
আজ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬০ তম জন্মবার্ষিকী। বাংলা ১২৬৮ বঙ্গাব্দের ২৫শে বৈশাখ কলকাতার জোড়াসাঁকোর বিখ্যাত ঠাকুর বাড়িতে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন। করোনার মহামারীতে গতবছর ও জন্মবার্ষিকী, প্রয়াণ দিবস পালন করা হয়নি। এবার ও চারিদিকে মৃত্যু, আতংকের করাল থাবায় অনুষ্ঠান পালন থেকে বিরত থাকতে হচ্ছে সবাইকে। তানাহলে তার জন্মবার্ষিকী সারা বিশ্বে যত বাঙালি আছে, সাহিত্য বোদ্ধারা আছেন সবাই জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে পালন করতেন।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন অগ্রণী বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, সংগীতস্রষ্টা, নাট্যকার, চিত্রকর, ছোটগল্পকার, প্রাবন্ধিক, অভিনেতা, কণ্ঠশিল্পী ও দার্শনিক।তাকে বাংলা ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক মনে করা হয়। রবীন্দ্রনাথকে “গুরুদেব”, “কবিগুরু” ও “বিশ্বকবি” অভিধায় ভূষিত করা হয়। রবীন্দ্রনাথের ৫২টি কাব্যগ্রন্থ, ৩৮টি নাটক, ১৩টি উপন্যাস ও ৩৬টি প্রবন্ধ ও অন্যান্য গদ্যসংকলন তার জীবদ্দশায় বা মৃত্যুর অব্যবহিত পরে প্রকাশিত হয়। তার সর্বমোট ৯৫টি ছোটগল্প ও ১৯১৫টি গান যথাক্রমে গল্পগুচ্ছ ও গীতবিতান সংকলনের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের যাবতীয় প্রকাশিত ও গ্রন্থাকারে অপ্রকাশিত রচনা ৩২ খণ্ডে রবীন্দ্র রচনাবলী নামে প্রকাশিত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের যাবতীয় পত্রসাহিত্য উনিশ খণ্ডে চিঠিপত্র ও চারটি পৃথক গ্রন্থে প্রকাশিত। এছাড়া তিনি প্রায় দুই হাজার ছবি এঁকেছিলেন। রবীন্দ্রনাথের রচনা বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ১৯১৩ সালে গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদের জন্য তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।
বাল্যকালে প্রথাগত বিদ্যালয়-শিক্ষা তিনি গ্রহণ করেননি; গৃহশিক্ষক রেখে বাড়িতেই তার শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৮৭৪ সালে তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা-এ তার “অভিলাষ” কবিতাটি প্রকাশিত হয়। এটিই ছিল তার প্রথম প্রকাশিত রচনা। মাত্র চৌদ্দ বছর বয়সে তার প্রথম কবিতার বই ‘বনফুল’ প্রকাশিত হয়। ১৮৭৮ সালে মাত্র সতেরো বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথ প্রথমবার ইংল্যান্ডে যান। ১৮৮৩ সালে মৃণালিনী দেবীর সঙ্গে তার বিবাহ হয়। ১৮৯০ সাল থেকে রবীন্দ্রনাথ পূর্ববঙ্গের শিলাইদহের জমিদারি এস্টেটে বসবাস শুরু করেন। ১৯০১ সালে তিনি পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে ব্রহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন এবং সেখানেই পাকাপাকিভাবে বসবাস শুরু করেন। ১৯০২ সালে তার পত্নীবিয়োগ হয়। ১৯০৫ সালে তিনি বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯১৫ সালে ব্রিটিশ সরকার তাকে ‘নাইট’ উপাধিতে ভূষিত করেন। কিন্তু ১৯১৯ সালে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে তিনি সেই উপাধি ত্যাগ করেন। ১৯২১ সালে গ্রামোন্নয়নের জন্য তিনি শ্রীনিকেতন নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠিত হয়। দীর্ঘজীবনে তিনি বহুবার বিদেশ ভ্রমণ করেন এবং সমগ্র বিশ্বে বিশ্বভ্রাতৃত্বের বাণী প্রচার করেন।
তাঁর বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ হলো সোনার তরী, মানসী, চিত্রা, চৈতালী। বিখ্যাত নাটক অচলায়তন, বিসর্জন, রক্তকরবী, ডাকঘর। বিখ্যাত উপন্যাসের মধ্যে গোরা, শেষের কবিতা, নৌকাডুবি, চোখের বালি ইত্যাদি।
তাঁর লেখার সরলতা সবাইকে আকৃষ্ট করে; তার লেখায় জীবনাদর্শন, তখনকার সময়ের ঘাত-প্রতিঘাতগুলো, প্রেম-বিরহ সবকিছুই খুঁজে পাওয়া যায়। তার লেখা গানগুলো যুগ যুগ ধরে আজো সবার কাছে সমান জনপ্রিয়। গানের কথায়, সুরের সাবলীলতা সবাইকে মুগ্ধ করে রাখে। শতবর্ষ আগের প্রেক্ষাপট আজো আমাদের বর্তমান সমাজ-ব্যবস্থার সাথে মিলে যায় কতোটা দূরদর্শী হলে এভাবে ভাবতে পারে! তার প্রতিষ্ঠিত ‘শান্তি নিকেতন’ এ আজো অসংখ্য শিক্ষার্থী পাঠদান নিচ্ছে। শান্তিনিকেতন পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার বোলপুর শহরের নিকট অবস্থিত একটি আশ্রম ও শিক্ষাকেন্দ্র। ১৮৬৩ খ্রিষ্টাব্দে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর নিভৃতে ঈশ্বরচিন্তা ও ধর্মালোচনার উদ্দেশ্যে বোলপুর শহরের উত্তর-পশ্চিমাংশে এই আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯০১ সালে রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতনে ব্রহ্মবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন, যা কালক্রমে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপ নেয়। ১৯১৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর বিশ্বভারতীর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ। এরপর ১৯২১ সালের ২৩ ডিসেম্বর, (১৩২৮ বঙ্গাব্দের ৮ পৌষ) রবীন্দ্রনাথের উপস্থিতিতে আচার্য ব্রজেন্দ্রনাথ শীল বিশ্বভারতীর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন এখানে। ১৯৫১ সালে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ভারতের কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা লাভ করে।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ২২শে শ্রাবণ পরলোকগমন করেন। বিশ্বকবি রবিঠাকুরের ১৬০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি রইলো। যতদিন বাঙালি থাকবে, সাহিত্য থাকবে, সংগীত থাকবে ততোদিন তাঁর নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে বিশ্বজুড়ে।
ছবি ও তথ্য-গুগল
২০টি মন্তব্য
আলমগীর সরকার লিটন
অনেক শ্রদ্ধা জানাই কবি দিদি
সুপর্ণা ফাল্গুনী
অসংখ্য ধন্যবাদ কবি প্রথম মন্তব্যের জন্য। ভালো থাকুন নিরাপদে থাকুন শুভকামনা নিরন্তর
রোকসানা খন্দকার রুকু
আসলেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মানেই অন্যরকম কিছু। যতদিন বাঙ্গালী থাকবে ততোদিন তিনিও অমর তার কর্মে।
সাহিত্যে তাঁর অবদান অপরিসীম । এমন মানুষের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা রইলো।
আর দিদিভাই মনে করে এমন গুরুত্বপূর্ণ পোষ্ট দেবার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
আপনাকেও অফুরন্ত ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই নিয়মিত অনুপ্রেরণায় রাখার জন্য। ভালো থাকুন নিরাপদে থাকুন শুভকামনা অবিরাম
আরজু মুক্তা
বিনম্র শ্রদ্ধা।
রবি ছাড়া একদিনও চলে না আমার।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
রবি আছে মিলেমিশে একাকার হয়ে আমাদের বাঙ্গালীর আত্নায়। ভালো থাকুন সবসময় শুভ কামনা নিরন্তর
প্রদীপ চক্রবর্তী
তথ্যসমৃদ্ধ লেখনী।
যারা প্রকৃতভাবে সাহিত্যচর্চা করে তারা রবি ছাড়া অসহায়।
তাঁকে নিয়ে বলার কিছু নেই।
.
প্রণাম লহ গুরুদেব।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন শুভ কামনা নিরন্তর
জিসান শা ইকরাম
রবীন্দ্রনাথ আমাদের অস্তিত্বে মিশে আছেন।
তাঁর লেখাকে ধারন করতে পারলে শুদ্ধ জীবন যাপন সম্ভব।
কবি গুরুর প্রতি রইল আন্তরিক শ্রদ্ধাঞ্জলি।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
সেটাই তার লেখাকে যারা ধারণ করে তারা কখনো দূষিত হতে পারে না। অসংখ্য ধন্যবাদ দাদা ভাই। ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন শুভ কামনা সতত
হালিমা আক্তার
বিনম্র শ্রদ্ধা রইলো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে ছাড়া বাংলা সাহিত্যে চিন্তাই করা যায় না। শুভকামনা।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
অফুরন্ত ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা আপু। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন শুভকামনা অবিরাম
তৌহিদুল ইসলাম
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬০ তম জন্মবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা জানাই তাঁকে। অনেক তথ্য নির্ভর লেখা পড়লাম আপু।
চমৎকার পোষ্ট। শুভকামনা জানবেন।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া পাশে থাকার জন্য, অনুপ্রেরণায় রাখার জন্য। আপনার জন্য ও শুভকামনা রইলো
ছাইরাছ হেলাল
তাঁকে নিয়ে বলার সাহস এ জীবনে হবে বলে মনে হয় না।
আপনাকে ধন্যবাদ, অনেক কিছুই লেখায় নিয়ে এসেছেন।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
অফুরন্ত কৃতজ্ঞতা রইলো। ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন শুভ কামনা নিরন্তর
বোরহানুল ইসলাম লিটন
বিশ্ব কবির প্রতি অনন্য শ্রদ্ধাঞ্জলী প্রিয় কবি
যিনি সাহিত্যের আকাশের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র
হয়ে চিরকাল অমলিন ভাবে জেগে আছেন এবং থাকবেন।
আন্তরিক শুভ কামনা রেখে গেলাম চিরন্তন।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন শুভকামনা সতত
আশরাফুল হক মহিন
বিনম্র শ্রদ্ধা
রবীন্দ্রনাথকে ভালো না বাসলেও কাজী নজরুলকে ভালোবাসি।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
ভালোবাসেন না কেন? অসংখ্য ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য। শুভ সন্ধ্যা