তরু হাটছে তমালের পিছুপিছু। নিউমার্কেটে গেছে বিশেষ এক কাজে। শপিংয়ের নিষেধাজ্ঞা থাকায়, তরু কিছু কিনছে না। কারন তমাল। তমালের কাছে ক্রেডিট কার্ড কয়েকটা থাকলেও নগদ টাকা বেশি নেই। আবার তরুর যা পছন্দ ওগুলো ক্রেডিট কার্ডে কেনা যায়না। বিশ-পঞ্চাশ বড়জোড় পাঁচশত টাকা দামের জিনিসগুলোর জন্যে ফুটপাতের দোকানীরা ক্রেডিট মেসিন রাখেনি। কি আর করা! 🙁
– আচ্ছা তরু, তুমি পিছুপিছু হাটছো কেন? আমার টেনশন হয়।
– টেনশনের কি আছে! আমি আসলে তোমার পিছনে হাটি যাতে তোমাকে দেখতে পারি। ভালোমতো খেয়াল রাখতে পারি।
– মানে! পিছনে থেকে দেখবে কেন? আর পিছনে থেকে কিভাবে খেয়াল রাখবে!
– দেখি, তুমি অন্যকোনো মেয়ের দিকে তাকাও কিনা। আবার ভুল করে অন্যকাউকে জান/জানু বলে ফেলো কিনা। এসবতো খেয়াল রাখতেই হয় ;
– হুম, বুঝেছি।
তরু মনেমনে হাসে। ও বলতে পারে না আসল কথাটি। তরু চায় তমাল সব সময় ওর চোখের সামনে থাকুক। একদম চোখের সামনে। পাশে নয়, চোখের আড়ালেতো নয়-ই। 🙂
কাজ শেষ, এবার বাড়ি যেতে হবে। শরতের বৃষ্টি এই আসে এই যায়। হালকা বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো হঠাৎ করেই। তমাল দ্রুত রিক্সা খুঁজতে শুরু করলো। রিক্সা আছে অনেক কিন্তু পর্দা নেই। 🙁
এক,দুই,তিন,চার,পাঁচ নাম্বার রিক্সা বাদ দিতে হলো পর্দা না থাকার জন্যে। বরঞ্চ পর্দার কথা জিজ্ঞেস করলেই রিক্সাওয়ালারা এমনভাবে তাকালো, যেনো পর্দাওয়ালা রিক্সা খোঁজা চরম অনৈতিক ব্যাপার 😉
– তরু, ভাবতে পারো বৃষ্টির সময়ে রিক্সাওয়ালারা পর্দা নিয়ে বের হয়না! আবার চাইতে গেলে রেগে যায়! আমরাতো হ্যাজব্যান্ড-ওয়াইফ। পর্দার ভিতরে কোনো অনৈতিক কিছুকি করতে পারি? 😡
– বাদ দাও। ঐযে একজনকে পাওয়া গেছে। চলো ওটায় উঠি।
– উহু, তুমি বুঝতে পারছো না। বৃষ্টির সময়ে পর্দা রাখা খুব জরুরী। সাথে কত দরকারি জিনিস থাকে,ওগুলো ভিঁজে যেতে পারে। আর একটা পর্দার কতোই-বা দাম! এরা যে কেনো রাখেনা।
তরু আবার মনেমনে বলে, ডিয়ার তমাল তুমি আসলেই অদ্ভুদ! ফেসবুকার হলে বুঝতে পর্দার কতো দাম! ৩৭লক্ষ টাকা কি কিছু না! 😀😀
রিক্সায় বসেছে। রিক্সাওয়ালার দেয়া পর্দার বিবরণ না দিলেই না। পর্দাতো নয়, যেনো আস্ত এক তাবু! রিক্সাওয়ালা হয় প্রেমিক নয়তো তালেবান। তার দেয়া পর্দায় তরুর কল্লাটাও ঢেকে গেলো। বেচারী বৃষ্টি ভেজা ঢাকা শহর দেখার আশা বাদ দিয়ে তমালের মুখটাই দেখতে লাগলো। তমালের মুখে তখন কথার পপকর্ন ফুটছে..
– তরু আমরা হানিমুন করতে গেলে কেমন হয়? অন্তত একটা ডেটেতো যেতেই পারি।
– হু পারি। কই নিয়ে যেতে চাও?
– ভাবছি তোমায় নিয়ে পদ্মা-পাড়ি দিবো। তুমিতো কখনো লঞ্চে উঠোনি। লঞ্চেও উঠা হবে আবার বেড়ানোও হবে।
– লঞ্চে উঠিনি এটা জানো, আর সাতার যে পারিনা ওটা ভুলে গেছো? লঞ্চ মাঝ পথে ডুবে গেলে আমার কোনো হদিশ থাকবে?
– আমি আছি না! আমি থাকতে কিসের ভয়?
– ভয়তো সেখানেই। আমাকে বাঁচাতে গিয়ে যদি তুমি ডুবে মরো, তাহলে আমার কি হবে? কিসের আশায় বেঁচে থাকবো? সমুদ্রে জাহাজ ডুবে গেলে বিদেশীরা ওটা নিয়ে মুভি বানায়, আমাদের দেশে লঞ্চ-ডুবি নিয়ে কেউ মুভি বানাবে?
– আচ্ছা, আচ্ছা লঞ্চ বাদ। চলো ট্রেনে চড়ে কোথাও ঘুরে আসি। তোমার ভালো লাগবে।
– তমাল! তুমি এটা ভাবতে পারলে! মনে নেই গতবার ট্রেনে করে ট্রেনিং নিতে যাচ্ছিলাম। তারপর ওয়াসরুমে গিয়ে বিপদে পরেছিলাম। তুমি দরজা ধরে দাঁড়িয়ে না থাকলে কি অবস্থাটাই না হতো! ভাগ্যিস তখন সেলোয়ার না পরে এলাস্টিক এর ডিভাইডার পরেছিলাম। নয়তো সেলোয়ারের ফিতাও তোমারই বেধে দেওয়া লাগতো। 😡😡
– ওহ! স্যরি স্যরি ভুলে গেছিলাম। তাহলে চলো এসি বাসে করে সাগর-পাহাড় দেখে আসি। তুমিতো পাহাড়ে দাঁড়িয়ে সাগর দেখতে ভীষণ পছন্দ করো। না বলো না জানু, এবার রাজি হও প্লিজ 😊
তরু এবার কল্পনায় দেখতে থাকে, তমালের সাথে খুব আনন্দের সাথে পাহাড়ে উঠছে। চুঁড়ায় উঠার পর অবাক নয়নে, মুগ্ধতায় উপভোগ করছে চারদিকের নীলাভ-সবুজ-সজীবতা। কোনো দিকে তার ধ্যান নেই। হঠাৎ তমালের ডাক। কাঁচুমাচু মুখ করে আছে। মুখটা লাল হয়ে আছে। পাশ দিয়ে কয়েকজন টুরিস্ট নেমে যাচ্ছে।
– কি হয়েছে তমাল?
– জানু,, ঐ যে পেস্ট কালারের ড্রেস পরা মেয়েটা..
– হু,দেখেছি। তো?
– ঐ মেয়েটা আমার বুকে কনুই দিয়ে ধাক্কা মেরেছে :/
– কি! ঐ মেয়ে তোমাকে ধাক্কা দিয়েছে মানে? মেয়েরা ছেলেদের টিজ করে নাকি? বানিয়ে বানিয়ে বলছো নাতো?
– সত্যিই ধাক্কা দিয়েছে। তুমিইতো বলো আমি খুব সুন্দর। সুন্দর মেয়েদেরকে যদি বখাটে ছেলেরা উত্যক্ত করতে পারে, তাহলে সুন্দর ছেলেদেরকে লুইচ্চা মেয়েরা টিজ করতে পারে না? জানু, আমি না খুব ব্যাথা পেয়েছি :/
আর তখনই তরুর ভাবনার সুতায় টান লাগে..
– নো নো নো তমাল, পাহাড়ে যাবো না। আর তুমিও এত উপরে চড়তে পারবেনা। অন্যকোনো প্লান করো প্লিজ।
– দেখো জানু, আমি কিচ্ছু জানিনা। আমার হানিমুন চাই। কই যাবে, কিসে যাবে, কিভাবে যাবে সব তুমিই ভেবে ঠিক করো 😡😡
* তমাল ক্ষেপেছে। এবার তরু সিরিয়াস হয়ে ভাবতে শুরু করলো…
ঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁ
পূর্বের পর্ব গুলো পড়তে চাইলেঃ
যুগল–১
যুগল-২
৩১টি মন্তব্য
জিসান শা ইকরাম
ট্রেন বাস লঞ্চ কিছুতেই যখন হচ্ছে না,
হেলিকপ্টার ভ্রমন করলেই তো হয় 🙂
নাকি তমাল একটু কিপটা ধরনের?
সাবিনা ইয়াসমিন
তমাল কিপটা না 😡
সে অদ্ভুদ 😊
সে ফেসবুক চালায় না। ফেসবুকার হলে সেলিব্রিটি দের ওয়ালে গিয়ে ঠিক ঠিক জানতে পারতো, আজকাল হেলিকপ্টারে করে ভ্রমন করা কোনো ব্যাপার না 😀😀
মন্তব্যের জন্যে ধন্যবাদ 🙂
জিসান শা ইকরাম
তমাল ৪ পাবো কবে ম্যাডাম?
বেশী দিন অপেক্ষা করিয়েন না,
আবার বলে বইস্যেন না ‘ সবুরে মেওয়া ফলে ‘ ।
বেশী সবুরে কিন্তু তাওয়া ঠান্ডা হয়ে যায় 🙂
নাজমুল আহসান
নিজের “ভাষায়” লিখেছেন, বোঝাই যাচ্ছে! বাপরে!
প্রায় দশ বছর প্রেম করে বিয়ে করেছি। এইসব জানু-ফানু কখনো বলিনি! সবাই অবশ্য বলে আমি সেকেলে।
মনির হোসেন মমি
মন্তব্যের ফান সমালোচনা
তাহলে কি তিনি অন্যের ভাষায় লিখতেন? বুঝিয়ে দিন।আর আপনি এ কালের হয়ে সেকালের হন কি করে? বিস্তারিত পোষ্ট দিন নতুবা ভাবী জানলে খবর আছে আপনার।
নাজমুল আহসান
“নিজের ভাষার” ব্যাপারটা আপনি ধরতে পারেননি। দেখি সাবিনা আপা পারেন কিনা!
আর আমি সেকেলে তাতে সমস্যা হয়নি, আমার বউও সেকেলে! হেহে!
মনির হোসেন মমি
ধন্যবাদ ভাইয়া।আপনাদের জন্য শুভ কামনা রইল।
ছাইরাছ হেলাল
১৯৫০ সনে নিজের ভাষায় ‘ভাসা’ সহজ কম্ম ছিল বলে মনে হয় না।
সাবিনা ইয়াসমিন
@পিচ্চি স্যার 🙂
আপনি একদম ঠিক ধরেছেন। এটা একেবারে নিজস্ব ভাষায় লেখা গল্প। যাকে বলে পিউর অরিজিনাল 😀😀
ইহা মর্ডাণ প্রেমের গল্প স্যার, জান/জানু, জাদু/ কদু সব সম্বোধনে ডাকা-ডাকি বৈধ!! 😂 😂
নাজমুল আহসান
সেটাই বলছিলাম। অভিজ্ঞতার ভাষা। জীবন থেকে নেয়া গল্প 😀
পর সমাচার, আপনি সুন্দর গল্প লিখতে পারেন। আমার মনে হয়, খালি গল্পের ধরণ যদি চেঞ্জ করতে পারেন, তাহলে বাম্পার। হালকা চালের প্লট থেকে সরে এসে একটু জীবন-ঘনিষ্ঠ কিছু লেখার ট্রাই করে দেখতে পারেন। অবশ্য আমি আপনার বেশি লেখা পড়িনি।
ভুল হইলে মাফ কইরা দিয়েন।
সাবিনা ইয়াসমিন
আমার কাছে জীবন ঘনিষ্ঠ লেখা বেশ কঠিন লাগে। গল্প সঠিক ভাবে উপস্থাপন করতে না পারলে লেখাটির অর্থ পালটে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তারপরেও চেষ্টা করবো লিখতে।
মুল্যবান পরামর্শ দেয়ার জন্যে অনেক ধন্যবাদ নাজমুল। 🌹🌹
মনির হোসেন মমি
হা হা হা
শেষটা কোথায় এসে করলেন!হার্টবিট বাড়িয়ে হঠৎ থামিয়ে দিলেন- শুরুইতো করলেন না। এবার কিন্তু আমরা ক্ষেপে যাব। দ্রুত দিন পরের পর্ব।
সাবিনা ইয়াসমিন
ক্ষেইপেন না ছোট্ট ভাই। তরু একটা ফাইনাল ডিসিশন নিতে পারলেই পরের পর্ব নিয়ে আসবো। অপেক্ষা করুন প্লিজ 😊😊
প্রদীপ চক্রবর্তী
আলস্যতার জন্য আমার আগের পর্ব গুলো পড়া হয়নি দিদি।
দয়াকরে লিংক দিবেন।
সাবিনা ইয়াসমিন
লিংক যোগ করে দেয়া হয়েছে প্রদীপ।
শুভ কামনা 🌹🌹
নিতাই বাবু
খুব মজার গল্প তো! কিন্তু আগের পর্বগুলো মনে হয় বাদ পড়ে গেল! তবে আশা করি ধীরেসুস্থে পড়ে নিতেও পারবো। সাথে শুভেচ্ছা শুভকামনা দুটোই রইলো।
সাবিনা ইয়াসমিন
অনেক ধন্যবাদ দাদা। ভালো থাকুন, শুভ কামনা 🌹🌹
তৌহিদ
সব বাদ, নৌকা ভ্রমন শুরু করা যেতে পারে। নৌকায় ছই থাকবে। তরুকে ভেবে দেখতে বলতে পারেন। বেশী ভালোবাসায় তমাল ডুবে ডুবে পানি খাচ্ছেনা শুধু নাকানিচুবানিও খাচ্ছে এটা ঠিক।
দারুন উপভোগ্য লেখা সাবিনা আপু।🌹
সাবিনা ইয়াসমিন
অনেক ধন্যবাদ তৌহিদ ভাই। আপনাদের উৎসাহে এগুলো লিখতে পারি। পাশে থাকার জন্যে ধন্যবাদ সব সময়।
শুভ কামনা 🌹🌹
মোঃ মজিবর রহমান
আলগামনে ঘুরুন গাও গ্রামে ভাল লাগবে। ঝিরঝিরে বাতাস কাদামাটি জলে।
উহু, হাতের কব্জির গুতা বড়ই ব্যাথা বুক্টায়।
খুব ভাল লাগ্ল আপু।
সাবিনা ইয়াসমিন
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ভাইজান।
শুভ কামনা 🌹🌹
মোঃ মজিবর রহমান
আল্গামন নাম শুনেছেন???
রেহানা বীথি
এত ভাবলে মধুর হানিমুনটাই হবে না শেষ পর্যন্ত। ধাঁই করে বেরিয়ে সাঁই করে ঘুরে আসতে বলুন না ওদের!
খুব ভালো লাগলো মিষ্টি গল্প।
সাবিনা ইয়াসমিন
আচ্ছা বলবো 🙂
ধন্যবাদ ও ভালোবাসা ❤❤
ছাইরাছ হেলাল
হোভারক্রাফট ট্রাই করতে পারেন,
ক্রেডিট কার্ড নিয়ে কেউ এখন নিউমার্কেটের চিপায় ঘোরে না, মেগা শপিং মল আছে,
জানু-ফানু বাদ গেছে অনেক আগেই, বাবা/বাবু/বাবাই ছাড়িয়ে অনেকদূর গেছে (শুনেছি),
এখন সস, নিব্বি সহ আরো কত কী নূতন শব্দ বলে/টলে (এর মানে ফেসবুক থেকে পড়ে নিবেন),
ভাল কিছু লেখেন!!
লেখাটির সময়কাল গুলিয়ে গেছে গা!!
সাবিনা ইয়াসমিন
ঐ যে, লেখায় দিয়েছি,, তমাল অদ্ভুদ। যা অন্যরা না করে তমাল তাই-ই করে।
আপনি তাহলে ফেসবুকে ঘুরেন? সস, নিব্বি এগুলো আবার কেমন সম্বোধন? ভিনগ্রহ থেকে আমদানি করা নাকি!!!!
ইঞ্জা
আহা প্রেম করেছো মোরে বিভোর, বেশ এগুচ্ছে আপু, লেখার মাত্রা একদম সঠিক। 😊
সাবিনা ইয়াসমিন
অনেক অনেক অনেকগুলো ধন্যবাদ ভাইজান। 😊😊
শুভ কামনা অশেষ রইলো আপনার জন্যে 🌹🌹
ইঞ্জা
শুভেচ্ছা প্রিয় আপু। 😊
আরজু মুক্তা
তমাল যেহেতু অদ্ভুত তাহলে হেঁটেই যাক। দেখি আর কয়টা মেয়ে পিছে লাগে
সাবিনা ইয়াসমিন
গুড আইডিয়া। তরুকে জানিয়ে দিবো এটা। 🙂
শুভ কামনা 🌹🌹