আমি সর্বদাই বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের অনুসারী।
তাই সাধু ও চলিতভাষা কখন কোথায় বসিবে তাহা নিয়া আজকাল চুকাইনা!
বরং সে কালো হোক আমি যে তাকে ভালোবাসিতে রাজী। যদি তার হৃদমন্দির সরল ও সুন্দর হয়।
তাহার পিতা কেরানি তবে কঠিন লোক।
তবুও তার পিতা আমাকে তাঁর একমাত্র কন্যার জামাতা করিতে চান। এছাড়া বহুটাকা দিবেন বলে আশ্বাসও দিয়েছেন। এতসব টাকাপয়সাতে যে আমার ইচ্ছে নেই। তা কী তার পিতা জানেন?
অবশেষে তাঁর মেয়ের সাথে আমার বাগদান ও সম্প্রদান হইয়াছে কোন এক শীতের রাত্রিতে।
মেয়ের গলায় একটা গোলাপের মাল্য ছাড়া পাঁচপদে কোন স্বর্ণ দিলেন না। এমনকি আমি তাঁহার কন্যার জামাতা হিসেবে হাতেরও আংটি পেলাম না।
কিন্তু আজও দ্বিরাগমনে যাওয়ার নিমন্ত্রণ দেন নাই তার পিতা। বলা যায় সদ্যজাত আমার শ্বশুর বড়ই কঠিন লোক। যে কিনা আজও তার একমাত্র মেয়ের জামাইকে নিমন্ত্রণ দিতে আগ্রহী নয়।
তার পিতা কঠিন বলে আমি কী আর কঠিন হইব?
আমার সহধর্মিণী তার পিতাকে দেখিবার জন্য অনেক কান্নাকাটি করিতে লাগিলো। আমি আর সহ্য না করতে পেরে তাকে নিয়ে চলিলাম শশুরালায়ে।
ঘরে পৌঁছাইবার পূর্বে আমাকে দেখিয়া শ্বশুরমশাই বলিয়া উঠিলেন বাবা তুমি কখন আমার মেয়েকে নিয়া বাড়ি চলিয়া যাইবে?
তাঁহার মেয়ে এমন কথাশুনে বলিয়া উঠিলো বাবা, এতদিন পর আপনার একমাত্র মেয়ের জামাই এসেছে। আর বাড়িতে এসেই তুমি এমন কথা বলিতেছ?
শ্বশুরমশাই তার আদরের একমাত্র মেয়েকে বলিলেন দেশে দুর্ভিক্ষ চলিতেছেরে মা। তাই জামাইকে আমি আমার বাড়িতে রাখিতে চাই না। বরং দুজনি আজ বৈকালে চলিয়া যাও।
যদ্যপি ঐদিন ছিলো অমাবস্যা।
কোন মেয়েই তার বাপের বাড়ি থেকে স্বামীকে সাথে নিয়ে বাড়ি ফিরে না। অদ্য বৈকালেই আমাদের বাড়ি ফিরিতে হইলো।
তবুও আমি রাগ করি নাই।
আমি তো জানিনা আমার শ্বশুরমশাই এত কঠিন লোক। কিন্তু তাঁহার মেয়ে কালো হলে কী হলো আমার মনের মত এক মানুষ পেয়েছি। তাই আমি আজ ধন্য তাহাকে নিয়া।
কোন এক বর্ষার ঘনঘটায় আমার শ্বশুরমশাইকে বঙ্কিমচন্দ্র আসিয়াও বুঝাইতে পারিলেন না।
আজও আমি তাঁহার কাছে বাংলায় ভাষায় হ য র ল ব রইয়া গেলাম। কিন্তু আমার শ্বশুর যে বাংলাভাষার প্রাচীনপন্থি লোক। তাই আর তিনি আমায় জামাই আদর করিতে চান না।
অবেশেষে আমিও একদিন বঙ্কিমচন্দ্রের অনুসারী হইয়া তাঁকে আমার শ্বশুরমশাইয়ের কথা বলিলাম।
বঙ্কিমবাবু আমায় বলিলেন দেখো প্রদীপ,তুমি তোমার শ্বশুরকে বরং ত্যাগ করিতে পারো!
তবে বাপের বাড়ি থেকে নিমন্ত্রণ আসিলে তাঁহার মেয়ে কৃষ্ণাকে পাঠাইয়ো।
আমি সানন্দে বঙ্কিমবাবুর কথা গ্রহণ করিলাম।
আজও কৃষ্ণার পিতা নিমন্ত্রণ পাঠাননি। এমনকি কৃষ্ণাও যাইতে চায় না তার বাপের বাড়ি।
আমি যে শ্বশুরবাড়ির নিমন্ত্রণ পাওয়ার আশায় আজও অপেক্ষায় থাকি। শুনেছি জামাই বৃদ্ধ হলে নাকি জামাই আদর ভাটা পড়ে যায়। তবে যাই হোক আমার শ্বশুরমশাই আজও বেঁচে আছেন।
.
অতঃপর আজ আমার গুরুদেব বঙ্কিমচন্দ্রের জন্মদিন।
তাই জন্মদিনে জানাই অগাধ শ্রদ্ধাঞ্জলি।
৩১টি মন্তব্য
নিরব সাগর
অসাধারণ দাদা।
নিরব সাগর
বঙ্কিমচন্দ্র এই পড়িতে পারিলে অনেক খুশি হইতেন।
নিরব সাগর
বঙ্কিমচন্দ্র ইহা পড়িতে পারিলে অনেক খুশি হইতেন।
প্রদীপ চক্রবর্তী
সাধুবাদ,দাদা।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
অসাধারণ সুন্দর লেখা। মনপ্রাণ জুড়িয়ে গেল। বুড়ো হলেও জামাই আদর কমে না দাদা। সঙ্গে আমাদের নিতে ভুলবেন না যেন। একরাশ শুভ কামনা রইল।
প্রদীপ চক্রবর্তী
জামাই নিমন্ত্রণ আসুক, আসলে যাবেন!
সাধুবাদ,দাদা।
ভালো থাকুন অনেক।
ফয়জুল মহী
অনিন্দ্য সুন্দর লেখনী ।
প্রদীপ চক্রবর্তী
সাধুবাদ,দাদা।
ভালো থাকুন অনেক।
ইঞ্জা
বেশ সাবলীল লেখা, জামাইরা সবসময় শ্বশুরালয়ে নিমন্ত্রণ পাওয়ার অপেক্ষায় থাকে কিন্তু শ্বশুর যদি কঠিন কৃপন হয় তাহলে তো নিমন্ত্রণ পাওয়া বৃথাই।
চমৎকার লিখেছেন দাদা।
প্রদীপ চক্রবর্তী
শ্বশুরমশাই বড়ই কঠিন লোক! তাই নিমন্ত্রণ পাওয়াটাই দূরের কথা।
সাধুবাদ,দাদা।
ভালো থাকুন অনেক।
ইঞ্জা
বুঝতে পেরেছি দাদা, শুভকামনা রইলো।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
দাদা আপনার ভাষা , শব্দের ব্যবহার অতুলনীয়। অনেককিছু শিখতে পারি নতুন নতুন শব্দের কারনে। এতো সুন্দর করে লিখেন যে বঙ্কিম বাবু বেঁচে থাকলে খুশী হতেন। ’ কিন্তু আজও দ্বিরাগমনে যাওয়ার নিমন্ত্রণ দেন নাই তার পিতা এটাই হবে মনে হয়! শ্রদ্ধাঞ্জলি বানান এটা হবে। শুভ কামনা রইলো
প্রদীপ চক্রবর্তী
সাধুবাদ,দিদি।
খেয়াল করি নি টাইপ মিস্টেক হয়ে গিয়েছে।
তৌহিদ
লেখা পড়িয়া হাসিতে হাসিতে আমি শেষ! তবে যতই যাই বলুন, জামাইরা শ্বশুর বাড়িতে যে আপ্যায়ন পায় একজন বৌ কিন্তু সে সমাদর পায়না। জামাইয়ের জন্য শুভকামনা।
বঙ্কিমচন্দ্রের লেখার ভক্ত আমিও। গল্পের মাঝে সেই ছায়াই খুঁজে পেলাম। তাঁর জন্য শ্রদ্ধাভরা ভালোবাসা।
আপনাকেও শুভকামনা দাদা।
প্রদীপ চক্রবর্তী
সাধুবাদ,দাদা।
ভালো থাকুন অনেক।
বন্যা লিপি
প্রথমে শিরোনাম পড়িয়া ভাবিলাম, হয়তোবা বঙ্কিমবাবুর কোনো হাসি- রসাত্মক কাহিনী জানিতে পাইবো, হা….কুষ্মান্ড কপাল! মাঝবরাবর আসিয়া বুঝিলাম, ইহা বঙ্কিমবাবুর রাখিয়া যাওয়া উত্তরাধিকার সুত্রের প্রদীপ বাবুর কেচ্ছা কাহিনী😊
তা দাদাভাই তুমি অতিশয় বিধিবিধান মোতাবেক এবং অতি পান্ডিত্য প্রয়োগে উপস্থাপনে সফল হইয়াছো , ইহা মন প্রাণ খুলিয়ক অবলীলায় বলিয়া গেলাম।
সাধু সাধু…..
প্রদীপ চক্রবর্তী
ইহা মনপ্রাণ খুলিয়া পড়িবার জন্য আপনাকে সাধুবাদ জানাচ্ছি, দিদি।
ভালো থাকুন অনেক।
সাবিনা ইয়াসমিন
শ্রদ্ধেয় লেখকের জন্মদিনে তার আত্মার প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলী জানাই।
রম্যরচনা পড়ে খুব সুন্দর হয়েছে প্রদীপ।
আরও লিখো।
শুভ কামনা 🌹🌹
প্রদীপ চক্রবর্তী
সাধুবাদ,দিদি।
ভালো থাকুন অনেক।
ইসিয়াক
ভালো লাগলো আপনার লেখা।
শুভকামনা প্রিয় দাদা।
প্রদীপ চক্রবর্তী
সাধুবাদ,দাদা।
ভালো থাকুন অনেক।
নিতাই বাবু
চমৎকার লিখেছেন দাদা। শুভকামনা থাকলো শ্রদ্ধেয় দাদা।
প্রদীপ চক্রবর্তী
সাধুবাদ শ্রদ্ধেয় দাদা।
ভালো থাকুন অনেক।
পার্থ সারথি পোদ্দার
বা!বা! চমৎকার! খুবই ভালো লাগল জামাই-শশুরের এই সম্পর্ক রসায়নের নতুন মাত্রা দেখে!শুভ কামনা রইল,প্রিয়জন।
প্রদীপ চক্রবর্তী
সাধুবাদ,দাদা।
ভালো থাকুন অনেক।
জিসান শা ইকরাম
নিমন্ত্রনের জন্য কতকাল অপেক্ষা করতে হয় কে জানে!
সাহিত্যিক বঙ্কিমচন্দ্রের জন্মদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলী।
শুভ কামনা।
প্রদীপ চক্রবর্তী
সাধুবাদ,দাদা।
ভালো থাকুন অনেক।
আরজু মুক্তা
আমি লাঠি হস্ত আসিতে রাজি!
দাওয়াত দিবেনা মানে?
এমন কিপটে শ্বশুর!! দাওয়াত দিবেও না, নিবেও না।
হা হা হা
প্রদীপ চক্রবর্তী
হা হা হা
কপালটা খারাপ কিপটে শ্বশুর পেলাম😭
.
যদিও কোনদিন দাওয়াত পাই তাহলে নিশ্চয় নেবো দিদি।
হালিম নজরুল
হা হা হা
জামাই তাড়ানোর মন্ত্র শিখলাম
প্রদীপ চক্রবর্তী
হাহাহা😂
আজকাল এমন শ্বশুর অনেক কম দাদা।
নেই বললে চলে।