লাল বাস (শেষ পর্ব)

জিয়া আল-দীন ২৮ জুন ২০২২, মঙ্গলবার, ০১:৪৯:০০পূর্বাহ্ন ছোটগল্প ১২ মন্তব্য

 

এই রিক্সা, থামো থামো!

-শাহবাগ তো সামনে, অনেকটা দূর!– এখানেই নামবো।তুমি আমাকে রিক্সা ভাড়া দিতে দিলে না।ভাড়া দিতে গিয়ে আমি বাড়তি ১০টাকার একটি নোট দিলাম রিক্সা চালককে।তুমি চেঁচামেচি আরাম্ভ করলে। রিক্সা চালক  বললো স্যারে বালা মানুষ! 

— ভালো কতটুকু সে আমি জানি। 

— তোমার কথা শোনে রিক্সা চালক হাসলো।তার হাসিটা ভারী সুন্দর!

তুমি আমার হাত এতো শক্ত করে ধরলে যেন আমি কোথাও পালিয়ে যাবো!

— চলো শেরাটনে খাবো। 

— ওরে গাধী,আমার কাছে মাত্র সত্তর টাকা আছে,এই টাকা নিয়ে ছালাদিয়া হোটেলে গেলেও লজ্জায় পড়তে হবে। 

— দুজনের লাঞ্চ করতে কত টাকা লাগে? আমি দেবো।আমার কাছে পঞ্চাশ হাজার টাকা আছে, চলবে?

পার্স খুলে টাকার বান্ডেল আমার হাতে দিয়ে বললে গুণে দেখো ঠিক আছে কিনা!পরে দেখবেোএখন রাখো।

কোথায় পেলে এতো টাকা?

-সেটা খেতে বসে বলবো।

টেবিলে বসা মাত্রই ওয়েটার এসে অভিবাদন জানালো।কি খাবেন, কি ভাবে সেবা করতে পারি।মেনু বুক মেলে ধরলো।আমরা দুজন মিলেই অর্ডার করলাম।তুমি বললে, ওরা বাংলা বলে?কেন বলবে না? উনি বাঙালি আমরাও বাঙালি, ইংরেজ হলে অবশ্যই ইংরেজি বলতো।টেবিল ভরে গেল নানান পদের খাবারে।তুমি সালাদের ডেকোরেশন দেখে সবচেয়ে বেশী অবাক হলে।ওয়েটারকে প্রশ্নও করলে কি ভাবে এত সুন্দর করে সবজি দিয়ে ফুল তৈরী করে।

চারিদিকটা একবার ভাল করে লক্ষ্য করলাম।দেশী মানুষের চেয়ে বিদেশীরাই বেশী। কারো প্রতি কারো তেমন কৌতূহল নেই। অদূরে একজন বিদেশী মহিলা নিবিষ্ট মনে নন স্টপ টুংটাং  পিয়ানোবাজিয়ে চলছেন।হাতের কাছে অর্কিড ফুল ঝুলে আছে,সুইমিং পুলটাও খুব কাছেই। বিকিনি পরা মেয়েদের স্পষ্ট দেখা যায়।

এতো খাবার, এতো সুন্দর করে সাজানো যে সেটা নষ্ট করতে ইচ্ছে করছে না।

বিল কত আসে কে জানে!তুমি টাকার বান্ডেলটা গুনতে দিলে। এতো টাকা কখনো আমি হাতে নিয়ে গুনে দেখিনি।সব পাঁচশো টাকার নোট। দেখলাম পঞ্চাশ হাজারই আছে তুমি জানালে,তোমার নামে একটা ডাকঘর সঞ্চয় পত্র ছিল।সেটার মেয়াদ পূর্ণ হয়ে লাভের টাকা এটা।

আমরা খেতে গিয়ে অনেক গল্প করলাম।প্রায় দু ঘন্টার মতো সময় কাটালাম শেরাটনে। সবটা ঘুরে ফিরে দেখলাম।রুমের ভেতর প্রবেশ করলে মনে হয় যেন ভিন্ন কোন গ্রহ। বাংলাদেশ গরীব তা এখানে আসলে বোঝা যায় না।তুমি তোমার মায়ের কথা ভেবে অস্থির হলে। বেরিয়ে আবারো সেই মযূরপঙ্খী(রিক্সা)। 

জিজ্ঞেস করলাম–সখী,কি কারণে আজ শেরাটনে খাওয়ালে।শুভ কিছু আছে নিশ্চয়ই! তুমি কোন উত্তর দিলে না। প্রসঙ্গ অন্য দিকে নিয়ে গেলে। ফার্ম গেট আসা মাত্রই আকাশ ফুটো হয়ে বৃষ্টি নামলো। সে কী বৃষ্টি!ভেসে যাচ্ছে সব! রাস্তা ঘাট ডুবে হাটুজল! তুমি বন্যার মতো জল দেখে বললে,কী সুন্দর! দুজনের শরীর প্রায় সবটাই ভিজে গেছে।নীল পলিথিন আমাদের রক্ষা করতে পারেনি।

একসময় তুমি আমাকে জড়িয়ে ধরে বললে, খাবার খেয়ে স্বাদ পেয়েছো?কেমন লেগেছে তোমার?সত্যি করে বলবা।

আগে বলো, কি কারণে সব হোটেল ফেলে রেখে শেরাটনে খাওয়ালে,কি কারণেই বা খাওয়ালে?

 

 তুই একটা হারামী,সব ভুলে যাস।আমাকে চিতায় পোড়ানোর দুঘন্টা পরেই তুই আমাকে ভুলে যাবি।তা আমি জানি।

আজ আমার জন্ম দিন। মা তোকে  দেখতে পারে না বলে একান্তে তোকে  নিয়ে সেলিব্রেশন করলাম।

মনে পড়ে, একদিন তুই খুব আক্ষেপ নিয়ে বলেছিলি আহা! শেরাটনে যদি একবার একবেলা খেতে পারতাম তাহলে জীবনটা ধন্য হতো।

সেদিন তোর কথায় খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। বাসায় ফিরে খুব কেঁদেছি।প্রতিজ্ঞা আমার সেদিন থেকেই,আমি কিছু পারি আর না পারি তোকে আমি শেরাটনে খাওয়াবো – খায়াবোই।আজ আমার খুব ভাল লাগছে।একটু আদর কর আমাকে। আমি তোমাকে বুকে জড়িয়ে ধরলাম। কোন কথাই বলতে পারলাম না।অনেকক্ষণ পর ভার কন্ঠ নিয়ে বললাম, বিশ্বাস করো, তোমার জন্মদিন আর কবে যে আমি শেরাটনে খাবো বলে আক্ষেপ করেছিলাম তা আমার মনে নেই, আমি ভুলে গেছি।

তুমি সত্যি কথাই বলেছিলে।আমি বড় ধরণের এক হারামি।আমি সব ভুলে যাই।আমার কিছুই মনে থাকে না।

 

৫০১জন ৩৯৪জন
0 Shares

১২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ