মায়া সবচাইতে আনন্দ পেতো যখন আমি স্কুল থেকে ফিরে ওর দুই কান ধীরে ধীরে টানতাম, মাথায় হাত ভুলাতাম।
এক সময় ও চিত হয়ে শুয়ে পড়তো আর আমি ওর পেটে হাত ভুলাতাম, ঢলতাম, এ ওর খুব পছন্দের ছিলো।
ও ধীরে ধীরে বড় হতে লাগলো, পাঁচ ছয় মাস পর থেকে আব্বা ওর জন্য স্পেসাল মাংস রান্না করানো শুরু করালেন ভাত দিয়ে, অনেকটা বিরানি টাইপের।
এই মজাদার রান্না ওর বেশ প্রিয়, একেবারে চেটেপুটে খায় সে।
এখন প্রতি রাতে গেইট বন্ধ করার পর ওকে ছেড়ে দেওয়া হয়, ও পুরা বাড়ি দৌড়াদৌড়ি করে পা্ড়া দেয়, ওর কারণে ইঁদুর বিড়াল সহ কিছুই আমাদের বাড়ির আঙ্গিনায় আসতে পারেনা।
এক রাতে গেইটে ধাক্কাধাক্কি আর মায়ার চিৎকার শুনে আব্বা বাইরের বারান্দায় বের হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, কে ধাক্কায় গেইট?
ওপাশ থেকে জবাব দিলো একজন, আমাদের এক আত্মীয় এসেছেন দাওয়াত দিতে, রাত প্রায় সাড়ে বারোটা হবে হয়ত।
আব্বা গেইট খুলে দিতেই মায়া শুরু করলো তার স্বরে চিৎকার আর চোখ রাঙ্গানী, এতেই আত্মীয়র আত্মারাম খাঁচাছাড়া।
আব্বা মায়াকে বললেন, এই চুপ কর, ভাগ এইখান থেকে।
সাথে সাথেই মায়া কুঁই কুঁই করে ওর স্থানে গিয়ে চুপ।
আত্মীয় দ্রুত দাওয়াত দিয়ে চলে গেলেই আবার তার শুরু হলো তার দাঁপানি।
ছোটবেলা থেকেই আমাদের অভ্যাস করানো হয়েছিলো, আব্বা যখন সকালে অফিসে যায় আর সন্ধ্যায় ফিরে আসেন, তখন আমরা ভাই বোনরা আব্বাকে কদমবুচি করতাম আর এইটি মায়া লক্ষ করতো।
যেহেতু ও তখন চেইনে বাঁধা থাকতো, এই জন্যই সে ওখানে তার স্বরে চিৎকার শুরু করতো ঘেউ ঘেউ করে, সাথে লাফাতে থাকতো আসার জন্য, এই দেখে আমার আব্বা ওর সামনে গেলে ওর সামনের পা দুটি দিয়ে আমার আব্বার পা ছুঁয়ে দিতো, মানে তিনিও সালাম করবেন এবং করছেন।
এ কদমবুচি করা যেমন আমাদের রুটিন ছিলো, তেমনি ওরও রুটিন ছিলো।
কয়েকদিন ধরে সবাই খেয়াল করছিলো, মধ্যরাতে ও প্রচন্ড চিৎকার চেঁচামেচি করা শুরু করতো মায়া, এইভাবে অনেকক্ষণ চলতো।
আব্বা বুঝতে পারলেন হয়ত চোর বা ডাকাত দেওয়াল পেরিয়ে আসার চেষ্টা করে এইখানে আর মায়া তাদের দেখেই চিৎকার শুরু করে, এইভাবে কয়েকদিন হওয়ার পর আব্বা একজন দারোয়ান রেখে দিলেন, এতে মায়ারও চিৎকার করা বন্ধ হলো।
ওর যত আনন্দ ছিলো আমাদেরকে ঘিরে, সারাদিন আমাদের সাথে খেলতো, আদর দিতো আর নিতো।
আমার আব্বার নিষেধ ছিলো যেন ওকে কোন ধরণের তৈলাক্ত খাবার, ঘি জাতীয় খাবার না দিই, ও এইসব খেলে অসুস্থ হয়ে পড়বে।
আমরা ওকে নিয়েই মক্ত থাকতাম বেশির ভাগ সময়, ওর আরেক ভীষণ পছন্দের ওক বিষয় ছিলো, ওকে ছাড়া রাখা অবস্থায় গেইট খোলা পেলেই দিতো এক দৌড় গেইটের বাইরে আর পাড়ার লোকজন, বাচ্চা পোলাপাইনদের শাসিয়ে আসতো বেশ করে, ওর শরীরটা বেশ মোটাতাজা ছিলো বলেই বেশ বড়সড় লাগতো অন্যান্য দেশি কুকুরের তুলনায়।
ওর শাসানি, মোটা গলায় ঘেউ ঘেউ শব্দ সাধারণ যে কাউকেই ভয় পাইয়ে দিতো, আর এই ভয় পাইয়ে দেওয়াটাই ওর পছন্দের খেলা ছিলো।
এ ওর খেলা থাকলে কি হবে, পাড়ার লোকজন প্রচন্ড ভয় পেতো ওকে, এই জন্যই প্রায় সময়ই আব্বা, আম্মার কাছে বিচার আসতো মায়ার বিরুদ্ধে, অথচ ও কাউকে কখনো কামড়ে দিয়েছে এই রেকর্ড নেই আর দিলেও অসুবিধা ছিলোনা।
আব্বা নিয়ম করে ওকে ডাক্তার দেখাতো, ইঞ্জেকশন দেওয়াতো, আমরা ওর নক সবসময় কেটে দিতাম।
দারোয়ান চাচার মাধ্যমে যেনে ছিলাম, ও প্রথম কয়েকদিন উনার পিছে পিছে রাতে ডিউটি দিলেও, পরে পরে সে দারোয়ান চাচা যেদিকে যেতো সে তার উল্টো পথে গিয়ে পাহারা দিতো।
……. চলবে।
ছবিঃ গুগল।
২৪টি মন্তব্য
তৌহিদ
মায়ার মায়ায় পড়ে গেলাম দাদা। কুকুর প্রভুভক্ত প্রাণী। আমাদের আদর ভালোবাসায় তারাও সিক্ত হয়, পরিবারের সদস্যদের মতই আচরণ করা শুরু করে।
মায়ার স্মৃতিচারণা ভালো লাগছে দাদা।
ইঞ্জা
ধন্যবাদ ভাই, ওর ভালোবাসাকে আমরাও অকুণ্ঠমনে স্মরণ করি।
নিতাই বাবু
‘মায়া’ নিয়ে লেখা পড়ে সত্যি মায়াতেই আবদ্ধ হয়ে গেলাম। মায়ার আচার-আচরণ সম্বন্ধে জানলাম। জানতে চাই এর পরের কাহিনী। আশা করি খুব তাড়াতাড়ি বিস্তারিত জানতে পারবো। শুভকামনা থাকলো দাদা।
ইঞ্জা
মায়া তুলনাহীন ছিলো, ওর প্রভুভক্তি এখনো আমরা মনে করি অকুণ্ঠচিত্তে।
দ্রুতই পাবেন পরের পর্ব, ধন্যবাদ দাদা।
আকবর হোসেন রবিন
চলুক….পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকবো। মায়া লেগে গেছে।
ইঞ্জা
মায়া লাগারই কথা ভাই, দ্রুতই পাবেন এর পরের পর্ব।
মনির হোসেন মমি
মায়ায় পড়ে গেলাম মায়ার। প্রভু একটা মাত্র এদেরকেই বলা যায়। খুব সুন্দর উপস্থাপনা ভাইজান।
ইঞ্জা
ধন্যবাদ প্রিয়জন, ওদের প্রভুভক্তি জগৎ বিখ্যাত, ওদের তুলনায় হয়না।
জিসান শা ইকরাম
কুকুর যে কত উপকারী তা আমারও ধারনা আছে কিছুটা।
আমার ব্রীক ফিল্ডে একটা কুকুর আছে, সে রাতে পাহাড়া দেয় ব্রীক ফিল্ড।
আমরা নিশ্চিন্ত থাকি এতে।
ভালো লাগছে পড়তে,
শুভ কামনা।
ইঞ্জা
কুকুরেরা এমনই হয় ভাইজান, ওদের একটু ভালোবাসা দেখালেই হবে, ওরা আর কখনোই আপনাকে ছেড়ে যাবেনা।
চাটিগাঁ থেকে বাহার
কুকুর বেশ প্রভূ ভক্ত হয়। কখনো বেইমানী করে না।
আমাদের এক সময় কোথা থেকে যেন এক কুকুর এসে থেকে গেল। আমরা ওর নাম দিলাম কালা। কারণ কুকুরটির গায়ের রং ছিলো কালো। সে খুবই অনুগত ছিলো। আমি বা বাবা যখন নদীতে নৌকা পার হয়ে বাজারে যেতাম তখন ও সাঁতার কেটে কেটে আমাদের সাথে বাজারে চলে যেতো। মজার ব্যাপার ছিলো আমি শহরে আসার সময় বাসের পিছনে দৌড়ে দৌড়ে ৭/৮ কিলোমিটার পর্যন্ত চলে আসতো। আমরা ওর আচরণ নিয়ে খুবই আশ্চর্য্যান্বিত ছিলাম। পরে একদিন মরে গেল…….
ইঞ্জা
কুকুরকে আপনি যা দেবেন, তার চেয়েও বেশি সে দেবে, এমনই প্রভুভক্ত হয় ওরা, ওদের প্রভুভক্তি জগৎ বিখ্যাত।
ছাইরাছ হেলাল
কুকুরটাকে হাতের কাছে পেলে আদর করে দিতাম।
আমাদের বিড়াল আছে, তাই অনেক বুঝতে পারি।
আরজু মুক্তা
মায়াবী মায়া
চলুক,,,,,
মোহাম্মদ দিদার
কুকুর নামটা কেমন ঘৃণিত শোনায়!!
অথচ, এদের ব্যাবহার
দু পায়ী কিছু কথিত মানুষের তুলনায় অনেক শুদ্ধ।
সাখিয়ারা আক্তার তন্নী
লিখাটা মন ছুঁয়ে গেলো,
রেজওয়ান
যদি নিজের কখনো বাড়ি হয় তবে আমি আবার কুকুর পালবো। আলাদা একটা দূর্বলতা আছে কুকুরের প্রতি। আর পাখিদের মধ্যে কাক🥰
ইঞ্জা
কাক কেন?
রেজওয়ান
পরিবেশ পরিষ্কার রাখতে অনেক সাহায্য করে। তাছাড়া এক ঝড়ের সন্ধ্যায় একটা কাকের বাচ্চা আমি কুড়িয়ে পেয়েছিলাম। পোষ মেনেছিলো..
ইঞ্জা
বাহ দারুণ তো।
সুরাইয়া পারভিন
মায়ার মায়ায় পড়েছি। কুকুরের মতো বিশ্বস্ত আর কোনো প্রাণী আছে বলে মনে হয় না
ইঞ্জা
স্বাভাবিক, ওকে যারাই দেখেছে জেনেছে, সবাই ওর মায়াতে পড়েছিলো আপু।
জাকিয়া জেসমিন যূথী
লেখাটা ভীষণ সুন্দর। পরের পর্ব কোথায় আছে, খুঁজতে যাই।
ইঞ্জা
শুভকামনা আপু