মমি’র অনুগল্প-পর্ব ০১

মনির হোসেন মমি ৩১ মার্চ ২০১৯, রবিবার, ১০:৪৯:৪০অপরাহ্ন গল্প ১২ মন্তব্য

এক ছেলে এক মেয়ের কথপোকথন:

লোক ভর্তি হল রুম।সম্ভবত তারা কোন এক অনুষ্ঠানের আমন্ত্রিত অতিথী।মেয়েটি ছিল খুব পাজি হ্যান্ডসাম ছেলে দেখলেই হল ছেলেটিকে নাকানি চুবানি খাইয়েই ছাড়বেন।এটা তার বলা যায় এক প্রকার হবি।মেয়েটি এবং হ্যান্ডসাম বয় ছেলেটি পাশা পাশি দাড়িয়ে যে যার বন্ধু বা সমবয়সী লোকদের সাথে কথা বলছিলেন।হঠাৎ মেয়েটি অনেকটা দ্রুতার সহিত পা ফেলে দৌড়ে ছেলেটির কাছে এসে বেশ শব্দ করে বলছিলেন।
-এই যে আপনার কি সমস্যা বলেনতো?
ছেলেটি আশ্চর্য হলেন!চিনিনা জানি না হঠাৎ এ কেরে বাবা!
-জি আমাকে বলছিলেন?
-তবে আর কাকে বলছি…আমি কিন্তু মনোবিজ্ঞানীর ছাত্রী।আমি মানুষের চেহারা দেখলেই বলে দিতে পারি তার চরিত্র।আপনি আমার দিকে তাকাচ্ছিলেন কেন?আমি ইভটিজিং এর মামলা করে আপনাকে চৌদ্দ শিকের ভাত খাওয়াতে পারি জানেন।
-ম্যাডাম!ম্যাডাম আপনি এ সব কি বলছেন আমিতো ঠিক…
-বুঝতে পারছেন না তাইতো!না বুঝারই কথা।আজ ছেড়ে দিলাম আর কোন এমন করলে কিন্তু ছেড়ে দেবো না হুম।

ছেলেটি সহ ছেলেটির সমবয়সীরা মেয়েটির এমন কার্যকলাপে অবাক হয়ে মেয়েটির চলে যাওয়ার দিকে চেয়ে রইলেন।যেন সেই গানের মতন—আমার বলার কিছু ছিলো না,নাগো বলার কিছু ছিলো না-চেয়ে চেয়ে দেখলাম তুমি চলে গেলে …তুমি চলে গেলে…।
ছেলেটিও মেয়েটির পরিচয় খোজঁ খবর নিয়ে বের করে ফেলল।অপেক্ষা কেবল তেমনি একটি মোক্ষম সময়ের।অবশেষে এলো সেই সময়।আবারো তেমনি একটি অনুষ্ঠানে মেয়েটি তার বান্ধবিদের নিয়ে একটি খাবার টেবিলে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন।হঠাৎ ছেলেটি মেয়েটির কাছে এসে প্রথমে পরিচয় পর্বের ছলনায় ঘটনা ফাটিয়ে দিলেন।
খুব আস্তে করে মেয়েটির কানে কাছে গিয়ে বললেন
-হ্যালো কেমন আছেন?
মেয়েটি ঘাড় ঘুরিয়ে ছেলেটির দিকে তাকানোর সাথে সাথে ছেলেছি একটু শব্দ করে বললেন।
-বলেন কি!এক রাতের জন্য দশ হাজার টাকা!আমিও কিন্তু আইনের ছাত্র।আইনের এমন প্যাচ মারবো যে এ জীবন আর জীবন থাকবেনা।
মেয়েটির বান্ধবীরা সবাই অবাক হয়ে ছেলেটির চলে যাওয়া দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে রইল।
©
তিন বান্ধবী এক সাথে বসে শয়তানের অলস সময় আড্ডা মেরে কাটাচ্ছেন।আর যাই হোক স্বামীকে নিয়ে মেয়েদের অংহকার অহমিকায় সবাই যেন পাহাড় সমান উচুতে স্বামীকে রাখতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন।তেমনি একটি আড্ডায় মেতে ছিলো সেই দিন তারা তিন বান্ধবী-জরিনা সখিনা আর আমেনা।
জরিনা-জানিস আমার বর আমাকে বিয়ের সময় এক কোটি এক টাকার কাবিন দিয়েছে।
সখিনা-আরে রাখ তোর এক কোটি এক টাকার কাবিন আমার আমারে গুলসান আর ধানমন্ডিতে যে দুইটা বাড়ী কাবিন নামায় লিইখা দিয়ে তা দশ কোটির কম হইবো না।
আমেনা-হ তোদের স্বামীরা খুব ভালারে তোগো নামে কত কত টাকা পয়সা ধন সম্পদ দিয়া বিয়া করছে আর আমারটায়!
জরিনা-তোরটায়তো ফকিন্নির পুলা ওকই পাইবো এতো টাকা।
সখিনা-তোরে না করছিলাম ঐ ফকিন্নির লগে প্রেম করিস না।তুই হুনস নাই।
আমেনা- ভুলতো করি নাই,এক স্বামী নিয়া এখনো ডাল ভাতে শান্তিতে আছি।আর তোরা কি করছিস!তোরা টাকার লোভে দ্বিতীয় স্বামী এক একটা বুইড়া আর রাত বিরাতে মদ খাইয়া ঘরে ফেরা!চরিত্রহীন স্বামী লইয়া ঘর করস।তোদের পিঠ দেখলে অত্যাচারের চিহ্ন দেখে সবাই চমকে উঠবে।এবার তোরাই বল চরিত্রবান ফকিন্নীর পোলা স্বামী হিসাবে ভাল নাকি ঐ অর্থবিত্তে চরিত্রহীন স্বামী ভাল।আরে ভালবাসা যদি থাকে মনে সূখ থাকে কূড়েরঁ ঘরেও।….বুঝলি।দুজনেই এক দম চুপ কারন সত্যটা তাদের কাছে মশৃণ কাচেরঁ ন্যায় স্পষ্ট।
©
গ্রামের এক সহজ সরল লোক গ্রামের এক মাষ্টার মশাইয়ের নিকট গেলেন কিছু বুদ্ধি নিতে।মাষ্টার মশাই লোকটিকে অস্তিরতায় হাফাতে দেখে এক গ্লাস জল হাতে দিয়ে বসতে বললেন পাশে থাকা একটি টেবিলে।লোকটি বসে জল পান করে শান্ত হলেন।
-এবার রাগ কমেছে?
-জি স্যার।
-যখন মনে খুব রাগ এসে যাবে তখন সঙ্গে সঙ্গে যেখানে মন চায় বসে পড়বেন রাগ অনেকটা কমে যারে।পারলে এক গ্লাস জল খেয়ে নেবেন মাথাটা ঠান্ডায় শীতল হয়ে যাবে।এবার বলেন কি সমস্যা আপনার?
-আর কইয়েন না স্যার,খুব সমস্যার মধ্যে আছি।আমাগো পাড়ার ছলিম মিয়া কেবলি আপনাগো বউমা আর আমার লগে প্যাচ লাগাইয়া দেয়।
-কেমন প্যাচ!
-আমি নাকি জুয়া খেলি,রাইত বিরাতে যাত্রা দেহি।গতবার ওর এক বুদ্ধিতে জায়গা জমি বেইচ্চা আদম ব্যাবসা করলাম শেষে লাভতো দূরে থাক আরো জমি বেইচ্চা সব ঋণ শোধ করলাম।এহন ওআমার সংসারে আগুন লাগাতে চায় এহন আমি কি করমু স্যার..ওরে শায়েস্তা করমু কেমনে?
-ও এই কথা!তাহলে শুনুন আমাগো যারা মুরুব্বি আছিল তারা কথায় কথায় কইতো-যদি বুদ্ধি নিতে হয় তবে তিন মাথা হতে বুদ্ধি লইতে হয়।যদি শরির মন ঠিক রাখতে হয় তবে প্রচুর মাছের মাথা খাইতে হয় আর যদি কাউকে বা শত্রুকে শাস্তি বা শায়েস্তা করতে হয় তবে তাকে যেই ভাবে হউক বিয়ের পিড়িতে বসাইতে হয়।বুঝলেন কিছু?
-না স্যার আমিতো আর আপনেগো লাহান শিক্ষিত না।
-তবে শুনুন-প্রথমতঃতিন মাথা হতে বুদ্ধি নিবেন-এই তিন মাথাওয়ালা মানুষ কই পাবেন?
-হাছাইতো এই তিন মাথাওয়ালা মানুষ কি জগতে আছে?
-আছে,আপনার আশে পাশে বহু আছে।তিন মাথা হল অভিজ্ঞতা আর বয়সের ভারে নূয়ে পড়া দুই হাটুর মাঝখানে ঘারওয়ালা মুরুব্বি মানুষ।সে জীবন অভিজ্ঞতায় বুদ্ধির ঢেকি।
-আর গরিব মানুষ-এতো মাছের মাথা কই পাবু?টাকা কই?
-কেন ছোট ছোট মাছ আছে না।একশ টাকায় একটা রুই মাছের মাথা না কিনে একশ টাকা দিয়ে অসংখ্য গুড়া মাছের মাথা পাবেন যা আপনার শরির ঠিক রাখার সকল প্রয়োজনীয় উপাদান পাবেন।
-ও তাইতো!কিন্তু সব বুঝলাম আমি যে জন্য আইলাম তার সমাধানতো কইলেন স্যার।
-আপনার সমাধানও দিচ্ছি..ছলিম আপনার কি হয়?
-আমার না বউয়ের মামতো ভাই।
-তাহলে আপনার শালা..ওরে যে ভাবেই হোক বিয়ে করিয়ে দেন।বউ সংসার হলে দেখবেন সব ঠিক হয়ে যাবে।

মাষ্টার মশাইয়ের এ বুদ্ধিটা তার তেমন মন মত হল না তবে মাথা ঝাকিয়ে মেনে নিয়ে তার কথাগুলো ফলো করতে লাগলেন।এক সময় তার শালা ছলিমকে বিয়ে করিয়ে ছাড়লেন।
অতপর বেশ কয়েক বছর পর একদিন যখন তার শালা ছলিম এসে বলল-ধুর!বিয়া কি মানষে করে!

চলবে…

৭৮৯জন ৬৮৪জন
0 Shares

১২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ