ভালোবাসার নাম বিরিয়ানী

সেডরিক ৫ এপ্রিল ২০১৯, শুক্রবার, ১০:৪৬:০৫অপরাহ্ন বিবিধ ৩২ মন্তব্য

প্রথমেই একটি প্রশ্ন করি, “আপনি কি বিরিয়ানী পছন্দ করেন?”

উত্তরটাও আমি দিয়ে দিচ্ছি, “অবশ্যই। পছন্দ মানে? আপনি বিরিয়ানী ভালোবাসেন। হলিউড-বলিউড নায়িকাদের ভালো না বেসে থাকা যায়, বিরিয়ানীকে ভালোবাসতেই হবে। যদি আপনি বিরিয়ানী ভালো না বাসেন, তবে আপনি মানুষ না। আপনি ড্রাগন।”

তো প্রথমেই বলে নেই, আমি নিজে কিন্তু চাচ্ছিলাম না, তবে চৈত্র-বৈশাখের এই আবহাওয়া খুব করে চাচ্ছে আমি যেন বিরিয়ানী খাই। চৈত্রের মাঝামাঝি সময় থেকে বৈশাখের প্রথম কিছুদিনকার আবহাওয়া হচ্ছে ষোড়শী কন্যাদের আবেগ এর মত। এদের মন জুগিয়ে চলতে হয়, না হলে ঝড় বইবে, কালবৈশাখী ঝড়।

এখন আমি না হয় বিরিয়ানী খেয়ে ফেললাম, বাকিদের কি হবে? ছোটবেলা থেকে শিখে এসেছি ভালোমন্দ যাই খাই, মানুষকে যেন দিয়ে খাই। তাই এখানে সবাইকে বিরিয়ানীর রেসিপি শিখিয়ে দিচ্ছি।

ধাপঃ ১

বিরিয়ানী খাবার ইচ্ছা হলে প্রথমে চোখ বন্ধ করে দুটি নিঃশ্বাস নিন। তারপর  আরজুমান্দ বানু বেগমকে মনে মনে ধন্যবাদ দিন। তার কারনেই বিরিয়ানীর আবিস্কার, তার বদান্যতায় আমরা বিরিয়ানীর মত কিউট একটা খাবার পেয়েছি।

আরজুমান্দ বানু বেগম (মমতাজ মহল)

ধাপঃ ২

এবার লিষ্ট করুন। বিরিয়ানী রান্না করতে যে যে উপকরন লাগবে, সেগুলো একটা কাগজে টুকে নিন। খবদ্দার! মোবাইলের কোন এ্যাপসে লিখবেন না, বিরিয়ানী হচ্ছে শত বছরের পুরনো ঐতিহ্য, আধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে একে অপমান করবেন না। কাগজ-কলম নিন..

উপকরনঃ

১) চাল (দেশী কালিজিড়া চাল লাগবে, না হলে বাসমতি ) – ১ কেজি

২) হাড় সহ খাসির মাংস – ১.৫ কেজি

খাসীর মাংসে হাড্ডি রাখবেন। গুগলে যেসব হাড্ডিওয়ালা ছবি পেলাম, সেগুলো দেখতে কিউট না। তাই এই ছবি দিলাম

[অবশ্যই খাসীর মাংস হতে হবে। মুরগী দিয়ে আবার বিরিয়ানী হয় নাকি? দেশি ছাগলের মাংস জোগাড় করুন, ব্লাক বেঙ্গল জাতের ছাগল এর মাংস পেলে ভালো হয়। যমুনাপারি, মাড়োয়ারি, বারবারি, সুরতি, গাড্ডি এর মত পৃথিবীতে ৩০০ এর উপরে ছাগলের জাত আছে। কিন্তু মাংসের মান বিচারে আমাদের দেশী ব্লাক বেঙ্গল ছাগলকে টেক্কা দেয়ার মত কোনটা নাই।]

২) পেঁয়াজ – পরিমানমত

দেশী পেঁয়াজ নিবেন। যদিও এরা কাঁদায় বেশি

[ইন্ডিয়ান বা চায়নিজ পেয়াঁজ এর পাল্লায় পড়বেন না মোটেও। দেশী পেঁয়াজ লাগবে।]

৩) লেবুর রস ১/৪ কাপ

৪) আদা রসুন – (পাটা-পুতায় ছেচে পেষ্ট করে নিবেন)

৫) লাল মরিচ গুড়া – ইচ্ছামত

৬) কাঁচা মরিচ – যত লাগে

৭) এলাচ, দারচিনি, তেজপাতা – পরিমানমত

মশলার ক্ষেত্রে দয়া করে কিপ্টামি করবেন না

৮) পুদিনা পাতা, ধনিয়া পাতা ২৫০ গ্রাম

৯) টক দই – ৫০০ গ্রাম

১০) ঘি – দুই টেবিল চামচ

১১) তেল, লবন – পরিমান মত

তেল মানে সয়াবিন তেল

[তেল এর জায়গায় আবার পাম তেল দিয়েন না। এটা বিটিভি না যে পাম দিবেন, আবার তেলও দিবেন। পাম তেলে বিরিয়ানী রান্না করলে আপনার নামে মামলা হওয়া উচিত। লবন আয়োডিন যুক্ত হতে হবে।]

১২) স্যাফ্রন

১৩) টমেটো – ১ টা

প্রেমিকাকে লাল গোলাপ না দিয়ে, লাল টমেটো উপহার দিন

[অবশ্যই নিখুত লাল হতে হবে। লাল না হলে কিন্তু পাপ হবে]

১৪)  লবঙ্গ,  জয়ফল, জয়ত্রী, জিরা, শুকনা মরিচ – পরিমান মত

[ইচ্ছা হলে গুঁড়ো করে নিতে পারেন]

১৫) আলু বোখারা – ৮-১০ টি

 

ধাপঃ ৩

লিষ্ট করা শেষ হলে দৌড়ে বাবার কাছে নিয়ে যান। বাবার কাছে আবদার করেন এগুলো কিনে দিতে।

বাবা ধমক দিলেও দমবেন না, হজম করে নিবেন। বিরিয়ানী খেতে হলে না হয় একটু বকা খেলেন

[ অবশ্যই বাবার সাথে বাজারে যাবেন, এবং অবশ্যই ব্যাগ নিজে বইবেন। এহহ.. বাবা কিনে দিবে আবার ভারী ব্যাগ টেনে এনে আপনাকে খাওয়াবে? শখ কতো! বাবা যদি কপট রাগ করে ধমকও দেয়, তবুও বাবার হাতে ব্যাগ দিবেন না। ধমক হজম করে নিবেন। ]

 

ধাপঃ ৪

আম্মার কাছে যান, “আমার সোওওনা মা.. আমার জাদু মাআআ.. আমার লক্ষী মা.. ” ইত্যাদি আলু দিয়ে দিয়ে মাকে রাজি করান, আর বলেন বিরিয়ানী রান্না করে দিতে।

মাকে আলু দিন, বিরিয়ানীতে না

[বিরিয়ানীতে আলু দিতে নিষেধ করবেন। বিরিয়ানীতে আলু? এটা মারাত্মক অপরাধ।]

 

ধাপঃ ৫

মুঘল যোদ্ধাদের যুদ্ধ বিজয়ের উৎসবের খাবার হিসেবে বিরিয়ানী রান্না হতো। এটা বীরের খাবার। আপনাকেও তো বীর হতে হবে, তাই না?

বীরের জন্যই বিরিয়ানী

ছোট ভাই-বোন থাকলে মাথায় টাসঁ করে গাট্টি মেরে তারপর বিরিয়ানী খাওয়া শুরু করুন। আলাদা স্বাদ পাবেন।

[ছবি তুলে ইনষ্টাগ্রামে দিতে পারেন। কিন্তু এতে পাপ হবে, ভীষন পাপ হবে]

খাওয়া বাদ দিয়ে ছবি তুলতে ব্যাস্ত হবেন না। পাপ হবে

নোটঃ

যারা একা একা থাকেন, বাবা-মা থেকে দূরে থাকেন তাদের জন্য কিছু করার নাই। দোকান থেকে কেনা বিরিয়ানী খেয়ে মজা পাওয়া আর স্কটল্যান্ডের সাথে ক্রিকেট ম্যাচ জিতে লাফালাফি করা সমান কথা।

১জন ১জন
0 Shares

৩২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ