
বয়স যত বাড়ছে, নানা সমস্যায় জড়িয়ে যাচ্ছে শরীর। মধ্যরাতে হঠাৎ হঠাৎ ঘুম উধাও; বুক ধড়ফড়,পানির পিপাসা। সব করার পর, চোখজোড়া একেবারে ঝরঝরে। গল্পে মজতে মন চায় কিন্তু মানুষ কই? সব ঘুমায়। অগত্যা সঙ্গের সাথী মোবাইল ফোন আর সারাক্ষন যার দূর্নাম করি সেই ফেসবুক, ইউটিউব, ম্যাসেঞ্জারই গতি। লাউয়ের ছালও ফেলনা নয়, অতি স্বাদের” কদিন আগেই ভর্তা খেয়ে জানলাম। তেমনি ফেসবুকও নির্ঘুম রাতে অতি স্বাদের! “এটা হল কাম নাই তো ছবি দিয়ে ভরিয়ে খই ভাজ।”ঈদানিং আমিও বেশ খই ভাজছি। মজাই লাগে।🤪🤪
মধ্যরাতে মাঝেমাঝে দেশী শীতকালীন সবজি ফেনাতোলা, ধোয়াতোলা, গা গরম ওয়াজ শুনি। সেগুলো কেমন জানেন? এমন, “এই ভাইয়েরা আমার শুনে রাখেন, এই হুমায়ূন আহমেদ সেক্সের ওষুধ খেয়ে যখন মরে গেল,মাটিও তারে জায়গা দিলনা। শেষ সময়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজেও জায়গা হলনা। পরে বোধহয় লাশ ফেলে দিয়েছে কারন কুকুর বিড়ালেও খায় নাই।”
ও মোর আল্লাহ! কয় কি? এই শীতে আরও একজগ পানি খেতে হবে। কত গাধা আমি জানতামই না। যা হোক এমন অজানা তথ্য জানার পর গায়ে,হাতে-পায়ে হাত বুলাই আমি কি বেঁচে আছি? তাহলে সেদিনটা কি ছিল? যেদিন বাইরে ঝুম বৃষ্টি, সারাদিন টিভির সামনে বসে ছিলাম, অফিস বাদ দিয়ে আমার প্রিয় লেখকের মাটি দেয়া দেখবার আশায়। কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছিল নতুন বই, নতুন লেখার গন্ধ পাবনা এই ভেবে।
বিরক্ত হয়ে সার্চ দিয়ে পেলাম “মওলানা তারিক জামিল” সাহেবের ওয়াজ। ভালো লাগে শুনতে, প্রান জুড়িয়ে যায়। অসাধারণ, সুমধুর, সত্যবাণী মন ভরিয়ে দেয়। অজানাকে পূর্ণ করে। নেই চিৎকার, নেই শোরগোল, নেই মিথ্যা, ভুয়ামী কিংবা ধান্দাবাজি।🥰🥰
মনের ভেতর লেখক হবার অদম্য বাসনা। তো জেনেছি ভালো লেখক হতে অনেক পড়তে হয়। মন যতোই চায়না কেন সংসার সময় দিতে নারাজ। বই নিয়ে বসার মত সময় সে দিতে পারবে না এমনটাই বলে। আর এই মধ্যরাতে বই পড়ার মুড কি আসবে? অগত্যা ফোনই গতি। বাংলা ব্লগে পড়ি। ফোন ঘেঁটে ঘুটে আর কতটাই বা পড়া যায়। তবে কিছু মানুষের লেখা পড়তে অসম্ভব ভালো লাগে। মনে হয় ইশ্ আমি যদি এমন লিখতে পারতাম। কিন্তু এরা শুধু ফেসবুকেই লেখে।
পড়লাম অসাধারণ একটি পোস্ট , যেটি সমসাময়িক খুবই গুরুত্বপূর্ন। যিনি লিখেছেন তিনি আমার খুব পরিচিত না, তারপরও কমেন্ট করে দিলাম। সাথে সাথেই ধন্যবাদ জানালেন। মেসেন্জারেও ধন্যবাদ দিলেন। আমিও সাদরে গ্রহণ করলাম। মেসেন্জার বিষয়টি ক্রিকেট খেলার মত; দীর্ঘসময়ের। তারপরও হাতে ছাই মেখে নামলাম এই লেখককে ধরব। অনেকদিন লাগলো তারসাথে ম্যাসেন্জারে কাছাকাছি আসতে; মানে মনের কথা পারতে।
“ভাই ভালো আছেন? আপনার সব লেখাই পড়েছি, আজকের লেখাটাও দারুন ছিল। আমি তো একটা ব্লগে লিখি তো আপনার লেখা কিন্তু অসাধারণ! ওখানে আপনিও লিখতে পারেন। সুস্থ্য সাহিত্য চর্চা হয়। কোন সমস্যা নেই। আর আমরা যারা লিখতে ভালোবাসি তাদের একটা প্লাটফর্ম দরকার যেখানে লেখার মান, কদর বোঝার মানুষ পাওয়া যাবে। কিন্তু ফেসবুক তো তা নয়। লেখাগুলো ব্লগে লিখলে দেশে দেশে ছড়িয়ে যেত। যেখানে আপনাকে রংবেরং এর ধন্যবাদ দেবার প্রয়োজন নেই। পাঠক নিজের খোরাকেই পড়ে। আপনি ভেবে দেখবেন! আর আমাকে জানাবেন।”
তিনি আর জানাননি। আহারে! কত ভালো লেখে অথচ মধ্যরাতে লাইক-কমেন্ট পাবার আশায় বসে থাকে। আর আমার মত ভাতের লোকমার মত খনে খনে লাইক- কমেন্ট গোনে। মাঝে- মাঝেই খেয়াল করি যারা একসময় বেশ লাইক-কমেন্ট পেত তারা এখন ঝুলিতে নেমে হাহাকার করছে! বড্ড মায়া হয়। বাঙালি বুঝতে সময় নেয়! অনেক সময় এমন সময় বোঝে আর আফসোস ছাড়া কিছুই থাকে না। কারন শূন্যস্থান সবসময় পূরণীয়। 😢😢
বেশ কজনের সাথে কথা হল। অনেক কষ্ট ম্যাসেঞ্জার এ কথা বলা। অবশেষে একজন বলেই বসল,” এটা কি ডেস্টিনি কোম্পানির মত”। ডেসটিনি হ বলে, তারপর তো মাথা ঘুরে পড়ে যাবার দশা। আমরা স্বার্থ ছাড়া কিছুই করি না, ভাবিও না। আমিই বা কেন বিনা লাভে তারে অফার দিব? তো আমায় দুই দু গুণে ছ‘য়ে ফেলল! কি সাংঘাতিক! তবে হ্যাঁ ডেসটিনি তো বটেই। ভালো লিখেছেন তো আপনার ডেসটিনিও ভালো। আপনি ঘুমুচ্ছেন পাঠক তার কাজ করছে এবং সেটা চলমান।
বেশ কিছুদিন হল আমার সেই পছন্দের তালিকার লেখকদের পোষ্ট পাচ্ছিনা। তারমানে ব্লগার আর ব্লগ দেখে আমারে ব্লক মারছে। আহারে! আমি মনোযোগী পাঠক বন্চিত হলাম তার লেখা থেকে আর তিনি একটা লাইক-কমেন্ট থেকে। দুরো ছাতার মাথা বুঝাইতে গিয়া আমার পছন্দের তালিকার মানুষগুলাই হারায় গেল। কি যে করি?
এই দাঁড়ান!দাঁড়ান ! একটা রিকোয়েস্ট এসেছে। আল্লাহ বাঁচাইছে পরিচিত আবার রিকু দিয়েছে। বেচারার নরম মন আর আমি একটা সলিড ভারী লাইক। মিস করে ক্যামনে বলেন?😜😜
“অন্যায় যে করে; আর অন্যায় যে সহে, তব ঘৃনা তারে যেন তৃণসম দহে”। মিথ্যা, অন্যায় সহ্য করতে পারি না তাই লিখি। এটাই আমার প্রতিবাদ। আর হ্যাঁ,সঠিকভাবে দেশকে ভালবাসার দায়িত্ব সবার। লেখা ছাড়া আর ভাষা জানা নাই, এটাই ভালোবাসা। তাতে ভিরিয়ে নিতে চাই কিছু কাছের মানুষকে, যাতে সাহস হয়। কেন শুধু শুধু ভুল বুঝে ব্লক মারেন? আমি একজন পাঠক, পড়তে ভালোবাসি। লেখক/ব্লগার হতে অনেক যোগ্যতা লাগে যার কোনটাই আমার নেই।
সবাই ভালো থাকবেন।🌹🌹
ছবি- নেট থেকে।
২২টি মন্তব্য
আরজু মুক্তা
বুঝলাম অনেক কিছু। আমি তো পারি না। তাও লিখি। পড়ে পড়ুক না পড়ে নাই। নিজে দুই এক লাইন সাহস করে লিখি। এটাি বড়।
তবে, বিশ্বাস করি লিখতে লিখতে লেখক। পড়তে পড়তে শেখা। শেখা আর লেখা।
ভালোবাসা থাকলো অনেকগুলো। আপনি যে বিষয় নিয়ে লিখেন। তার এককানিও আমি লিখতে পারিনা।
তবে হ্যাঁ চেষ্টা করতে তো দোষ নেই।
🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹
রোকসানা খন্দকার রুকু
“পড়ে পডুক না পড়ে নাই,
সপ্তাহের সেরা লেখা সবসময়ই আপনারই তাই!
এ কথা শোনার পর মোর মরন হয় না ক্যা ভাই।
কেউ বিষ দেও মুই খাই!”
আর কি কমু সেরা লেখিকা বলেছেন আমি ভালো লিখি তাহলে আর নো থামাথামি কলম চলবে। আর কবিতা কেমন চলল জানাবেন🥰🥰
আরজু মুক্তা
কবিতা ও লেখেন? কই?
রোকসানা খন্দকার রুকু
“পড়ে পডুক না পড়ে নাই,
সপ্তাহের সেরা লেখা সবসময়ই আপনারই তাই!
এ কথা শোনার পর মোর মরন হয় না ক্যা ভাই।
কেউ বিষ দেও মুই খাই!** এই কবিতাটি। হা হা হা হা।
আরজু মুক্তা
অসাম ডিয়ার।
🌹💜
জিসান শা ইকরাম
হুমায়ূন আহমেদ কে নিয়ে এই পোষ্ট আমিও পড়েছি ফেসবুকে। দেখে হাসবা না কাঁদব তা বুঝে উঠতে পারছিলাম না। কতটা বিকৃত রুচি হলে মানুষ এমন পোষ্ট দিতে পারে তাই ভেবেছি।
ইদানিং কেন জানি কম্প্রোমাইজ করতে পারি না, ফেসবুকে গিয়ে সময় নষ্ট করে এসব পড়তে হয় দেখতে হয় বলে ফেসবুকের প্রতি অনাগ্রহ এসে গিয়েছে।
ফেসবুকে গেলেই এসব উল্টাপাল্টা পোষ্ট, প্রতিদিন একাধিক মৃত্যুর পোষ্ট আমাকে অসুস্থ করে দিয়েছে। মা, বাবার মৃত্যু হয়েছে এই পোষ্ট দিয়েই পোষ্ট দাতা ক্ষান্ত হননি, সবার মন্তব্যের জবাব দিচ্ছেন। অর্থাৎ পোষ্ট দাতা মা বাবার মৃত্যুর পরবর্তি কাজ বাদ দিয়ে ফেসবুককে গুরুত্বপূর্ণ ভাবছেন। আমি নিশ্চিত সে এই পোষ্টের লাইক কমেন্টও হিসেব করছেন। আজ অনেক দিন পরে ফেসবুকে গেলাম, গিয়েই প্রথম দেখলাম এক মৃত্যু সংবাদের পোষ্ট। মেজাজ খারাপ করে সাথে সাথে লগ আউট হলাম।
যারা ফেসবুকে আসক্ত, তাদের ব্লগের কথা বলে লাভ নেই। ইন্টারনেট বলতেই এরা বুঝে ফেসবুক। আগে বুঝতো ‘ ইন্টারনেট খুবই খারাপ জায়গা, সেখানে সবাই এডাল্ট মুভি, ছবি দেখে আর পোলাপান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’
ব্লগ হচ্ছে ডেসটিনি!! হা হা হা মজা পেলাম খুব। লাভ ছাড়া আজকাল কেউ কিছু ভাবতে পারে না।
দেশ, সমাজ ইত্যাদির প্রতি যদি আমাদের দায়িত্ববোধ থাকে তবে ব্লগ বা যে কোনো বাংলা সাইটে লেখা উচিৎ। গুগল বা অন্য সার্চ সাইট থেকে বিষয়বস্তু খুঁজে পাঠকরা পড়েন। আপনি আপনার পুরাতন লেখাগুলো দেখুন, প্রতিদিনই কিছু পাঠক আপনার লেখা পড়ছেন, যারা সার্চ করে আপনার লেখা পড়ছেন।
আপনি ভালো লেখেন। লিখুন অনেক অনেক, নিজের আনন্দে।
শুভ কামনা।
রোকসানা খন্দকার রুকু
হুম ভাই নিজের আনন্দেই লিখি। কেউ ব্লক করলে কি আর করার আছে।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
মনের ভাবনাগুলোর সুন্দর প্রকাশ।
রোকসানা খন্দকার রুকু
ধন্যবাদ ভাইয়া।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
শুভ কামনা রইলো আপু।
তৌহিদ
লেখা পড়ে কিঞ্চিত হাসি পেলেও পাঠক দায়ী নয়! ☺
এবার সিরিয়াস হয়ে বলছি- যারা ফেসবুকে বাহবা পেয়ে অভ্যস্ত বা ফেসবুককেই ধ্যানজ্ঞান মানেন তাদের কখনওই ব্লগে লিখার কথা বলবেননা। কারন তারা ব্লগ, ব্লগিং এবং ব্লগার সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা নিয়ে থাকে। ফেসবুক থেকে ব্লগমুখী হওয়া খুব কঠিন তবে যারা পেরেছে আমি নিজে দেখেছি লেখক হিসেবে তারা উন্নতি করেছেন। এর মাঝে আপনিও আছেন কিন্তু।
যত বেশি পড়া তত শেখা এটাই সত্য। তয় সোনেলা ডেসটিনি এই কাউয়া কথন যে কইছে হেতে একডা ফাগল। অনেকগুলা হা হা দিলাম।
শুভকামনা আপু।
রোকসানা খন্দকার রুকু
হা হা নিলাম। অসাধারণ মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ভাইয়া।
শুভ কামনা রইলো।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
রম্য, সমসাময়িক বিষয়গুলোতে আপনাকে আমি একশোতে নব্বই দিলাম। দশ নম্বরের জন্য কাইন্দেন না কিন্তু। 🍰🍰🍰 🍵🍵 কেক খান আর চা খান। ফেসবুক হলো আগাছা আর ব্লগ হলো অর্কিড। যা বুঝার বুঝে নেন। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন শুভকামনা নিরন্তর। শুভ সকাল
রোকসানা খন্দকার রুকু
আপনার ভালোবাসায় কিন্তু কাইন্দা দিব। কেক চা অসাধারণ খেলাম। আর আমার অর্কিড চাই🥰🥰
তৌহিদ
ফেসবুক আগাছা এবং ব্লগ হলো অর্কিড! এই কথাকে সোনা দিয়ে মুড়িয়ে মিউজিয়ামে রাখা হোক আজ এবং আগামীর সকল পাঠকদের জন্য।
পপি তালুকদার
লেখাটি পড়ে আনন্দ পেলাম।তবে প্রিয় লেখক নিয়ে ওয়াজের মন্তব্য খুব ব্যথিত করল।মনের কথাগুলো নির্দ্বিধায় লিখে যাই এটাই আনন্দ। শুভ কামনা রইল।
রোকসানা খন্দকার রুকু
সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। আমরা সবাই আনন্দেই লিখি। 🥰🥰
বন্যা লিপি
লেখা পড়ে ভারী মজা পেলাম। লেখায় মজা না থাকলে পাঠকের কাছে প্রিয় লেখক কেমনে হবে কোনো লেখক? মাঝে মাঝে আমারে ইনবক্স কইরেন ঘুম না আসলে, আমিও আপনারে ওয়াজ শুনামুনে, তয় ওইরহম বেতাইল্লা ওয়াজ আবার আমি দিতারি না।
আমি বাপু লেখক টেখক জীবনেও হইতারমু না আর চাইওনা হইতে।মাফ চাই বাপ! বহুত প্যারা লেখক হবার।
আপনি চালিয়ে যান দুর্দান্ত গতিতে। আপনার সামনে গৌরবজ্জল আগামী অপেক্ষা করছে। নিরন্তর শুভ কামনা🌹🌹🌹🌹🌹🌹
রোকসানা খন্দকার রুকু
ওমা, কি যে ওয়াজ শুনাবেন। তবে আমি সাহসী। দেখাব সাহস কোন একদিন; যেদিন ঢাকায় থাকব।🥰🥰😍😍
বন্যা লিপি
অপেক্ষায় থাকলাম। ঢাকা এলে অবশ্যই সাহস দেখবার সাহস রাখলাম জমিয়ে😊😊
ছাইরাছ হেলাল
ফেসবুক জানলে /করলে কত্ত সুবিধে, মাঝ রাতেও শুধুই বিনুদুন আর বিনুদুন, তবুও আপনার কল্যানে
ও-দিকের হাওয়া-বাতাস আমরাও পাচ্ছি, খোশ-নসিব অবশ্যই।
আচ্ছা ব্লগে কী কী হয় না-হয়, তা-কী ঐখানে লেখেন! যদি লেখেন, কী প্রতিক্রিয়া হয়, জানতে ব্যাকুল হতে চাই।
রোকসানা খন্দকার রুকু
হা হা হা হা। কি যে অসাধারণ মন্তব্যে। এত্তোগুলা ধন্যবাদ ভাইয়া🌹🌹🌹আরও হাওয়া বাতাস দিমুনে। ভালো থাকবেন।