একটি জীবন যা পৃথিবীতে এক বারই জম্ম নেয় সেই জীবনে থাকে হাসি-কান্না সুখ-দুঃখের একটি অধ্যায় যা মৃত্যু অবধি এর সমাপ্তি।সেই জীবনটি যদি অকালেই ঝড়ে যায় জীবনে এর চেয়ে বেদনার হিস্ট্রি আর কি হতে পারে……
-হে..লো।
-কে?ছোট মিয়া।
-হ্যা…মা
-তুই কেমন আছিস বাপ?
-ভালো মা…তোমরা কেমন আছো?
-আর কইছ না,তোমার ছোট ছেলে হোসেন যে দুষ্টু হয়েছে তা আর বলতে নেই….।কবে আসবি?
-এইতো লঞ্চের টিকিট কেটেছি পরশু রাতেই রওয়ানা দিবো….।
-ঠিক আছে…ভালোয় ভালো ফিরিস।নে বউ মার সাথে কথা ক।
-কেমন আছো তুমি?
-ভালো,আপনি কেমন আছেন?
-ভালো,তবে…।
-তবে কি?
-তবে কি তুমি বুঝো না,তোমাকে ছাড়া আমাকে এখানে একা একা থাকতে বুঝি খুব ভালো লাগে!
-আপনি কি মনে করেছেন আমারও খুব ভাল লাগে?
-জানি কারো মন যে মানে না কিন্তু কি করব নিয়তি যে আমাদের এক হতে দেয় না।তবে চিন্তা করো না এবার দেশে এসে তোমাদের ঢাকায় নিয়ে আসব,এখানে একটি ছোট্র বাসা বাড়া নিয়েছি,এ্যাডভান্সও দিয়ে রেখেছি।আমি তুমি আর আমাদের সন্তান এক সাথে থাকব আর একটি খুশির খবর হলো যে আমার পদন্নতি হয়েছে সাথে বেতন বেড়েছে এখন আর আমাদের কোন দুঃখ থাকবে না।
-ইনসাল্লাহ কন,আল্লাহ আমাগো উপর মুখ তুলে তাকিয়েছেন।নেন আপনার ছোট ছেলের লগে কতা কন।
-হে লো আব্বু,তুমি কেমন আছ?
-জি আব্বা ভালা আছি,তুমি কবে আসবা?
-এইতো বাবা পরশু আসব,তোমার জন্য একটা সুন্দর লাল জামা কিনেছি।
-কোনটা,ঐ যে হেই ঈদে আমার বন্ধু রুমেল পড়ছিল?
-হুম…তার চেয়েও সুন্দর।
-কি মজা,আব্বা তোমারে একটা চুমো দেবো।
-আমি এসে নেই তার পর তোমার আম্মুকে দাও।
-হেলো,আব্বা নেই।
-না,মনে হয় গঞ্জে গেছেন।
-আব্বাকে বলো,বাড়ীর পাশে রহিম চাচার যে জমিটা বিক্রী করবে আমি এসে টাকা দেবো।রহিম চাচা যেন অন্য কাউকে না দেন।
-ঠিক,আছে।
-আজ রাখি।
অনেক পরিশ্রম করে তিল তিল করে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে জমানো টাকা এবং প্রাপ্ত ঈদ বোনাস দিয়ে গ্রামের এক অতি দরিদ্র ঘরের রাসেদ তার মা বাবা ভাই বোন স্ত্রী সন্তানদের জন্য ঈদের নতুন পোষাক কেনাকাটা করে সযত্নে একটি বড় ভ্যাগে ভরেন।কালকে বাড়ী যাবেন ঈদের ছুটিতে।
অন্য দিকে এক জোড়া নব্য এঙ্গেজম্যান্ট কপোত কপোতী অপেক্ষমান জীবনের সবচেয়ে গুরুত্ত্বপূর্ণ অধ্যায় শুরু করা।আশা ছিল ঈদে বোনাস এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিদা নিয়ে নব বধুকে নিজের করে, আপন করে পেতে মন-প্রান সর্বদায় উদগ্রীব।কখন যে আসবে সেই দিন যেন ঘন্টার কাটা চলছে না অথচ আর মাত্র কয়েকটি ঘন্টা এর পরই ফেনীগামী বাসে উঠে রওয়ানা দিবেন জহির সাহেব।
মৌচাক মার্কেট থেকে দোকানের সেরা বিয়ের শাড়ীটি ক্রয় করলেন সঙ্গে হরেক রকমের বিয়ের কসমেটিস ।মা-বাবার,ভাই বোনদের জন্য ঈদের পোষাক কিনতেও ভুলেনি।দোকান দোকানে ঘুড়তে ঘুড়তে ফাকে ফাকে নব বধুর সাথে ফোনোলাপ করে নিচ্ছেন জহির।
-কেমন আছো?
-ভালো আছি,আপনি কেমন আছেন?
-ভালো।
-এতো লোকের শব্দ কিসের?
-আমি মার্কেটে কিছু কেনাকাটা করছিলাম, তোমার জন্য কি আনব।
-কিছুই না শুধু আপনি সহি সালামতে ফিরে আসলেই হবে।
-হুম!
-টিকেট করেছেন?
-আর বলো না কি যে কষ্ট হলো টিকেট জোগার করতে,দুই দিন রোদে পূড়ে ঘামে ভিজেঁও টিকেট কাটতে পারিনি,তার পর সময় নেই তাই উপায় না পেয়ে কালো বাজারী লোকের কাছ থেকে চড়া দামে একটি টিকেট সংগ্রহ করেছি।
-হেলো?
-হেললো,দুলা ভাই আমি আপনার একমাত্র শালিকা….আমার জন্য কি আনছেন ঈদের পোষাক।আমি বলে রাখছি আমার জন্য যদি “পাখি”ড্রেস না আনেন তবে কিন্তু ভেজাল হবে আপাকে পাবেন না বলে রাখলাম হু….।
-ও মাই গড শালিকা তুমি,তোমার আপা কই?
-আগে প্রমিজ করেন “পাখি” ড্রেস নিয়ে আসবেন।
-ঠিক আছে ,কোন পাখি ড্রেস আনব?
-ঐ যে ডিসে স্টার জলসায় দেখায় “বোঝে না সে বোঝে না” ইন্ডিয়ার নাটক।
-ওহ বুঝেছি তোমাদের মাথা খেয়ে ফেলেছে ইন্ডিয়ার ঐসব ছাইপাছ নাটক ঠিক আছে নিয়ে আসব।
-প্রোমিজ।
-প্রোমিজ।
এমনি ভাবে হাজারো লোকের হাজারো আশা ঝুলিয়ে থাকে ঈদে মাটির টানে ফেরা লঞ্চ কিংবা বাসে অথবা রেল পথে সঠিক ভাবে পথ চলার মাঝে।বাসে সরু পথের যাত্রা অনেক ভয়ংকর যে কোন সময় ঘটে যেতে পারে দূর্ঘটনা।অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই বাস যে কোন সময় উচু সড়কে উঠতে গিয়ে উল্টে যেয়ে মারাত্ত্বক দূর্ঘটনা ঘটতে পারে তাই সাবধান এবং দেখে শুনে গাড়ীতে চড়া উত্তম কিন্তু ঈদ বলে কথা।যে ভাবে হউক যেতেতো হবেই নারীর টানে মা বাবার ভিটে মাটিতে বছরে একটি দিন একটি স্মৃতিময় অধ্যায়ের শেষ,মা বাবা আত্ত্বীয় স্বজন সবাইকে নিয়ে ঈদ করা আমাদের বাঙ্গালীদের ঐতিহ্য যুগযুগের কালচার।
না!জহিরের আর ফেরা হলো না হঠাৎ চালক নিয়ন্ত্রন হারায়,বাস উল্টে খাদে পড়ে যায় সেই সাথে জহিরের লাল শাড়ীর স্বপ্নের ইতি ঘটে আর মেহেদী রাঙ্গা বধুয়াঁর হাত দিয়ে যেন প্রিয় বিয়োগের রক্তের স্রোত বয়ে যায়।সেই সাথে চিরতরে মুছে যায় একটি স্বপ্ন অনেক আশা।
ফেরী বা নদী পথের অ্যাকসিডেন্টস এ দেশে একটি নিয়মিত ঘটনা । (y) প্রচন্ড ভির ঢেলে রাসেদ তার ব্যাগ গাট্টি নিয়ে চৌচালা একটি লঞ্চে উঠে হতাশ হন।কষ্টে অর্জিত টিকেট খানির মূল্য নেই,সিটের জন্য যে টিকেট কাটা হলো সেই সিটটি সহ বসে আছেন এক দম্পত্তির পরিবার অতিরিক্ত ভিরের চাপে লঞ্চ চালকের সিরিয়াল ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে।অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে লঞ্চটি এক সময় উল্টে নদীর মাঝে ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যায়।সাথে ইতি ঘটায় কয়েকশ পরিবারের পরিবার নিয়ে ঈদের আনন্দ,ইতি কিছু স্বপ্ন কিছু আশা কিছু ভালবাসার অপেক্ষায় থাকা না বলা কথা মালার আলিঙ্গন।
সর্ব শেষ স্টিমার অ্যাকসিডেন্টসে প্রায় ১২জন নিহতও অগণিত সাধারণ জনগণের জানমালের ক্ষতি সাধিত হয়।
(y) একটু ধৈর্য্য,একটু সাবধনতা আর ঝুকি না নিয়ে যানবাহনে উঠলেই বেচে যায় একটি প্রানের কয়েকটি আশা আকাংখ্ঙা পরিবার।
(y)এ ক্ষেত্রে সরকারের দায়ীত্ত্বও কম গুরুত্ত্বপূর্ণ নয়,সঠিক কাগজ পত্র চেকিংয়ে মাধ্যমে লঞ্চগুলোকে চলাচলে অনুমতি দেয়া কাগজ পত্র কমপ্লিট স্যাটিসফাই ব্যাতীত নদী পথে লঞ্চ চলাচল করতে দেয়া যাবে না।
(y) ঈদে আইনের বাড়তি নজর ধারী বাড়ানো লঞ্চ যাতে অতিরিক্ত যাত্রী বহন করতে না পারে।প্রয়োজনে লঞ্চেও আইনেরলোক ঈদ পর্যন্ত কর্মরত থাকবে।
-{@ (y) “সময়ের চেয়ে জীবনের মুল্য অনেক বেশী”
-{@ (y) আর কি, -{@ (y)
……………….ঈদ মোবারক।
১৪টি মন্তব্য
শুন্য শুন্যালয়
ঈদ আমাদের দেশে এখন বিভিষিকা। নিয়মকানুন ছাড়া এইরকম ইচ্ছেখুশির দেশ মনে হয়না সারা দুনিয়ায় আছে। হবেও না কিছু।
মা মাটি দেশ
ধন্যবাদ আপু -{@
ছাইরাছ হেলাল
হ্যাঁ কামনা করি আল্লাহ্ যেন সবাইকে প্রিয়জনের সাথে নির্বিঘ্ন ঈদ করার
তওফিক দান করেন ।
মা মাটি দেশ
আমীন -{@ (y)
বনলতা সেন
আমারা সবার মঙ্গলময় ঈদ কামনা করি ।
মা মাটি দেশ
ধন্যবাদ আপু ঈদের শুভেচ্ছা -{@
সীমান্ত উন্মাদ
চমৎকার কার একটি লিখা। পরিবহন চালক মালিকদের পাশাপাশি আমরা একটু সচেতন হলে আকাল প্রয়ান এর করাল গ্রাস থেকে বেঁচে যেতে পারে অনেক জীবন। আপনাকেও ঈদের শুভেচ্ছা।
মা মাটি দেশ
ধন্যবাদ ভাইয়া। -{@ (y) ঈদ শুভেচ্ছা
জিসান শা ইকরাম
এই সব নিয়েই আমাদের হাসি কান্নার দিন রাত্রি ।
ঈদ মুবারক।
মা মাটি দেশ
ঈদ মোবারক। -{@ (y)
লীলাবতী
ভালো লিখেছেন ভাইয়া। ঈদ মুবারক।
মা মাটি দেশ
ঈদ মুবারক।
স্বপ্নচারী
সবার ঈদ খুব ভালো কাটুক … আপনাদের সব থেকে বড় অনুষ্ঠানে খুব মজা করুন … ভাল থাকবেন …
লেখাটা খুব ভাল লাগলো …
ব্লগার সজীব
-{@ (y)