প্রথমেই একটি প্রশ্ন করি, “আপনি কি বিরিয়ানী পছন্দ করেন?”
উত্তরটাও আমি দিয়ে দিচ্ছি, “অবশ্যই। পছন্দ মানে? আপনি বিরিয়ানী ভালোবাসেন। হলিউড-বলিউড নায়িকাদের ভালো না বেসে থাকা যায়, বিরিয়ানীকে ভালোবাসতেই হবে। যদি আপনি বিরিয়ানী ভালো না বাসেন, তবে আপনি মানুষ না। আপনি ড্রাগন।”
তো প্রথমেই বলে নেই, আমি নিজে কিন্তু চাচ্ছিলাম না, তবে চৈত্র-বৈশাখের এই আবহাওয়া খুব করে চাচ্ছে আমি যেন বিরিয়ানী খাই। চৈত্রের মাঝামাঝি সময় থেকে বৈশাখের প্রথম কিছুদিনকার আবহাওয়া হচ্ছে ষোড়শী কন্যাদের আবেগ এর মত। এদের মন জুগিয়ে চলতে হয়, না হলে ঝড় বইবে, কালবৈশাখী ঝড়।
এখন আমি না হয় বিরিয়ানী খেয়ে ফেললাম, বাকিদের কি হবে? ছোটবেলা থেকে শিখে এসেছি ভালোমন্দ যাই খাই, মানুষকে যেন দিয়ে খাই। তাই এখানে সবাইকে বিরিয়ানীর রেসিপি শিখিয়ে দিচ্ছি।
ধাপঃ ১
বিরিয়ানী খাবার ইচ্ছা হলে প্রথমে চোখ বন্ধ করে দুটি নিঃশ্বাস নিন। তারপর আরজুমান্দ বানু বেগমকে মনে মনে ধন্যবাদ দিন। তার কারনেই বিরিয়ানীর আবিস্কার, তার বদান্যতায় আমরা বিরিয়ানীর মত কিউট একটা খাবার পেয়েছি।
ধাপঃ ২
এবার লিষ্ট করুন। বিরিয়ানী রান্না করতে যে যে উপকরন লাগবে, সেগুলো একটা কাগজে টুকে নিন। খবদ্দার! মোবাইলের কোন এ্যাপসে লিখবেন না, বিরিয়ানী হচ্ছে শত বছরের পুরনো ঐতিহ্য, আধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে একে অপমান করবেন না। কাগজ-কলম নিন..
উপকরনঃ
১) চাল (দেশী কালিজিড়া চাল লাগবে, না হলে বাসমতি ) – ১ কেজি
২) হাড় সহ খাসির মাংস – ১.৫ কেজি
[অবশ্যই খাসীর মাংস হতে হবে। মুরগী দিয়ে আবার বিরিয়ানী হয় নাকি? দেশি ছাগলের মাংস জোগাড় করুন, ব্লাক বেঙ্গল জাতের ছাগল এর মাংস পেলে ভালো হয়। যমুনাপারি, মাড়োয়ারি, বারবারি, সুরতি, গাড্ডি এর মত পৃথিবীতে ৩০০ এর উপরে ছাগলের জাত আছে। কিন্তু মাংসের মান বিচারে আমাদের দেশী ব্লাক বেঙ্গল ছাগলকে টেক্কা দেয়ার মত কোনটা নাই।]
২) পেঁয়াজ – পরিমানমত
[ইন্ডিয়ান বা চায়নিজ পেয়াঁজ এর পাল্লায় পড়বেন না মোটেও। দেশী পেঁয়াজ লাগবে।]
৩) লেবুর রস ১/৪ কাপ
৪) আদা রসুন – (পাটা-পুতায় ছেচে পেষ্ট করে নিবেন)
৫) লাল মরিচ গুড়া – ইচ্ছামত
৬) কাঁচা মরিচ – যত লাগে
৭) এলাচ, দারচিনি, তেজপাতা – পরিমানমত
৮) পুদিনা পাতা, ধনিয়া পাতা ২৫০ গ্রাম
৯) টক দই – ৫০০ গ্রাম
১০) ঘি – দুই টেবিল চামচ
১১) তেল, লবন – পরিমান মত
[তেল এর জায়গায় আবার পাম তেল দিয়েন না। এটা বিটিভি না যে পাম দিবেন, আবার তেলও দিবেন। পাম তেলে বিরিয়ানী রান্না করলে আপনার নামে মামলা হওয়া উচিত। লবন আয়োডিন যুক্ত হতে হবে।]
১২) স্যাফ্রন
১৩) টমেটো – ১ টা
[অবশ্যই নিখুত লাল হতে হবে। লাল না হলে কিন্তু পাপ হবে]
১৪) লবঙ্গ, জয়ফল, জয়ত্রী, জিরা, শুকনা মরিচ – পরিমান মত
[ইচ্ছা হলে গুঁড়ো করে নিতে পারেন]
১৫) আলু বোখারা – ৮-১০ টি
ধাপঃ ৩
লিষ্ট করা শেষ হলে দৌড়ে বাবার কাছে নিয়ে যান। বাবার কাছে আবদার করেন এগুলো কিনে দিতে।
[ অবশ্যই বাবার সাথে বাজারে যাবেন, এবং অবশ্যই ব্যাগ নিজে বইবেন। এহহ.. বাবা কিনে দিবে আবার ভারী ব্যাগ টেনে এনে আপনাকে খাওয়াবে? শখ কতো! বাবা যদি কপট রাগ করে ধমকও দেয়, তবুও বাবার হাতে ব্যাগ দিবেন না। ধমক হজম করে নিবেন। ]
ধাপঃ ৪
আম্মার কাছে যান, “আমার সোওওনা মা.. আমার জাদু মাআআ.. আমার লক্ষী মা.. ” ইত্যাদি আলু দিয়ে দিয়ে মাকে রাজি করান, আর বলেন বিরিয়ানী রান্না করে দিতে।
[বিরিয়ানীতে আলু দিতে নিষেধ করবেন। বিরিয়ানীতে আলু? এটা মারাত্মক অপরাধ।]
ধাপঃ ৫
মুঘল যোদ্ধাদের যুদ্ধ বিজয়ের উৎসবের খাবার হিসেবে বিরিয়ানী রান্না হতো। এটা বীরের খাবার। আপনাকেও তো বীর হতে হবে, তাই না?
ছোট ভাই-বোন থাকলে মাথায় টাসঁ করে গাট্টি মেরে তারপর বিরিয়ানী খাওয়া শুরু করুন। আলাদা স্বাদ পাবেন।
[ছবি তুলে ইনষ্টাগ্রামে দিতে পারেন। কিন্তু এতে পাপ হবে, ভীষন পাপ হবে]
নোটঃ
যারা একা একা থাকেন, বাবা-মা থেকে দূরে থাকেন তাদের জন্য কিছু করার নাই। দোকান থেকে কেনা বিরিয়ানী খেয়ে মজা পাওয়া আর স্কটল্যান্ডের সাথে ক্রিকেট ম্যাচ জিতে লাফালাফি করা সমান কথা।
৩২টি মন্তব্য
জিসান শা ইকরাম
সোনেলায় আনুষ্ঠানিক পোষ্ট এটি আপনার,
তাই আনুষ্ঠানিক ভাবেই সোনেলায় স্বাগত জানাচ্ছি।
প্রথম পোষ্টেই নিয়ে এলেন এমন লোভনীয় খাবার?
কে অপছন্দ করে এটি?
সুন্দর উপস্থাপনায় চমৎকার একটি রেসিপি দেয়ার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।
শুভ কামনা।
সেডরিক
আপনাকেও ধন্যবাদ। আমার দুই লেখাতেই প্রথম মন্তব্য আপনার। আপনার জন্য শুভকামনা।
সাবিনা ইয়াসমিন
বিরিয়ানী না পছন্দ করার কোনো কারন নেই, তার মানে আমি মানুষ ড্রাগন হওয়া থেকে এই যাত্রায় বেঁচে গেলাম। কে চায় চুলার আগুনের বিরিয়ানী না খেয়ে নিজের মুখ থেকে আগুন বের করতে!!!
বিরিয়ানিতে খাসির মাংসই দিতে হবে? মোরগ / মুরগী না হয় বাদ দিলাম গরু / গাভীতো দেয়া যায়। ছাগলের মাংস দেখলেই মনে হয় ওগুলো ম্যা–ম্যা করে ডাকছে, খাবো কি করে?
মেইন প্রশ্ন হলো বিরিয়ানির রেসিপি শুধু ছেলেরা ফলো করবে কেন? মেয়েরা এগুলোর লিস্ট করে বাবা হাতে দিয়ে, বাবাকে বাজারে পাঠিয়ে যদি নখে নেইল পলিশ লাগাতে বসে তাহলে কি মেয়েদের কপালে বিরিয়ানি জুটবে না?
লেখাটা দারুণ দিয়েছেন, সোনেলা উঠোনে আপনাকে স্বাগতম। নিয়মিত লিখবেন, আমরা পড়ার অপেক্ষায় থাকবো।
ভালো থাকবেন, শুভ কামনা রইলো 🌹🌹
সেডরিক
১) প্রথমদিকে বিরিয়ানী মানেই ছিলো কাচ্চি বিরিয়ানি। পরে ভারতবর্ষে এসে হয়েছে পাক্কি বিরিয়ানি। মঙ্গোল সাম্রাজ্যের চাগতাই খানাতে কাচ্চি বিরিয়ানি ভালো রান্না হতো খাসী ও ভেড়ার চর্বিওয়ালা মাংস দিয়ে।
২) হ্যা, শুধু ছেলেদের জন্যই। আমি কিন্তু পুরুষবাদী, এবং হালকা নারীবিদ্বেষী
৩) নিয়মিত লিখবো? ও আমার দ্বারা হবে না। আমি অলস প্রকৃতির প্রানী।
৪) আপনাকেও শুভকামনা 💐
প্রহেলিকা
প্রথমবার বিরিয়ানি রান্না করতে গিয়ে সেই নাকানিচুবানি খেয়েছিলাম। এরপর অবশ্য চলে যাচ্ছে কোনোরকমে।
সুন্দর উপস্থাপনা। রসের বেশ জোগান আছে দেখা যাচ্ছে। লিখবেন আশা করি নিয়মিতই।
স্বাগতম সোনেলায়।
সেডরিক
ধন্যবাদ প্রহেলিকা। বেশি বেশি রান্না করুন, আরো বেশি বেশি খান।😁
মায়াবতী
🙂 চমৎকার বিরিয়ানীর প্রস্তাবন! যাক সোনেলায় এসে খুব ভাবছিলাম বিরিয়ানী ভক্ত কুল পাওয়া যাবে কি না কিন্ত এখন যা পেলাম তা তে সকল অস্বস্তি দূর হয়ে গেলো। আলহামদুলিল্লাহ্
জি
জয় সোনেলা…. জয় বিরিয়ানী ভক্তকুল…
সেডরিক
ধন্যবাদ মায়াবতী।
আপনার ব্লগনেমটা সুন্দর
মাহমুদ আল মেহেদী
বিরিয়ানীর মতই চমৎকার হয়েছে লেখাটা। তবে গরুর বিরয়ানীই আমার কাছে খেতে বেশী ভালো মনে হয়। নিয়মিত লিখবেন আশা করি আমাদের মত ভোজন রশিকদের জন্য ।
সেডরিক
বিরিয়ানী মূলত এসেছে কাচ্চি বিরিয়ানী থেকেই, গরুর বা মুরগি হইলো রিমিক্স বিরিয়ানী। বিরিয়ানী সৃষ্টিই তো হইলো খাসী ও ভেড়ার মাংস থেকে। 🙂
মোঃ মজিবর রহমান
লিখমু না কপি করে নিমু।
পারলে ঠেকান। হা হা হা আহা আহা
সেডরিক
কপি করেন, সমস্যা নাই। বিরিয়ানীর রেসিপি সবাইকে জানাবার জন্যই তো লিখেছি।🙂
ইঞ্জা
স্বাগতম সোনেলায়, প্রথম পোস্টেই বাজিমাত করলেন, বিরিয়ানির ভক্ত কে না বলুন, বিশেষ করে আমি, বিদেশ সফরের অভিজ্ঞতা থাকার ফলে প্রচুর ভ্যারাইটির বিরিয়ানির স্বাদ নেওয়ার অভিজ্ঞতা আমার হয়েছে, কাচ্চি, আকনি, চিকেন, আফগান, হায়দারাবাদি, ট্রিভান্ডাম, সবজি বিরিয়ানি সহ কত শত বিরিয়ানি খেয়েছি তার হিসাব নেই, আমার ফেবারিট তো অথেন্টিক হায়দারাবাদি বিরিয়ানি যা একবার খেলেই আজীবন স্বাদ ভুলবেননা।
সেডরিক
হায়দ্রাবাদের নিজামদের কাছ থেকে পৃথিবী যেটা পেয়ে ধন্য হয়েছে, তা হলো হায়দ্রাবাদি বিরিয়ানী 👌
ইঞ্জা
একদম
মনির হোসেন মমি
সোনেলায় স্বাগতম।নিজে পোষ্ট করুন অন্যের পোষ্ট পড়ুন এবং মন্তব্য করুন যতটুকু সম্ভব।ধন্যবাদ।
সেডরিক
ধন্যবাদ মনির হোসেন মমি 🙂
চেষ্টা করবো অবশ্যই😊
মেহেরী তাজ
লেখা পড়বো না। আমার পক্ষে এই লেখা পড়া অসম্ভব। ছবি দেখেই বিরিয়ানির খিধা লাগছে। প্রথম প্রশ্ন পড়েই আমি কুপুকাত। বিরিয়ানি পছন্দ করি মানে? অবশ্যই করি।
সোলেনায় স্বাগতম।
খাওয়া দাওয়া পোষ্ট বেশি দিলে খাওয়াইতেও হবে মনে রাখবেন।
সেডরিক
ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়। বিরিয়ানি খেয়ে ক্ষুধা মিটিয়ে ফেলেন🍲
অনলাইনে আপনাকে খাবার পাঠাতে পারবো, কিন্তু আপনি তো খেতে পারবেন না।🤣
মেহেরী তাজ
অনলাইন অর্ডার করে খাবার পাঠালে খাওয়া তো যায়। আপনি অনলাইন বিষয় টা একটু খুলে বলুন।
সেডরিক
আরে নাহ.. ডেলিভারি বয় অর্ধ্বেক খেয়ে ফেলবে! আপনি এটোঁ বিরিয়ানী খেতে চান? 😝
তৌহিদ
সোনেলায় স্বাগতম জানাই। বিরিয়ানির রেসিপি আর ছবিগুলো দেখে ক্ষুধার জ্বালা বেড়ে গেলো।এখন বিরিয়ানি খুঁজতে বের হতে হবে দেখছি।
লেখার অনুভূতি ভালো লেগেছে ভাই, পাশে থাকবেন।
সেডরিক
ধন্যবাদ ভাই তৌহিদ। ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম😁
তৌহিদ
শুভকামনা জানবেন ভাই।☺
নীলাঞ্জনা নীলা
এই প্রথম আপনার লেখা পড়লাম। খুবই ভালো লাগলো উপস্থাপন।
অবশ্য বিরিয়ানি আমার খুবই অপছন্দের খাবার। তবে বানাতে হয় মাঝেসাঝে ই।
সেডরিক
নীলাঞ্জনা নীলা, আপনি মানুষ না। আপনি ড্রাগন।😕
[ছবি মুছে ফেলা হয়েছে]
রিতু জাহান
বিরিয়ানি আমার ভীষণ পছন্দ। আমাদের চারজনেরই পছন্দ। আগে যখন তার সাথে রাগ করতাম। তিনি স্টার কাবাব থেকে এক প্যাকেট কাচ্চি আর বোরহানি নিয়ে আসতেন। ব্যাস রাগ আমি বিরিয়ানির সাথেই হজম করে ফেলতাম।
পুরো লেখায় বেশ জমিয়েছেন। অভিনন্দন আপনাকে। ভালো থাকুন।
সেডরিক
ধন্যবাদ রিতু জাহান 😊
অপার্থিব
বিরিয়ানী খাই তবে অত পছন্দ না, পোস্ট ভাল লাগছে। একবার রান্নার ট্রাই করে দেখা দরকার।
সেডরিক
ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম। অবশ্যই ট্রাই করা দরকার। বিরিয়ানি রান্নার ট্রাই করেন, শুভকামনা রউলো অপার্থিব। 😊
শুন্য শুন্যালয়
কী সুন্দর রেসিপি! বাজার করলো আব্বা, রাঁধলো আম্মায়, খাইলেন আপনি, আর জ্বলাইলেন সোনেলাবাসীরে। তীব্র প্রতিবাদ!
আমার খিদা লাগছে চরম। খিদা লাগলে এইসব পোস্ট দেখলে ক্যামনডা লাগে!
সেডরিক
😁