
গিয়ে দেখি আমার সহচর দুজন ক্যান্টিনেই বসা। আমাকে দেখে জমবে এবার টাইপের একটা হাসি দিলো পলিটিক্যাল সায়েন্সের হালিমা বানু। আমিও শুকনো হাসিতে তাদের বরণ করলাম। তাদের হাসির কারণ বুঝতে বাকি রইলো না। এক্ষুনি তারা আবারও বেরসিককে নিয়ে হাসাহাসিতে মেতে উঠবে। অন্যসময় হলে অন্যকথা, তবে আজ আমার মোটেও মুড নেই,হাসি ঠাট্টার। আর আমি কেনই বা তাদের সাথে তাল মেলাতে পারছি না সেটা যদি কোনভাবে তারা বুঝে ফেলে তাহলে আর আস্ত থাকবো না আমি।
আমার রুচি নিয়ে আমি মাঝে মাঝে শঙ্কিত। আমি সবার সাথেই মিশতে পারি কিন্তু পারসোনাল, পারফেক্ট কিংবা একেবারেই কাছাকাছি নেবার বেলায় যথেষ্ঠ খুঁতখুঁতেঁ। সবার সাথে মিশলেও চোখে না লাগলে, মন না ধরলে তার কাছাকাছি হইনা। তবে বন্ধু- বান্ধবরা সবসময় বলে সংকলিতার সংকলন বরাবর চমৎকার। একেবারে নামের মতোই! কি জানি আমার তো সন্দেহ।
আজ আমার যে অবস্থা আর রুচিবোধের পরিচয় হলো মনে মনে নিজের উপর বেশ করুণাই হচ্ছে। বাবা থাকলে নির্ঘাত সংকলিতা বদলে অন্যকিছু রাখতেন। আর গজরাতে গজরাতে বলতেন- এই গাধা মেয়ের নাম সংকলিতা কেন রেখেছিলাম। এতো নামের মর্যাদা দিলো না। অত্যন্ত নিম্মমানের রুচি তার। তার নাম বদলানোর ব্যবস্থা করা হোক!
বাবাকে আমার মাঝে মাঝে অহংকারী বলেই মনে হতো, বিষেশ করে পোশাক ও চেহারার ব্যপারে তিনি এমনই।
আমি তখন অনার্স থার্ড ইয়ারে পড়ি। আমার বিয়ের সম্বন্ধ এলো। ক্যাপ্টেন ছেলে, কদিন পর মেজর হবেন। পরিবারও ভালো। সবাই আয়োজন করলো দেখাদেখির। আমি বরাবর মজা নেয়ার দলে। যে রকম থাকি সবসময় তেমনি গেলাম ছেলের সামনে। ছেলের নাক, চোখ সবই ঠিক ।কিন্তু ছেলের মাথায় চুল দেখে বাবা আমার দিকে কটমট করে তাকালেন? যেন আমিই তাকে হায়ার করেছি। আরে, আমার কি দোষ!
ক্যাপ্টেন ‘ ইকবাল’ কবিরের মাথায় ‘বাল’ কই? এমন দুরঅবস্থায় আমি বিয়ের পর তার সাথে রেগে গেলে টানবো কি? তিনি সামনের চকচকে টাকখানা কোনরকমে পেছনের লম্বা চুল দিয়ে ঢেকে ফেলেছেন।
বাবা পাশের রুমে গিয়ে ফোঁস ফোঁস করছেন। মা তাকে স্বাম্তনা দিচ্ছেন- ভালো, মেধাবী ছেলেদের মাথায় চুল থাকে না। আর ছেলেদের চুল থাকা না থাকাতে কি এসে যায়? যোগ্যতা থাকলেই হলো।
এ পর্যন্ত আমার যতোগুলো বিয়ের প্রপোজাল এসেছে মা আর ভাইয়া একটাতেও না মত করেনি। সে ছেলে যেমনই হোক তাদের ভীষন পছন্দ। বারবার শুধু বাবার উচ্চমানের রুচিশীল চিন্তা আর মেয়ে বলে আমাকে অবজ্ঞা না করার জন্যই আমি বেঁচে যাই। বাবার ধারণা আমার মতো মেয়ে খুব কম হয়। দেখতে আমি যেমনই হই আমি জীবনে অনেক উপরে যাবো। একদিন শাড়ি পড়েছি বাবা মাকে বলছেন, আমার মেয়ের মতো স্টার্কচার কজনের হয়। খালি ফর্সা হলেই কে সুন্দর! তোমার রঙ পায়নি কিন্তু মেয়ে আমার অসাধারণ। অবশ্য সব বাবার কাছেই তার মেয়েরা অসাধারণ, সে যেমনই হোক!
বাবা ভাইয়াকে ডেকে বললেন, এই আপদ এখুনি বিদায় করো? যেখান থেকে যোগার করেছ সেখানে। মাথায় চুলের এ হাল তুমি আগে দেখনি। তোমার না বন্ধুর ভাই। আর কোনদিন আমার মেয়ের জন্য তোমাকে ছেলে খুঁজতে হবে না। প্রয়োজনে আমার মেয়েকে আমি বিয়েই দিবো না।তারপর ভাইয়ারও আর আমার ঘটকালী করা হয়নি। তবে এ ঘটনায় আমি ভীষন মজা পেয়েছি। মনে মনে অনেক রাত ভেবেছি তাকে নিয়ে, বেচারা! যেমনই হোক চলতো বোধহয়!
বয়স হবার পর থেকে হিন্দি মুভি মানেই শাহরুখ খান আর কাজল। শাহরুখ খানের চুল খামচে ধরবার অদম্য খায়েশ মনের ভেতর বহুকাল পুষে রেখেছি। তারজন্য আমি প্রয়োজনে মান্নাতে যেতে চাই। বিয়ের পর এই টেকোকে বললে এক বাক্যে রাজি হয়ে যেতো। বরং পারলে গিয়ে তাকে অনুরোধ করতো- শাহরুখ ভাই, আমার বউ এর চুল টানার বড় শখ। আমি তো সে শখ পূরণ করতে পারি নি।তাই প্লিজ আপনি পূরন করতে দিন, না করবেন না।
চলবে—-
ছবি- নেট থেকে।
১৫টি মন্তব্য
মোঃ মজিবর রহমান
অনেক ভালো লিখেছেন আপু। বাস্তবতায় ভরা। কিছু বানান টাইপিং্যে মিস্টেক হয়েছে দয়া করে সংশোধন করবেন।
রোকসানা খন্দকার রুকু
ধন্যবাদ ভাই। কী বোর্ডে সমস্যায় টাইপিং চাইলেও ঠিক করতে পারিনা। অনাকাঙ্খিত ভুলের জন্য ক্ষমা চাই। কষ্ট করে পড়ে নিবেন।।
মোঃ মজিবর রহমান
এটা আমারও হই আপু। খুব বেশিই হই। সহমত আপনার সহিত। এখানে ক্ষমা চাইলে আমার লজ্জা লাগে।
অনন্য অর্ণব
বন্ধুরা প্রায়শই বলতে শুনেছি, আর্মি অফিসারের বউরা নাকি পরকীয়ায় বেশ পটু। ভাগ্যিস আমাদের গল্পের নায়িকা টাকলাকে ফেরত দিয়েছে 😂😂
রোকসানা খন্দকার রুকু
ইশ ভাগ্যিস। সাথেই থাকুন। ভালোবাসা অবিরাম।।।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
টাকলা নিয়ে পড়লেন শেষপর্যন্ত! আহারে রাজকন্যা! বাবাদের রুচি এমনি হয় তাদের রাজকন্যার জন্য। এগিয়ে যান সাথে আছি। অবিরত শুভকামনা
রোকসানা খন্দকার রুকু
সাথেই থাকুন দি ভাই। সমালোচনাও করবেন কিন্তু। ভালোবাসা অবিরাম।
হালিমা আক্তার
চমৎকার লেখা। বাবারা এমনি হয়। শুভ কামনা রইলো।
রোকসানা খন্দকার রুকু
ধন্যবাদ আপু
নার্গিস রশিদ
সকল বাবা জেন এরকম হয়। দোয়া করি। শুভ কামনা ।
রোকসানা খন্দকার রুকু
কৃতজ্ঞতা অশেষ।।
ছাইরাছ হেলাল
তাহলে আপনি বলতে চাচ্ছেন,
টাক্লা!! আর না আর না, কিছুতেই না।
রোকসানা খন্দকার রুকু
হা হা হা হা।
মোহাম্মদ দিদার
পুরোটা পড়তে পারলাম না তাই সরি।
যেটুকু পড়েছি বেশ!
রোকসানা খন্দকার রুকু
ধন্যবাদ ভাই