বন্ধু হতে চেয়ে তোমার

মামুন ৯ ডিসেম্বর ২০১৪, মঙ্গলবার, ০৮:০৮:২৭পূর্বাহ্ন গল্প ১৪ মন্তব্য

২.

জোড়ায় জোড়ায় ছেলেমেয়েরা বসে আছে। চ্যাট করছে। লাইব্রেরীর বারান্দায়। এখানে ওয়াইফাই এর নেট বেশী পাওয়া যায়। অধিকাংশই মোবাইলে নেট ইউজ করছে। ল্যাপটপ এবং ট্যাবের সংখ্যাও কম নয়। ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে থাকলেও কেমন একটা প্যাটার্ণ আপনাতেই এসে গেছে। চারুকলার যে ছেলেটি ওর গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে বসে আছে… তাঁর চোখের ভাষা পড়তে ব্যস্ত… ওকে বললেই সে এই প্যাটার্ণটি এঁকে দিতো!

দক্ষিণ পাশের এল সেপ কোনাটিতে পাগলি পাগলকে নিয়ে…

পাগলি চশমা পড়ে আছে। ক’দিন ধরে খুব জ্বালাচ্ছে তাঁর চোখ দুটো । শেষে ডাক্তারের শরনাপন্ন… এবং এখন চার চোখ নিয়ে পাগলের পাশে বসে থাকা। থেকে থেকে পাগল হাসছিল। অনেকক্ষণ এটা বুঝতে পারলেও এতোক্ষণ কিছু বলেনি পাগলি। এবারে আর সহ্য হল না। ল্যাপটপ থেকে চোখ তুলে বলল,

– কি ব্যাপার? সেই কখন থেকে তোমায় দেখছি হেসেই যাচ্ছ?

‘ আমার হাসতে কি মানা নাকি? আমি কি রামগরুরের ছানা?’

– দেখ ঢং করবা না। এমনিতেই চোখের জ্বালায় অতিষ্ট… তোমার যন্ত্রণা টলারেট করতে পারব না বাপু আগেই বলে দিচ্ছি।

‘ ওকে ওকে … ‘

– বল কেন হাসছিলে?

‘ তোমাকে দেখে!’

-মানে? আমি এখন হাসির পাত্র হয়ে গেলাম?

‘ পাত্র নয় পাত্রী’…

রাগে চোখ থেকে চশমা খুলে নিল… অভ্যাস নাই বলে বার বার খুলে পাশে রেখে চলেছিল এতোক্ষণ। মুগ্ধ হয়ে পাগল তাকিয়ে ছিল। এবারে আরো বেশী হল। রাগে পাগলি ফনা তোলা সাপের মত ফোঁস ফোঁস করছে। তাল মিলিয়ে ওর উদ্ধত বুক দুটোও ঊঠানামা করছে। আর কাকের চোখের মত কালো চোখ দুটি যেখানে অনবরত পাগল হারিয়ে যায়, সেগুলো জলন্ত অঙ্গার কখন হয়ে উঠবে সেই অপেক্ষায় ছিল সে। কিন্তু বিনা মেঘে আষাঢ়ের বৃষ্টি নামছে সেই দু’চোখ বেয়ে। হতভম্ব পাগল… আশেপাশে তাকায়… একটু কি বিব্রত বোধ করে?

‘ কি হল? এ্যাই, আমি দুষ্টুমি করেছি…’

– হি হি হি… তো আমি কি করছি?

চোখ দিয়ে ঝরে পড়া মুক্তোবিন্দুর দিকে তাকিয়ে পাগল হাস্যরত ওর প্রিয়াকে দেখে অবাক হয়। ইতোমধ্যে সে রুমাল দিয়ে নিজেকে ফ্রেশ করছে…

– তুমি কি মনে করেছ আমি কাঁদছি?

‘ তো কি করছিলে? হাসছিলে? সবাই কীভাবে দেখছিল…’

– এতেই মন খারাপ হয়ে গেলো? একেবারে ছেলেমানুষ! শোন, জীবনে কখনো চশমা পড়েছি? আজ সেই তখন থেকে চুলকাচ্ছে। আর আমার নিয়ন্ত্রণের বাইরেই ঐ ঢল নেমেছিল ।

‘ এখন তো দেখছি একেবারে আগুনে রং ধরেছে তোমার চোখ! চল আর কাজ করতে হবে না… বন্ধ কর… ‘

দেশের সব থেকে বড় শহীদ মিনারের দিকে ওরা হেঁটে যায়। ল্যাপটপের ব্যাগ কাঁধে পাগলির ডান হাত ধরে পাগল জীবনের পথ ধরে আগায়। শহীদ মিনারকে মাঝে রেখে বৃত্তাকারে সবুজ ঘাসের গালিচা আর যায়গায় যায়গায় ফুলের গাছ… ছোট-বড়-মাঝারি… আর ঝোপওয়ালা… এক কালারফুল জগৎ! ঘাসের কার্পেটে পাগলের কোলে মাথা রেখে পাগলি শুয়ে আছে। বিকেলের অস্তগামী সুর্য তাঁর কোমল হাসিতে ওদেরকে আশীর্বাদ করছে… নাম না জানা পাখীরা ওদেরকে গান শোনাচ্ছে… রং বে রঙের প্রজাপতি ঊড়ছে… কখনো কাছে আসছে… পরক্ষনেই দূরে চলে যাচ্ছে। কিন্তু ধরা দিচ্ছে না! জীবনটাও তো এমনি… তাঁর আসল রূপ নিয়ে কারো কাছেই ধরা দেয় না।পাগলির কথায় পাগলের ধ্যান ছুটে যায়…

– এ্যাই শুনছ!

‘ হ্যা!’

– আমি চশমা বাদ দিয়ে লেন্স নিলে কেমন হয়? কালার লেন্স?

‘ খুব খারাপ হয়’

– মানে?

‘ তোমার চোখ এমনিতেই সুন্দর!’

– কেমন সুন্দর? কি রং আমার চোখের? বলতো?

‘এই তো ঝামেলায় ফেলে দিলে… কখনো কালো… কখনো মনে হয় বাদামী… আর সময়ে সময়ে আগুনে রূপ ধারণ করে!’

– ব্যাখ্যা কর, প্লীইইইজ…

‘ যখন তোমার হৃদয় উপত্যকাকে চোখের মুগ্ধ দৃষ্টি দিয়ে ছুঁয়ে দেই, তখন শান্ত নদীর কালো জলের মতো তুমি অপেক্ষার প্রহর গোনো। তখন কালো…

-তারপর!

‘ একটু কাছে গিয়ে উপত্যকার বন্ধুর পথে হাঁটার জন্য ডিভাইডার গুলোকে সরানোর চেষ্টা করতেই ও দুটো বাদামী হয়ে যায়’

– আর শেষটা?

‘ ওটা বললে তুমি আমাকে এখুনি পোড়াতে চাইবে’

– না চাইব না।

‘ তোমার হৃদয় উপত্যকাকে আমি অনুভব করতে চাইলেই ওগুলো আগুনের রঙে নিজেকে রাঙিয়ে নেয়… আমি ভয়ে নিজেকে আবার সেই শান্ত জলের কাছে ফিরিয়ে নিয়ে আসি।’

– তাঁর মানে আমার আবেগের উপর চোখের রঙের ওঠানামা?

‘ হ্যা! ব্যাপারটা তো সেরকমই মনে হচ্ছে…। হাহ হা হা’

পাগলি এবার উঠে বসে।

পাগলের সাথে সামনা সামনি… চোখে চোখ রাখে…

পাগল একটা ঢোক গিলে… দেখে পাগলির চোখ আগুনে রং ধারণ করেছে !

পাগলি হাসে… হীরের কুঁচির মত জ্বলজ্বলে চোখে ও হাসতেই থাকে।

– আমার আগুনে চোখের অর্থ তুমি এতোদিন যা জেনে এসেছ সেটা ভুল ছিল জানু! তোমাকে আমার হৃদয় উপত্যকা থেকে নামিয়ে দেবার জন্য নয়… উপত্যকায় তোমার ইচ্ছেমতো বিচরণ করে… প্রবল এক ঝড় হয়ে আমাকে এলোমেলো করে দেবার আহ্বানেই ও দুটো আগুন হয়ে উঠতো! কিন্তু আফসোস! তুমি বুঝলে না বন্ধু…

‘ এখন ও তো বেশী দেরী হয়নি!’

একে অপরের দিকে তাকায়।

বোঝার মাঝেও কিছু যেন বাকি রয়ে যায়… সেই না বোঝাকে খুব নিবিড়ভাবে বুঝতে ওরা দুজন নিজেদের অজান্তে খুব কাছে এসে যায়। দিনের আলোয় সবার সামনে থেকেও ওরা খুব কাছাকাছি চলে আসে। সবুজ ঘাসের গালিচা আহবান করে… পাখীরা লজ্জায় মুখ লুকায়… আর প্রজাপতি রঙিন চাদর দিয়ে ওদেরকে ঢেকে দেয়!

আদম -হাওয়া ছাড়া এখন আর কোথাও কেউ নেই…

সৃষ্টি সুখের উল্লাসে সমগ্র প্রকৃতি ও কাঁপছে!

(ক্রমশঃ)

৪৫০জন ৪৪৯জন
0 Shares

১৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ