অনার্স ৩য় বর্ষের পরীক্ষার ডিউটি দিচ্ছিলাম আমি আর এক সিনিয়র ম্যাডাম। এইসব পাবলিক পরীক্ষাগুলো আসলে অত্যাচারের মত। ৪ ঘন্টার পরীক্ষার হলটাকে জেলখানারর চাইতেও খারাপ লাগে। পরীক্ষার কেবল আড়াই ঘন্টা পার হয়েছে। একঘেয়েমি কাটানোর জন্য পাশের রুমে উঁকি দিলাম। দেখি, আমারই বিভাগের আরেকজন বন্ধুপ্রতিম সহকর্মী লাইব্রেরিয়ান সাহেবের সাথে ডিউটি দিচ্ছেন। আমি ঢুকতেই লাইব্রেরিয়ান বললেন, ম্যাডাম, একটু দাঁড়ান, আমি পাঁচ মিনিটের মধ্যে আসতেছি। অগত্যা দাঁড়াতে হল। আমার বন্ধুটি তখন পরীক্ষার্থীদের শাসাতে ব্যস্ত। “এই, পিছনে কি?” “এই, হল থেকে বের করে দেব কিন্ত” “এই তোমাকে লাস্ট ওয়ার্নিং দিলাম” ইত্যাদি ইত্যাদি বাক্যবাণ বর্ষিত হচ্ছে। আমি আরেক রুমের, এখানে কথা বলাটা ভাল দেখায় না বলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি। হঠাৎ পায়ের নিচের মাটি( ঠিক মাটি নয়, শিক্ষকদের জন্য যে কাঠের প্ল্যাটফরম থাকে সেটা) কেঁপে উঠল। দেখি, একটা ফোনে ভাইব্রেশনের কারণে ধরণী কাঁপছে। কোন একজন পরীক্ষার্থীর ফোন হবে। পরীক্ষা শুরুর আগে এদের পকেট চেক করে ফোনগুলো সংগ্রহ করে প্ল্যাটফরমের উপর জমা করে রাখা হয়। ফোনটা তুললাম। ওমা দেখি বাংলা অক্ষরে সেভ করা নাম “বউ” নামে কে একজন ফোন করেছে। আমার সহকর্মী তখন অতিরিক্ত খাতা বিতরণ করতে ব্যস্ত, আমিও পন্ডিতি করার সুযোগ পেয়ে কালক্ষেপণ না করে হুংকার দিলাম “এই এটা কার ফোন?” হলে পিনপতন নীরবতা। আবার বললাম, একজনের বউ ফোন দিয়েছে, কে সে দাঁড়াও। হলে প্রথমে বিষ্ময় পরে হাসির হিড়িক পড়ে গেল। এদিকে জনৈকা বউ ফোন দিয়েই যাচ্ছে আর আমি চেঁচিয়েই যাচ্ছি, একবার ভাবলাম, যার ফোন সে হয়তো দাঁড়াতে লজ্জা পাচ্ছে। বললাম, কেউ না দাঁড়ালে ফোনটা কিন্ত সিজ করা হবে, কন্ট্রোলরুমে জমা দেওয়া হবে কার ফোন নিয়ে যাও। তবুও কেউ দাঁড়ায় না। আমার সহকর্মী বললেন, ফোনটা তোমার কাছেই রাখ। সিদ্ধান্ত হল, পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে কেউ যদি ফোন দাবি করতে না আসে, সেটা কন্ট্রোলরুমে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। এদিকে আমার নিজের হলেও যাওয়া দরকার। ফোনটা হাতে নিয়েই আমার হলে চলে গেলাম। কিছুক্ষণ বিরতি দিয়ে আবার “বউ” এর কল আসা শুরু হল। ভাবলাম, আহারে বেচারি এপাশ থেকে কোন সাড়া না পেয়ে হয়তো অস্থির হয়ে আছে। অগত্যা কলটা রিসিভ করে ফেললাম। হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে লাইন কেটে দিল, এবং আবার ফোন আসল। আমি আবারো হ্যালো বললাম, এবং যথারীতি আবারো কেটে গেল। ফোনটাতে পাসওয়ার্ড দেওয়া ছিল, আমি যে কলব্যাক করব সে উপায় ও ছিল না। কিছুক্ষণ পরেই আবার সেই একই নম্বর থেকে কল আসতে লাগল। এবার আর হ্যালো না বলে বললাম, এই এটা কার নম্বর? একটু নীরবতা তারপর মেয়ে কন্ঠে কাঁদো কাঁদো গলা, ” হায় হায় মহিলা ধরছে!!” পরক্ষণেই লাইন কেটে গেল। আমি ফোন হাতে নিয়ে বোকার মত দাঁড়িয়ে রইলাম। আমার সহকর্মী জানতে চাইলেন ব্যাপারটা কী। আমি খুলে বলতেই তিনি হাসতে শুরু করলেন। হাসতে হাসতে বললেন, তুমি তো সর্বনাশ করেছ। এই মেয়েতো এখন মনে হয় না জানি কি ভাবছে। আমি শিওর এ যদি সত্যিই এই ছেলের বউ হয় আজকে হেভি একটা ফাইটিং হবে হা হা হা। আমি দীর্ঘশ্বাস ফেললাম, ম্যাডাম যা বলেছেন খুব একটা অযৌক্তিক তো নয়। ইতোমধ্যে মেয়েটার গলা শুনেই সেটা বুঝেছি। কিন্ত আমার আর কীইবা করার ছিল।
পরিশিষ্ট : আমি আরেকবার খোঁজ নিতে গিয়েছিলাম কেউ এসেছিল কিনা ফোনটা নিতে। কেউ আসেনি। পরে আমার সহকর্মী, ওই কক্ষের দায়িত্বরত ম্যাডাম ফোনটা কন্ট্রোলরুমে জমা দেন। জানিনা ফোনটা কেউ নিতে এসেছিল কিনা, জানিনা ছেলেটা কীভাবে তার “বউ”কে ম্যানেজ করেছে, কে জানে সেটা হয়তো খুব অম্লমধুর অভিজ্ঞতা হয়েছে দুজনের জন্যই। সেই না দেখা “বউমা”টির জন্য অনেক ভালবাসা। পৃথিবীর সকল বউ ভাল থাকুক।
১১টি মন্তব্য
আকবর হোসেন রবিন
দেশে চাকরির বাজারের যে অবস্থা, তাতে এতো তাড়াতাড়ি মানুষ বিয়ে করতে পারে কীভাবে!
বউ না হয়ে প্রেমিকাও হতে পারে। হয়তো আদর করে প্রেমিকার নাম্বার বউ নামে সেভ করেছে।
ছাইরাছ হেলাল
স্বাগত আপনি এখানে।
রম্য দিয়ে যখন শুরুর শুরুটা করেছেন তখন অভাবিত সুন্দর অনেক কিছুই আশায় রাখছি।
লিখুন লিখুন ও পড়ুন আমাদের।
আল্লাহ জানে ফোন ওয়ালা কীভাবে কী ম্যানেজ করেছিল!
মোঃ মজিবর রহমান
রম্য লেখা কঠিন ব্যাপার। একটি ভাল লেখা উপহার দিলেন। সোনেলা ঊথানে আপনার লেখা আর চাই। লিখুন পড়ি।
স্বাগত আপনাকে।
জিসান শা ইকরাম
হা হা হা, দারুন মজা পেলাম 🙂
যার ফোন তার কপালে কত কি জুটেছে আল্লাহ মালুম।
বিচ্ছেদও হয়ে যেতে পারে। এত অল্প বয়েসে বিয়ে করেনা কেউ, সম্ভবত তার প্রেমিকাই হবে।
সোনেলায় স্বাগতম।
নিজে লিখতে হবে, অন্যের লেখাও পড়তে হবে এখানে।
প্রফাইলে একটি ছবি দিতে হবে, নিজের ছবি না দিতে চাইলে যে কোন একটা ছবি দিলেই চলবে।
শুভ কামনা।
শায়লা শারমিন
পড়ি তো কাকা, কিন্ত মন্তব্য করা হয় না। আমিও পরে ভেবেছি, যে প্রেমিকাই হবে।
নাজমুল হুদা
ভালোবাসার শিক্ষা দিলো একটা ফোন কল ।
আপনারা কল রিসিভ করার জন্য দশমিনিট বাড়িয়ে দিলে কী এমন হতো।
ফোনটা কার বলতেন , যখন কেউ চাইতো তখন বলতেন তোমার বউ ফোন দিয়েছে যাও মেনেজ করো।বউমা বলে কথা
আরজু মুক্তা
ফোন বিড়ম্বনা। হা হা। ভালো লাগলো।
শায়লা শারমিন
সবাইকে মন্তব্যের জন্য ও পড়ার জন্য ধন্যবাদ। শুভ ব্লগিং
সুরাইয়া পারভিন
হা হা হা,,,, বেচারী বৌ
দারুণ লাগেছে লেখাটি
মনির হোসেন মমি
হা হা হা বেচারা!
সেদিন নির্ঘাত বউ এর ঝাড়ুর বারি কপালে ছিলো।
চমৎকার গল্প দিয়ে অভিষেক ঘটালেন।অভিনন্দন। ধন্যবাদ। প্রোফাইল ছবিটা যোগ করে নিন।
চাটিগাঁ থেকে বাহার
বউকে ভালো আর থাকতে দিলেন কৈ!
আহা; বেচারি!
অনার্সের ছাত্র, সে পরীক্ষার পরে আপনার সাথে একা দেখা করে মোবাইল নিয়ে যেতে পারতো।