সরকারী চাকুরীতে যে কোন সময় বদলী হবে এটাই স্বাভাবিক।সামায়রার হঠাৎ বদলী হল রংপুরে।অবশ্য নতুন নতুন জায়গা বেড়াতে তার ভালোই লাগে।বাসা খোঁজা আর বদল অনেক ঝামেলার। কলেজের পিয়নকে বলে কয়েকটা বাসার খোঁজ পেল।
চারতলার পাশাপাশি দুটো বাসা একই মালিকের ।তিনি একজন রিটায়ার্ড অধ্যক্ষ।বড মেয়ে থাকে অস্ট্রেলিয়ায় আর ছোট মেয়ে সাথেই।সামায়রার ভীষন পছন্দ হল কারন একই পেশার মানুষের সাথে থাকতে ভালোই লাগে। দোতলায় তিনটা ইউনিট।একটা বেশ বড় আর দুটো ছোট ছোট।ছোট দুটোর একটা ফাঁকা। ঝকঝকে তকতকে আধুনিক টাইলসের চমৎকার রং করা বাড়ি।ভাড়া একটু বেশি কিন্তু অধ্যক্ষ স্যারের অতি অমায়িক সুন্দরী স্ত্রীকে তাঁর ভীষন ভালো লেগে গেল।
অনেক বছরের বাসা বদলের অভ্যাস তাই একা একাই সব গুছিয়ে ফেলল।এ ব্যাপারে সে মোটামুটি সিদ্ধ হস্ত। আর বাড়িওলা আন্টি সারাদিনের খাবারই দিয়ে দিয়েছেন আর হেল্পের জন্য কাজের মেয়ে।রয়েল অনেক চাপে আছে।সরি বলেছে অনেকবার।তার চাকরিটাই এমন।মেরিনে হওয়ার জন্য অধিকাংশ সময়ই বাইরে থাকতে হয়।
খোলা বারান্দায় কফি খাওয়া আর লেখালেখি করার ব্যবস্থা করে নিল।কফির মগ হাতে মনে হল জীবন খারাপ না।মধুময় করে নেবার দায়িত্ব নিজের।যেহেতু অনেক ভাডাটিয়া থাকে এ বাসায় তাই সবার সাথে পরিচয়ে সময় লাগবে আর গায়ে পরে কারও সাথেই মিশতে সামায়রার ভালো লাগে না।কলেজ যাবার পথে কিংবা বারান্দায় কফি খেতে খেতে কৌতুহলী অনেককেই দেখা যায়।কম বয়সী ছেলেমেয়েরা হায় আন্টি হ্যালো আন্টি বলে।আর মহিলারা উৎসুক হয়ে দ্যাখে। ফিসফিস করে কি যেন বলে বোঝা যায় তাকে নিয়েই বলছে।সামায়রা হাসি দেয়।
মানুষের নিজস্ব কিছু ভালো লাগা থাকে যা সারাজীবনের।কেউ পরিবেশের কারনে ছেড়ে দিয়ে অপূর্নতা নিয়ে জীবন কাটায়।আর কেউ সাথে নিয়ে বেঁচে থাকে।
কলেজ এ নয়টা থেকে সাড়ে এগারোটার মধ্যে ক্লাস শেষ হয়।তারপর অফুরন্ত সময়।এ সময়টা গান শোনা,নাচ প্রাকটিস আর বই পড়ে কাটানো ছাড়া উপায় নেই। রান্না করতে করতে গান শোনার মজাই অন্যরকম।
পাশের ফ্ল্যাটে থাকেন তিনবাচ্চাসহ এক পরিবার। পাশাপাশি ওয়াল স্বামী বউয়ের কুটুর কুটুর মধ্যবিত্ত ঝগড়া প্রায়ই শোনা যায়।আজ বিকেলে তিনি এসেছেন বেড়াতে। অনেকক্ষন তাকিয়ে আছেন।সামায়রা বুঝল অতি গরমে পড়া তার গেন্জী আর স্কার্ট দেখছেন। ওড়নাও পড়া হয়নি।
– তোমাকে তো দারুন লাগছে। কলেজে তো শাড়ী পড়ে যাও।সরাসরি তুমি।টিচার হলে শাড়ি আর মোটা চশমা জরুরি, কবি সাহিত্যিক হলে পান্জাবী,লম্বা চুল,ব্যাগ এসবই আমাদের ধারনা।
– ভাবী কি নেবেন? কিছুই নেবেন না তিনি।তারপরও সামায়রা অন্যান্য নাস্তার সাথে আচার খেতে দিল।
– তুমি তো দারুন আচার বানাও।বেশি থাকলে দিও তো একটু।তোমার ভাই পছন্দ করেন।
-ঠিক আছে। সন্দেহ প্রবন মহিলারা সারাদিন স্বামীর গল্প করতে পছন্দ করেন।
-জামাই কতদিন পর পর আসে।
-ঠিক নেই,সময় পেলেই আসে।
-ব্যাটা ছেলেদের চোখের সামনে সামনে রাখতে হয়।নাহলে এদের যে চরিত্র কখন কি করে বসে।
যাওয়ার সময় আচার গিফট নিয়ে চলে গেলেন। সামায়রা ভাবছে ব্যাটা ছেলেদের চরিত্র নিয়ে। স্বামীর পাহারাদার হিসেবে থাকতে কখনোই ভালো লাগে না।যে নষ্ট হবার সে এমনিই হয়।
দুদিন পর আবার এলেন।বিকেলের এ সময়টা সামায়রার কফি টাইম।আর একমগ বানিয়ে তার হাতে দিল।
– তুমি তো দারুন কফি বানাও।নাচের শব্দ পাই।শিক্ষকরা নাচেও নাকি?
– যখন শিখেছিলাম তখন তো আর শিক্ষক ছিলাম না।আর শরীরও ফিট থাকে। তাই প্রাকটিস করি আরকি!
– বাচ্চাকাচ্চা নেই তো তাই তোমার ফিগার সুন্দর। আমার তো বাচ্চা আর তাঁর বাপ মিলে নষ্ট করেছে।বয়সকালে সুন্দরই ছিল।হা হা হা হা।
সামায়রার অসহ্য লাগছে।এ ধরনের জোক তার পছন্দ না।
– নাকফুল পড়নি যে।নাকফুল স্বামীর মঙ্গলের জন্য।
– ওই এমনি! তারও ইচ্ছে করছে বলতে ভাবী রয়েল নাকফুল পড়ার জায়গায় চুমু দিতে ভীষন পছন্দ করে,তাই পড়িনি। কিন্তু এই মহিলার সাথে মজা করা যাবে না।বেফাস কিছু বলে ফেলবে।মাঝে মাঝে মজা করতে ইচ্ছে করে কিন্তু সবার সাথেনা। নাকফুল সে এমনিই পড়েনি।সামায়রার জামাই এলে যেন তাঁকে ডাকে এই আশা নিয়ে চলে গেলেন।
দরজায় জোরে জোরে শব্দ হচ্ছে। ঘুমঘুম চোখে সামায়রা দরজা খুলে দ্য্যখে পাশের ভাবী।রয়েল ঘুমিয়ে আছে তাই সে দরজা থেকে সরছে না। ভদ্রমহিলা হা করে তাকিয়ে আছেন।কারন শার্টের দুটো বোতাম খোলা।বুঝতে পেরে সে লাগিয়ে নিল।
– না ভাবলাম কোন সাড়াশব্দ নেই। বারোটা বাজে।কালরাতে অনেক হাসাহাসি জামাই আসছে নাকি? ও তাই বল।ঠিক আছে ঘুমাও যাই।পরে আসব।
দরজা লাগিয়ে রয়েলকে ডাকতে এল সে।কি সুন্দর করে ঘুমায়।মোলায়েম চুল উড়তে থাকে।কলেজে পড়তে শাহরুখ খান তাঁর স্বপ্ন ছিল।এখনও ভীষন ভালো লাগে।রয়েল বাস্তবে অতটা হয়নি কিন্তু কাছাকাছি হয়েছে।কপালে চুমু দিয়ে সরে যাবে এমন সময় হাত ধরে টেনে নিল। দুষ্টু হাসি দিয়ে বলল-
– তোমার ভাবীকে কি কি দেখালে? আমাকেও দেখাও।
দুজনেই সস্বব্দে হেসে উঠলো।দশ বছরের বিবাহিত জীবন।দুজনে আলাদাই থেকেছে অধিকাংশ সময়। সন্ধ্যার পর দীর্ঘ সময় ফোনে কথা বলে খুনসুটিতে ভরিয়ে দেয়। ভাবীর তাকিয়ে থাকার ব্যাপারটা রয়েলকে বলেছে।এখনও বাচচা হয়নি।প্লান করছে আর একটু গুছিয়ে দত্তক নেবে।খারাপ লাগা ভালো লাগা সব মিলেয়ে চলছে। অনেকদিন পর পর দেখা হয়।মধ্যরাত পর্যন্ত জেগে গল্প করে।হাসাহাসি করে।
২৫টি মন্তব্য
ফয়জুল মহী
সুন্দর উপস্থাপন । ভালো লাগা অবিরাম ।
রোকসানা খন্দকার রুকু।
ধন্যবাদ ভাই। শুভ কামনা। ভালো থাকবেন।
আলমগীর সরকার লিটন
চমৎকার গল্প লেখেছেন রুকু আপু অনেক শুভেচছা রইল———-
রোকসানা খন্দকার রুকু।
আপনাকেও শুভেচ্ছা রইল।
ভালো থাকবেন।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
চমৎকার একটি গল্প পড়লাম। অনেক ভালো লেগেছে আপু। আমাদের মহিলা প্রতিবেশীরা এমনি হয় কম বেশী। চমৎকার লিখেছেন। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন শুভকামনা অবিরাম
রোকসানা খন্দকার রুকু।
মহিলা প্রতিবেশীদের এদিক সেদিকেই খেয়াল বেশি।
ঘরে এসে দেখে গিয়ে বাইরে হাসাহাসিতে মত্ত হওয়াই তাদের কাজ।
আপনি ঠিক ধরতে পেরেছেন দিদি।
অসংখ্য ধন্যবাদ।
ভালো থাকবেন।
রেজওয়ানা কবির
কিছু কিছু ভালোলাগা এমনভাবে আঁকরে থাকে চাইলেও সরানো যায় না।ভালো লাগল।
রোকসানা খন্দকার রুকু।
ভালো লাগাগুলোই নিজের। তাই ওগুলো বাদ দিতে নেই।
ভালো থেক
শামীম চৌধুরী
গল্পটা ভাল লাগলো। বাসা বদলী আসলেও ঝামেলার। নতুন করে সব গুছাতে হয় বলে অনেক কিছুই খোয়া যায় কফির মগ হাতে নিয়ে বারান্দায় গল্প লেখার আনন্দটা অন্যরকম।
রোকসানা খন্দকার রুকু।
আসলেই ভালো লাগে।সামনে কিছু সবুজ থাকলে আরো ভালো।
শুভ কামনা ভাইয়া।
ছাইরাছ হেলাল
প্রতিবেশীকে সঠিক ভাবেই উপস্থাপন করেছেন।
সাথে গল্পের চরিত্রগুলোকেও।
দত্তকের ব্যাপারটি এনে গল্পে চমক সৃষ্টি করতে পেরেছেন।
রোকসানা খন্দকার রুকু।
আমরা অনেকেই এটাকে সহজভাবে নিতে পারিনা।
আমার কাছে সহজই মনে হয়।
আর পাছে লোকে কিছু বলবেই কান দিয়ে লাভ নেই।
শুভ কামনা।
সুপায়ন বড়ুয়া
ভাললাগার মতো একটি গল্প পড়লাম
সবাই প্রতিবেশীরা ভাল হোক এটাই প্রত্যাশা করে।
শুভ কামনা।
রোকসানা খন্দকার রুকু।
আসলেই আমরা প্রতিবেশী ভালো হলেই ভালো থাকি।
শুভ কামনা রইলো।
ভালো থাকবেন।
তৌহিদ
দাম্পত্য জীবনের এসব খুনসুটি জীবন এবং সম্পর্ককে মধুময় করে তোলে। গল্পটিতে তেমনি এক মধুর বিষয় দেখতে পেলাম।
শুভকামনা জানবেন আপু।
রোকসানা খন্দকার রুকু।
প্রতিবেশী কিন্তু শুধু পাশের বাড়ি বা ফ্ল্যাট নয়।আমাদের জীবন চলতে চাকুরী ব্যবসা সব ক্ষেত্রই।
শুভ কামনা।
আরজু মুক্তা
তবে, প্রতিবেশি না থাকলে ভালো কোনটা খারাপ কোনটা এটা বোঝানোর লোক থাকতো না।
দাম্পত্য জীবন এমনি মধুময় থাকুক সবার
রোকসানা খন্দকার রুকু।
এটা দারুন বলেছেন।আমারও দোষ ধরিয়ে দেয়া লোকই বেশি পছন্দ। সমালোচনা না থাকলে নিজেকে শুধরে নেয়া যায়না।
শুভ কামনা।
উর্বশী
এমন এক টি জিনিস প্রতিবেশী যে,সময়ে খুব কাজে লাগে আবার সময়ে অনেক অকাজ করে বসেন। সব কিছু মানিয়ে চলা জীবনের একটি অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছ। তবে এই দুইয়ের মাঝে শিক্ষার ও বিষয় বস্তু খুঁজে পাওয়া যায়। এবং একটি সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া যায়।সুন্দর বিষয়,সময়ের গল্প যথেষ্ট ফলপ্রসূ বাস্তবতার আলোকে।অনেক ভাল থাকুন,শুভ কামনা সব সময়।
রোকসানা খন্দকার রুকু।
আপনিও ভালো থাকুন॥
একদম ঠিক কথাই বলেছেন।
শুভ কামনা॥
ইঞ্জা
প্রতিবেশির তাক ঝাক ভালোই, অনেকদিন প্রিয়র সঙ্গ পাওয়া যে সবসময়ই আনন্দের।
গল্পটি ভালো লাগলো দেশি। 😊
রোকসানা খন্দকার রুকু।
অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া। আসলেই তাই। আমি আরও কয়েকটা পর্ব লিখতে চাই।যদি ভালো লাগে।জানাবেন।
ইঞ্জা
অবশ্যই লিখবেন, লিখুন আমরা আছি।
খাদিজাতুল কুবরা
রুকু আপু খুব সুন্দর গুছিয়ে গল্প লিখেছেন। আমার মনে হয় আপনার গল্প নিয়ে এগুনো উচিত।
আমার খুব ভালো লেগেছে।
ভাড়াবাড়ীতে প্রতিবেশী বিড়ম্বনার অভিজ্ঞতা আছে কিছুটা।
রোকসানা খন্দকার রুকু
তাহলে লিখেই ফেলি আর দুচারটে।আপনাদের কবিতা পড়ে আমারও তাই মনে হয়।।।
শুভ কামনা।।।