অস্বস্তি বোধ করায় পাশে আড় চোখে তাকিয়ে দেখি বিশাল এক জাম্বু, দৈত্যাকৃতির মুখ ঢাকা ভুত আমার গা ঘেঁসে দাড়িয়ে, সে ও রং পেন্সিল হাতড়াচ্ছে। আমি একটু সরে দাঁড়িয়ে রং সাধনায় মন দিলাম। হঠাৎ পাঁজরে রামচিমটির যন্ত্রণায় ক্যাঁক করে শব্দ করে পাশ ফিরে দাঁড়ালাম। চোখ কপালে উঠে তৃতীয় নয়নের জায়গা দখল করে স্থির হয়ে আছে, অপলক!!
অতি পরিচিতের বিশাল দোকানে এসে দাঁড়াতেই একটু দূর থেকে দোকানি ইতস্তত চোখে একটু অপেক্ষার অনুরোধ জানাল ইশারায়। কিচিরমিচিরের দঙ্গলে ভর্তি বিশাল দোকান। এসেছি এখানে লেখার জন্য ভাল রঙ্গীন কাগজ ও নানান রংয়ের কলম কিনতে। ডেস্কে রাখা রং পেন্সিল নিয়ে আঁকিবুঁকি কাটছি ফেলেরাখা কাগজে, আনমনে, ভ্যান গগঁ/গগার সাক্ষাত উত্তরসূরি!!
মাইরালা আম্রে মাইরালা।
মুখ আলো করে বিকট ভেংচি কেটে হিস হিস করে বলল “চোখের মাথা খেয়েছো না হয় বুঝলাম, এতগুলো সুন্দরী মোক্ষম রিনিঝিনি কি একটুও কানে যাচ্ছে না? বেড়াল তপস্বী সেজে ভাঁজা বাদ দিয়ে কাঁচা মাছটি ও খেতে না জানার ভান বের করছি তোমার এক্ষুনি, নো গাঁইগুঁই।”
ত্রাহি মধুসূদনের উথাল-পাতালে বিপদ আঁচ করে ভুলে যাওয়া দোয়াদরুদও এখন বেশ গড়গড় করে মনে মনে আওড়াতে কোন সমস্যা হচ্ছে না। হির হির করে………ধরে টেনে নিয়ে দাঁড় করাল মিনি একদল মেয়ে/মহিলাদের মধ্যে। দোয়া-কালাম পড়া শেষ, বিপদ থেকে উদ্ধারের আশায় ইতিউতি করছি।
দোকানদার ছেলেটিকে ধাড়ী শয়তানের প্রতিনিধি মনে হচ্ছে। ওর ফিক ফিকে হাসি দেখে গা জ্বলে যাচ্ছে। একটা বন-চটকানো দিতে ইচ্ছে করছে।
“তোরা শোন, তোমরাও শোন — এই কন্দর্পকান্তি মাকাল লুলুভুলু গাঁওবুড়াটাকে দেখে রাখ/রাখো, এটি কিন্তু আমার পরাণের পড়াণদোস্ত, মহা ধড়িবাজ, শয়তানের শয়তান, ভাব উদাসী, অসভ্যের! শিরোমণি…… জ্বালিয়েছে আমাকে অহোরাত্রি আজন্ম জ্বালানোর যন্ত্রণায়। দিলাম চিনিয়ে সব্বাইকে, চোখে চোখে রাখবে/রাখবি।”
এত্ত গরম লাগছে কেন দোকানের এসির বাতাস!! ঘামছি ঘামছি আর ভাবছি। এখন কি শীতকাল!! চালু রেখেছে হিটার!! হে দয়াময় ঈশ্বর, ফেল দড়ি জলদি, বেয়ে উঠে যাই নিজেই সপ্ত আসমানে। কোন্ কুক্ষণে এসেছিলাম আজ এ দোকানে! ওদিকে মিহি সুর শুনতে পাচ্ছি।
”এ মা, এই বুঝি বুড়ো? এমন বুড়োসুড়োর বন্ধু আমরাও হতে চাই।”
এইরে সেরেছে এবার। হে ঈশ্বর এবারে মত মাফ করে দাও।
স্বাস্থ্যময় দু’জন গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে আসতে আসতে বলছে,
“তোর যখন বন্ধু তখন আমরাও নাহয় একটু ছুঁয়ে-টুয়ে দেখি।”
প্রমাদ গুনলাম স্বেচ্ছায়। ঈশ্বর অপার অসীম দয়াময়!
জাঁহাবাজ, শয়তানী, কুঁদুলি, কুটনি (মেহজাবিন) ঝটতি চক্রবুহ্য রচনা করে আড়াল করে দাঁড়াল।
“যাচ্ছ?? যাও, যাবেইতো, তবে দিব্যি দিচ্ছি, আমার মাথা খাও, একটু ফোন করো প্লিজ।”
এ কথার উত্তর দিতে পারিনি, উত্তর হয় না।
সামান্য দূরত্বে এসে মাথায় আসা দুষ্টবাক্য সবাইকে শুনিয়ে বললাম ——নাতিপুতিদের নিয়ে একদিন বাসায় এসো।
“ওরে আমার মিচকে শয়তান আমাকে বুড়ি বানাচ্ছ? দেখাচ্ছি মজা।”
পগারপার, এক লাফে রিক্সায়।
অম্লান হাসির দোকানদারের ডাক শুনতে পাচ্ছি পেছনে “ভাইয়া কী যেন নিতে এসেছিলেন?”
চলিপে………
৩০টি মন্তব্য
নীলাঞ্জনা নীলা
মন দিয়ে পড়বো কাল আবার, লেখার মন্তব্যও আগামীকাল। 😀
ছাইরাছ হেলাল
অপেক্ষায় থাকব আপনার মূল্যবান মন্তব্য শোনার।
শুন্য শুন্যালয়
কোথা থেকে শুরু করি বলুন তো? লেখার মধ্যে মধুর হাড়ি উল্টে দিয়েছেন আমি নিশ্চিত। দুজনের কি গালিগুলির পাল্লাপাল্লি চলছে নাকি? তা চলুক, মধু যখন আছে তখন শুনতে মিষ্টিই লাগছে। তা ভ্যানগগ ভাইয়া কি যেন নিতে গিয়েছিলেন দোকানে? শিল্পকর্ম আধা ফেলেই দোকান থেকে ভেগেছেন, তাও এক নারীর খপ্পরে পড়ে। মেহজাবীনের গুণ আছে বলতেই হচ্ছে।
আমাদের সব্বাইকে চিনিয়ে দিয়েছে, এখন কিন্তু সব ফকফকা।
গাঁওবুড়োর লেখার হাত কিন্তু সেরাম 🙂
ছাইরাছ হেলাল
তেমন আর লিখতে পারলাম কই! আপনাদের সাথে থেকে একটু মকশো করছি আরকি।
পাল্লা এর ইটে পারলাম কই, মাইর-মুইর খাওয়ার ভয়েই পলয়ানং। ভুত/প্রেতদের অগুনিত গুণ! থাকে তা
দেখতেই পাচ্ছেন। যেখানে লেখকের জীবন সংশয় সেখানে আপনি নিজ গুনে মধু খুঁজে পেলেও তা অন্যদের
জন্য তেতো স্বাদ এনে দেয়। লুলুভুলু হলে বুঝতেন কত ধানে কত তুষ।
মোঃ মজিবর রহমান
মজাই পেলাম আপনার যাই হোক।
চলুক আছি সঙ্গোপনে।
ছাইরাছ হেলাল
সঙ্গোপনে থাকলে তো হবে না। আমাদের জন্য কিছু সময় দিতে হবে।
মোঃ মজিবর রহমান
সময় করে আসি ভাই।
সঙ্গে আছি।
ছাইরাছ হেলাল
আচ্ছা।
জিসান শা ইকরাম
একজন মেহজাবীনের অভাব বোধ করছি প্রকট ভাবে।
এমন শব্দ চয়ন,টান টান উত্তেজনা আর প্রঞ্জল বর্ননা আপনার পক্ষেই সম্ভব।
ছাইরাছ হেলাল
সুখে থেকে ভুতের কিলের স্বপ্ন না দেখাই উত্তম।
এ সবই কথার ফুলঝুড়ি মাত্র।
অনিকেত নন্দিনী
মাইরালা আম্রে মাইরালা। ^:^
ভ্যানগঁগের উত্তরসূরি ফেলে রাখা কাগজে আঁকিবুঁকি কেটে শেষতক কী আনতে গিয়েছিলো তা না নিয়েই এক লাফে রিকশায়!
মেহজাবিনের গুণ আছে বলতে হয়!
ছাইরাছ হেলাল
অবশ্যই তেনার গুনের অন্ত নেই। ভ্যানগঁগ হওয়ার এর সুযোগ পেলাম কখন।
জনারণ্যে প্রাণ বাঁচানোর দায় নিতেই অস্থির অবস্থা।
সিকদার
বুঝছি আপনি পাড়ার সেরা রোমিও এই হাড়িটাইত মেহজাবিন আপুরে দিয়া ভাংলেন হাটে । :D)
ছাইরাছ হেলাল
রোমিওর অবস্থা কিন্তু সঙ্গিন, মাইরের ভয়ে পালাতে হচ্ছে।
ব্যাপরটি কিন্তু ‘চল পলায়ে যাই’ অবস্থায় নেই।
প্রজন্ম ৭১
পড়ার আগেই তো শেষ হয়ে গেলো।চিত্র কর্ম কি দেখা যাবে? +++++
ছাইরাছ হেলাল
চিত্র কর্মের সুযোগ ই তো পেলাম না।
খেয়ালী মেয়ে
মিস করা পর্বগুলো পরে সময় করে পড়ে নিবো….
বন-চটকানো কি?…
আপনার লেখায় নতুন অনেক শব্দের সাথে পরিচয় হয়, যা পড়ে আমার শব্দের ভান্ডার সমৃদ্ধ হচ্ছে…
কুটনি (মেহজাবিন) চলিতে থাকুক…
ছাইরাছ হেলাল
আচ্ছা, সময় করে পড়লেই হবে।
আপনি একটু সচেতন হলে অনেক শব্দ আপনি এমনি পেয়ে যাবেন
আশা করি নিয়মিত হবেন।
আশা জাগানিয়া
দুজনার সম্পর্ক কে এত ভালো ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন যে এর ব্যখ্যা দিতে পারছি না।
ছাইরাছ হেলাল
সম্পর্কটি অবশ্যই জটিল-সুন্দর, ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করছি নিজের মত করেই।
পেরেছি কিনা তা আপনারাই বলতে পারবেন।
লীলাবতী
এরপরে রিক্সা দাড় করিয়ে রাখবেন যতক্ষন দোকানে থাকবে।যা বর্ননা দিলেন মেহজাবিন এর তাতে বুজলাম,এনার থেকে মুক্তি নেই।মুক্তি অবশ্য চান না কেউ কেউ 🙂
ছাইরাছ হেলাল
আপনি একদম সঠিক বুদ্ধি দিয়েছেন। এর পর থেকে তাই করতে হবে। ভাই আমি মুক্তি চাই।
কোন তাবিজ-তুবিজ থাকলে খবর দিয়েন। এ যাত্রা বাঁচতে চাই।
নীলাঞ্জনা নীলা
ঘটনা কি!!! ;?
মেহজাবিনকে দেখলাম আমার জানলায়, তারপর টোকা দিয়ে বলতে লাগলো,
“সাবধানে মন্তব্য করো কিন্তু! নইলে… :@ ”
বললাম নইলে কি করবেন আপনি?
“কত্তো বড়ো সাহস মুখের উপর কথা!”
শুনুন মেহজাবিন এতো সুন্দর মুখখানি, কি আহ্লাদী! জানেন ছাইরাছ হেলাল ভাই কতো মিষ্টি মিষ্টি গল্প করেন আপনার?
“ওহ তাই নাকি? আসলে আমি স্যরি। বেশী রাগ দেখিয়ে ফেলেছি। কিছু মনে করবেন না।”
অবশ্যই না। আপনাকে দেখলে আমার যে রাগগুলো আছে না, সেসবকে চার্জ দিতে আর হয়না।
“মানে কি? বুঝিনি।”
সুন্দরী আপনি এতো কি হবে বুঝে, বলুন!
“এবার কিন্তু বেশী বলছেন। আচ্ছা মনে যা আসবে সেটাই লিখবেন। আমি কিচ্ছু মনে করবো না।”
সত্যি তো? প্রমিজ!
“সত্যি সত্যি সত্যি, তিন সত্যি এবং প্রমিজ।”
এখন সত্যি কি বলবো হেলাল ভাই? যেখানে আপনিই ভয়ে আছেন, আমি তো কোন ছাড়! :p
তবে লেখার জন্যে -{@
ছাইরাছ হেলাল
মেহজাবিন তাঁর কালো হাত নিয়ে এতদূর পর্যন্ত পৌছে গিয়ে ভাব করে ফেলছে?
এতো দেখছি অশনি সংকেত আমার জন্য, অবশ্য আপনাকে ভরসায় রাখতেই পারি।
হ্যায়, ভালুবাসা-বাসি করা কিন্তু ঠিক না ঠিক না।
নীলাঞ্জনা নীলা
ভালো বাসার ভাড়া কিন্তু বেশী, জেনেও কেন ভালো বাসা খোঁজেন? :p
ছাইরাছ হেলাল
ভালো বাসার ভাড়া কিন্তু বেশী জেনেও ভালোবাসাই খুঁজি।
মিথুন
ভাইয়া, কি যেন নিতে এসেছিলেন? আমি কিন্তু আপনার নাজেহাল অবস্থা দেখে একটুও হাসছিনা 😀
ছাইরাছ হেলাল
অন্যের বিপদে হাসতে হয় না। না, আপনিও হাসেননি, তবে দাঁতের দোষ দিচ্ছি না।
যা নিতে এসেছিলাম তা পরাণের দায়ে ভুলে গেছি।
অরুনি মায়া
হুম সেই যুবতি বয়স থেকে বৃদ্ধা বয়সেও মেহজাবিনের অবস্থান নড়বড়ে হয়নি কবি হৃদয়ে |
ছাইরাছ হেলাল
বন্ধুত্ব নড়নড়ে হবার বিষয় নয়, বুঝতে হবে।