এক সময় দায়িত্বপ্রাপ্তরা শুনতে এবং একশেন নিতে বাধ্য। দেখেন রাজনের ব্যাপারটা এই ভাবে প্রকাশিত হবার পর সবাই যখন এক সাথে বলা এবং প্রতিবাদ করা শুরু করছে তখন প্রশাসন বাধ্য হয়েছে খুনিদের তড়িৎগতিতে ধরতে। অথচ এমন অনেক ঘটনা আছে আমাদের চোখের সামনে কিংবা আমরা জানতে পেরেছি কিন্তু আমরা কেউ টু শব্দটি করিনি আর তাই বিচার তো দূরে থাক খুনিরা কিংবা নির্যাতন কারীরা পার পেয়ে গেছে। তাই নয় কি? তাই আসুন যততদিন কোন বিষয়ে সঠিক বিচার না পাই আমরা বলতে থাকি।
আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ এবং শুভকামনা।
ব্লগার সজীব
তিনটি ঘটনাই আমাদেরকে দুঃখের সাগরে নিমজ্জিত করে দেয় 🙁
সীমান্ত উন্মাদ
সেটাই। তবুও প্রতিবাদ চালিয়ে যেতে হবে আমাদের।
অনেক অনেক ধন্যবাদ এবং শুভকামনা সজীব ভাই।
শুন্য শুন্যালয়
আমার দেশটাতো সোনার দেশ। রাস্তায় একটা ছিনতাইকারী বা চোর ধরা পরলেও পুলিশে ধরিয়ে না দিয়ে আগে এলোপাতাড়ি কিছু নিজেরাই মেরে নেই। এই দৃশ্য দেখে রাস্তায় যখন একটা মেয়ে কাঁদলো তখন সেই মেয়েকে দেখে বাকি সবাই হাসলো। এটি আমার নিজের কথা বললাম।
দেখি কি হয়, আমরা শুধু দেখতেই তো জানি!!
কবিতাটা খুব সুন্দর হয়েছে উন্মাদ।
সীমান্ত উন্মাদ
সেটাই আমরা শুধু বন্ধু দেখতেই জানি, বলতে জানিনা, এখন থেকে হাজারো অট্টহাসির মধ্যে আমাদের বলতে জানতেও হবে।
তোমার জন্য সব সময়ই শুভকামনা থাকে।
নীলাঞ্জনা নীলা
আমাদের দেশের সবচেয়ে প্রধান সমস্যা একটাই, গর্জে বেশী কিন্তু বর্ষে কম। আর এমন চলে আসছে যখন থেকে খবর বুঝতে শিখেছি। কতো কতো ঘটনা। একসাথে এখন ঘোরপাক খাচ্ছে। একটারও বিচার হয়নি। পত্রিকার পাতায় কিছুদিন তোড়ঝোর, ব্রেকিং নিউজে শোরগোল। এইতো চলছে। এভাবেই চলে আসছে। যে দেশে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীদের শাস্তি পেতে এতোগুলো বছর লাগে, সে দেশে কি আশা করা যায়!
উন্মাদ তবে আপনার কবিতা দুটি মনের ভেতর স্থান করে নিলো। -{@
সীমান্ত উন্মাদ
আপনার কথাই ঠিক আমরা দুদিন শোরগোল করি তার পর ভুলে যাই। আপনার মন্তব্য পড়ে আমার একটা কবিতার কথা মনে পড়ে গেলঃ
স্তব্ধতার কোন ভাষা থেকেনা
ভালবাসার কোন ভাষা থাকেনা
দুঃখের কোন ভাষা থাকেনা
স্তব্ধাতা মাঝে মাঝে ছবি হয়ে ওঠে
ভালবাসা গান হয়ে ওঠে
দুঃখ কবিতা হয়ে ওঠে
কিন্তু প্রতিবাদ?? আপু একটা কথা বলেন তো আমাদের সাধারন মানুষদের প্রতিবাদ সব সময় প্রশ্নবোধক চিহ্নে থাকে কেন??
কবিতাগুলো ভালোলেগেছে যেনে ভাললাগলো।
আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা নিরন্তর।
মেহেরী তাজ
ভাইয়া পুরান টপিক। কি বলবো ভেবে পাচ্ছি না। কিচ্ছু বলতে চাই না।
ঈদ মোবারক ভাইয়া।
সীমান্ত উন্মাদ
এসব টপিক সমাধান না হওয়া পর্যন্ত পুরান হয় না।
আপনাকেও ঈদের শুভেচ্ছা