একঃ
অলস ভঙ্গিতে বসে আছি আমার রুমে, চট্টগ্রামের নেভির কার্যালয়ে। বসে বসে এসির বাতাস খাওয়া ছাড়া আপাতত কিছু করার নেই। একটু আগেই নেভির সদ্য কমিশন্ড ব্যাচের অফিসারদের সাথে একটা সেমিনার শেষ করে আসলাম। বর্তমানের অফিসারেরা যথেষ্ট চৌকস ও মেধাবী। আমাদের সময়ে একসাথে এত মেধাবী অফিসার খুব কমই পাওয়া যেত। কিন্তু বর্তমানে অনেকেই মিলিটারিতে যোগদান করছে। ব্যাপারটা আমাদের দেশের জন্য ইতিবাচক বটে। বর্তমানেও নেভিতে ম্যান পাওয়ার প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট কম। তবে যেই হারে এগিয়ে যাচ্ছে আশা করছি আগামী ১০বছরের মধ্যে এই সমস্যা অনেকাংশে মিটে যাবে।
ভাবনায় ছেদ পড়লো আমার টিভিতে একটা নিউজ দেখে। আল-কায়েদার নেতা কর্তৃক দেওয়া হুমকি ও এর তদন্ত নিয়ে করা একটা প্রতিবেদন।
আল-কায়েদার নেতা আল-খাজাইরির হুমকি জনিত ভিডিও বার্তা প্রকাশ পাওয়ার সাথে সাথেই তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে বাংলাদেশের মিলিটারি ইন্টিলিজেন্স ও ডিজিএফআই-এর হেডকোয়ার্টারে। অবস্থা এমন যেন মৌমাছির চাকে কেউ ঢিল মেরেছে !! প্রত্যেক এজেন্ট, প্রত্যেক অফিসারকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। যে কোন মূহুর্তে যে কারো ডাক পড়তে পারে। প্রথমে ভেবেছিলাম হয়তো এইবারো আমার ডাক পড়বে। কিন্তু শীঘ্রই কোন ডাক না পড়ায় ভেবেছিলাম এইবার হয়তো আমার প্রয়োজন হবে না।
বলাই বাহুল্য ডাক না পড়ায় মনে মনে একটু খুশিও হয়েছিলাম। এই ধরণের কেসে কাজ করাটা অনেক চাপের ব্যাপার। যতদিন দায়িত্ব থাকবে মাথার মধ্যে খালি ঘুরপাক খাবে আমার একটা ভুল পদক্ষেপের কারণে দেশের মস্ত বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। সব মিলিয়ে কিছুটা নির্ভার হয়েই চট্টগ্রামের সুন্দর পরিবেশে দিন অতিবাহিত হয়ে যাচ্ছিল আমার। কল্পনাও করিনি ভিডিও বার্তা প্রকাশের ১৫দিন পরে ঢাকার ডিজিএফআই হেডকোয়ার্টার থেকে আমার ডাক পড়বে !!
ওইদিন রাত প্রায় ১০টার দিকে মোবাইলে মেসেজ আসলো ডিজিএফআই-এর প্রধান মেজর জেনারেল শাখাওয়াতের নাম্বার থেকে। মেসেজে আমাকে পরেরদিন সকাল ১০টায় ডিজিএফআই কার্যালয়ে উপস্থিত থাকতে বলা হয়।
সিউর সিরিয়াস কোন কেস !! নাহলে এই রাতের বেলায় এত জরুরী তলব করা হতো না। দুই মিনিটের মধ্যেই ফোন এলো আমার কমান্ডিং অফিসার কমোডর আব্দুর রবের। জিজ্ঞেস করলেন যে শাখাওয়াত স্যারের মেসেজ পেয়েছি কিনা।
জানালাম পেয়েছি।
উনি আমাকে পরদিন সময়মত ঢাকায় পৌঁছে যেতে বললেন।
জানালাম ইনশাল্লাহ সময়মত চলে যাবো।
ফোন করলাম আজিজ এয়ারলাইন্সে। ওরা জানালো ওদের আজকের দিনের শেষ ফ্লাইট রাত সাড়ে ৭টায় ছেড়ে গেছে। এখন উপায় !!
ফোন দিলাম গ্রিন লাইন পরিবহণে। ওদের বাসগুলোতে একটাও সিট খালি নেই। সোহাগ পরিবহণে ফোন দিয়ে জানলাম ওদের রাতের শেষ বাসের বিজনেস ক্লাসের একটা সিট আছে। বললাম যেন ওইটাই বুক করে রাখে।
রাত সাড়ে ১২টায় বাস ছাড়বে। তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নিলাম। কাপড়-চোপড় তেমন নেওয়ার ঝামেলা নেই কারণ ঢাকাতে আমার মা রয়েছে। খালি ইউনিফর্ম নিলাম আর আমার পিস্তলটা।
দুইঃ
প্রচন্ড জ্যাম ঠেলে ছয় ঘণ্টার রাস্তা সাড়ে ৮ঘন্টায় পাড়ি দিয়ে ঢাকায় এসে পৌছালাম সকাল ৯টার দিকে। হাতে এক ঘণ্টা রয়েছে। বাসায় গিয়ে হাত-মুখ ধুয়ে, নাস্তা করে আবার বের হয়ে গেলাম। উদ্দেশ্য ডিজিএফআই হেডকোয়ার্টার। ১০টা বাজার ৫ মিনিট আগেই চলে আসলাম কার্যালয়ে। দেখা হলো পুরানো বন্ধু লেঃ কর্ণেল ইয়াসিরের সাথে। ঠিক ১০টায় ডিজিএফআই প্রধানের রুমে মিটিং শুরু হলো। জানতাম না মিটিং এর বিষয় কি ছিল। তবে যেটা অনুমান করেছিলাম সেটাই সঠিক হলো। বিষয় হচ্ছে আল-কায়েদার হুমকি !!
রুমে রয়েছে মেজর জেনারেল শাখাওয়াত, মিলিটারি ইন্টেলিজেন্সের ডাইরেক্টর কর্ণেল সুলতান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর সামরিক উপদেষ্টা, ইয়াসির, আমি, ডিবির প্রধান, সিআইডি প্রধান আর প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও ডিজিএফআই এর দায়িত্বশীল উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা।
কোন ভূমিকাতে না গিয়েই শাখাওয়াত স্যার আমাকে বললেন, ” নিশ্চয়ই বুঝতে পারছো সিরিয়াস মামলা না হলে তোমাকে এইভাবে তলব করতাম না। আল-কায়েদার এই কেস এখন সিরিয়াস পর্যায়ে চলে গেছে। যেভাবেই হোক এর একটা বিহিত করতেই হবে তোমাদের। ”
– আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো, স্যার।
– চেষ্টা না কমান্ডার, সিউর করতে হবে। নাইলে এই দেশ পাকিস্তান-আফগানিস্তান হয়ে যেতে সময় লাগবে না।
– ওকে স্যার।
শাখাওয়াত স্যারের মুখের কথা কেড়ে নিয়ে এইবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলা শুরু করলেন, ” দেখ এই নিউজ তো পেয়েছই যে ডিবি এই ব্যাপারে তদন্ত করছে, তাই না ? ”
– জ্বি স্যার। কালকেই টেলিভিশনে দেখলাম একটা প্রতিবেদন।
– ও যেই অফিসারকে দেখছ, সহকারী কমিশনার সজীব, সে আর জীবিত নেই।
– মানে !!
– হুম। কালকে রাতেই ওনাকে রমনার ডিবি কার্যালয়ের সামনে একটি চলন্ত লাল মাইক্রোবাস থেকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।
– ওহ !!
– গুলি কিন্তু কোন যা তা বন্দুক থেকে করা হয়নি। এসএমজি-৩০।
– কি ?? আমার জানামতে এই বন্দুক বাংলাদেশের কোন বাহিনী ব্যবহার করে না।
– ঠিকই জানো।
– তারমানে বন্দুক বাইরে থেকে এসেছে ??
– হ্যা। আরেকটা ব্যাপার ওরা কোন লুকোচুরি করে নাই। সরাসরি এসে গুলি মেরে চলে গিয়েছে।
– মানুষের সামনে ??
– হ্যা। তখন অনেক মানুষ ছিল। কিন্তু তাদের কিছুই করার ছিল না।
– কোন পুলিশ ছিল না সাথে।
– ছিল। কিন্তু এতই আকস্মিক ভাবে ঘটনা ঘটেছে যে কেউ কল্পনাও করতে পারেনি।
– তারমানে ওরা ট্রেইনড ছিল ??
– ইয়েস। দে ওয়ার ট্রেইনড, অ্যান্ড ডেঞ্জারাসলি ট্রেইনড।
– সেই জন্যই আমার ডাক পড়েছে ??
– হ্যা।
– আমার কাজ কি ?? হত্যাকারীকে খুঁজে বের করা ??
– উহু। ওইটা সিআইডি আর ডিবির কাজ। তোমার কাজ হচ্ছে এই হুমকির ব্যাপারে যথাযথ তদন্ত করা। হ্যা এইজন্য তোমাদেরও অবশ্য হত্যাকারীদের খুঁজতে হবে। কারণ এখন আমাদের হাতে কোন সূত্র নেই।
– কিভাবে খুঁজবো ??
– সেটা তোমার ব্যাপার। আমাদের কাছে যা ইনফরমেশন আছে সব তোমাকে দিয়ে দিবো। তোমাকে সাহায্যের জন্য যা করা দরকার তাও করবো। কিন্তু এরপরেরটা তোমার দায়িত্ব।
– অনেক কঠিন হয়ে যাচ্ছে ব্যাপারটা, স্যার। খড়ের গাঁদায় সূচ খোঁজার চেয়েও ব্যাপারটা কঠিন হবে।
– তা হয়তো হবে। বাট কমান্ডার দেশের জন্য এই কাজটাও তোমাকে করতেই হবে। না করতে পারলে পরিণতি যে কি হবে সেটা তো অনুমান করতে পারছোই।
– ওকে স্যার। আমি জীবন দিয়ে হলেও এই কেস সমাধান করবো।
– অল দা বেস্ট কমান্ডার।
– থ্যাঙ্ক ইউ, স্যার।
আমাদের শুভকামনা জানিয়ে একে একে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো সবাই। খালি রয়েছেন ডিজিএফআই আর ইন্টেলিজেন্স-এর কর্মকর্তারা। সবার বের হয়ে যাওয়ার পরে এইবার কথা শুরু করলেন সুলতান স্যার।
প্রথমেই পরিচয় করিয়ে দিলেন আমার সহকর্মীদের সঙ্গে। এই কেসেও আমার সাথে রয়েছে ইয়াসির। এছাড়াও আরো ৭জন চৌকস অফিসার আমার সাহায্যে থাকবে। তাদের সবার পরিচয় সংক্ষেপে তুলে ধরছি, উইং কমান্ডার তাশফিক আমার এককালের ক্লাসমেট ছিল, মেজর নাজমুল, ক্যাপ্টেন বাধন, ক্যাপ্টেন পার্থিব, লেফটেন্যান্ট রবিন, সাদমান আর রাকিব।
এরা প্রত্যকেই অন্ত্যন্ত চৌকস বলেই এদের এই কেসে রিক্রুট করা হয়েছে।
পরিচয় পর্ব শেষে সুলতান স্যার কেস নিয়ে আলোচনা শুরু করলেন,
– দেখ সহঃ কমিশনার সজীবের কেস ফাইল আমাদের কাছে আছে।
– হুম।
– তবে আগেই বলে রাখি গুরুত্বপূর্ণ তেমন কিছু নেই। তবে তোমাদের কর্ম পরিকল্পনা ঠিক করতে কাজে দিতে পারে।
– আচ্ছা স্যার সজীবকে হত্যার কারণ কি হতে পারে??
– সিউর না। কেন ??
– না এমন হতে পারে উনি তদন্ত করে এমন কিছু বের ফেলেছিলেন যেটা জঙ্গিদের জন্য ক্ষতির কারণ। তাই হয়তো ওনাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
– হতে পারে। তবে মনে রেখো এরা অন্য ধরণের ক্রিমিনাল। হতে পারে টিভিতে তাকে দেখে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যাতে করে একটা বার্তা দেওয়া যায়।
– সেটাও হতে পারে।
– সবদিক চিন্তা করেই কাজ করো তোমরা। আর হ্যা তোমাদেরকে সাহায্যের জন্য পুরা বাংলাদেশের সমস্ত ফোর্স প্রস্তুত রয়েছে। যে কোন সময় তোমরা সাহায্য চাওয়া মাত্রই পেয়ে যাবে।
– ধন্যবাদ স্যার।
– আর হ্যা আমাদের সহঃ সজীব এই কেস ফাইলের উপরে কেসের নাম দিয়েছেন মিশন দুর্জয়। ওনার সম্মানার্থেই আমাদের এই মিশনের নামও হচ্ছে, ” মিশন দুর্জয় ”
– ইন্টারেস্টিং
– কেন ??
– নামটা কেমন জানি !! এই নামকরণের কারণ কি বলতে পারেন ??
– আমার জানা নেই। ওর সহকারিদের জিজ্ঞেস করে দেখো।
– ওকে স্যার।
– আমাদের হাতে যা কিছু ইনফরমেশন আছে সব এই ফাইলে পেয়ে যাবে।
– ওকে স্যার।
– আর কোন প্রশ্ন ??
– স্যার সজীবের সহকারি কে ছিল এই কেসে ??
– দুইজন ছিল। অতিরিক্ত সহকারি কমিশনার আসাদ এবং এসবির ইন্সপেক্টর সোবহান।
– ওদের সাথে কথা বলা যাবে ??
– হ্যা ওদেরকে পুলিশের হেফাজতে রাখা হয়েছে কারণ ওদেরও যেন সজীবের মত পরিণতি না হয়।
– ও ভালো উদ্যোগ।
– আর কোন প্রশ্ন ??
– নো স্যার।
– ওকে দেন ইউ মে গো কমান্ডার। অল দা বেস্ট এগেইন।
– থ্যাঙ্ক ইউ স্যার।
তিনঃ
ইয়াসিরের রুমে মিটিং চলছে আমাদের। কিভাবে কাজ করা যায়। ইতিমধ্যই সুলতান স্যারের দেওয়া ফাইলটা পড়ে ফেলেছি। ডিবির ওই অফিসারের তদন্ত রিপোর্টটাও পড়েছি। যথেষ্ট তথ্যবহুল হলেও কাজের তথ্য খুব একটা নেই। তবে ওনার সাসপেক্ট লিস্টটা গুরুত্বপূর্ণ। আপাতত এই সাসপেক্ট লিস্টের সবার ব্যাপারে তদন্ত করার ইচ্ছে আমার। ইচ্ছের কথা জানিয়ে দিতেই সবাই রাজি হয়ে গেলো। কারণ একভাবে না একভাবে কাজ তো শুরু করতেই হবে।
যদিও এইভাবে কাজ শুরু করাটা আমার জন্য পছন্দ হচ্ছে না। কারণ এইভাবে অন্ধকারে হাতড়ে কতদূর যাবো !! তবে আশা করি একটা না একটা উপায় পাওয়া যাবেই।
সহঃ কমিশনার সজীবের তদন্ত প্রতিবেদনে সাস্পেক্ট লিস্টে মোট সাত জনের নাম রয়েছে। প্রথমজন হচ্ছেন বর্তমান সরকারের একজন প্রতিমন্ত্রী, এরপরের দুইজন নামকরা ব্যাবসায়ী মিঃ সিদ্দিক এবং মিঃ আশরাফ, চতুর্থজন বিরোধীদলীয় উচ্চপদস্থ নেতা আর পঞ্চমজন মাওলানা রিয়াজ যে আগে থেকেই বিভিন্ন জঙ্গি তৎপরতার জন্য ব্ল্যাক লিস্টেড, যদিও তাকে আদালতে দোষী সাব্যস্ত করা যায়নি। ষষ্ঠজন হচ্ছে একজন অবৈধ ড্রাগ ও অস্ত্রের ডিলার, মোঃ আবুল, যে আরো তিন বছর ধরেই ওয়ান্টেড লিস্টে রয়েছে আর সর্বশেষে হচ্ছেন সেনাবাহিনীর বহিস্কৃত এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা।
দুই ক্যাপ্টেন আর একজন মেজরকে নিয়ে আলাদা তিনটা দল করে দিয়ে প্রত্যেক দলে একজন করে লেফটেন্যান্ট দিয়ে দিলাম। এই তিন দল আজকে আপাতত দুই ব্যাবসায়ী আর বহিষ্কৃত সেনা কর্মকর্তার সাথে সাক্ষাৎ করবে। বাকিদেরটা আগামীকালকে আমরা দেখবো।
তিন দল বের হয়ে যাওয়ার পরে আমরা নিজেদের মধ্যে কেস নিয়ে আলোচনা শুরু করলাম …
” তো তুমি এখন কি করতে চাও?? ” প্রশ্ন তাশফিকের।
– আপাতত সজীবের দুই সহকারির সাথে কথা বলতে যেতে চাই। সজীব কোন আ্যংগেল থেকে কেসটা তদন্ত করেছে বিস্তারিত জানতে হবে।
– ওকে দেন লেটস মুভ।
রাজারবাগে পুলিশের সেফ সেলে আসতে প্রায় ঘন্টাখানেক সময় লেগে গেলো আমার আর তাশফিকের। ইয়াসিরকে অফিসে রেখে এসেছি জরুরী কোন দরকার পড়লে তাকে প্রয়োজন হতে পারে।
গিয়ে পরিচয় দিতেই ছুটে আসলেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা। আসার উদ্দেশ্য জানালাম তাদেরকে। ওনারা আমাদের একটা রুমে নিয়ে গিয়ে বসে অপেক্ষা করতে বললেন।
৫ মিনিট পরেই রুমে প্রবেশ করলো একজন অল্পবয়সী তরুণ আর মাঝবয়সী সুঠামদেহী এক ভদ্রলোক। নিজেরাই পরিচয় দিলো ইন্সপেক্টর সোবহান আর এডিসি আসাদ। দুই জনকেই বসতে বললাম। বসেই আসাদ জিজ্ঞেস করলো, ” স্যার, মিশন দুর্জয়ের দায়িত্ব কি আপনাদের দেওয়া হয়েছে ?? ”
আমি মাথা নেড়ে হ্যা-সূচক সম্মতি দিলাম। তারপরে একটু থেমে প্রশ্ন করলাম, ” আচ্ছা আসাদ, বলেন দেখি আপনার সজীব স্যার কোন আ্যংগেল থেকে তদন্ত শুরু করেছিলেন?? ”
প্রশ্ন শুনে আসাদ সোবহানের দিকে তাকাতেই গলা ঝেড়ে পরিষ্কার করে নিলো সে। তারপর বললো, ” স্যার, আমি এই কেসে শুরু থেকে সজীব স্যারের সাথে ছিলাম। হুমকি বার্তা প্রকাশ হওয়ার পরেই স্যারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। স্যার প্রথমেই কমিউনিকেশনস ডিপার্টমেন্টের সাহায্যে ভিডিও প্রকাশিত ওয়েবসাইটটির প্রতিষ্ঠাতাকে আটক করেন। তার দেওয়া তথ্য থেকেই বের হয়ে আসে সাসপেক্টদের নাম। ”
– সজীব সাসপেক্টদের সাথে কথা বলেছিলেন ??
– সাসপেক্ট লিস্টের মাওলানা আর আবুল ছাড়া সবার সাথেই কথা বলা হয়েছে কিন্তু কোন সূত্র পাওয়া যায়নি।
– আচ্ছা এই মিশনের নামকরণের কোন বিশেষ কারণ আছে ??
– সজীব স্যার বলতেন এই মিশন জয় করাটা হবে অনেক দুঃসাধ্য ব্যাপার। তাই তিনি এর নাম দেন দুর্জয়।
– ও আচ্ছা। আরেকটা ব্যাপার সজীবকে যখন হত্যা করা হয় তখন আপনাদের কেউ তার সাথে ছিলেন ??
” জ্বি স্যার, ছিলাম। ” প্রায় একই সাথে জবাব দিলেন দুজন।
– যদিও ফাইলে পড়েছি তাও আপনাদের মুখ থেকে আবার শুনতে চাই। ঠিক কি হয়েছিল সেইদিন ??
” অফিসে কাজ শেষ করে আমরা আর সজীব স্যার বের হয়েছি। ড্রাইভারকে গাড়ি বের করতে বলে স্যার বাইরে গিয়ে দাঁড়ান সিগারেট খাবেন বলে। উনি আবার অফিসে বা গাড়িতে স্মোক করতেন না সবসময় বাইরে গিয়ে স্মোক করতেন। একটা সিগারেট বের করে ধরিয়েছেন এমন সময় তীব্র গতিতে শাহবাগের দিক থেকে একটা লাল মাইক্রোবাস ছুটে আসে। কিছু বুঝে উঠার আগেই গুলির প্রচন্ড শব্দে কান ঝালাপালা হয়ে যায়। আমরা তাড়াতাড়ি মাটিতে শুয়ে পড়ি, একটু পরে গাড়ি চলে গেছে সিউর হয়ে যখন মাথা তুলি তখন দেখি স্যার মাটিতে পড়ে রয়েছেন আর সারা শরীর রক্তে মাখামখি। যখন ওনার কাছে গেলাম উনি ডেকে খুব মৃদুস্বরে বলতে লাগলেন, ” দুর্জয়ের সাফল্য রামগড় আর দেবীনগরে। ” বললেন সোবহান।
– ফাইলে পড়েছি এইটা। কিন্তু আপনি সিউর এই কথা উনি বলেছেন ??
– মোটামুটি। এইরকমই কিছু বলেছেন। একে তো উনি মৃতপ্রায় অবস্থায় তারউপরে আমিও ওই সময় শকড ছিলাম। তবে উনি এইরকম কিছুই বলেছেন।
– আচ্ছা এরপরে কি হলো ??
– এরপরে স্যার জ্ঞান হারালেন। অ্যাম্বুলেন্স আসলো, হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হলো। ডাক্তার বললেন, ” উনি মৃত। ”
– লাল মাইক্রোবাসের কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য মনে আছে ??
– তেমন খেয়াল করিনি। তবে গাড়ির ডান পাশের ব্যাক লাইটটা নষ্ট বা ভাঙ্গা ছিল। আলো জ্বলছিলো না।
– আচ্ছা গাড়িটা গুলি করে কোথায় গিয়েছে ??
– সোজা রাস্তা দিয়ে চলে গেছে।
– রামগড় আর দেবীনগর কোথায় কোন ধারণা আছে ??
– নাহ। বাংলাদেশের সব রামগড় আর দেবীনগরে তল্লাশি করা হয়েছিল। কিন্তু কোথাও কিছু পাওয়া যায়নি।
– পাওয়া গেলে আপনারা এইখানে আর আমরা এইখানে থাকতাম না।
– তা ঠিক।
– আচ্ছা এই রামগড় আর দেবীনগর কোথায় পেয়েছিলেন আপনারা ??
– রামগড় আর দেবীনগরের নাম আমরা একটা ফার্সি মেসেজ থেকে পেয়েছি।
– ফার্সি !!
– হুম মাওলানা রিয়াজের মোবাইল থেকে। যখন হুমকি জনিত ভিডিও প্রকাশ পায় তখন ডিবি ও সিআইডি তাদের সন্দেহের তালিকাভুক্ত সব মাওলানা, মুফতি এদের বাড়িতে তল্লাশি চালায়। মজার ব্যাপার হচ্ছে একমাত্র এই মাওলানা রিয়াজ বাদে বাকি সবাইকেই তাদের নিজ নিজ বাড়িতে পাওয়া গেছে। কিন্তু মাওলানা রিয়াজ হাওয়া হয়ে গেছে। পাশাপাশি তার বাড়ির গ্যারেজ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ৪টি গ্রেনেড ও ২টি এসএমজি৩০। তবে অস্ত্রগুলো সচল ছিল না।
– ও অনেক ধন্যবাদ আপনাদের।
চারঃ
আমাদের সবাই এখন ডিজিএফআই হেডকোয়ার্টারে ইয়াসিরের রুমে উপস্থিত। যেই তিন দলকে পাঠিয়েছিলাম ওরা রিপোর্ট করেছে। দুই ব্যবসায়ীর সাথে সাক্ষাৎ হলেও বহিষ্কৃত সেনা কর্মকর্তা সোলায়মানের সাথে তাদের সাক্ষাৎ হয়নি। বিশেষ কোন তথ্যও পাওয়া যায়নি।
” আচ্ছা সজীব দুই ব্যবসায়ীকে সন্দেহ করেছিল কেন ?? ” প্রশ্ন তাশফিকের।
– কেস ফাইলে তো দেখলাম ভিডিও প্রকাশকারী ওয়েব সাইটের প্রতিষ্ঠাতা বলেছে তাকে এই ভিডিও প্রকাশ করতে নাকি কোন এক ব্যবসায়ী নির্দেশ দিয়েছে তাও মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে। আর ওই মাসে ঐ ছেলের ব্যাংক একাউন্টে কেবল ঐ দুই ব্যবসায়ীর প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা পাঠিয়েছে।
– ওই ছেলে জানেনা কোনজন তাকে পাঠিয়েছে !! এইটা কেমন কথা ??
– না জানে না কারণ ওই ওয়েবের অনেক কাজ করে। ম্যাক্সিমামই অবৈধ আর যেইজন্য ওর কাস্টমারেরা কখনো পরিচয় দেয় না। জাস্ট কাজ করতে বলে আর কাজ হয়ে গেলে টাকা মিটিয়ে দেয়। তাও অনলাইনেই টাকা ট্রান্সফার করে দেয়।
– মারাত্বক ব্যবসা !! তা ওই ব্যাটাদের বিরুদ্ধে কেস করা যায় তো ??
– তা যায়। তবে ওই কেস পার করতে যে টাকা প্রয়োজন সেটা ওদের কাছে হাতের ময়লা।
– হুম। তাহলে এখন কি হবে ??
– কালকে বহিষ্কৃত সেনা কর্মকর্তা আর বাকিদের সাথে সাক্ষাৎ করবো। তারপরে ভেবে দেখবো কি করা যায় !!
” আচ্ছা আসাদের ভাব-ভঙ্গি কেমন জানি লেগেছে ?? ” ইয়াসির বললো।
– হয়তো শকটা কাটাতে পারেনি।
– পুলিশের একজন এডিসি ও। এখনো শক কাটেনি ??
– কি জানি !!
– ওর ভাব-ভঙ্গি কেমন জানি !! কেসের ব্যাপারে আন্তরিক মনে হয়নি। আর আমরা দায়িত্ব পেয়েছি শুনে কেমন যেন চিন্তিত মনে হলো।
– আরে এইসব চিন্তা এখন বাদ দাও তো।
পরদিন দুপুরে হেডকোয়ার্টারে বসে বসে আলোচনা করছি আমরা …
” আমি, রাকিব আর বাধনকে নিয়ে আজকে বহিষ্কৃত সেনা কর্মকর্তা যার নাম সোলায়মান তার সাথে দেখা করেছি। তবে নতুন কিছু জানা যায়নি। ভদ্রলোক নাকি এখন ব্যবসা করেন। জিজ্ঞেস করতে বললেন যে ওনাকে নাকি ফাঁসানো হয়েছিল যার জন্য ওনাকে সেনাবাহিনী থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে !! ” নিজেদের তদন্তের ব্যাপারে তথ্য দিলো তাশফিক।
” সব অপরাধীই নিজেকে নির্দোষ বলে। ” ইয়াসিরের শ্লেষাত্বক জবাব।
” আচ্ছা কেস ফাইলে দেখলাম সজীব এই সোলায়মানকে সন্দেহ করেছে জঙ্গিদের ট্রেইনার হিসেবে। ” নাজমুল বললো।
” হুম। সন্দেহের কারণ এই লোকের সাথে সাসপেক্ট লিস্টের মাওলানার অনেক খাতির। ”
– মাওলানার সাথে খাতির আছে বলেই সন্দেহের তালিকাতে !! কেমন হাস্যকর না।
– শুধু ওইজন্যই যে তা না আরো কিছু কারণ আছে।
– কি সেগুলো ??
– যেই দুই ব্যবসায়ীকে সাসপেক্ট লিস্টে রাখা হয়েছে তাদের একজন, মিঃ আশরাফের সাথেও এই সোলায়মানের কাগজে কলমে ব্যবসায়ের সম্পর্ক রয়েছে। শুধু এই নয়, মাওলানার মোবাইলের কল লিস্টে সোলায়মানের নাম্বার পাওয়া গেছে। পাওয়া গেছে ওই দুই ব্যবসায়ীর একজন মিঃ সিদ্দিকের নাম্বার এবং বিরোধীদলীয় নেতার নাম্বার। তাও ভিডিও প্রকাশের এক সপ্তাহ আগে থেকে এদের সাথে মাওলানার মধ্যে ঘনঘন যোগাযোগ হয়েছে।
– এই ব্যাপারে তাদের কি বক্তব্য ??
– তাদের বক্তব্য হচ্ছে তারা মাওলানাকে তাদের পরিবারের কি একটা মিলাদের জন্য ডেকেছিল।
– হাস্যকর !! এত মাওলানা থাকতে এই একজনকে নিয়েই টানাটানি !!
– হুম। এই জন্যই তো ওরা সন্দেহের তালিকাতে। তবে শুধু মোবাইলের কল লিস্টে নাম্বার আছে দেখে তো আর তাদেরকে দোষী বলা যায় না। অকাট্য প্রমাণ লাগবে। মাওলানা রিয়াজ যথেষ্ট নামকরা ব্যক্তি। তাকে মিলাদ মাহফিলের জন্য ডাকাটা অপরাধের কিছু নয় আবার অবাস্তবও কিছু নয়।
– তাও ঠিক। কিন্তু এই মাওলানা গেলো কোথায় ??
– আমি কি করে বলবো !!
” আচ্ছা এদের মধ্যে ওই অবৈধ বন্দুক ব্যবসায়ী, আবুল কেমনে আসলো ?? ” প্রশ্ন ইয়াসিরের।
– মাওলানাকে না পেয়ে তার গ্রামের বাড়ি দাউদকান্দিতে হানা দেয় পুলিশ। তার বাড়ির পাশে মাটির নিচ থেকে উদ্ধার করা হয় ১৫টি এসএমজি৩০ আর ২৩টি গ্রেনেড।
– এত !! কোথা থেকে এসেছে ??
– সম্ভবত বর্ডারের ওই পাড় থেকে। আর ওই এলাকা হচ্ছে আবুলের নিয়ন্ত্রণে। কোন ধরণের অস্ত্রের চালান হয়েছে আর সে জড়িত নয় এইটা ভাবা বোকামি।
– আর প্রতিমন্ত্রীকে কেন সন্দেহ করা হয়েছে ??
– ভিডিও প্রকাশকারী ওয়েব সাইটের প্রতিষ্ঠাতাকে আটকের পরে তাকে ছেড়ে দেওয়ার সুপারিশ করাতে। এই ধরণের সেনসিটিভ কেসে কেউ টাকার জন্য সুপারিশ করবে এইটা ভাবা হাস্যকর। তাই ওই মন্ত্রীও সন্দেহের তালিকাতে।
” তাদের সবার সাথে দেখা করে তো কোন কিছু বুঝা গেলো না। তো এখন আমরা করবো কি, স্যার ?? ” প্রশ্ন মেজর নাজমুলের।
– বুঝতে পারছি না। কেসটা শুরুতে যেমন ঘোলাটে ছিল এখনই তেমনই আছে। কোন অগ্রগতিই হয়নি।
” তো আমরা কি বসে বসে আঙ্গুল চুষবো ?? ” তাশফিকের ব্যাংগাত্বক প্রশ্ন।
– না তোমার চুষতে মন চাইলে চুষো বাট আমি চুষবো না।
– তাহলে করবেটা কি ??
– অন্যভাবে ভাবে আগাবো এইবার।
– কিভাবে ??
– একটু ভাবতে দাও।
পাঁচঃ
অনেকক্ষণ ভাবার পরে অন্য বিষয়ে আলোচনা শুরু করলাম, ” এই রামগড় আর দেবীনগরের ব্যাপারটা ইন্টারেস্টিং মনে হচ্ছে। ”
” একটা বিষয় জানো এই খবর পাওয়ার পরে সারা বাংলাদেশের যত দেবীনগর আর রামগড় আছে সব জায়গাতে তল্লাশি চালানো হয়েছে, কিন্তু কিছুই পাওয়া যায়নি। ” তথ্য জানালো ইয়াসির যেটা সজীবের সহকারিরা আমাদেরকে আগেই জানিয়েছে।
– কিছু পেলে আজকে আমাকে এইখানে থাকতে হতো না, বন্ধু।
– তা বটে।
– এইটা কোন সাংকেতিক নাম হতে পারে আবার স্থানীয় নামও হতে পারে।
– তো এখন কিভাবে বের করবা ??
– একটা কথা ভেবে দেখ।
– কি ??
– সজীবকে হত্যা করার পরে জঙ্গিরা একটা লাল মাইক্রোবাসে করে পালিয়ে যায়। রমনা থেকে ওরা সোজা রাস্তা ধরে পল্টন হয়ে গুলিস্তান দিয়ে বের হয়ে গেছে সম্ভবত।
– হতে পারে। আবার কাকরাইল দিয়েও যেতে পারে।
– পারে কিন্তু এই পরিস্থিতিতে ওরা যত দ্রুত সম্ভব ঢাকা ত্যাগ করতে চাইবে।
– কেন ??
– সজীবকে হত্যার আধা-ঘন্টার পরেই শহরে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়। ভেবে দেখ, এই পরিস্থিতিতে ঢাকায় থাকা কি ওদের জন্য সম্ভব?? পুরা শহরে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। পুলিশ-র্যাব তো আছেই পাশাপাশি বিজিবিও নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে। আর মোস্ট ইম্পর্টান্ট হচ্ছে সামরিক বাহিনীর অত্যন্ত চৌকস অফিসারেরা মরিয়া হয়ে মাঠে নেমেছে। সুতরাং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওরা ঢাকা ত্যাগ করতে চাইবে।
– হুম। যুক্তি আছে তোমার কথায়।
– আরেকটা কথা এই ধরণের জঙ্গি কার্যক্রম ঢাকায় বসে চালানো সম্ভব না। নিরিবিলি জায়গা দরকার। ঢাকার এক ইঞ্চিও সেইরকম জায়গা আছে কিনা সন্দেহ !!
– তাহলে ওরা কোন রাস্তায় গেছে বলতে চাও ??
– ওরা সবচেয়ে কাছের রাস্তা দিয়ে ঢাকার বাইরে যেতে চাইবে। আর ওই রাস্তাটা হচ্ছে সোজা পল্টন হয়ে গুলিস্তান দিয়ে।
– এটা তো আগে ভেবে দেখা হয়নি। কিন্তু গুলিস্তান দিয়ে কি করে বের হবে ঢাকার বাইরে ??
– গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী ফ্লাই-ওভার দিয়ে কাচপুর যেতে ৪০-৫০ মিনিটের বেশি লাগে না।
– কিন্তু ওরা কাচপুর কেন যাবে ??
– ঢাকার এক্সিস্ট সব পয়েন্টে সিসি ক্যামেরা আছে একমাত্র কাচপুর আর ডেমরা ছাড়া। ওই পয়েন্টে ক্যামেরা বসানোর কাজ চলছে। কোন ক্যামেরাতেই ওদের লাল গাড়ি দেখা যায়নি।
– ওই পয়েন্টে পুলিশের চেকপোস্ট নাই ??
– আছে। ডেমরাতে আছে।
– কাচপুরে ??
– রিপোর্ট বলছে, পুলিশের চেক পয়েন্ট যাত্রাবাড়ির একটু পরে। ফ্লাই-ওভার দিয়ে গেলে ওই পয়েন্ট এড়িয়ে যাওয়া যায়। আর নেক্সট পয়েন্ট হচ্ছে কাচপুর থেকে সামনে গিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে।
– ও এত দূর্বল চিন্তাভাবনা কেন পুলিশের ??
– ম্যান পাওয়ার কম দেখে এই ভাবে বসানো হয়েছে পয়েন্ট গুলো।
– তাহলে ওরা কাচপুর পার হয়ে বামে মোড় নিয়ে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ধরে গেছে এইটা বলতে চাও??
– এক্সাক্টলি।
– তাহলে কি করবা এখন ??
– আগে গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ি ফ্লাই-ওভারে উঠার রাস্তায় স্থাপিত সিসি ক্যামেরা ফুটেজ চেক করে দেখবো ডান পাশের ব্যাক লাইট ভাঙ্গা বা নষ্ট লাল মাইক্রোবাস ওই সময়ে অতিক্রম করেছে কি না ??
– এরপরে ??
– আগে তো দেখি ফুটেজ কি বলে। তারপরে বাকিটা বুঝা যাবে।
আধা ঘন্টা পরেই ফুটেজ চলে আসলো আমাদের কাছে। যেটা ভেবেছিলাম সেটাই হলো। লাল মাইক্রোবাস হত্যার ঠিক ১৩ মিনিট পরে ওই ফ্লাই-ওভারে উঠেছিল যার ডান পাশের ব্যাক লাইট ভাঙ্গা ছিল।
” আচ্ছা আমার জানামতে ঢাকা সিলেট মহাসড়কে চেক পয়েন্ট আছে একটা। ওরা ওই রাস্তা ধরে গেলে তো চোখে পড়তো। ” অনেকক্ষণ পরে মুখ খুললো তাশফিক।
– জানি। ওইটা আড়াইহাজারের রাস্তায় পড়ে। কিন্তু এর আগে রুপগঞ্জ পুরা খালি।
– তাইলে তো সিউরই বলা যায় ওরা রুপগঞ্জে ??
– ওইখানে না গিয়ে সিউর হবা কি করে ??
” চলো তাহলে আমরা রুপগঞ্জে যাই। ” হটাতই কথার মাঝে প্রস্তাব দিলো ফাহিম।
– হ্যা কালকে যাবো
– আজকে কি হয়েছে ??
– কালকে একেবারে প্রস্তুত হয়ে যাবো আমরা।
– দেরী করলে ওরা যদি পালিয়ে যায় ??
– ইয়াসির ওরা কোন চোর-ছ্যাচোড় নয় যে এদিক ওদিক পালিয়ে বেড়াবে!! ওরা ট্রেইনড জঙ্গি। আর ওরা ওদের ঘাটি ছেড়ে ততক্ষণ নড়বে না যতক্ষণ না ঘাটি ধ্বংস করা হবে।
– তারমানে ওরা ওখানেই থাকবে??
– যদি ঘাটি ওইখানে হয় তাহলে থাকবে।
– তাহলে কি করবো ??
– আপাতত ঢাকার প্রবেশপথ আর রুপগঞ্জের আশেপাশের এরিয়াতে নিরাপত্তা বাড়াতে বলো। প্রয়োজনে যেন বিজিবি মোতায়েন করা হয়।
– ওকে। ওদের বের করতে পারলে তো অনেক কিছু জানা যাবে।
– জানা যাবে তবে সেটা হত্যার ব্যাপারে। অন্য কিছু ওদের কেউ জানবে বলে মনে হয় না।
– কেন ??
– এইসব কাজে সাধারণত যাদের যেই কাজ তাদেরকে কেবল সেই কাজ সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়। অন্য বিষয়ে নয়। ওদের ধরতে পারলে সিআইডির কাজ শেষ হয়ে যাবে কিন্তু আমাদের কাজ শেষ হবে না। আর ওদের ধরার জন্য আমাদের চেয়ে সিআইডি বেশি তৎপর রয়েছে। ভুলে গেলে চলবে না আমাদেরকে হত্যার রহস্য উন্মোচনের দায়িত্ব দেওয়া হয়নি।
– তো আমরা এখন কি করবো ??
– ঘটনার সাথে জড়িত রাঘব-বোয়াল গুলোকে বের করতে হবে। ওই খুনিরা হচ্ছে চুনোপুঁটি। বোয়ালগুলোকে ধরতে পারলে কান টানলে যেমন মাথা আসে তেমনি চুনোপুঁটি গুলোও হাতের নাগালে চলে আসবে। আর শুধু চুনোপুঁটি ধরলে বোয়ালগুলো ঠিকই ঘুরে বেড়াবে। আমাদের কোন লাভই হবে না।
– কোন বোয়াল যদি ওইখানে লুকিয়ে থাকে !!
– সম্ভাবনা কম। যেহেতু ওইখান থেকে অপারেশন পরিচালিত হয়েছে ওইখানে কোন বোয়াল থাকবে না। থাকবে অন্য জায়গাতে। যেই জায়গার দিকে আমরা চোখ তুলেও তাকাবো না ওরা এমন জায়গাতেই যাবে।
ছয়ঃ
পরদিন আমরা সবাই প্রস্তুত হয়েই রুপগঞ্জে গিয়েছি। নির্দেশমত পুরা রুপগঞ্জ ঘিরে ফেলা হয়েছে। আমরা যাওয়ার পরে সিআইডি ও র্যাবের গোয়েন্দা বিভাগের একটা দলও আমাদের সাথে যোগ দিলো। পুরা দুই দিন ব্যাপী অভিযান চালিয়ে তন্ন তন্ন করে ফেলা হলো পুরা রুপগঞ্জ কিন্তু কিছুই পাওয়া গেলো না।
তৃতীয় দিনে হতাশ হয়ে ফেরার চিন্তা-ভাবনা করছি।
বাধন বলছে, ” স্যার দুই দিন হয়ে গেলো। কিছুই পেলাম না আমরা। কি করবো এখন ?? ”
– সেটাই তো বুঝতেছি না।
” তুমি না সিউর ছিলে এইখানেই ওরা আছে ?? ” তাশফিকের প্রশ্ন।
– উহু। ‘ থাকার সম্ভাবনা আছে ‘ বলেছিলাম। ‘ সিউর আছে ‘ বলি নাই।
” তো আমরা এখন কি করবো, স্যার ?? ” নাজমুলের প্রশ্ন।
– আপাতত এই এলাকাতে নিরাপত্তা বাড়াতে বলো। চারদিক থেকে যেন ঘিরে রাখা হয় এই এলাকাটা।
– ইয়েস স্যার।
” ওরা তো নেই এখানে। ঘিরে রেখে কি লাভ হবে ?? ” ইয়াসিরের প্রশ্ন।
– মন চলছে ওরা আশেপাশেই কোথাও আছে।
” ওরা কি তাহলে মাটির তলে রয়েছে নাকি ?? ” তাশফিকের প্রশ্নে ব্যাংগাত্বক ভাবটা স্পষ্ট।
– থাকতেই পারে।
– তাহলে তো মাটির নিচে খোঁজা দরকার ছিল।
– তুমি খোঁজো গিয়ে যাও।
” আমরা কি তাহলে ঢাকা ফেরত যাচ্ছি ?? ” ইয়াসিরের প্রশ্ন।
– হুম।
– রুপগঞ্জ অভিযান তাহলে ব্যর্থ হলো ??
– এখন তাই মনে হচ্ছে।
– মানে ??
– ভবিষ্যতে ভিন্নটাও মনে হতে পারে।
– সেটা হলেই মনে হয় ভালো হবে।
– হয়তো বা।
রুপগঞ্জ ছেড়ে ঢাকা ফিরছে আমাদের গাড়িবহর। কাচপুরে প্রচন্ড জ্যাম দেখে গাড়ি ঘুরিয়ে সোনারগাঁও দিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ইয়াসির। তেমন কোন কথাই হচ্ছে না। সবারই মন ব্যর্থতার বেদনায় আচ্ছন্ন। সবাই এখন এক অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। আমাদের হাতের শেষ চারাটিও ব্যর্থ হলো। এখন কি করবো আমরা !!
রুপগঞ্জে যাওয়া-আসার সময় রুপগঞ্জ থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে একটা কাচা রাস্তা দেখেছিলাম। ওই রাস্তাটা কোথায় গেছে জানতে চাইলেও স্থানীয়রা কোন কিছু পরিষ্কারভাবে জানাতে পারেনি। ভিতরে নাকি জঙ্গল আছে আর পুরানো হিন্দু বাড়ি। মোটকথা ওই জায়গাটা একটু ভূতুড়ে ধরণের দেখে সবাই একটু এড়িয়ে চলে।
একটু পরে পাশে তাকাতেই হটাত চোখে পড়লো সোনারগাঁও লোক জাদুঘর। এই জাদুঘর একটু অন্যরকম কারণ এইখানে দেশের বিভিন্ন এলাকার পুরানো নাম ও নামকরণের ইতিহাস সংরক্ষিত করে রাখা হয়েছে। মনের কি এক ভাবনায় যেন ইচ্ছা হলো জাদুঘরটা ঘুরে দেখার। যেই ভাবা সেই কাজ। গাড়ি থামানোর নির্দেশ দিলাম।
” কি হয়েছে ?? ” জানতে চাইলো ইয়াসির।
– কিছুই হয়নি। জাদুঘরটা একটু ঘুরে দেখতে চাই।
” জাদুঘরে কি ওরা লুকিয়েছে নাকি ?? ” তাশফিকের কন্ঠে ব্যাঙ্গের সুর।
– জানি না। এমনি ঘুরে দেখবো একটু।
– আমাদের এমনিতেই সময় কম।
– জানি। তবে আধা-ঘন্টা ঘুরলে এমন আহামরি সময় অপচয় হবে বলে আমার মনে হয় না।
” আচ্ছা চলো। একটু ঘুরে দেখি। সবার মন যদি একটু চাঙা হয় !! ” বলতে বলতেই গাড়ির দরজা খুলে নেমে পড়েছে ইয়াসির।
একে একে আমরা সবাই নামলাম।
সাতঃ
সোনারগাঁওয়ের এই জাদুঘরটা অসাধারণ। ঘুরতে ঘুরতে কখন যে আধা-ঘন্টা চলে গেলো টেরও পেলাম না। ” আধা-ঘন্টা যে হয়ে গেছে সেইদিকে খেয়াল আছে কারো ?? ” তাশফিকের কথায় মনে পড়লো সময় দেখার কথা।
” ওরে বাপরে !! এত তাড়াতাড়ি সময় চলে গেলো !! কিছুই তো দেখা হলো না। এত সুন্দর সুন্দর জিনিস !! ” ইয়াসিরের আক্ষেপ
” বাদ দাও পরে একসময় দেখা যাবে নে। এখন চলো। আমার আবার জাদুঘর একদমই ভালো লাগে না। ” তাশফিকের তাড়াতে সবাই যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হতে শুরু করলো। আমিও ভাবছি বের হবো এমন সময়েই হটাত চোখে পড়লো ……
একটা ম্যাপ। নারায়াণগঞ্জ আর তার আশেপাশের এলাকার প্রাচীন অবস্থার উপর ভিত্তি করে আঁকা একটা ম্যাপ। ম্যাপে একটু চোখ বুলিয়ে যেতে চাইলাম।
ম্যাপে তাকাতেই দেখতে পেলাম মোটামুটি পরিচিত এলাকা। রুপগঞ্জের আশেপাশেও দেখলাম। হটাত চোখ আটকে গেলো একটা জায়গাতে এসে …
যেই কাচা রাস্তাটার কথা বলেছিলাম সেই রাস্তা দিয়ে ভিতরে প্রায় আধা কিলো গেলে একটা কুমোর পাড়া। যেইখানে আগে দূর্গা পূজার জন্য ও অন্যান্য পূজার জন্য মূর্তি বানানো হত। বাংলার সম্ভ্রান্ত হিন্দুরা ওইখান থেকে মূর্তি অর্ডার দিয়ে বানিয়ে নিয়ে আসতো। কুমোড় পাড়ার সামনে দিয়ে আরো আধা কিলো গেলে একটা প্রাচীন হিন্দু জমিদার বাড়ি।
একাত্তরে পাক বাহিনীর হামলায় পুরো কুমোর পাড়া ধ্বংস করে দেওয়া হয় পাশাপাশি হত্যা করা হয় জমিদার পরিবারের সকল পুরুষ সদস্যকে, মহিলা আর বাচ্চারা গোপন পথে পালিয়ে গিয়েছিল। তারপর থেকেই জমিদার বাড়িটা পোড়ো বাড়িতে পরিণত হয়েছে। পাশাপাশি ওই কুমোড় পাড়াতেও এখন কেউ নেই। এইসব তথ্য পাশের একটা রেফারেন্স বই থেকে পেলাম।
আগ্রহ বেড়ে যাওয়াতে ওদেরকে বললাম, ” তোমরা যাও আমি একটু পরে আসছি। ”
আবার মনযোগ দিলাম ম্যাপটা আর রেফারেন্স বইটার প্রতি। বইয়ের পরবর্তী পৃষ্ঠায় লেখা, ” ওই জমিদার বাড়ির নাম ছিল রায় প্রাসাদ। এই রায় পরিবার প্রায় ১০০ বছর আগে এই মহলটা কিনে নেয় আরেক হিন্দু পরিবারের কাছ থেকে, সেই সময় মহলের নাম ছিল ‘ রামগড় প্যালেস ‘ আর আশেপাশের এলাকার নাম ছিল রামগড় !! আর কুমোড় পাড়াতে সারাবছর দেবীদের মূর্তি তৈরির ধুম লেগে থাকতো বলে তার আরেক নাম ছিল দেবীনগর !! পরবর্তীতে নামটা পরিবর্তন করে কুমোড় পাড়া দেওয়া হয়।
হার্টবিটটা স্পষ্ট অনুভব পারছি। শরীর কাঁপতে শুরু করেছে আমার। অবশেষে তাহলে পাওয়া গেলো দেবীনগর আর রামগড় !! আশেপাশে তাকিয়ে দেখি সঙ্গের কেউ নেই। সবাই বাইরে চলে গেছে।
বাইরে যেতেই দেখি সবাই আমার জন্য অপেক্ষা করছে। আমাকে দেখেই তাশফিক বলে উঠলো, ” প্রফেসর সাহেবের কি জাদুঘর দেখা শেষ হলো নাকি আরো কিছু দেখার বাকি আছে ?? ”
আমার চেহারা দেখেই কিছু একটা অনুমান করে ফেলেছে ইয়াসির। খুব সিরিয়াস গলায় প্রশ্ন করলো সে, ” কি ব্যাপার, কি হয়েছে ?? ”
সবাইকে অবাক করে দিয়ে বোমা ফাটালাম আমি, ” দেবীনগর আর রামগড়ের রহস্য সমাধান করে ফেলেছি। ”
” কি ?? কিভাবে ?? ” সমস্বরে সবার প্রশ্ন।
বিস্তারিত জানাতেই সবাই ছুটলো জাদুঘরে। যেই তাশফিকের জাদুঘর ভালো লাগে না দেখলাম সেই সবার আগে রয়েছে !!
একটু পরেই সবাই বের হয়ে এলো।
ইয়াসির জিজ্ঞেস করে, ” এখন তাহলে কি ওইখানে অভিযানে যাবো আমরা ?? ”
– হ্যা যাবো, তবে এখনই না। আগে নারায়ণগঞ্জে চলো। ওইখানে কিছু কাজ আছে।
– আচ্ছা।
– আর হ্যা এই দেবীনগর আর রামগড় থেকে বের হবার রাস্তা দুটো রয়েছে। দুই রাস্তাতেই দুই প্লাটুন করে বিজিবি মোতায়েন করো এবং পুরা রুপগঞ্জে নিরাপত্তা বাড়াও। প্রয়োজনে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দাও।
– ঠিক আছে।
( চলবে )
১৪টি মন্তব্য
খেয়ালী মেয়ে
অনেক সময় নিয়ে মিশন দুর্জয় পড়ে শেষ করলাম–এখন জানতে ইচ্ছে হচ্ছে এটা কি কোন সত্যি ঘটনা,নাকি শুধুই গল্প….
ওয়াহিদ আব্দুল্লাহ
পড়ে শেষ করলেন মানে?? এখনো তো দ্বিতীয় পর্ব বাকি রয়েছে। আর এইটা সম্পূর্ণই গল্প। কোন সত্যতা নেই এটার মধ্যে। তবে গল্প সম্পূর্ণ মৌলিক। 🙂
খেয়ালী মেয়ে
পড়ে শেষ করলাম মানে যতটুকু পোস্ট করেছেন,মানে ১ম পর্ব 🙂
ওয়াহিদ আব্দুল্লাহ
ও আচ্ছা তাই বলেন !! দ্বিতীয় পর্ব দিয়ে দিয়েছি। আগ্রহ থাকলে পড়ে নিয়েন। ধন্যবাদ।
জিসান শা ইকরাম
পড়লাম অনেকক্ষণ সময় নিয়ে।
এই ধরনের লেখার খুব পোকা ছিলাম আমি
মাসুদ রানা সিরিজের সব বই পড়া থাকতো এক সময়
লাইব্রেরীকে বলা থাকতো বই আসলে প্রথমেই যেন আমি খবর পাই।
ভালো লিখেছেন, চমৎকার উপস্থাপনা।
অপেক্ষা পরের পর্বের ।
ওয়াহিদ আব্দুল্লাহ
ধন্যবাদ। পরের পর্ব যত তাড়াতাড়ি পারি দিয়ে দিবো। 🙂
মোঃ মজিবর রহমান
সুন্দর গল্প দারুন কিছু বিষয় ভাল লেগেছে।
দস্যু বনহুর, মাসুদ রানা মত।
পরের পরবের অপেক্ষায় রইলাম।
ওয়াহিদ আব্দুল্লাহ
ধন্যবাদ।
ব্লগার সজীব
বেশ বড় পোষ্ট। সময় নিয়ে পড়লাম। আপনি কি কোন সংস্থায় আছেন ? লিখলেন কিভাবে এমন করে ?
ওয়াহিদ আব্দুল্লাহ
নারে ভাই আমি কোন সংস্থায় নেই। আমি ঢাকা কলেজের উচ্চমাধ্যমিকের একজন ছাত্র।
লীলাবতী
এত্ত বড় লেখা ! পড়তে পড়তে পড়তে পড়তে আমার নেটে থাকার টাইম শেষ। অন্যের লেখা এখন পড়বো কখন ? ভালো লিখেছেন।
ওয়াহিদ আব্দুল্লাহ
নেট শেষ হয়ে যাওয়াতে দুঃক্ষিত, গোয়েন্দা গল্প একটু বড় হয়েই যায়।
লেখা ভালো লেগেছে এজন্য ধন্যবাদ।
বন্য
গল্প বুঝি এমনি হতে হয়!! নেশার মত, শুরু করলে থামা যায় না এমনকি শেষ হওয়ার পরও একটি রেশ থেকে যায়। আপনার এই লেখা পাঠক আটকে রাখতে পারে। পরের পর্বের জন্য বাধ্য হয়ে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এই ধাঁচের গল্পের পোকা আমি। অভিনন্দন আপনাকে। -{@
ওয়াহিদ আব্দুল্লাহ
পরের পর্ব দিয়ে দিয়েছি। দেরী হয়ে গেছে একটু সেজন্য দুঃক্ষিত। ব্যক্তিগত কিছু সমস্যা ছিল দেখে এমন হয়েছে। আর ভালো লাগার জন্য ধন্যবাদ।