কাক তাড়ানো বৃষ্টি! অামি পা’দুটি বাঁকা করে ছোট একটি চায়ের দোকানে গা ঢেকে দাঁড়িয়ে অাছি। আসার সময় বাসা থেকে ছাতাটা আনতে ভুলে গ্যাছি, তাই আজ এত দুর্দশা! গুড়িগুড়ি বৃষ্টির ফোঁটায় কী যে এক অবস্থা শহরের তা বুঝাতে পারবোনা। চারিদিকে বাতাসের শোনশান শব্দ! আকাশ থেকে নেমে অাসা মেঘগুলো ধরণীকে বিদঘুটে করে রেখেছে। ঘনঘন বজ্রপাতে কেঁপে উঠছে শহরের বুক! আমি কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে অপলকে তাকিয়ে অাছি বৃষ্টির দিকে। কত দিন পর কোথাও একটানা দাঁড়িয়ে বৃষ্টির ফোঁটা গুনছি। ইচ্ছে হচ্ছে চটকরে দৌঁড়ে গিয়ে বৃষ্টিতে ভিজি! কিন্তুু ইচ্ছে হওয়া সত্বেও বৃষ্টিতে ভিজবো নাহ। কারণ ঢাকা শহরে বৃষ্টিতে ভেজা মানে সারা শহরের ধুলোবালিকে গায়ে মাখা।।
খেয়ালহীন দৃষ্টি নির্বিত্তে গেঁথে অাছে ছলছল অাকাশের দিকে। আহা কি এক তুলতুলে বৃষ্টি! যেন শহর ধুয়ে চকচকে করতে এসেছে। পাহাড়ের মত দাঁড়িয়ে থাকা বিল্ডিংগুলোতে বৃষ্টির দাগ খুব বিশ্রী ভাবে লেপ্টে অাছে। বিল্ডিংএর ছাদে নুয়ে থাকা অাম গাছগুলো ছিঁটকে পড়ছে জানালার গ্লাসে! কয়েকজন নবযুবতীরা ছাদে দাঁড়িয়ে টুপটুপ করে গিলে খাচ্ছে বৃষ্টির জল। আমি অানমনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাদের বৃষ্টি ভেজা কৌতূহলগুলো দেখছি! তারপর,পকেট থেকে একটা বেনসন ধরালাম! নিকোটিনের প্যাকেট’টা প্রায় ভিজে গেছে। আর ভিজেরি তো কথা এত বৃষ্টির মাঝে কোনো কিছু কী শুকনো রাখা যায়? নাক দিয়ে নিকোটিনের কালো ধুয়া উড়াচ্ছি। বৃষ্টি ভেজা বিকেলে সিগারেট হাতে দাঁড়িয়ে থাকাটা অনেকটাই সিনেমার হিরোদের মত। অর্ধেক নিকোটিন টেনে উপর করে টান দিয়ে কৃষ্ণাঙ্গ গ্যাসগুলো উড়াতেই একটা অপরূপ মুখ আমার চোখে ভেসে উঠলো! আমি ট্যাবট্যাব করে তাকিয়ে অাছি শ্রাবস্তীর মায়াময় মুখের দিকে।
কি এক অদ্ভুত সুন্দর একটি মেয়ে। যেন স্বর্গ থেকে নেমে অাসা শাড়ি পড়া নীল এঞ্জেল! মেয়েটিকে দেখেই আমার মাথায় জীবনানন্দের বনলতা সেন কবিতাটা ঘুরঘুর করছে- ‘চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা, মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য; অতিদূর সমুদ্রের ’পর হাল ভেঙে যে-নাবিক হারায়েছে দিশা সবুজ ঘাসের দেশ যখন সে চোখে দেখে দারুচিনি-দ্বীপের ভিতর, তেমনি দেখেছি তারে অন্ধকারে; বলেছে সে, ‘এতদিন কোথায় ছিলেন?
কবি হয়তো এভাবেই বনলতাকে দেখেছিলেন কোনো এক বৃষ্টিমাখা বিকেলে। মেয়েটির ধবধবে সাদা দাঁতগুলো বের করে ধুতরা ফুলের মত হাসছে! রিক্সা দাঁড় করিয়ে ব্যস্ত শহরের কোলাহলে এই প্রথম কাওকে বৃষ্টিতে ভিজতে দেখছি। মেয়েটিকে দেখে মনে হল সে হয়তো জীবনে প্রথমবার বৃষ্টির ছুয়া পেলো! তাই এত চঞ্চল, এত উন্মাদ। অামি ঢেড় তাকিয়ে অাছি তার হরিণী চোখের দিকে। আহা কি হিমেশ্রী চোখ! যেন ঈশ্বর নিজ হাতে যত্ন করে বানিয়েছেন। এভাবে দেখতে দেখতে হঠাৎ বৃষ্টি থেমে গেল! খুব অদ্ভুত ভাবে মেয়েটিও নিমিষেই অদৃশ্য হয়ে গেল। আমি চমকে উঠি! অারে এখানেইতো ছিল। আমি হন্য হয়ে খুঁজতে থাকি। কিন্তুু কোথাও মেয়েটিকে দেখতে পাচ্ছিনা।
তারপর, চা ওয়ালাকে জিজ্ঞাস করি ভাই এখানে যে মেয়েটি বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে গুনগুন করে গান করছিলো সে কী চলে গেছে? চা ওয়ালা চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে বলে- কি যে বলেন স্যার? এখানে মেয়ে কই পাইলেন? আমি কোনো মেয়ে-টেয়ে দেহি নাই। আপনার মাথা ঠিক নাই স্যার, আপনি ফাঁকা জায়গা মেয়ে দেখেন হাহাহা! অামি অবাক হয়ে লোকটার কথা শুনছি, কিছু বলার সাহস পাচ্ছিনা। তারপর থেকে অনেক খুঁজেছি তাকে কোথাও খুঁজে পাইনি। তার এই মিটমিটে হাসি, গুনগুন রবী ঠাকুরের গান! নাকে চিকচিকে হলুদ গোল্ড রিং সবকিছু অামাকে মুগ্ধ করেছিলো! জীবনে প্রথমবার কোনো মেয়ের জন্য সাত ঘন্টা দাঁড়িয়ে ছিলাম। শুধু একটিবার দেখার অাশায় পুরো পাঁচটা মাস আমি প্রতিদিন চা খাওয়ার নাম করে মিরপুর দশ নাম্বার সেনা ক্যাম্প রোডের দিকে ঘুরঘুর করতাম!!
২০ জুন ২০১৯
২৮টি মন্তব্য
স্বপ্নবিহীন মামুন
নিকোটিনের কালো ধোয়া ভিতরে যেতেই মনে হয় কল্পনার জগতে চলে গেছেন। তা নাহলে অবশ্যই সেই হরিণীর দেখা মিলতে।
মাছুম হাবিবী
হাহাহা হয়তো তাই ধন্যবাদ
শাহরিন
হয়তো সে কোন কাজে এসেছিল এখানে কাজ শেষ চলে গিয়েছে নয়তো শহরের বিল্ডিং, বৃষ্টি দেখে নিজেকে নায়ক ভাবার সাথে সাথে কল্পনায় নায়িকাও জোগাড় করে ফেলেছে। ব্যাপারটা যাই হোক খুবই সুন্দর করে প্রকাশ করেছেন। ধন্যবাদ।
মাছুম হাবিবী
অনেক ধন্যবাদ
মাছুম হাবিবী
প্রিয় সোনেলা ব্লগের সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। গতকিছুদিন আগে অানুমানিক ১০/১২ দিন ধরে আমি ব্লগে ঢুকতে পারতেছিলাম নাহ! অনেক ট্রাই করেও ঢুকতে পারিনি। আমার মত কী সবারি এরকমটা হয়েছে? নাকি আমারি শুধু? প্লীজ কেউ অন্তত বলবেন কী হয়েছিল? বড্ড টেনশনে ছিলাম, কিন্তুু আজ ঢুকতে পেরে অনেক ভালো লাগতেছে।
শাহরিন
আমি কিন্তু পেরেছি ☺
ছাইরাছ হেলাল
কিছু রুটিন কাজের জন্য একটু সমস্যা হয়েছিল, অবশ্য এর মধ্যেও আমরা লেখালেখি করেছি।
এখন সব ঠিক আছে বলেই জেনেছি। অনেক ধন্যবাদ।
মাছুম হাবিবী
এখন ঠিক অাছে ভাই। এখন কোনো সমস্যা হচ্ছে নাহ, ধন্যবাদ অাপনাকেও
ছাইরাছ হেলাল
আরও একটু ঘুরতে হবে, এত্ত সহজে খুঁজে পেলে তো হবে না।
মাছুম হাবিবী
অনেক অপেক্ষা করেছি
জিসান শা ইকরাম
কিছুটা সমস্যা হয়েছিল।
আপনি কি সোনেলা গ্রুপে আছেন? যে সামান্য সমস্যা ছিল, তা গ্রুপে পোষ্ট দিয়ে জানিয়ে দেয়া হয়েছিল কিভাবে সোনেলা ব্লগে লগইন হতে হবে। নিয়মিত সবাই সেভাবেই ব্লগে এসেছেন, পোষ্ট দিয়েছেন।
জিসান শা ইকরাম
ধৈর্য রাখতেই হবে আরো।
ভালো লেগেছে গল্প।
শুভ কামনা।
মাছুম হাবিবী
অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া
শামীম চৌধুরী
আপনার ধৈর্য আর অপেক্ষ
র প্রশংসা করতেই হয়। তবে কাউকে খুঁজে বের করা সবচেয়ে কঠিন কাজ। আমিও খুজবো।
মাছুম হাবিবী
খুঁজে পেলে বলবেন ধন্যবাদ
শামীম চৌধুরী
অবশ্যই।
আরজু মুক্তা
প্রেম করতে ধৈর্যও লাগে।
মাছুম হাবিবী
আর ধৈর্য্য ধরে থাকতে পারছিনা
মাছুম হাবিবী
আর কত ধৈর্য্য ধরবো
আরজু মুক্তা
তাও ঠিক।।আকাশে স্বপ্নের বিছানা সাজাও যদি,তবে আসতে রাজি
মাসুদ চয়ন
সুন্দর গল্পের প্লট।লেখকের জন্য শুভকামনা।
মাছুম হাবিবী
অনেক ধন্যবাদ
শিরিন হক
গল্পের শুরুটা সুন্দর শেষটা বাংলা সিনেমার মতো হলে গল্প হতোনা। গল্পের শেষ টা না পাওয়ার আকাঙ্খা দাড়ুন লেগেছে। প্রেমিক মন এভাবেই যেনো খোঁজে হরিণের চোখ। তার পর বুরা বুড়া বয়সে নাতি নাতনির কাছে গল্প কইবো ক্যামনে।
মাছুম হাবিবী
হাহাহা আপুমণি, বুড়া হইলে নাতি নাতনিদের এই গল্প কইলে সবাই মজা নিব। তবে সত্যি তাকে আর কোথাও খুঁজে পাইনি।
সাবিনা ইয়াসমিন
গল্প দারুন হয়েছে। বৃষ্টিমুখোর দিনে এমন গল্প শুনতে/ পড়তে বেশ ভালো লাগে।
আমার মনে একটা প্রশ্ন প্রায়ই আসে। তাহলো, কবি-লেখকরা তাদের প্রেয়সী বা স্বপ্নকন্যাদের বেশির ভাগ সময় নীল শাড়িতেই কেন দেখে? লাল-বেগুনী বা হলুদ রঙের শাড়িতে দেখে না কেন!?
মাছুম হাবিবী
অাসলে আপু আমরা জানি বেদনার রঙ নীল, আর অাকাশের রং ও নীল। তাই লেখকদের অধিকাংশ সময় নীল রঙটাই পছন্দ। তবে লক্ষ করে দেখবেন মেয়েদের অন্যান্য রঙের শাড়ি থেকে নীল রঙের শাড়িতে একটু বেশিই সুন্দর দেখায়। তাই হয়তো লেখক বা কবিগণ এত নীল নীল করে।।
জিসান শা ইকরাম
ধৈর্য রাখতেই হবে আরো।
ভালো লেগেছে গল্প।
শুভ কামনা।
মাছুম হাবিবী
অনেক ধন্যবাদ