আমাদের গর্বের স্বাধীনতার কিছু কথা। এইতো সেদিনের কথা, অথচ মাঝে চলে গেছে ৫১ টা বছর। সেই আমিতো আছি আমিই হয়ে। মনের কোনায় এখনো জমানো আছে ৭১, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের কথা, স্বাধীনতার কথা । কতটুকুনই বা ছিলাম, তারপরও বয়ে বেড়াচ্ছি সেই দুর্বিষহ দিনগুলোর স্মৃতি যা এখনো চোখের সামনে এসে কী জেনো খুঁচিয়ে দেয়। কি এক যন্ত্রনা্র মাঝেই না যেতে হয়েছে সেই ছোটবেলাটা। হাই স্কুলে যাবার মন মাতানো আনন্দের বদলে মনটাই চুপসে গেলো।
কি এক ভয়ংকর রাত সেই ২৫শে মার্চ। ঢাকা শহরকে ভীতিকর শব্দ দিয়ে কে যেনো নরক বানিয়ে দিলো। মাইল দুরে থেকেও আগুনের ফুলকি দেখছি আমাদের বাড়ী থেকে। বাবা রেডিওর পাশে বসে কি সব শুনছে। সবার মুখ যেনে আঠা দিয়ে লাগিয়ে দিয়েছে কেউ। মায়ের মুখ দেখে ভয় হচ্ছে। এই মা তো এমন গম্ভীর ভাব নিয়ে কখনো থাকেনি। ছোট বোনটা সবে মাত্র হামাগুড়ি শিখেছে। গোলার শব্দে ঘুম ভেংগেছে অথচ যেনো কান্না ভুলে গেছে। শুরু হলো মায়ের আশেপাশে বসে থাকা নিঝুম এক রাত।
কিছুদিন আগে শেখ মুজিবুর রহমান এসেছিলেন আমাদের এলাকায়। আমাদের ফুটবল খেলার মাঠে কি একটা নির্বাচনের কথা বার্তা বলেছিলেন তিনি। বড় ভাইয়ের সাথে আমিও গিয়েছিলাম উনার কথা শুনতে। তিনি বলেছিলেন, পশ্চিম থেকে পূর্বকে আলাদা করবেন। কারন পশ্চিমারা আমাদের সব সম্পদ নিয়ে যাচ্ছে। আরো কত কথা যা সব বুজে উঠতে পারিনি। ২৫শে মার্চ তাহলে কি তার কথারই ফসল!
কিছুদিনের মধ্যেই আমাদের এলাকায় (বর্তমানে গুলশান শুটিং রেঞ্জ) একটা মিলিটারি ক্যাম্প বসে গেলো। তারা মাঝে মাঝে এলাকার মাঝে অনেক শব্দ করে হাটাহাটা করলো। আমরা আমাদের গেটের ধারেকাছেই গুরগুর করে দিন কাটাচ্ছি। শুধু বড় ভাইটি কোথায় কোথায় যেন যায়। আমি শুনে গেলাম উনি নাকি যুদ্ধ নিয়ে ভাবছে এবং নিজেকে প্রস্তুত করছে যাবার জন্য। তা শুনে মা কি বলেছিলেন, আজ তা আর মনে নেই।
একদিন ভোরে আমার এক বন্ধু এসো চীৎকার শুরু করলো। “তোর ভাইয়াকে মিলিটারি ধরে নিয়ে গেছে”। সে এক বিষাদের সময় যারা এরকম ধারার মাঝে গিয়েছিলেন, তারাই উপলব্দি করতে পারবেন। একটা সংসারকে ভেঙ্গে মুছড়ে দেবার বাকী আর কি থাকে। মা বের হয়ে গেলেন। আজও জানা হয়নি কোথায় গিয়েছিলেন। তবে সন্ধ্যা বেলা ছেলে নিয়ে বাড়ীতে ফিরলেন। খুশীতে সবাই কাঁদছে যা দেখে শিখে নিলাম আনন্দ কান্না কাকে বলে। পরে যা যেনেছিলাম তা হলো, ভাইয়ারা কয়েক বন্ধু মিলে যুদ্বে যাবার শলাপরামর্শ করছিলো বাজারের এক রেস্টুরেন্টে বসে। মিলিটারি এসে সবাইকে ধরে নিয়ে ওদের ক্যাম্পে আটকে রাখলো। সন্ধ্যা বেলা এদের গুলি করা হবে। কে এক অলৌকিক কারনে গুলি না করে ছেড়ে দেয়া হয়েছিলো, তা আজও অস্পষ্ট। তবে ভাইয়ার আর যুদ্বে যাওয়া হয়নি। মিলিটারি প্রতিদিন এসে দেখে যেতো। বাসায় না থাকলে অন্য সবাইকে মেরে ফেলবে বলে দিয়েছিলো। এভাবেই কেটে যাচ্ছে দিন, মাস। শুধু রেডিও শুনে মুক্তিযোধাদের সাহসিকতার খবর শুনে বুকটা ভরে উঠত।
আমার বন্ধুদের সংখ্যা কমতে শুরু হোল ডিসেম্বর মাসের প্রথম দিকে। সবাই কেন জানি ঘরবাড়ী ছেড়ে চলে যাচ্ছে। দুপুরের পরে বাইরে যাওয়া কমাতে হোল কী যেন কারফিউ নামের যন্ত্রণার কারণে।
বেশ খারাপ মনটা, আমার নতুন ডেজ্ঞা আর চুইগুলো (ডেজ্ঞা হোল সাধারণ মার্বেলের চেয়ে একটু বড় যা দিয়ে অন্যকে তীব্র আক্রমণ করা আর চুই হোল ছোট যা অন্যের আক্রমণকে ফাঁকি দেয়ার চেষ্টা করা) কাউকে ভালো ভাবে দেখিয়ে ভাব না নিতে পারার। মাঝে মাঝেই খাকী পোশাকধারী কিছু মানুষ এসে কী সব ভাষায় কথাবার্তা বলে চলে যেতো। খুব যে ভয় লাগতো তা নয়। তবে ওদের আচরণটা ভালো লাগতো না। সন্ধ্যার পরে লাইট (কুপী বা হ্যারিকেন) জ্বালানো হতো অল্প সময়ের জন্য। খাবারের টেবিলেও সবাই ক্যামন জেনো আড়ষ্ট ভাবে কথা বলে। মনে হচ্ছে আমি ছাড়া সবাই যেন আতঙ্কে রোগে ভুগছে।
একদিন খুব ভোরে সামনের বাড়ীর সরকার চাঁচা এসে বিদায় বলে গেলেন। হায় হায়, এলাকার মোটামুটি সবাই নাই হয়ে যাচ্ছে আমরা ছাড়া। পাশের মহল্লা থেকে এক আত্মীয় এসে বাবা মাকে বললেন তারাও চলে যাবেন। কিন্তু যাবেনটা কোথায়, তা বলতে পারছেনা। আর আমরা, কী করবো কোথায় যাবো। ৪ তারিখ রাতের বেলা শুরু হোল ঘোছানোর পালা। কি কি নেয়া যাবে বা নিতে পারবো আমরা। আমি ব্যস্ত আমার মার্বেলের কৌটা আর লাটিম নিয়ে। সবার আগে ওগুলোইতো লাগবে আমার। ভালো ঘুমই হোলনা যেখানে যাচ্ছি সেখানে দু’চার জন খেলার সাথী পাব কিনা তাই ভেবে। খুব ভোরেই মা সবাইকে রেডি করে ফেললেন জেনো আমরা মনুষ্য দেশের বাইরে যাচ্ছি। কেরোসিনের চুলা থেকে চাল ডাল নুন সবই আছে। দুটো লাটিম দুই পকেটে আর হাতে মার্বেলের কৌটা নিয়ে নিজেকে বেশ গম্ভীর করে তৈরি করে ফেললাম। বিঁধি বাম, লাটিম দুটো দেখেও না দেখার ভান করে মার্বেলগুলো রেখে যেতে বললেন মা। আমাকে নাকি অন্য ব্যাগ টানতে হবে। বলে কি এসব, আমি কি করে ওসব খাবার দাবারের মতো বেহুদা জিনিষ পত্র টানবো মার্বেল রেখে! শুরু হোল ৮ জনের যাত্রা। রাস্তা থেকে যোগ হবেন ওই আত্মীয় সংসার। মা ক্যামন করে জেনো পুতুল সাইজের ছোট বোনটাকে আঁচলে বেঁধে দু হাতে দুই ব্যাগ নিয়ে নিলো। ওই পুতুল সাইজের সামান্য বড় একটা ভাই নাকি একাই হাঁটবে বলে প্রতিজ্ঞা করেছে। অথচ কিছুক্ষণ বাদেই তার অবস্থান হলো বড় ভাইয়ের ঘাড়ে। আরও তিন সাইজের তিন পুতুল নিয়ে আত্মীয়টা যোগ হোল অল্প সময়ের ব্যবধানে। একটু ভয় ভয় লাগছে যখন আব্বা বললেন আমরা পূর্ব দিকে যাচ্ছি। সূর্য্য তো পুব দিকেই উঠে এবং আমরা সেদিকেই যাচ্ছি, অথচ উনি নিজেও জানেন না কোথায় যাচ্ছেন। মনে হয় মাইল দুয়েক পরে সমুদ্রের (বিল বা ঝিল কিছু একটা হবে) পাড়ে এলাম যেখানে একটাই নৌকা। কিছু বুঝে উঠার আগেই আমরা নৌকায় চেপে বসলাম। এইবার আমার নাও বাওয়ারও সুযোগ হবে দেখছি কারণ মাঝি যাচ্ছেনা আমাদের সাথে। কখন যে ঘুমিয়ে পরেছিলাম, মনে করতে পারছিনা। সারাদিন কি কিছু খেয়েছিলাম, আজ তাও মনে আনতে চাচ্ছি না। শুধু মনে আছে ভীষণ ভীত আমি কোথায় যাচ্ছি ভেবে। আর কী ফেরা হবে যেখানে আমার সব মায়ারা মিশে আছে।
সন্ধ্যা হয় হয় করছে। ছোট ছোট ঢেউ ভেঙ্গে নৌকা চলছে নাচের তালে। কী এক অপরূপ নান্দনিক দৃশ্য। সৃষ্টিকর্তা কি সৌন্দর্য ঢেলে প্রকৃতি সাজিয়েছেন। আমার কি সেই চোখ আছে তা উপভোগ করার, আমি যে কুল খুঁজছি এখন। সবাই জেনো পণ করেছে কথা না বলার। আমার চাইতেও ছোট আছে বেশ কজন। অবাক কাণ্ড কেউ টুঁশব্দ ও করছেনা কোন। ওরাও কি সজাগ ওদের চেতন নিয়ে! ওরাও কি বুজতে পারছে আমরা হারিয়ে গেছি নাকি অজানা কোন দেশে যাচ্ছি। একসময় নাচের মুদ্রায় কে যেন লয় কেটে দিলো। সবাই নড়েচড়ে বোঝার চেষ্টা শুরু করে দিলে আমার সাথেই। আরে হ্যাঁ, ঐতো নতুন পৃথিবী জেগে উঠেছে অথৈ জলের মাঝে। ছোটখাটো একটা দ্বীপের মত যাতে ভেসে আছে দুটো মাটির ঘর। আমরা তো এর জন্যই বৈঠা বেয়ে চলছি সেই সকাল থেকে। একটু পরেই তো আমরা পা রাখবো সেথায় নতুন এক আশা নিয়ে। দিনরাত্রির সন্ধিক্ষণে আবছা আলোয় একে একে সবাই পা রাখলাম সবুজ ঘাসে। আহা, কি শান্তি এই মাটির স্পর্শ, কি মায়া আছে এতে! একজন মাঝ বয়েসের মানুষ আসলেন হ্যারিকেন নিয়ে। প্রথম দেখায় যদি কাউকে ভালো লাগার বিষয় থাকে, তাহলে ওনাকে প্রথম সারিতে রাখতে হবে। ভীষণ মায়াবী চোখের এই মানুষটির মার্জিত কথাবার্তা শুনে বেঁচে থাকার আনন্দ জ্বালাই হয়ে যায়। কেন যে এই মানুষগুলোর মতো মানুষরা আমাদের দেশ চালাবার ভার পায়না! খুবই বিনীত ভাবে দুই ঘরের একটা ছেড়ে দিলেন। আমার তো বিশ্বাস হচ্ছেনা এমন মানুষ যে আছে এই নতুন পৃথিবীতে। তাদের সামান্য কিছু জিনিষ পত্র বের করে নিয়ে গেলো অন্য ঘরটায়। মুড়ি গুড় দিয়ে সে যে আপ্যায়ন, আজো চোখের মনে গেঁথে আছে।
শুরু হলো নতুন করে বেঁচে থাকার চেষ্টা। একটা মাটির ঘর আর ১৪ জন মানুষ। তারপরও মনে হচ্ছে মিলিটারির যন্ত্রনা থেকে এ যাত্রা বেঁচে গেলামতো। ছোটদের জন্য এযেনো এক বিশাল খেলাঘর। সারাদিন কাটে এই দ্বীপের মাঝে। ঘাস মাটিতে ভালোই যাচ্ছে দিন। বাঁশের কঞ্চি দিয়ে বঁড়শি বানাতে সাহায্য করলেন ঐ বাড়ীর চাচা। শিখে গেলাম পুঁটি মাছ ধরা। বড়রা নৌকা করে অন্য দ্বীপে যেতে পারে। কোথায় যায় কে জানে। সন্দ্যা বেলা সবাই রেডিও নিয়ে বসে। এযোনে প্রতিদিনের রুটিন।
একদিন সেদিন হয়ে আসলো। পাশে্র দ্বীপ থেকে অনেক চীৎকার যা আমরা আমাদের এখান থেকেও শুনেছি। দেশ স্বাধীন হয়েছে। আমার দেশ স্বাধীন হয়েছে। তখন বুঝিনি এই স্বাধীন মানে কি। শুধু বুঝতে পেরেছিলাম, আমি আমার বাড়ীতে ফিরে যেতে পারবো যেখানে আমার সব মায়ারা অপেক্ষা করছে আমার জন্য।
স্মৃতিকাতরতা এ এক অসম্ভব বোঝা, আনন্দের সাথেই বয়ে বেড়াচ্ছি স্বাধীনতার সাধে।
৪২টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
আমাদের জীবদ্দশা ধন্য, এমন মহান ঘটনার সাক্ষী হতে পেরেছি বলে।
আর এ সময়ে এমন স্মৃতি সংলগ্ন হওয়াই স্বাভাবিক।
সুনিপুণতায় তুলে ধরার জন্য অবশ্যই ধন্যবাদ।
নাসির সারওয়ার
আরো ধন্য হতাম যদি যুদ্ধ করতে পারতাম। অনেক ধন্যবাদ শক্তপোক্ত প্রথম মন্তব্যের জন্য।
ভালো থাকুন।
মৌনতা রিতু
আমি কিছু পড়ে মন্তব্য করতে হাত কাঁপাই।ভালো ও গম্ভির বিষয়গুলোতে কি মন্তব্য করবো বুঝে উঠতে পাতিনা।তাই কখনও মন্তব্য করা থেকেও এড়িয়ে যাই।শুধু পড়ি।দীর্ঘ নিঃশ্বাষ ছাড়ি,আনন্দে,গর্বে বুক ফুলাই।হ্যাঁ যে দেশে এমন চিন্তা ধারার মানুষ আছে সেই দেশকে কার সাধ্যি পিছনে ফেলে।ও হ্যাঁ মুক্তিযুদ্ধের লেখা,সিনেমা গুলো ছেলেদেরও আমি পড়াই ও দেখাই।জানেন,আমার আট বছরের ছেলে ১৬ডিসেম্বরে আবারও#আমার বন্ধু রাশেধ#সিনেমাটা দেখবে।আমি কিছুক্ষণ তাকিয়ে ছিলাম,রিয়ান সোনার দিকে।আমি ভবিশ্যত প্রজন্ম নিয়ে তাই আশাবাদি।ধন্যবাদ।
নাসির সারওয়ার
আমি এখানে নতুন। এখানে দুএকজন লিখিয়েরা আছেন, যাদের লেখায় কিছু লিখতে আমারও হাত কাঁপে।
অনেক ভালো লাগলো জেনে যে আপনিও ইতিহাস (সত্যটা) জানাচ্ছেন আমাদের পরের দলকে আমার মতই বা অন্য সবার মত।
অনেক শুভেচ্ছা আপনার জন্য।
জিসান শা ইকরাম
১৯৭১ স্মৃতিময় এক অনুভুতির নাম
যুদ্ধ,সংকটের নাম
জানলাম ৭১ এর কিছু স্মৃতি আপনার
ঐ সময়ের স্মৃতিকে এই বয়সে এমন করে তুলে আনা আসল কঠিন
আপনি তো তা ভালোই ফুটিয়ে আনলেন।
কত স্মৃতি,কত কষ্ট,কত আশা বেদনার সেই দিনগুলো………
শুভ কামনা।
নাসির সারওয়ার
অনেক স্মৃতিই কষ্ট দেয়। তবে ৭১ এর বিস্বাদ স্মৃতি কষ্টের মাঝেও সুখ দিয়ে যাচ্ছে। ওই দিনগুলোর কথা আমাদেরই তো জানাতে হবে পরের প্রজন্মকে।
অনেক ভালো থাকুন আপনি।
মোঃ মজিবর রহমান
স্রিতি মনে থাকবেই। আর এটা শুধু কি স্রিতি জিবিন বাজি রাখা এক জিবন্ময় কথা।
যা মনে পড়বেই। ধন্যবাদ এই সুন্দর পস্টের জন্য।
নাসির সারওয়ার
জীবন মরন সন্ধিক্ষণে অনেক মধুর স্মৃতি যা আজও বহন করছি।
শুভেচ্ছা আপনার জন্য।
মোঃ মজিবর রহমান
-{@
নাসির সারওয়ার
ধন্যবাদ।
অরণ্য
“কেন যে এই মানুষগুলো দেশ চালাবার ভার পায়না!” – নাহ! নাসির ভাই। এরা দেশ চালায় না। দেশ চালাতে আরো কিছু লাগে।
স্মৃতি দারুন আপনার। ড্যাগ (আপনারা ডেজ্ঞা বলতেন) আর চুই আমারও মনে পড়ল। ও খেলা সত্যি হারিয়ে গেল!
নাসির সারওয়ার
ওই অশিক্ষিত মানুষটা তো দেশ চালাতে পারবেনা ঠিকই। তবে আমাদের নেতারা যদি ওনার মত শিক্ষিত মনের হতো, দেশটার চেহারা হয়তো পাল্টে যেতো।
ড্যাগ গুলো সত্তিই হারিয়ে গেলো।
অনেক ধন্যবাদ আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
আবু খায়ের আনিছ
ভাই ইহা একান্ত অনূভুতি? মুক্তিযুদ্ধ এখন এমন এক বিষয় হয়ে গেছে যা নিয়ে মুখরোচক আলোচনা যেমন হয় তেমনি হয় সমালোচনা। আমি যতদূর পড়েছি এই মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তাতে বারবার মনে হয়েছে, কি অপার আনন্দ পাচ্ছে আমাদের দেশের সরকারগুলো এই তথ্য বিকৃতি করে।
নাসির সারওয়ার
হ্যা ভাই। এটা আমার একান্ত অনূভুতি। ইতিহাসের সাক্ষী এইটুকুই সান্ত্বনা। জানার চেষ্টা করুন যতটুকু পারুন।
পরীক্ষা চলুক প্রতিদিন।
অরুনি মায়া
স্বাধীনতার অনেক বছর পর আমার জন্ম তাই যুদ্ধের বাস্তব অভিজ্ঞতা নাই | তবে বই পড়ে আর অন্যদের অনুভূতির কথা শুনে সামান্য অনুভব করতে পেরেছি | জীবনের এমন স্মৃতি ভোলার নয় | আপনি একই সাথে অত্যন্ত ভাগ্যবান, স্বাধীন দেশের প্রথম সকালের প্রথম সূর্যের উত্তাপ পেয়েছিলেন ||
নাসির সারওয়ার
আমার এই সামান্য চেষ্টা আমাদের পরের প্রজন্মের জন্য। নয় মাসের কথাতো নয় মিনিটে দেয়া বলা যায়না। এ কঠিন স্মৃতি (মধুর কি?) কখনই ভোলার নয়।
স্বাধীনতার মানে বুঝতামনা তখন। তবে কষ্টের মাঝেও যে সুখ আছে, এখন তা জানি।
অরুনি মায়া
আমি যুদ্ধ দেখিনি, তবে বি,ডি,আর বিদ্রোহের সময় দেখেছিলাম প্রাণের মায়ায় অসহায় মানুষ গুলো কিভাবে এলাকা ছেড়ে পালাচ্ছে | ঐ দৃশ্য দেখে অনুমান করেছিলাম যুদ্ধের রূপ কতটা ভয়াবহ হতে পারে |
নাসির সারওয়ার
আমার এক বন্ধুকে হারিয়েছি বি,ডি,আর বিদ্রোহে। অবশ্যই করুন ভাবেই অনেকের প্রান চলে গেছে। আপনার অনুমান শক্তির প্রতি শ্রদ্ধা রইলো।
ব্লগার সজীব
ভাইয়া আপনার স্মৃতি পড়ে অবাক হয়ে গেলাম।আপনি আবেগ আনতে পারেন লেখায় খুব।অনেক অনেক ভালো লেগেছে আপনার এই লেখা।
নাসির সারওয়ার
আবেগ কিনা জানিনা, নিষ্ঠুর কিন্তু মধুর স্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছি এখনো।
আপনার জন্য অনেক শুভেচ্ছা।
ব্লগার সজীব
এমন লেখা আরো চাই ভাইয়া।
নাসির সারওয়ার
চেষ্টা করবো সাধ্যমত এবং সময়ের কুলে। সোনেলাকে অনেক ভালবেসে ফেলেছি যে। সাথে অনেক সাদা মনের মানুষ কেও।
নীলাঞ্জনা নীলা
ফিরে এসে মন্তব্য করবো। প্রচন্ড ক্ষিদে। ভাইয়ূ আসছি।
নীলাঞ্জনা নীলা
ভাইয়ূ যুদ্ধ দেখা হয়নি আমার। দাদু-ঠাকুমা, বাপি-মামনি, বরিশালের মায়ের মুখে শুধু গল্পেই শুনেছি। একটু যখন ভালো বুঝতে শিখলাম মনে আছে বরিশালের মাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম ইংরেজ যখন ছিলো, তখন আমি জন্মালে ‘৭১-এ যুদ্ধ করতাম। তাই না বরিশালের মা? এখন আর আফসোস করিনা, ভাগ্যিস যুদ্ধ করিনি। যারা যুদ্ধ করে শহীদ হয়েছেন, তাঁরা বেঁচে গেছেন। আর যাঁরা বেঁচে আছেন, বড়ো করুণ অবস্থাতেই আছেন।
ভাইয়ু আপনার এই পোষ্টটা পড়ার পর কেমন জানি একটা বিষণ্ণতা কাজ করছে।
বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা। -{@
নাসির সারওয়ার
বরিশালের মা! ব্যাপারটা ঠিক বুজলামনা।
বন্ধূক নিয়ে যুদ্ধ হয়তো করিনি, তবে জীবন মরণের যুদ্ধ ঠিকই করেছি তখন। এই অস্পষ্ট ব্যাথা স্পষ্ট করে বোজানো যাবেনা আপুনি।
মুগ্ধতা নাই এই লেখায়, তাই হয়তো বিষণ্ণতা ভর করেছে। দেরীতে লেখার জন্য দুঃখিত।
বিজয় মাসের শুভেচ্ছা।
নীলাঞ্জনা নীলা
বরিশালের মা ডাকতাম আমার দিদিমা মানে মায়ের মাকে। আমার মামাবাড়ী বরিশাল। একসময় মামনি ওরা বরিশাল কালীবাড়ী রোডে থাকতো। তারপর দাদু চলে গেলো আমতলী। আমি গিয়েছি ওদিকে বহুবার। পায়রা নদী, কীর্তনখোলা সব দেখা।
বিষণ্ণতার মধ্যেও মুগ্ধতা থাকে। যুদ্ধ হয়েছিলো বলেই দেশ স্বাধীন হয়েছে।
বুঝেছি আপনি ব্যস্ত। সেদিন যে কি খেয়েছিলাম ভুলে গেছি। তবে আজ খেয়েছি পেঁপে দিয়ে মাগুর মাছের ঝোল, আলু-ফুলকপির তরকারী। আর ছোলার ডাল ছিলো, খাইনি। 😀
নাসির সারওয়ার
হুম, বরিশালের মা, বুঝলাম। জায়গাগুলো পরিচিত পরিচিত লাগছে। বরিশাল কলেজতো কালীবাড়ি রাস্তায়, তাইনা?
আরো বেশ কিছুদিন লুকিয়ে থাকবো। মাথার উপরে খড়গ ঝুলছে। মাগুর মাছের ঝোল, অনেক দিন খাওয়া হয়নি। নেমন্তন্যও পাইনা। খান, একা খেলে কি যেন হয় জানেনতো?
নাসির সারওয়ার
কি খেলেন আপুনি?
ভোরের শিশির
আপনার সাথে সাক্ষাৎ হলে ‘৭১ এর আরো একটি ছোঁয়া পাবো। অপেক্ষায় রইলাম নাসির ভাইয়া। -{@
নাসির সারওয়ার
হবে কোন একদিন।
আমার কাছে এখনো লাটিম আছে এবং মাঝে মাঝে চর্চাটাও চালিয়ে যাচ্ছি। (অফিসের মানুষরা পিছনে হয়তো পাগল টাগল ভাবে)।
ভোরের শিশির
যেদিন দেখা হবে সেদিন লাটিম টা নিয়ে আসবেন 😀
নাসির সারওয়ার
অফিসের অনেকেই হাঁসে আমার পিছনে যা আমি টের পেয়ে যাই। শুন্যে ছুড়ে (মাটিতে না ফেলে) হাতেও ঘোড়াতে পারি এখনো!!
শুন্য শুন্যালয়
ভাইয়া এ লেখা এখানেই শেষ করে দেবেন না প্লিজ। খুব কাছ থেকে যুদ্ধের দিনগুলোর কথা শোনা হয়নি, আশ্চর্য্যজনক হলেও সত্যি নিজের বাবা-মা র কাছ থেকেও তেমন করে শোনা হয়নি।
লেখাটা পড়ে মনে হচ্ছে, নাসির ভাইয়া কে এক্ষুনি হাতের কাছে পেলে হতো, এক নিঃশেষে সবটুকু শুনে নিতাম সেই সেদিনগুলোর কথা। সেই প্রথম দেখায় ভালো লেগে যাওয়া লোকটির জন্য অশেষ শ্রদ্ধা রইলো।
আপনি আমাদের ঠকাচ্ছেন কম কম লিখে। মনে পরে আজোও র পরের অংশ চাই-ই চাই। 🙁
নাসির সারওয়ার
কি অশান্ত সেই দিনগুলো। ওই বয়সে অনেক কিছুই ছিল ধারন ক্ষমতার বাইরে। এক একটা দিন ছিলো অনেক লম্বা যা শেষ হতে চাইতো না। ১৬ তারিকের সন্ধ্যা বেলায় শুনি স্বাধীনতার কথা যার মানে ছিল আমি আমার বাড়ীতে ফিরে যেতে পারবো। সে কি অনুভূতি, তা বলার সাধ্য কি আমার।
আরো বলবো, আমাদেরই তো জানাতে হবে পরের প্রজন্মের জন্য।
ভালো থাকুন সবসময়।
অরণ্য
নাসির ভাই, এ ছড়াটি লিখতে ইচ্ছে করল কোন এক ‘পরে’কে ‘পড়ে’ যেন করিয়ে নেন।
পড়ল না মনে
যখন ছিল সনে।
এখন তুমি দূরে
গাইছি তোমার সুরে।
ডাক এসেছে ঘরে
ভাবছি যাব পরে।
নাসির সারওয়ার
ছড়া কবিতা ঠিক বুজিনা। আর এটা একেবারে মাথার উপরে দিয়ে চলে গেলো।
সুভেচ্ছা রইলো।
অরণ্য
নাসির ভাই, আসলে এটা ছড়া-টড়া কিছু না। আমি শিরোনামটা ভাবছিলাম “মনে পড়ে আজও” হতে পারে; তাই একটু মজা করছিলাম ‘পরে’ আর ‘পড়ে’ নিয়ে। ভাল থাকবেন ভাইয়া।
নাসির সারওয়ার
আপনার হিউমারটা মনে হয় বুজতে পেরেছি।
ভালো থাকুন আপনিও অনেক করে।
অপার্থিব
স্মৃতি ময় অনুভূতি গুলো শেয়ারের জন্য ধন্যবাদ। কেন যে মুক্তিযুদ্ধ কালীন প্রজন্মে জন্মালাম না বলে মাঝে মধ্যে এক ধরনের আফসোস হয় আমার । আপনারা ভাগ্যবান যে সেসময়ের ঘটনাগুলো খুব অল্প হলেও কাছ থেকে দেখতে পেরেছেন। এরকম গৌরব জনক ঘটনার সাক্ষী হওয়ার সৌভাগ্য সবার ভাগ্যে জোটে না।
নাসির সারওয়ার
আপনার কথা হয়তো বুঝি কিছুটা। মুক্তিযুদ্ধ আমাদের অনেক শিখিয়েছে। জীবন মরনের মাঝে ভালো মন্দ দু শ্রেণীর মানুষ দেখার অভিজ্ঞতা বেশ কাজে দিচ্ছে। স্বাধীনতার সাক্ষীর গর্বতো আছেই সাথে।
ভালো থাকুন।
শুন্য শুন্যালয়
মনে পড়ে আজোও, এমনি মনে পড়া ২০১৬ তেও চাই। খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে সব মনে করিয়ে দেব, নো প্রব। শুভ নববর্ষ গিটারিস্ট ভাইয়া। ভালো থাকুন খুব করে নতুন দিনটিতে। -{@ প্রথম দিন ভালো তো সব দিন ভালো। 🙂
নাসির সারওয়ার
শুন্যেরও মুল্য আছে, তা আপনাকে না দেখলে জানা হোতোনা কোনোদিন। আপনার মত একজন বিশেষ বিশ্লেষক যে প্রত্যেকটা লেখার পোস্ট মোরটেম করে আমাদের খাওয়াচ্ছেন, তা হয়তো আমরা ভালো ভাবে ধন্যবাদ দিয়েও আপনাকে বলছিনা। এজাতি বড়ই স্বার্থপর!
আমি খুব লাজুক শ্রেণীর জীব। তাই গীটার টার কাছে মাঝে মাঝে আমার আকুতি জানাই।
শুভ হোক প্রতিদিন। হাসি থাক প্রতিক্ষণ।
অনেক শুভেচ্ছা। (ইমো নিয়ে ভুল করে ফেলি মাঝে মাঝে, তাই এরিয়ে গেলাম। একটা বিরল [কালো] গোলাপ আপনার জন্য)