জানালা দিয়ে হঠাৎ আসা ঝরো বাতাসে কেমন জানি একটা বৃষ্টির গন্ধ পায় বর্ণীল,তবুও তার ধারনা বৃষ্টি আসবেনা। নিদ্রাহীন চোখের তীক্ষ্ণতা মহিরু বটবৃক্ষের ডালপালার মত সুদুর প্রসারি হয়ে দিগন্তে কালো মেঘ খুজে বেড়ায়। কালো মেঘ আর নিজেকে কেন জানি গুলিয়ে ফেলে তার মধ্যে যেন নিজের অবয়ব দেখে সে।
ঠিক এমন টি চায়নি, ঘটনা টা এইত কয়েকদিন আগের, তার স্কুলের বান্ধবী নীলাকে ঘিরে।
সীমান্ত নামে এক ছেলের সাথে সম্পর্কে জরিয়ে পড়ে নীলা ইন্টারে উঠতে না উঠতেই। মূল ঘটনার সূত্রপাত হয় একটি ফোনের মাধ্যে। একদিন রাত ১ তার দিকে বর্ণীল এর মোবাইল এ একটা কল আসে, কিছু টা অবাক হয় সে।
এত রাতে তো কারো ফোন করার কথা নয়! কেমন জানি একটা কৌতূহল হয় তার মাঝে _
-হ্যালো!
-বর্ণীল বলছ? অপ্র প্রান্ত থেকে প্রশ্ন ভেসে আসে।
-জি বলছি, আপনি কে ?
-আমি সীমান্ত, নীলার বন্ধু।
নীলার বয়ফ্রেন্ড সীমান্ত তাকে এত রাতে ফোন? শঙ্কিত হয়ে উঠে বর্ণীল, কোন সমস্যা হয়নি তো আবার? নীলাকে বড্ড বেশি ভালোবাসে সে,সেই ছোট্ট বেলার ক্লাস ওয়ান থেকেই তার বেষ্ট ফ্রেন্ড নীলা।
-কি ব্যাপার সীমান্ত ভাইয়া! কেমন আছেন? কোন সমস্যা?
এর পর ইনিয়ে বিনিয়ে সীমান্ত যা বলল তা শুনে বর্ণীল পুরাই হতবাক! তাকে নাকি সীমান্তর অনেক ভালো লাগে, সীমান্ত নাকি তাকে ভালোবেসে ফেলেছে!
বর্ণীল তেমন কিছু বলেনা, শুধু বলে
-ভাইয়া! আপনি যা বলছেন তা অতি মাত্রায় কিছু ফালতু কথা বলে মনে হচ্ছে আমার কাছে, আপনি আমাকে আর কখনো ফোন দিবেন না। আপনি আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড এর বয়ফ্রেন্ড ! আপনার কাছ থেকে আমি এ ধরনের কথা আশা করিনি।
সুতীব্র পাহাড়ি বাঁশির সুরের মত মাথা ঝিম ঝিম করতে থাকে বর্ণীলের। তার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে নীলার জন্য, অনেক ইমোশনাল মেয়েটা। এত বড় শক সে নিতে পারবে
বলে মনে হয়না।
কালসাপের মত আঁধারের নিরবধি আচ্ছাদন তাকে ঘিরে ধরে। বর্ণীল কিছুতেই বুঝতে পারেনা তার কি এটা নীলা কে বলা উচিৎ কিনা? উচিৎ হলেও সে এই কথা নীলাকে কিভাবে বলবে? প্রায় তিন দিন ধরে বর্ণীল ভাবতেই থাকে।
তারপরেই চতুর্থ দিনের মাথায় নীলার ফোন আসে_
-হ্যালো! নীলা…… কেমন আছিস রে? অনেক দিন কোন খোঁজ খবর নাই যে তোর?
-অভিনয় করবিনা তুই বর্ণীল! প্রায় চিৎকার দিয়ে ওঠে নীলা। কিভাবে পারলি তুই এটা?
-মানে কি?
-এখন কিছু না বুঝার ভান না ? সীমান্ত কে তুই প্রপোজ করতে পারলি? তুই না আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড? ছিহ! বর্ণীল ছিহ!
আকাশ থেকে পড়ে বর্ণীল, কিন্তু শক্ত গলায় বলে_
-মাথা গরম করিস না তুই প্লিজ, আর শোন আমি প্রপোজ করিনি বরং সীমান্তই আমাকে প্রপোজ করে তিনদিন আগে।
-হয়েছে আর বানিয়ে বানিয়ে বলতে হবেনা, আমার ভাবতেই ঘৃণা হচ্ছে তোকে মাই ফ্রেন্ড ভাবতাম। তুই আমার সাথে আর কোনদিন যোগাযোগ করবিনা, আমার ভুল ছিল আমি তোকে ফ্রেন্ড ভেবেছিলাম।
এর পর অনেক চেষ্টা করে বর্ণীল, কিন্তু নীলা কে সে আর বিশ্বাস করাতে পারেই না।
আজ তাই দমকা বাতাসেই বৃষ্টি হবে বলে সে ভাবতে পারেনা, বৃষ্টি তো বিষাদ গুলি ধুয়ে নিয়ে যায়, আনে নির্মল রংধনুর প্রশান্তি। কিন্তু আজ ঝরো হাওয়ায় বিষাদ গুলি বাড়তেই থাকে, আকাশের ঘন মেঘ থেকে হঠাৎ করে ভারি বর্ষণ শুরু হয়। বৃষ্টি আর তার চোখের লোনা জল গুলো মিলে মিশে একাকার হয়ে যায়। জানালায় কার্নিশ বেয়ে গড়িয়ে পরা পানি থেকে চোখের জল গুলো কে আর কিছুতেই আলাদা করার উপায় থাকেনা।
(বিঃ দ্রঃ ইহা একটি সত্যি ঘটনা 🙁 )
১০টি মন্তব্য
লীলাবতী
এমন হয় মাঝে মাঝেই। কস্ট হতাশায় ডুবে যেতে হয় তখন।
ইকু
হুম… 🙁
শুন্য শুন্যালয়
খারাপ লাগলো পড়ে, বর্ণীল এর চেয়ে নীলার জন্যই বেশী কস্ট লাগছে… নীলা তার ভুল বুঝতে পারুক তাড়াতাড়ি এটাই চাচ্ছি… শুভকামনা -{@
ইকু
বাস্তবে নীলা আর তার ভুল বুঝতে পারেনা 🙁
প্রহেলিকা
চেষ্টা করেও কি ভাল বিশ্বাস ভেঙ্গে গেছে তো তাই। তারপরও নীলার ভুল ভেঙ্গে যাক সেটাই কামনা। ভাল লিখেছেন। -{@
ইকু
ধন্যবাদ আপনাকে 🙂
বেলাল হোসাইন রনি
গল্পটা পড়ে মনে হল কষ্টের বিষাদ সাগরে ভিতরে ছিলাম। আত্মবিশ্বাসের গোর কেটে নীলা যেন আপনার কাছে ফিরে আসে এই কামনা করছি।
ইকু
ঘটনা টি আমার নয়, বর্ণিল আমার একটা ফ্রেন্ড 🙂
খসড়া
আপনার জন্য কষ্ট লাগছে 🙁 কি আর করা 🙁
ইকু
বর্ণিল আমার একটা বান্ধবী 😛