
—বাবু তুমি কী রোযা রাখছো??
—জ্বী, আজ আমি তিনটা রোযা রাখছি।
—-কী! তুমি আজ তিনটা রোযা রাখছো?
—আম্মু বলছে আমি আজ যতবার খাব, ততটা রোযা হবে আমার। আমি আজ ভোর রাতে খেয়েছি ত্য তাই আজ তিন রোযা। {ইফতার কিনতে গিয়ে রাস্তায় এক পিচ্চির সাথে দেখা তাকে প্রশ্ন করতেই সে এরকম উত্তর দিল}
মনে পড়ে, তখন সম্ভবত ক্লাস সিক্স অথবা সেভেনে পড়ি। রমজান মাসের শুরু।আগামীকাল থেকে রোযা, তাই আজ ভোর রাতে সবাই “সেহেরি” খাবে। তাই আগে থেকেই আম্মাকে বলে রেখেছি আজ যেন আমাকে ভোর রাতে ডেকে দেয়, আমি আগামীকাল রোযা রাখবো।।
সারা রাত ঘুম হয়নি, এই বুঝি সেহেরি খাওয়ার সময় হয়ে গেছে, আর আম্মা আমাকে ডাকে নাই, এভাবেই রাতে শুধু স্বপ্ন দেখতাম, যখন ভোর রাত হত তখন ঠিকই ঘুমিয়ে যেতাম।
আম্মা তখনই আমাকে জাগানোর চেষ্টা করতো এই মামুন উঠ, ভোর রাত হয়ে গেছে, সেহরি খাবি না? তখন আর আমার ঘুম ভাঙতো না। অনেক ডাকাডাকির পর আমার ঘুম ভাঙতো।।
ভোর রাতে মুখে রুচি থাকে না,কিছুই খেতে পারতাম না,মন চায়তো না।আম্মা বলতো, খাচ্ছিস না কেন? না খেলে ত্য রোযা থাকতে পারবি না।আমার কাল রোযা থাকতেই হবে তাই জুড় করেই অল্প কিছু খেতাম।।
ভোর রাতে খাওয়ার পর যখন আবার ঘুমাইতাম, তখন স্বপ্ন দেখতাম আমি যেন বিভিন্ন রকম খাবার খাচ্ছি, খাওয়ার শেষ ত্য আচমকা মনে পড়তো আমি না আজ রোযা রাখছি, আয়হায় আমার রোযাতো ভেঙে গেছে।তখনই মুখ থেকে থুথু ফেলতে শুরু করতাম। পরক্ষণে মনে পড়তো অ!আমার রোযা ভাঙে নাই, আমি ত্য ঘুমিয়ে আছি।।
সকালে ঘুম থেকে ওঠে স্কুলে চলে যেতাম, যখন স্কুল শেষে বাড়ি ফিরতাম তখন মুখ মলিন হয়ে যেত। আকাশের গনকালো মেঘের মত আমার চেহেরাটা যেন অন্ধকার হয়ে গেছে।গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যেত, গলা শুকাইবেই ত্য সারাদিন শুধু থুথু ফেলতাম, জিব পর্যন্ত শুকাইয়া যেত। হাটতে পারতাম না,এমন কী কথা বলতেও অনেক কষ্ট হতো।।
বাড়িতে আসলে আম্মা আমাকে দেখে বলতো, আমার বাপ জানের সুন্দর মুখখানা ক্ষিদায় কালো হয়ে গেছে! আমার বাবার “রোযা লাইগা গেছে” আমি মুচকি হাসতাম, কিন্তু হাসতেও কষ্ট হতো! কথায় আছে না, ” পেট শান্তি ত্য সব শান্তি” মা বলতো বাবা তোর রোয়া হয়ে গেছে। যা– ভাত খেয়ে ফেল।।কিন্তু আমি রোযার নিয়ত যখন করছি। ইনশাআল্লাহ রোযা রাখবো এক প্রকার পণ করে ফেলছি। সারাদিন কেটে গেছে, ইফতারির আগ মুহুর্তে সময় যেন যাচ্ছে না, শরীর অনেক দূর্বল হয়ে গেছে।।
ইফতারের আরও দেড়ঘণ্টা বাকী আমি ইফতার সামনে নিয়ে বসে আছি। কখন আযান দিবে? আযান কখব দিবে? বারবার শুধু ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছি, আজ যেন ঘড়ির কাটা থমকে গেছে, কাটা যেন কিছুতেই নড়তেছে না।। কিন্তু সময় ঠিকই তার নিদিষ্ট গতিতে চলছে।
আমার কাছে এরকম মনে হচ্ছিলো আমি যেন আজ সবকিছু একাই খেয়ে সাবাস করতে পারবো, যে খাবার কিনা বাসার সবাই খাবে।।
দীর্ঘ অপেক্ষার পর যখন মসজিদে আযান হল, আমি যখন এক গ্রাস শরবত খেলাম। আমার যেন হারানো প্রাণটা ফিরে পেলাম। ঐদিন পানি আমার কাছে এত স্বাদ গালছিল, শুধু পানি খেয়েই পেট ভরে ফেলছিলাম। আর কিছুই খেতে পারি নাই।।।
এভাবেই রোযা রাখতে শুরু করি, প্রথম প্রথম ঠিকই খারাপ লাগে, কিন্তু যখন চার-পাঁচটা রোযা চলে যায় তারপর আর এত খারাপ লাগে না, এমন কী মনেও হয় না আমি আজ রোযা।। আল্লাহ তায়ালা যেন আমাকে এবং সকলকে মাহে রমজানের সবগুলো রোযা পরিপূর্ণ ভাবে থাকার তৌফিক দান করেন।। “‘” আমিন””
১৪টি মন্তব্য
শামীম চৌধুরী
আমীন।
ছোটবেলা কথা মনে করিয়ে দিলেন আপনার বাস্তব ঘটনার মধ্য দিয়ে। আমারও এমন অবস্থা হয়েছিল। তখন আমি তৃতীয় শ্রেনীর ছাত্র। সারাদিন না খেয়ে থাকাতে ইফতারের আগে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম। তারপর থেকে আম্মা ও বড় ভাইরা রান্না ঘরে চুপি চুপি খেয়ে আসতো আমি জেন সজাগ না হতে পারি। সকালে উঠে যখন দেখতাম আমি সেহরী খাই নি তখন কান্না জুড়ে দিতাম। কি সুন্দর ও ভোলাভেলা দিনগুলি পার করেছি আমরা।
ধন্যবাদ স্মৃতিচারনের জন্য।
স্বপ্নবিহীন মামুন
জ্বী,ভাই শৈশব আজ সবই স্মৃতি, সবকিছুই কেমন জানি জীবন থেকে হারিয়ে গেছে।
আরজু মুক্তা
ছোটবেলাটা এতো মধুর হয় কেনো?কেনো যে আমরা বড় হই!!আপনি একদম বাস্তব ঘটনা বলেছেন
স্বপ্নবিহীন মামুন
–ছোট ছিলাম ভালো ছিলাম, যখন ছিল শিশু কাল।
জিসান শা ইকরাম
আপনার লেখা পড়ে আমারও ছোট বেলার কথা মনে পরে গেলো,
আপনি সবার ছোট বেলার কথাই আসলে বলে ফেলেছেন।
সবার প্রথম রোজা প্রায় এমনই ছিল, এরপর অভ্যস্থ হয়ে যায় সবাই।
শুভ কামনা।
স্বপ্নবিহীন মামুন
–আসলেই সবকিছু একদিন অভ্যস্থ হয়ে যায়
সাবিনা ইয়াসমিন
আমাদের সবার ছোটো বেলার প্রথম রোজার স্মৃতি দেখছি একই রকম!! একই দিনে দুটো–তিনটা রোজা রেখে ফেলতাম। তবে প্রথম যেদিন সত্যিকারের রোজা রেখেছিলাম ঐ দিনটা ভুলে যাবার নয়। সেই আনন্দ আর পাইনি। ক্ষুধা–তৃষ্ণায় আধ পাগল হয়ে গিয়েছি, বারবার ঘড়ি দেখেছি। আর খাবার দেখলেই দৌড়ে পালিয়েছিলাম। অনেক সুন্দর আর সুখের মূহুর্ত মনে করিয়ে দিলেন। 😊😊
ভালো থাকবেন, শুভ কামনা রইলো 🌹🌹
স্বপ্নবিহীন মামুন
ধন্যবাদ, ছোট বেলা সবার একই রকম হয় বুঝি! আসলেই ঐদিন টা ভুলার নয়, ঐদিন যেন ঘড়ির কাটা থমকে গেছেছিল
তৌহিদ
খুব সুন্দর করে লিখেছেন ভাই। আল্লাহ আমাদের রোযাগুলিকে কবুল করুন।
স্বপ্নবিহীন মামুন
আমিন, ধন্যবাদ
মনির হোসেন মমি
ঠিক বলেছেন
ছোট বেলার রোজা রাখা নিয়ে ভোরে উঠা বা রোজা রাখার পর মা’দের সন্তানদের কষ্ট হবে বলে কিছু কথা যেমন যতবার খাবো ততটিই রোজা হবে ইত্যাদি এখনো ভাবায়।সবার রোজা কবুল করুন আল্ল্াহ এই কামনা।আমীন।
স্বপ্নবিহীন মামুন
ছুম্মা আমিন
ছাইরাছ হেলাল
আপনি তো শৈশবে ফিরিয়ে নিয়ে গেলেন!!
আল্লাহ সবাইকে এই রমজান উপলক্ষে হেফাজতে নিন এ কামনাই করি।
মোহাম্মদ মামুন
শৈশবের স্মৃতি মনে পড়ে…..