সেদিন ছিলো ২০১৭ সালের ২৭ ডিসেম্বর| সন্ধ্যার এক আড্ডায় আমরা কয়েকজন মিলে পরিকল্পনা করলাম, ঘুরতে যাবো। পরিকল্পনা অনুযায়ী পরদিন ভোরে পাঁচ জন মিলে শহরের মৃদু শীত উপেক্ষা করে রওনা হলাম খাগড়াছড়ির পথে। আমাদের মূল গন্তব্য ছিলো সাজেক ভ্যালী। তাই প্রথমে অক্সিজেন এসে শান্তি পরিবহনের ৫ টা টিকিট কাটলাম। বরাবরের মতো আমি জানালার পাশের আসনে বসলাম। আমি মনেকরি, ভ্রমণ ষোলআনা উপভোগ করতে হলে সর্বপ্রথম জানালার পাশের আসন চাই । হোক সেটা বাস কিংবা ট্রেন।
আমাদের বাস প্রথমে ধীরে ধীরে এবং পরে এক পর্যায়ে খুব দ্রত গতিতে ছুঁটতে শুরু করলো। গাড়ি প্রথমে শহর পেরিয়ে গ্রাম, পরে গ্রাম পেরিয়ে পাহাড়ের ভেতর দিয়ে ছুঁটে যাচ্ছিলো। বাসের জানালা দিয়ে দেখছিলাম, পাহাড়ের পাদদেশে ছোট ছোট গ্রাম। কোথাও কোথাও আবার উঁচু পাহাড়ের গায়ে ছোট ছোট ঘর। পাহাড়ি নারী পুরুষ সবাই যার যার মতো করে নিজ নিজ কাজে মগ্ন। কেউ কাপড় বুনছে, কেউ বাঁশ দিয়ে নানা রকম জিনিসপত্র বানাচ্ছে। আবার, কেউ কেউ পাহাড়ের গায়ে জুম চাষে ব্যস্ত। কিছু দূর পর পর স্কুল। রাস্তার একপাশ দিয়ে দল বেঁধে স্কুল যাচ্ছে কিশোর কিশোরীরা। পড়নে আকাশী রঙের ড্রেস। পাহাড়ের উঁচু নিচু রাস্তা পেরিয়ে প্রায় চার ঘণ্টা পর আমরা খাগড়াছড়ির সদরে পৌঁছলাম।
বাস থেকে নেমে হালকা নাস্তা সেরে আমরা গেলাম, খাগড়াছড়ি শিল্পকলা ও ঝুলন্ত ব্রীজ দেখতে।পরে ঘুরাঘুরি শেষে ছোট একটি হোটেলে খেতে বসে দেখলাম, খাবারের তালিকায় মাছ মাংসের সাথে রয়েছে বিভিন্ন রকম ভর্তা। আমরা কয়েক প্রকারের ভর্তা দিয়ে দুপুরের খাবর খেলাম। তবে এর মধ্যে শুটকি ভর্তার স্বাদ ছিলো জিভে লেগে থাকার মতো।
খাওয়া-দাওয়া সেরে যখন ইস্টিশনে পৌঁছলাম, ঘড়িতে তখন চারটে বেজে পনের মিনিট। ইচ্ছে ছিলো তখন’ই সাজেকের গাড়িতে চড়ার। কিন্তু, তা সম্ভব হয়নি। কারণ দুপুর তিনটার পর কোন যানবাহন সাজেকের উদ্দেশ্যে রওনা হয় না। আর এই বিষয়টা আমাদের কারোই জানা ছিলো না। যাই হোক, সেদিন সাজেকে যেতে না পেরে কিছুটা হতাশ হয়ে রাত কাটানোর জন্য হোটেল খুঁজতে শুরু করলাম। অবশ্য হোটেল খোঁজার জন্য খুব বেশি হাঁটতে হয়নি। খাগড়াছড়ি সদর ইস্টিশনের খুব কাছেই বেশ কিছু আবাসিক হোটেল রয়েছে। দুই বেডের একটি বড় রুম নিয়ে আমরা রাতটা খুব আড্ডা গান মাস্তি করে কাটিয়ে দিলাম।
পরদিন খুব ভোরে কনকনে শীতের রাস্তায় মিনিট পাঁচেক হেঁটে ইস্টিশনে আসলাম। ইস্টিশনের পাশে একটি হোটেলে নাস্তা খেতে বসে দেখলাম, চা পরোটা ছাড়াও নাস্তার তালিকায় রয়েছে হাঁসের মাংসের খিচুড়ি। গরম গরম খিচুড়ির ঘ্রাণ পেয়ে সবাই খিচুড়ি অর্ডার করলো। এর আগে মুরগির মাংসের খিচুড়ি খাওয়া হলেও, কখনো হাঁসের মাংসের খাওয়া হয়নি।তাই আমিও অর্ডার করলাম। চমৎকার করে রান্না করা খিচুড়ি ছিলো খুবই মজাদার। সবাই তৃপ্তি নিয়ে খেতে পেরেছি।
সাজেক যেতে হলে চান্দের গাড়ি করে যেতে হবে। তাই নাস্তা সেরে গাড়ি ভাড়া করতে আসলাম। এখানে আবার নতুন জামেলা। চান্দের গাড়ির ভাড়া পরবে সাড়ে সাত হাজার। এত টাকা যদি গাড়ি ভাড়া দিয়ে দিই, তাহলে আমাদের আর বাড়িতে ফিরতে হবেনা। ওখানেই থেকে যেতে হবে! অবশ্য পরে দেখলাম এক গাড়িতে দশজন যেতে পারবে। তাই ভাবলাম আমরা যদি আরো পাঁচজন সহযাত্রী খোঁজে পাই তবে ভাড়ার পরিমাণ আমাদের গায়ে অনেক কম পড়বে। ভাবনা অনুযায়ী, গাড়ি ভাড়া করার আগে পাঁচ জনের যাত্রীদল খুঁজতে বের হলাম। আমাদের কপাল ভালো, খুব তাড়াতাড়ি পাঁচজনকে পেয়েও গেছি।
তখন সকাল আট বেজে দশ পনের মিনিট হবে, গাড়ি চলতে শুরু করলো। আস্তে আস্তে খাগড়াছড়ির সদর পেরিয়ে দীঘিনালা, তারপর আরো সাত-আট কিলোমিটার চলার পর গাড়ি এসে থামলো হাজাছড়ায়। এখানে রয়েছে হাজাছড়া ঝরনা। মূল সড়ক থেকে দশ পনের মিনিট হাঁটলেই দেখা মেলে অপূর্ব এই ঝরনার। তবে এই দশ পনের মিনিটে কয়েকটি ছোট ছোট সাঁকো পার হয়ে যেতে হয়।
ঝরনার সৌন্দর্য উপভোগ করে আবার গাড়িতে এসে বসলাম। শুনেছি তৈদুছড়া নামে আরো একটি অসাধারণ ঝরনা রয়েছে দীঘিনালায়। তবে এটি দেখতে হলে আলাদা করে একদিন সময় রাখতে হবে। দীঘিনালায় জামতলি থেকে হেঁটে এই ঝরনায় যেতে আসতে সময় লাগে ৬ -৭ ঘণ্টা। তবে এখানে যাওয়ার সময় নাকি একজন স্থানীয় গাইড সাথে রাখতে হয়। না হলে পথ হারানোর ভয় থাকে।
অল্প কিছুক্ষণ পর গাড়ি আবার চলতে শুরু করলো। বেলা প্রায় সাড়ে দশটার সময় আমরা বাঘাইহাটে এসে পোঁছলাম। মূলত সাজেকের জার্নিটা শুরু হয় এখান থেকে। পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য সব গাড়ি বাঘাইহাট থেকে সাজেকের রুইলুই পর্যন্ত সেনাবাহিনী ও পুলিশের এস্কট দিয়ে আসা যাওয়া বাধ্যতামূলক। এরমধ্যে সেনাবাহিনী বাঘাইহাট থেকে এস্কট মাসালং সেনাক্যাম্প পর্যন্ত তাদের গার্ড দিয়ে পৌঁছে দেয়। তারপর সেখান থেকে পুলিশ সাজেক পৌঁছে দেয়। প্রতিদিন বাঘাইহাট বাজার থেকে বেলা এগারটায় ও চারটায় সব গাড়ি এক সঙ্গে সাজেকের উদ্দেশে রওনা দেয়। এখান থেকে পর্যটকরা দুপুরের খাবার ও পানি কিনে থাকে। সাজেকে পানির খুব সংকট।
বেলা এগারটায় সব গাড়ি এক সাথে রওনা হলো পাহাড়ের পথ ধরে। পুরোটা পথ জুড়ে সবুজ পাহাড়। পাহাড়ের কোল ঘেঁষে অজগর সাপের মতো আঁকাবাঁকা আর উঁচু – নিচু পথ। গাড়ি কখনও উপরের দিকে উঠছে, কখনও নিচের দিকে, মাঝে মাঝে মনে হচ্ছে অনেক বড় এক দোলনায় দুলছি। রাস্তার দুপাশে বিচ্ছিন্ন পাহাড়ি ঘর। বৃদ্ধ নারী পুরুষ রোদ পোহাচ্ছে। দুপাশে আকাশচুম্বী পাহাড়ের বুকে উদ্ধত শিখর তুলে দাঁড়িয়ে আছে বৃক্ষরাজি। কিছুদূর পর পর অনেক দীর্ঘজীবী বৃক্ষের দেখা মিলে। পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে জুম চাষ, কয়েক রকমের জুম চাষে ভরপুর পুরো পাহাড়। হঠাৎ হঠাৎ দেখা মিলে দুপাশ থেকে বয়ে আসা দুটি নদীর মিলন। পাহাড়ের বুক চিড়ে বয়ে যাওয়া সর্পিল নদী চলে যায় দূরের পথ ধরে। রাস্তার দুপাশ জুড়ে রয়েছে বিস্তীর্ণ কাশফুল। পুরোটা পথ জুড়ে কিছুদূর পর পর দেখা মিলে পাহাড়ি বাচ্চা ছেলেমেয়েদের । পথের ধারে দাঁড়িয়ে হাত নাড়ে, আবার কখনো কখনো অভিনব ভঙ্গিতে নাচে । এসবের কারণ একটাই-চকোলেট। পর্যটকরা যাত্রাপথে তাদের দিকে চকোলেট ছোঁড়ে। তবে এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিষেধ থাকায় কোনো পর্যটক আগের মতো চকোলেট ছোঁড়তে পারেনা। দু’টি গাড়ি পাশাপাশি থাকলে গাড়ি থেকে ছিটানো চকোলেট নিতে বাচ্চারা রাস্তার মাঝখানে চলে আসে। এতে দুর্ঘটনার ভয় থাকে। এমন হয়েছেও ।
এসব দেখতে দেখতে আমরা পৌঁছে যায় মেঘের রাজ্য সাজেকে। পা রাখি রুইলুই পাড়ায়।
এটা সাজেক উপত্যকার মূল কেন্দ্র । এই পাড়াতে বাস করে লুসাই, পাংখোয়া, ত্রিপুরা- জনগোষ্ঠী। পাড়ায় প্রায় সবগুলো বাড়ির রং লাল-সবুজ । সাজেক নামে আলাদা করে কোন বাজার বা এমন কিছু নেই। রুইলুই পাড়াতেই সব রিসোর্ট এবং দোকান। এই পাড়াতেই রয়েছে তিনটি হেলিপ্যাড এবং আর্মির তৈরি পার্ক।
চান্দের গাড়িতে চড়ার বর্ণনা দিতে দিতে একটি কথা বলতে ভুলে গিয়েছি। খাগড়াছড়ি সদরে থাকা অবস্থায় আমাদের গাড়ির ড্রাইভার আব্দুল কাদের ভাইয়ের সহযোগিতায় একটি উপজাতির ঘর ভাড়া করেছি। এটি রুইল্ইু পাড়াতেই । গাড়ি থেকে নেমে প্রথমে সবাই মিলে ভাড়া ঘরে আসলাম । টিনের ঘর, তবে পিছেনের অংশটা মাচাংয়ের মতো। পাহাড়ের অনেক নিচ থেকে বাঁশের খুঁটির সাহায্যে বানানো। রান্না ঘর থেকে ছুটে এলো এক বৃদ্ধ মহিলা । লুঙ্গি এবং কোমর- ঢাকা ব্লাউজ পরেছে। মহিলাটি দিব্যি চট্টগ্রামের ভাষায় এটা-ওটা আছে জানিয়ে রাখতে লাগলো । নাম সুকন্যা দেবী ।
হাত মুখ ধুয়ে সবাই খেতে বসলাম মাচাংয়ের উপরে। মাচাংয়ের পিছনের পাশ খোলা, তাই পিছনের দিকে তাকিয়ে মনে হচ্ছিলো আমরা শূন্যের উপর বসে পৃথিবীটা গিলে খাচ্ছি। নিচের দিকে তাকালে শুধু সবুজ অরণ্যময় পাহাড় ছাড়া ভিন্ন কিছুর দেখা মিলে না। দূরের দিকে তাকালে ভারতের মিজোরাম সীমান্তের উঁচু উঁচু পাহাড় দেখতে পাওয়া যায়। সাজেক থেকে মিজোরামের দূরত্ব মাত্র দশ কিলোমিটার।
খাওয়া দাওয়ার পর শুরু হল গানের আসর, এক শতবর্ষী বটগাছের তলায়।
বিকেলের দিকে গাড়ির ড্রাইভার আমাদের ঘুরতে নিয়ে গেলেন কংলাক পাড়ায়। রুইলুই পাড়া থেকে এর দূরত্ব দুই কি.মি. প্রায়। পাহাড় বেঁয়ে অনেক উঁচুতে উঠতে হয়। কিছুটা উপড়ে উঠার পর পাহাড় জুড়ে পাথরের আনাগোনা দেখা মিলে। তাই এটি পাথরের পাহাড় নামেও পরিচিত। কংলাকে মূলত লুসাইদের বসবাস। তবে আগে নাকি কংলাকে পাংখোয়া আদিবাসীরও দেখা মিলতো। স্থানীয লুসাইদেও কাছে শুনলাম ওরা বেশি জনসমাগম পছন্দ করেনা। তাই এই দিকে বেশি পর্যটক আসাযাওয়া শুরু হওয়ার কারণে ওরা আরো গহীনে চলে গেছে।
কংলাকে পাথর চূড়ায় দাঁড়িয়ে পুরো সাজেক উপত্যকা চমৎকারভাবে এক নজরে দেখা যায়। দূর পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে মনে হয় পাহাড়ের গায়ে হেলান দিয়ে আকাশ ঘুমায়। চারপাশে নজর কাড়বে পাহাড়ের বন্ধনহীন মিলন। আর এসব দেখতে দেখতে আমরা আবার রওনা হলাম সাজেক ভ্যালির পথে। আমাদের সাথে সাথে সন্ধ্যাও নেমে এলো প্রকৃতির বুকে।
সন্ধ্যায় সাজেকের সৌন্দর্য একটু অন্য রকম । আসলে সাজেক বৈচিত্র্যময়। কিছুসময় পর পর তার রূপ বদলায়। সকালটা একরকম সুন্দর, বিকেলটা আবার ভিন্ন। এই বিকেল আর সন্ধ্যের মাঝে অনেক পর্যটক জড়ো হয়েছে, সূর্যাস্ত উপভোগ করতে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৪৮৮ ফুট উপরে অবস্থান করে সূর্যাস্ত দেখার সুযোগ কি মিস করা যায়!? কিছুক্ষণের মধ্যে, রক্তিম লাল সূর্য আস্তে আস্তে দূর পাহাড়ের কোলে হেলে পড়ে সাময়িক বিদায় জানালো। আগমন হলো রাতের । আগেই বলেছি সাজেক কিছু সময় পর পর রূপ বদলায়। তেমনি সাজেকের রাতে রূপটা অনেক রোমাঞ্চকর। আকাশে যেন তারার মেলা বসেছে। দেখে মনে হচ্ছিলো, তারা গুলো আমাদের পাহারা দিচ্ছে। রাস্তায় বসে আড্ডা চলছে। শুধু আমরা না , কয়েক হাজার পর্যটক। সবাই ব্যস্ত নিজের মতো করে রাতটা উপভোগ করতে। কেউ রাস্তায় হাঁটছে, কেউ গলা ছেড়ে গান গাইছে। আবার, কতোগুলো বাচ্চা ছেলেমেয়ে তারা গুনছে । রাস্তার একপাশে বাংলাদেশ, অন্যপাশে ভারত। দু’পাশে পাহাড়ের ভেতরের ঘর গুলোতে মিটিমিটি বাতি জ্বলছে। দেখে মনে হচ্ছে এক ঝাঁক জোনাকি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। আহ্ কি সুখ !
আসলে রাতে নক্ষত্রের আলোয় যদি সাজেকের সুনসান রাস্তায় হাঁটা না হয় তবে সাজেক ভ্রমণই বৃথা।
সাজেকে ভালো হোটেল খুবই কম । যে দু চারটে রয়েছে সেগুলোতে আবার খাবারের দাম খুব বেশি। তাই একটি মুরগী কিনে পূজা দেবীকে দিলাম, রান্না করে দিতে। সুকন্যা দেবীর বড় মেয়ে পূজা দেবী। পূজা দেবীর তিন বছরের একটি ছেলে রয়েছে। নাম জনাথন। একসাথে এতো জনকে দেখে জনাথন মহা খুশি। সবার আশেপাশে এসে ছোট ছোট পায়ে হেঁটে বেড়াচ্ছে। যেন আমরা ওর অনেক দিনের পরিচিত।
প্রসঙ্গে ফেরা যাক, মুরগি কিনার পর বাধলো ঝামেলা। সবাই ইচ্ছে প্রকাশ করলো, যেন মুরগি’টা আমাদের মধ্য থেকে কেউ একজন ধর্মীয় রীতিতে জবাই করি। আমরা সবাই ছিলাম মুসলিম ধর্মাবলম্বী। কিন্তু, জবাই করতে গিয়ে কেউ সাহস পাচ্ছিলো না। পরে অনেকটা সাহস যুগিয়ে কাজটা আমাকে করতে হলো। এখানে আমার সহযোগী হিসেবে ছিলো সুকন্যা দেবীর পাশের ঘরের ছেলে তংথক।
রাতে খেতে বসে দেখলাম, খাবারের তালিকায় মুরগির মাংসের সাথে ডাল এবং বাঁশমুড়া ভাজিও রয়েছে। বাঁশমুড়া ভাজি আগে কখনো খাওয়া হয়নি আমাদের। আজ খেতে মন্দও লাগেনি। যা হোক, রাতের খাবার শেষে সবাই আবার রাস্তায় বের হয়ে পরলাম। রাস্তায় এসে হঠাৎ বন্দী শুকরের কিচিমিচি শব্দ শুনে শিউরে উঠেছিলাম। সাজেকে ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর প্রায় প্রত্যেক পরিবার দুই চারটে করে শুকর পালন করে।
এখন একটা গোপন কথা ওপেন ভাবে বলবো। সাজেকে বিয়ার, হুইস্কি অথবা এই টাইপের কিছু পাওয়া না গেলেও, স্থানীয় আদিবাসীদের তৈরি একটি পানীয় পাওয়া যায়, তবে ওইটা খেলে নাকি খুব মাথা ঘুরায় এবং আপনি সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারবেন না। যেখানে দাঁড়াবেন সামনেপিছনে এবং ডানে-বামে দুলতে থাকবেন। তবে যারা অভ্যস্থ তাদের তেমন একটা সমস্যা হয় না । এই পানীয় সবাই খোলা রাস্তায় হেঁটে হেঁটেও খেতে পারে, তাতে কেউ বাধা দিবে না। এছাড়াও স্থানীয় আদিবাসীদের বাঁশের তৈরি হুক্কা টানতে দেখেছি, যা নারী পুরুষ সবাই টানে।
প্রায় রাত দুটো পর্যন্ত চললো আড্ডা গান মাস্তি। রাতের রাস্তায় অনেক পর্যটককে নেশা করে মাতাল হয়ে গান গাইতে দেখেছি। অবার কেউ কেউ নেশা না করেও মাতাল। সাজেকের রাতের সৌন্দর্য’টা এমনই। নেশা করা ছাড়াও মাতাল করে তুলে। ঘোর সৃষ্টি হয় । অর এই ঘোরলাগা রাত এক সময় ভোর হয়। চোখ খুলে দেখি মেঘ পায়ের কাছে এসে লুটোপুটি খাচ্ছে-নতুন দিনের অভিবাদন জানাতে। স্রোতহীন নদী, সবুজ বন, গেরুয়া পাহাড় সবটুকু অদূশ্য হয়ে আছে সাদা মেঘের আড়ালে। মেঘের ভেলায় ডুবে যাওয়া পাহাড়ের চূড়াকে মনে হচ্ছিল সমুদ্রের পানিতে দাঁড়িয়ে থাকা বিচ্ছিন্ন দ্বীপ । বিভ্রম জাগে, একি আমাদের চেনা পৃথিবী! এক কাপ গরম চায়ে চুমুক, মেঘ পাহাড়ে শীতের সকালে কিছুটা উষ্ণতা। যেন স্বপ্নরাজ্য!
২৮টি মন্তব্য
শামীম চৌধুরী
সুন্দর করে গুছিয়ে লিখেছেন ভ্রমন কাহিনী।
আকবর হোসেন রবিন
গুছিয়ে লেখার চেষ্টা করি। কিন্তু, কতোটুকু হয় জানিনা। আপনার মন্তব্য পড়ে ভালো লাগলো। ভালোবাসা নিবেন।
মোহাম্মদ দিদার
বেশ গুছিয়ে বলেছেন।
ভালোলাগা রইলো।
আকবর হোসেন রবিন
শুকরিয়া। আপনিও ভালোবাসা নিবেন।
নিতাই বাবু
আহ্! আপনার ভ্রমণকাহিনী পড়ে ইচ্ছে করছে পাখি হয়ে উড়ে গিয়ে দেখি। কিন্তু তা-কি-আর হবে? কখনোই নয়। আবার ভগ্যে এমন ভ্রমণ মিলতেও পারে। ইচ্ছে আছে সেখানে যাবার। আমার ছোট কাকার নিবাস গুই মারা বাজারে। কখনো যাওয়া হয়নি। যাবো যাবো বলেও যাওয়া হয়নি। একসময় যাবার ইচ্ছে আছে। তখন পার্বত্য চট্টগ্রামের সবকটা জায়গা ঘুরে দেখবো। সাজেক, রুইলুই-সহ সব। তাতে যে- ক’দিন সময়ই লাগুক। দিনেক পনেরো দিনের সময় নিয়ে বেরুবার ইচ্ছে আশে।
আপনার জন্য শুভকামনা।
আকবর হোসেন রবিন
আপনার জন্যও শুভকামনা ও ভালোবাসা রইল।
নিতাই বাবু
হবে “আছে” হয়ে গেল ‘আশে’। হাঁটাচলার মাঝেই আমার মন্তব্য চলে। তাই মাঝে মাঝে এমনই হয়। বুঝে নিবেন আশা করি।
আকবর হোসেন রবিন
সমস্যা নেই। আমারও এমন হয়, টাইপ করার সময় খুব দ্রুত করি, এতে করে অনেক কিছু এলোমেলো হয়ে যায়। ফেসবুকে হলে পরে এডিট করা যায়। ব্লগে এডিট করার কোন অপশনই দেখতে পারছি না।
ইঞ্জা
সাজেকের অপরূপ রূপের কথা বহুবার শুনেছি, চট্টগ্রামের ছেলে হলেও এখনো সাজেক যাওয়া হয়ে উঠেনি।
স্থানীয় মদের কথা বললেন, যার নাম তাঁড়ি, ভাত পঁচিয়ে এই তাঁড়ি বানানো হয়, খেতে মন্দ না, কিন্তু খুবই অল্প পরিমানে চেখে দেখেছি, এর এলকোহলের মাত্রা খুবই বেশি কিন্তু স্বাদটা মদের মতো কড়া নয়।
চমৎকার ভ্রমণ কাহিনীটির জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ ভাই, অল্প কয়েকটা শব্দের বানান ঠিক করে নিলে ভালো হয়, যেমন বেডকে লিখেছেন ব্যাড – মানে খারাপ।
😊
আকবর হোসেন রবিন
ধন্যবাদ ভাইয়া, ভুল ধরিয়ে দেওয়ার জন্য।
ইঞ্জা
শুভেচ্ছা জানবেন ভাই।
শবনম মোস্তারী
অনেক সুন্দর ভাবে বর্ণনা করলেন ভ্রমণ বর্ণনা।
সাজেক যাওয়া হইনি। যাবার খুব ইচ্ছা। ছবি গুলো অনেক সুন্দর।
আকবর হোসেন রবিন
ছবি গুলো আমার একটা ভাঙ্গা মোবাইলে তোলা। সাজেক বর্ষায় ও শীতে বেশি সুন্দর থাকে। সময় করে গিয়ে ঘুরে আসেন।
জিসান শা ইকরাম
সাজেক যাওয়া হয়নি এখনো, আগেও যাবার ইচ্ছে ছিলো,
আপনার পোষ্ট পড়ে যাবার ইচ্ছে আরো প্রবল হলো।
আদিবাসীদের তৈরী ওয়াইন আমি খেয়েছি, অপুর্ব স্বাদ এর কারনে বুঝতেই পারিনি বেশী খেলে কি হতে পারে। ভালো লাগছিলো বলে অনেক খেয়েছি। কিছুক্ষণ পরে বুঝেছি যে এত খাওয়া কোনমতেই উচিৎ হয়নি।
শুভ কামনা।
আকবর হোসেন রবিন
আমার সাথে যারা ছিলো, তাদের মধ্যে দুইজন খেয়েছে। আমার খাওয়া হয়নি। আপনাদের মন্তব্য শুনে আফসোস হচ্ছে, কেন যে মিস করলাম! আবার গেলে খেয়ে দেখবো।
ধন্যবাদ ভাই।
সাবিনা ইয়াসমিন
পাঁচ জনের ভেতর আপনিই দেখছি খুব সাহসী ! মুরগী জবাই করা কি চাট্টিখানি কথা! 😉
সাজেক যাওয়ার তাড়না দিনদিন বেড়েই চলেছে আমার ভেতর। আপনার এই ভ্রমন বৃত্তান্ত পড়ার পর কদিন টিকবো কে জানে! হুট করে একদিন বেড়িয়ে পরবো। সংগে নিবো আপনার এই গাইডবুক 🙂
ছবি গুলো খুবই নান্দনিক। ভীষন ভালো লাগলো দেখে।
শুভ কামনা অবিরত চাটিগাঁ এর বাহার ভাইয়া 🌹🌹
চাটিগাঁ থেকে বাহার
এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ৪৭ জেলা ভ্রমণ করেছি। খাগড়াছড়ি গেলেও সাজেক এখনো যাইনি। আপনার সাথে সাথে যেন আমিও সাজেক ঘুরে এলাম।
খুব ভালো লেগেছে।
চাটিগাঁ থেকে বাহার
আমার মন্তব্যটি এখানে ভুলে প্রতিমন্তব্য হয়ে গেছে।
যাই হোক, আপনার মন্তব্যে আমার কথা কেন আসলে বুঝিনি….#সাবিনা ইয়াসমিন আপু
আকবর হোসেন রবিন
এমনিতেই আমি অনেক ভীতু। তবে বাসায় কবুতর মুরগী আনলে ওইগুলা জবাই করার দায়িত্ব আমার উপর পড়ে।
সাজেক বর্ষায় ও শীতে বেশি সুন্দর থাকে। সময় করে গিয়ে ঘুরে আসেন।
ধন্যবাদ আপু।
চাটিগাঁ থেকে বাহার
এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ৪৭ জেলা ভ্রমণ করেছি। খাগড়াছড়ি গেলেও সাজেক এখনো যাইনি। আপনার সাথে সাথে যেন আমিও সাজেক ঘুরে এলাম।
খুব ভালো লেগেছে।
আকবর হোসেন রবিন
বাহ্। আশাকরি খুব তাড়াতাড়ি ৬৪ জেলা ভ্রমণ সম্পূর্ণ হবে আপনার। সাজেক বর্ষায় ও শীতে বেশি সুন্দর থাকে। সময় করে গিয়ে ঘুরে আসুন।
ধন্যবাদ ভাইয়া।
আরজু মুক্তা
আমার একটা ভ্রমণ কাহিনী আছে সাজেক নিয়ে, পড়িয়েন।
আকবর হোসেন রবিন
ওকে পড়বো।
মণি কাশফিতা
অসম্ভব সৌন্দর্য অবলোকন করেছি আপনারা লিখায়। সত্যিসত্যিই ☁ মেঘের রাজ্যে হারিয়ে গিয়েছিলাম
মণি কাশফিতা
অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া আপনাকে। আমাদেরকে অসাধারণ সৌন্দর্যের বিশ্লেষণ উপহার দিলেন।
আকবর হোসেন রবিন
আপনাকেও ধন্যবাদ।
কামাল উদ্দিন
পাহাড়ের ডাক সর্বদা আমার মনে বাজে, অনেক দিন তাদের ডাকে সারা দিতে পারছি না…….পোষ্টে ভালোলাগা জানিয়ে গেলাম।
আকবর হোসেন রবিন
ধন্যবাদ।