এই রিক্সা, থামো থামো!
-শাহবাগ তো সামনে, অনেকটা দূর!– এখানেই নামবো।তুমি আমাকে রিক্সা ভাড়া দিতে দিলে না।ভাড়া দিতে গিয়ে আমি বাড়তি ১০টাকার একটি নোট দিলাম রিক্সা চালককে।তুমি চেঁচামেচি আরাম্ভ করলে। রিক্সা চালক বললো স্যারে বালা মানুষ!
— ভালো কতটুকু সে আমি জানি।
— তোমার কথা শোনে রিক্সা চালক হাসলো।তার হাসিটা ভারী সুন্দর!
তুমি আমার হাত এতো শক্ত করে ধরলে যেন আমি কোথাও পালিয়ে যাবো!
— চলো শেরাটনে খাবো।
— ওরে গাধী,আমার কাছে মাত্র সত্তর টাকা আছে,এই টাকা নিয়ে ছালাদিয়া হোটেলে গেলেও লজ্জায় পড়তে হবে।
— দুজনের লাঞ্চ করতে কত টাকা লাগে? আমি দেবো।আমার কাছে পঞ্চাশ হাজার টাকা আছে, চলবে?
পার্স খুলে টাকার বান্ডেল আমার হাতে দিয়ে বললে গুণে দেখো ঠিক আছে কিনা!পরে দেখবেোএখন রাখো।
কোথায় পেলে এতো টাকা?
-সেটা খেতে বসে বলবো।
টেবিলে বসা মাত্রই ওয়েটার এসে অভিবাদন জানালো।কি খাবেন, কি ভাবে সেবা করতে পারি।মেনু বুক মেলে ধরলো।আমরা দুজন মিলেই অর্ডার করলাম।তুমি বললে, ওরা বাংলা বলে?কেন বলবে না? উনি বাঙালি আমরাও বাঙালি, ইংরেজ হলে অবশ্যই ইংরেজি বলতো।টেবিল ভরে গেল নানান পদের খাবারে।তুমি সালাদের ডেকোরেশন দেখে সবচেয়ে বেশী অবাক হলে।ওয়েটারকে প্রশ্নও করলে কি ভাবে এত সুন্দর করে সবজি দিয়ে ফুল তৈরী করে।
চারিদিকটা একবার ভাল করে লক্ষ্য করলাম।দেশী মানুষের চেয়ে বিদেশীরাই বেশী। কারো প্রতি কারো তেমন কৌতূহল নেই। অদূরে একজন বিদেশী মহিলা নিবিষ্ট মনে নন স্টপ টুংটাং পিয়ানোবাজিয়ে চলছেন।হাতের কাছে অর্কিড ফুল ঝুলে আছে,সুইমিং পুলটাও খুব কাছেই। বিকিনি পরা মেয়েদের স্পষ্ট দেখা যায়।
এতো খাবার, এতো সুন্দর করে সাজানো যে সেটা নষ্ট করতে ইচ্ছে করছে না।
বিল কত আসে কে জানে!তুমি টাকার বান্ডেলটা গুনতে দিলে। এতো টাকা কখনো আমি হাতে নিয়ে গুনে দেখিনি।সব পাঁচশো টাকার নোট। দেখলাম পঞ্চাশ হাজারই আছে তুমি জানালে,তোমার নামে একটা ডাকঘর সঞ্চয় পত্র ছিল।সেটার মেয়াদ পূর্ণ হয়ে লাভের টাকা এটা।
আমরা খেতে গিয়ে অনেক গল্প করলাম।প্রায় দু ঘন্টার মতো সময় কাটালাম শেরাটনে। সবটা ঘুরে ফিরে দেখলাম।রুমের ভেতর প্রবেশ করলে মনে হয় যেন ভিন্ন কোন গ্রহ। বাংলাদেশ গরীব তা এখানে আসলে বোঝা যায় না।তুমি তোমার মায়ের কথা ভেবে অস্থির হলে। বেরিয়ে আবারো সেই মযূরপঙ্খী(রিক্সা)।
জিজ্ঞেস করলাম–সখী,কি কারণে আজ শেরাটনে খাওয়ালে।শুভ কিছু আছে নিশ্চয়ই! তুমি কোন উত্তর দিলে না। প্রসঙ্গ অন্য দিকে নিয়ে গেলে। ফার্ম গেট আসা মাত্রই আকাশ ফুটো হয়ে বৃষ্টি নামলো। সে কী বৃষ্টি!ভেসে যাচ্ছে সব! রাস্তা ঘাট ডুবে হাটুজল! তুমি বন্যার মতো জল দেখে বললে,কী সুন্দর! দুজনের শরীর প্রায় সবটাই ভিজে গেছে।নীল পলিথিন আমাদের রক্ষা করতে পারেনি।
একসময় তুমি আমাকে জড়িয়ে ধরে বললে, খাবার খেয়ে স্বাদ পেয়েছো?কেমন লেগেছে তোমার?সত্যি করে বলবা।
আগে বলো, কি কারণে সব হোটেল ফেলে রেখে শেরাটনে খাওয়ালে,কি কারণেই বা খাওয়ালে?
তুই একটা হারামী,সব ভুলে যাস।আমাকে চিতায় পোড়ানোর দুঘন্টা পরেই তুই আমাকে ভুলে যাবি।তা আমি জানি।
আজ আমার জন্ম দিন। মা তোকে দেখতে পারে না বলে একান্তে তোকে নিয়ে সেলিব্রেশন করলাম।
মনে পড়ে, একদিন তুই খুব আক্ষেপ নিয়ে বলেছিলি আহা! শেরাটনে যদি একবার একবেলা খেতে পারতাম তাহলে জীবনটা ধন্য হতো।
সেদিন তোর কথায় খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। বাসায় ফিরে খুব কেঁদেছি।প্রতিজ্ঞা আমার সেদিন থেকেই,আমি কিছু পারি আর না পারি তোকে আমি শেরাটনে খাওয়াবো – খায়াবোই।আজ আমার খুব ভাল লাগছে।একটু আদর কর আমাকে। আমি তোমাকে বুকে জড়িয়ে ধরলাম। কোন কথাই বলতে পারলাম না।অনেকক্ষণ পর ভার কন্ঠ নিয়ে বললাম, বিশ্বাস করো, তোমার জন্মদিন আর কবে যে আমি শেরাটনে খাবো বলে আক্ষেপ করেছিলাম তা আমার মনে নেই, আমি ভুলে গেছি।
তুমি সত্যি কথাই বলেছিলে।আমি বড় ধরণের এক হারামি।আমি সব ভুলে যাই।আমার কিছুই মনে থাকে না।
১২টি মন্তব্য
বোরহানুল ইসলাম লিটন
আবেগে আমারই চোখে জল চলে এলো!
এমন সুন্দর ও ভালোবাসাময় যদি হতো জীবনের পথ!
আপনীও দেখছি ছালাদিয়া হোটেলের নাম জানেন!
আন্তরিক শুভেচ্ছা ও শুভ কামনা জানবেন সতত।
জিয়া আল-দীন
সুখ ও দুখের সম্মিলিত গল্প নিয়ে আমাদের জীবন। ক্ষুদ্র এই জীবনে সুখের চেয়ে দুখের প্রাপ্তি বেশি হলেও অনেক সময় মনে হয়, জীবন আমার
সাহিত্যের উপাদানে ভরপুর।আমি কেবল পারি না গুছিয়ে লিখতে।
হ্যাঁ,ছালাদিয়া হোটেলে আগুন মার্কা ঝাল তরকারি দিয়ে ভাত খাওয়ার অভিজ্ঞতা দুজনেই অর্জন করেছিলাম।সেই গল্পও শোনাবো।
মন্তব্যে অনুপ্রাণিত হলাম।ধন্যবাদ।
রোকসানা খন্দকার রুকু
জন্মদিনের উপহার কে কাকে দিল। মধুর সম্পর্কগুলো এমনই কোন স্বার্থ থাকে না।
আমার মনে হয় স্বার্থহীন সম্পর্ক বেশিদিন টেকেও না। শেষ হয়ে গেল। আমি ভেবেছিলাম আরও পর্ব আছে।।।
শুভ কামনা ভাই 🌹🌹
জিয়া আল-দীন
ভাইয়ারে,আমি যা কিছু এখানে লিখে চলেছি তা আমার জীবন থেকে নেয়া। বড় কিছু গিফট দেবার মতো সামর্থ্য আমার ছিল না,কেবল বুকের ভেতরটা দিতে পেরেছি।সেই বুকে অন্য কারো স্পর্শ আমি আর চাইনি।
ক্ষুদ্র জলরঙা একটি নাকফুল দিয়েছিলাম।
সেই গল্প আরেক দিন শোনাবো।
সোনেলায় কলমে রোমন্থন করবো আমার প্রেম- আমার ভালবাসা।আমাকে প্রকাশের সুযোগ করে দেয়ার জন্য ধন্যবাদ জানাই।
খাদিজাতুল কুবরা
সুন্দর গল্প!
প্রথম পর্ব ও পড়েছি কিন্তু মন্তব্য করতে পারিনি সেজন্য দুঃখিত। আপনি খুব ভালো লিখেন। আমার মনে হয় মানুষের জীবনের চেয়ে কল্পনা কখনো বেশি মন ছোঁয়া হয়না।
সোনেলায় সুস্বাগতম।
জিয়া আল-দীন
আমাদের প্রত্যেকের জীবন আলাদা। মনের মিল পাওয়া সঙ্গির চেয়ে তার সৌন্দর্যে বিভোর থাকি। বুকের ভেতর সৌন্দর্য অগোচরেই থেকে যায়।সে দিক থেকে আমার সৌভাগ্য। আমরা দুজনার মনের মিল ছিল খুব কাছাকাছি। কল্পনার চেয়ে জীবন বোধ কত যে সুন্দর তা আমি বুঝতে শিখেছি ঠিক সময়টায়।
ধন্যবাদ খাদিজাতুল কোবরা। আপনার মন্তব্যে আমি অনুপ্রাণিত হলাম।
বন্যা লিপি
শুধু বলছি- পড়লাম।
শেষে এসে হৃদয়ে ভার অনুভব করছি।
জিয়া আল-দীন
ধন্যবাদ জানাই আমার লেখা পড়ার জন্য।লেখা অপরিপক্ক কাঁচা হলেও আমি প্রকাশ করে হালকা হই।আপনার মন্তব্যে অনুপ্রাণিত হলাম। আশা করি আমার পরবর্তী লেখা গুলোও পড়বেন।
শুভকামনা। 🌹
বন্যা লিপি
লিখেন যদি সত্যি হালকা হওয়া যায়…..
আমাদের লেখাও পড়বেন আশা করি।
সাবিনা ইয়াসমিন
এই পর্বেও লাল বাস নেই! না থাক, গল্প পড়ে মন ভালো হয়ে গেছে।
আপনি অনেক ভালো লেখেন জিয়া ভাই। আরও অনেক অনেক গল্প পড়ার অপেক্ষায় রইলাম। ভালো থাকুন, শুভ কামনা 🌹🌹
জিয়া আল-দীন
শুরুতেই লাল বাস, অবসরে শেরাটন কথোপকথন।গল্পের সমাপ্তিও শেরাটন।বয়স হলে মানুষ নস্টালজিক হয়।আমি নস্টালজিয়া!সোনেলায় সোনালি আতীত প্রকাশ করার সুযোগ পেয়ে আমি ধন্য।এই সুযোগ কিছুতেই হাতছাড়া করবো না। আশা করি পাশে থেকে উৎসাহিত করবেন।
খুব ভালো থাকবেন,প্রফুল্ল থাকবেন সব সসয়।
শুভকামনা।🌹
হালিমা আক্তার
ভুলে তো জান নি । ভুলে গেলে লিখলেন কি করে। ভালোবাসার মানুষের ইচ্ছা পূরণের জন্য সব কিছু করা যায়। আবার সেই ভালোবাসা একসময় হারিয়ে যায়। আসলেই কি হারিয়ে যায়। হারিয়ে গেলে কি এতো সুন্দর গল্প লেখা হয়। পরবর্তী গল্পের অপেক্ষায় রইলাম। শুভ কামনা।