আমারই ছাত্রী । খুব কম কথা বলে। মা ,অসাধারণ । তিনটি বাচ্চা। হয়ত বন্ধু বা স্বামী বাচ্চাগুলোর বাবা । কেউ নাই তার পাশে। হাইস্কুল পাশ করতে পারেনি। কাজ জুটছে না কোথাও । গাড়ি নেই তার। প্রায় বাচ্চাকে নামিয়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে আমার সাথে একটু কথা বলার জন্য। আমি বলেছি ,দুঃখ গোছাবার জন্য আগে নিজে তৈরি হও ।
বললাম আগে G-ed পরীক্ষা দাও। তারপর গাড়ি কিন একটা । আমি নিয়ে যাব গাড়ি কিনতে আমার মেয়ের ডিলারশীপে । একটা মোটামুটি গাইড লাইন দিলাম তাকে।
কয়েকদিন পর দেখি বাচ্চাটা আর স্কুলে আসছে না। আমার খুব মন খারাপ । দুই দিন পর এলো বাচ্চার সব নিতে। জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে তোমার ? বলল , সরকার স্কুলের টাকা দিচ্ছে না। আমার কাজ পেতে হবে আগে। খুব মন খারাপ। বললাম , ফিরে আসুক তোমার মেয়ে,আমি অপেক্ষায় থাকব। আদর করে দিলাম মা আর মেয়েকে।
আজ ক্লাশ খুব ব্যস্ত ছিল। বাচ্চাদের এসেসমেন্ট টেস্ট হচ্ছে। হটাত দেখি সে এসেছে আমার ক্লাশে। কাছে গেলাম। আমাকে বলল ,সামনের মাসে টাকা হবে তখন গাড়ি কিনব। তার কেইস ওয়ার্কার কি ঝামেলা করেছে তাই ফুড স্ট্যাম্প কিছুই পাচ্ছে না। ঘরে খাওয়া নাই, কাপড় ধোয়ার সাবান নেই। আমি আগে কখনো সেভাবে ভাবিনি এখানেও মানুষের ঘরে খাওয়া থাকে না। কিছুই ভাবি নাই। ব্যাগে রাখা ৬০ ডলার ওর হাতে দিলাম। বললাম বাচ্চাকে আগে খাওয়া কিনে দাও ।আমাকে ধরে সে খুব কাঁদল ।
আমি আজ দেশ ছেড়ে তিনটি বাচ্চা নিয়ে এদেশে আছি। আমার বাচ্চারা বিনা খরচে পড়ছে । আমি আমার বাচ্চাদের নিয়ে এখানে বেঁচে আছি । এ তো ঋণ …শোধ দিলাম কিছুটা । তার কান্নায় আমার জামা ভিজে গেছে ।
আমরা যারা দেশের বাহিরে আছি তারা প্রচুর অর্থ সাহায্য নিজের দেশে দেই। কিন্থু যে যেই দেশে আছি সেখানেও কিছু দায়বদ্ধতা আছে। সবার আগে তাকেই দিতে হবে যে পাশের ঘরে না খেয়ে আছে।
আমার মনে হয় আমি আজ বিধাতাকে ছুঁতে পেরেছি ।
অজানা মানুষকে কেউ বিশ্বাস করতে পারে না আজকাল । আমি পেরেছি ।
তোমরাও পারবে বন্ধুরা। চল ভালবাসি ,
মানুষকে ।
আর এই মানুষের মধ্যেই আছে
বিধাতা ।।
১৩টি মন্তব্য
শুন্য শুন্যালয়
লেখাটি পড়ে সত্যিই খুব অবাক হয়েছি কারণ গতকাল টিভিতে একটা বিজ্ঞাপন দেখে আমার মনের মধ্যে ঠিক এই কথাগুলো এসেছিল. মাত্র 25 ডলার এ ইউ ক্যান সেভ এ লাইফ. এখানে ডিসেবল সেজে সারাজীবন বিনা কাজে কাটানো যায়, আর সেখানে এমন বিজ্ঞাপন. আপনার লেখা অনুপ্রেরণা দিল, নিশ্চয়ই কিছু করব সুযোগ আসুক.
দুঃখ গোছাবার জন্য আগে নিজে তৈরি হই. আপনার কিছু লাইন আমার মাথায় ঢুকে যায়.. অনেক ভালো থাকুন.
নীলকন্ঠ জয়
মন্তব্য নয় স্যালুট জানালাম । -{@
বেলাল হোসাইন রনি
দিদি তোমার লেখাটা সত্যিই খুব অবাক করে দিয়েছে। যদি মানুষ হয়ে মানুষের পাশে আসতে না পারি, তবে মানুষ হয়ে বেচে থাকার কোন অধিকার নেই আমাদের । তাই যতদিন পৃথিবীতে বাচবো তত দিন মানুষের পাশে থাকবো এটাই যেন হয় আমাদের দিপ্ত প্রতিজ্ঞা। মানব সেবাই নিজেকে নিয়োজিত রাখবো। তাহলেই মানুষের মাঝে বিধাতাকে খুজে পাব।
জিসান শা ইকরাম
ভালো লেগেছে আপনার এই চিন্তাটুকু —
কিছু দায়বদ্ধতা অবশ্যই আছে যে দেশে বসবাস করা হয় সেই দেশের প্রতি।
তবে কিছু বাঙ্গালীকে বিশ্বাস করে প্রচন্ড ভাবে ঠকেছি
নিউ ইয়র্কে বসবাস করা একজনকে বিশ্বাস করে ঠকেছি —
তারপরেও বিশ্বাস করি মানুষকে 🙂
মোঃ মজিবর রহমান
সমাজের সব স্তর থেকেই মানুষকে ভালবাসা যাই, কিন্তু আমরা তা করিনা।
এটা এক প্রকার আমাদের ক্রিপনতা বা অলসতা,
তবে আপনার এই চিন্তা ও কাজতি সকল মানুষের প্রেরনা হোক।
আমিও শিখলাম।
স্যালুট আপনাকে।
মা মাটি দেশ
মানুষের মাঝে বিধাতা।হ্যা ঠিক তাই……..খুব ভাল হয়েছে।এবারে একে অন্যের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়ালে মানুষকে আর না খেয়ে থাকতে হতনা…স্যালুট আপনার মহানুভবতাকে (y)
ছাইরাছ হেলাল
এখনও মানুষেই বিশ্বাস রাখি আপনার মতই ।
বনলতা সেন
আপনার অনুভূতির অনুভব আমাকেও ছুঁয়ে যাচ্ছে ।
দারুণ সৌন্দর্যে উপস্থাপন করেছেন ।
অবশ্যই নিজেকে বিশ্বাস করি ।
অন্যদেরকেও আস্থায় রাখি ।
লীলাবতী
স্রদ্ধা পাবার মত কাজ করেছেন আপু ।
ছন্নছাড়া
অসম্ভব ভালো একটা কাজ করেছেন স্যালুট আপনাকে আপু (y)
স্বপ্ন
চল ভালবাসি ,
মানুষকে ।
আর এই মানুষের মধ্যেই আছে
বিধাতা ।। (y) (y) (y) -{@
নীলাঞ্জনা নীলা
অনুকরণীয় (y)
খসড়া
টাকা দিয়ে সাময়িক সাহায্য করেছেন যা জরুরী ছিল সেই মূহুর্তে। আমাদের এর পরের পদক্ষেপের কথাও চিন্তা করতে হবে। সমস্যার সমাধান স্থায়ী ভাবে। ভাল থাকুন আপনি সব সময়।