
ত্রস্ত দ্রস্ত উদ্ভ্রান্ত পথিকবর কলুষমন্ডিত নেত্রে তাকিয়ে আছে টইটুম্বুর নীহারিকার পানে। নিকষকালো গহ্বরে মিটিমিটি জ্বলা বর্শাধারী কালপুরুষ সেই আগের মতনই একঠাঁই রয়ে গিয়েছে, প্রথম পদচিহ্নে যেমন দেখেছিলো ঠিক তেমনই। পুরুষ যে সে! পরনের বসন গাছের বাকল থেকে সুতোয় রুপান্তরিত হয়েছে তবুও এতটুকু এলেবেলে হয়নি তার সুক্ষ্মদর্শী বাসনা। হবেইবা কি করে? সেতো এক ঐশ্বরিক নামধারী – পুরুষ! পুরুষ! পুরুষ!
লজ্জিত, নিষ্পেষিত এসব শব্দকে পুরুষ ঢাল বানিয়েছে স্পর্শকাতরতার মোহাচ্ছন্নতায়। নিষিদ্ধ শিহরণে উন্মগ্ন অগ্নিতে গলে যাওয়া চিরাচরিত আকাঙ্ক্ষিণীরা নাকি শুধু ডুবাতে জানে ভাসাতে নয়! অথচ অচ্ছুত দেহজতায় প্রাপ্তি সেটুকু পুরুষের শুধুই বিলাসিতা। এতেই যেন পুরুষাত্মার পুজ্যণীয় সুখ! মনের স্বচ্ছতা হারিয়েছে আগেই। সেই কবে শুভ্র সফেদ বালিয়াড়িতে নিজ হাতে একবার হরিণীর নগ্নমূর্তি বানিয়ে তাকে একপলক দেখেছিলো, সে সবই আজ সোনালি অতীত।
ধূম্রজালিকার ছন্নছাড়া বাতাসে বিষণ্ণতায় ভর করে হামাগুড়ি দেয়া কল্পনাবিলাসি বাতায়নে প্যাপিরাস পাতায় লেখা প্রেমের কবিতাগুলিকে ছিন্নভিন্ন টুকরোয় উড়ানোর ব্যর্থ প্রয়াসে তার চোখ বেয়ে নামে নোনা অশ্রু। প্রেমায়বে মোড়ানো স্পর্শ অনুভূতিগুলিতে আর ধার নেই। তবুও সদা উদ্বেলিত নগ্ন জাগ্রতচিত্তে, কারন সে পুরুষ!
নাটাই ছাড়া ঘুড়ি সেজে বেখাপ্পা কঠিন অবায়বের ফানুস হয়ে ওড়ে সে নক্ষত্র দিশায়। আজন্ম অক্ষয়তায় অমোচনীয় কালিতে যে নাম লিখেছিলো পুরুষ, কালের খেয়াতলে সেসব আজ অনির্বাণ খেঁচড়ায় পরিগণিত হয়ে দুমড়ে মুচড়ে একাকার করেছে মানবাত্মাকে। দুঃখ শোকের অববাহিকায় কামাক্ষ্যারুপ সাধু বেশে অর্চনীয় পুরুষশার্দূল থেকে সাবধান!
অভিশাপগ্রস্ত পুরুষের নিঃসৃত দেহরসের কামনায় নেই প্রাণ, যা আছে তার সবই হেমলকে পূর্ণ। সবুজাভ পিঁপড়ে নয় পুরুষের নিথর দেহকে লাল কাঁকড়ারা খুবলে খায় প্রতিনিয়ত, গলাধঃকরণ করে তার সাদারক্ত। তবুও বিকারগ্রস্থতা নেই এতটকু, কারন সে যে নির্লজ্জ পুরুষ! নিঃশেষিত হয়েও অন্তিমতার আনন্দে উদ্বেলিত, আচ্ছন্নতায় ভর করে কামাকাঙ্ক্ষী হয় বারংবার।
পথিক হাঁটুগেড়ে বসে সাগরপাড়ে, শীৎকারে নয় ইদানীং চিৎকারে হয় ক্ষান্ত। হিমশীতল বালিয়াড়ির বুকে নিজেকে সঁপে দেয়া ছাড়া আর কিইবা করার আছে? আহ ইশ্বর! শান্তি দাও, এতটুকুতো চাইতেই পারি। জ্বলন্ত উনুনের তীব্রতায় সে পোড়ারমুখীদের অসহ্য কামচিত্ততায় পুরুষ আজ সত্যিকারের আত্মজতায় হয়েছে বিষদগ্ধা।
পুরুষের মৃত আত্মাও বিশ্ব বেহায়ার মত বলে- আহ! কেমন ছিলো সমুদ্রের সে নোনা জলের স্বাদ যদি জানতেম!
২৭টি মন্তব্য
ইঞ্জা
ভাই লেখাটির মর্ম বুঝার জন্য আবার পড়তে হবে, এতো উচ্চমানের লেখা পাঠ করাও ভাগ্যের ব্যাপার।
তৌহিদ
আসুন ভাই। উচ্চমানের লেখা!! কি যে বলেন! এতো সহজ পাঠ। মুলভাব ধরলেই বুঝতে পারবেন কিন্তু। সোনেলায় এখন অনেকেই অনেক ভালো লিখছেন। তার তুলনায় এটি অতি নগন্য লেখা।
ইঞ্জা
ভাই আপনার লেখা আমি চিনিনা এ হতে পারে?
বন্যা লিপি
সাধুবাদ জানাই আপনাকে।এমন এক লেখা লেখার জন্য।কালপুরুষ থেকে বর্তমান পর্যন্ত পুরুষচরিত্রের চমৎকার বিষেশণে উপস্থাপন আরেকজন পুরুষ করেছেন। ভাবতেই চমৎকৃত হচ্ছি। ভাষার সংরক্ষন মাধুর্যসাধক।
তবু বলবো পুরুষ সবসময় পুরুষ চরিত্র নিয়েই বলবৎ থাকে যত্রতত্র।
চমৎকার পোস্ট
সাধু সাধু।
তৌহিদ
পুরুষ সৃষ্টির আদি থেকেই একই ভাব মনে পোষণ করে রেখেছে। যার সমাপ্তি মৃত্যুতেও হয়না। একজন পুরুষ হিসেবে আমিও যে এর বাহিরে নই!!
পুরুষ শুধু পেতেই অভ্যস্ত দিতে নয়। ব্যতিক্রম কেউ কেউ আছে তবে আদতে সবাই শেষ পর্যন্ত একই রকম কিন্তু!!
লেখা পড়েছেন দেখে ভালো লাগলো আপু। শুভকামনা জানবেন।
রেহানা বীথি
প্রথম পদচিহ্ন থেকে একচুলও নড়েনি পুরুষ। অহম তার… সে যে পুরুষ, কেন নড়বে? যার প্রয়োজন এগিয়ে আসুক সে তার দিকে!
তবে আছে এমনও কেউ, নতুন নতুন সম্ভাবনার বীজ বপন করে, তবে খুবই নগণ্য।
তৌহিদ
পুরুষ শব্দটিই গাম্ভীর্যপূর্ণ! হতে পারে এই মোহ থেকে এখনো আমরা বেরোতে পারিনি। সব পুরুষ হয়তো এক নয় তবে আমরা পুরুষ এটাইবা ভুলি কিভাবে!!
মন্তব্যে ভালোলাগা আপু।
শবনম মোস্তারী
আহা। পুরুষ। সর্বসেরা।
জগৎ সংসারের সব কিছুই থাকবে তার পদতলে কারণ সে পুরুষ।
অনেক জটিল একটি লেখা।
পুরুষ চরিত্রের চমতকার একটি বিশ্লেষণ।
লেখাটির ভাষাশৈলী বিশেষ প্রসংশনীয়।
তৌহিদ
লেখা পড়েছেন দেখে অনেক ভালো লাগলো। পুরুষের অহমবোধই তার সর্বনাশের কারন।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। শুভকামনা জানবেন।
চাটিগাঁ থেকে বাহার
জটিল!
মন্তব্যসহ কয়েকবার পড়লাম!
মনে হল পুরুষকে নেগেটিভ সেন্সে উপস্থাপন করেছেন। অথচ বিশ্বের তাবৎ কল্যাণকর আবিস্কার এবং কর্মের সিংহ ভাগই পুরুষের কৃতিত্ব!
বাকিটা আপনি বলুন…..
তৌহিদ
জ্বী ভাই নেগেটিভ ভাবেই উপস্থাপন করলাম লেখায়। গত কিছুদিন যাবত চারিদিকের নৃশংসতার খবরে সত্যিই লজ্জিত আমি, কারন আমিও পুরুষ। জগতে গুধু পুরুষই অনেক কল্যাণকর আবিষ্কার করেছে!! নারীরা কি করেননি? নারীরাই পুরুষের সাফল্যের পিছনে থাকেন অনেকক্ষেত্রে কিন্তু সেটা মা হিসেবে, অর্ধাঙ্গিনী হিসেবে হতে পারে। তবে দিন শেষে পুরুষের অহম একটাই- আমি পুরুষ।
যার গর্ভে জন্ম সেই নারীকেই অসম্মান করে সে পুরুষ। সামাজিকভাবে যে নারীর সাথে বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে তাকেই নৃশংসভাবে হত্যা করে – সে পুরুষ। সারাদিনের ক্লান্তি শেষে আনন্দভ্রমনের জন্য যে নারীর ঘরে গমন করে সে পুরুষ।
শুভকামনা রইলো ভাই।
চাটিগাঁ থেকে বাহার
অনেক পুরুষ নারীর কাছে নিজের মর্দামি জাহির করে এটা ঠিক। অনেকে নিজের ঘরেই স্বৈরাচার।
তৌহিদ
জ্বী ভাইজান, চরম সত্য।
নিতাই বাবু
আমরা পুরুষ জাতি। তাই জন্মের পরপরই ভুলে যাই আদি থেকে এই পর্যন্ত। এই ভুল থেকে নিজেকে সময় সময় বাঘপুরুষ সিংহপুরুষও বানিয়ে ফেলি। মোটেও ভাবে দেখিনা, সবকিছুরই শেষ আছে।
তৌহিদ
পুরুষের এমন মনোভাব মোটেই কাম্য নয়। তারপরেও আমরা হুংকার করি, দূর্বলকে নিষ্পেষিত করি। এতেই কি পুরুষের অহংকার?
মন্তব্যে অনেক ভালোলাগা দাদা।
নিতাই বাবু
আমি পুরুষ। আমি বীর। আমি কখনো করি না নত শির। আমি মহাবীর মহাবীর।
মনির হোসেন মমি
হবেই না কেন পুরুষ সেরা! ধর্মমতে পৃথিবী আগমনে প্রথম পুরুষ অতপর পার্থিব সব কর্ম কান্ড জগতের সব রহস্যভেদ সর্বোত্রই পুরুষই প্রথম পুরুষই সেরা।জগতের প্রায় সকল কল্যায়ণ কর কর্মকান্ডেও পুরুষ। ভালবাসায়ও কম কিসে! পুরুষই প্রথম ও শেষ যিনি প্রিয়তমার জন্য তাজমহলের মত কিছু দর্শনীও স্থান সৃষ্টি করেন যার রেকর্ড অন্য কোন জাত ভাঙ্গতে পারেননি।
তবে আপনার লেখার সাথে একমত যে অতি অহংকারী ভাল না শুধু তা কেবল নিজের অস্তিত্বকে ক্রমশতঃ ম্লান করে দেয়। পুরুষ হয়েছি বলে সর্বো ক্ষেত্রে পুরুষের কর্তৃত্ব চলবে এটা ভাবাও ঠিক নয়। জগতে সকল জীবনের সমান অধিকার আছে কারন সবিই এক ঈশ্বরের সৃষ্টি।
তৌহিদ
ধন্যবাদ ভাই, সুন্দর বলেছেন।
জিসান শা ইকরাম
বাপরে! শব্দের এমন ব্যবহার অনেক দিন যাবত পাইনি কোনো লেখায়,
পুরুষ চরিত্র বিশ্লেষণ করেছেন অত্যন্ত সুনিপুণ ভাবেই।
শুভ কামনা।
চাটিগাঁ থেকে বাহার
এক্কেবারে সঠিক বলেছেন!
তৌহিদ
আমার মেজাজ খুব খারাপ থাকলে এরকম শব্দ মাথায় গিজ গিজ করে ভাই ☺☺
ছাইরাছ হেলাল
শব্দ-সমাহারে দারুন ব্যঞ্জনা।
চালু থাকুক প্রকারন্তরে।
বিশ্ব বেহায়ার পাশাপাশি কেঁদো বাঘদের-ও দেখেছি।
তৌহিদ
কেঁদো বাঘ!! কি লজ্জা!! তবে জামানা খারাপ এখন। আমিতো হিংস্র সিংহকে বেড়াল হতেও দেখেছি 😭😭
সাবিনা ইয়াসমিন
নারীর চোখে-লেখায় পুরুষের বহু প্রাসঙ্গিক অপ্রাসঙ্গিকতা দেখেছি, পড়েছি। এবার পুরুষের দৃষ্টিতে পুরুষ-ভাবনা কেমন হয় দেখলাম,পড়লাম।
শুভ কামনা। 🌹🌹
তৌহিদ
নারী পুরুষ বিষয় নয়, বিষয় হচ্ছে পারস্পারিক সম্পর্কের বোঝাপড়া। একে অপরের সম্মান, শ্রদ্ধা এসব।
শুভকামনা জানবেন আপু।
আরজু মুক্তা
অহমিকাই পুরুষকে এমন করেছে। এমন অবস্থা, সূরা ইখলাসে আল্লাহ্ বলেছেন, আমি নিরাকার। আমি কারও থেকে জন্ম নেইনি। অথচ এই পুরুষ আল্লাহ কে পুরুষ বানিয়ে তাঁর মহিমান্বিত নামগুলো নিজের করে নিয়েছে।
ভালো লাগলো, একজন পুরুষ আর একজন পুরুষকে ব্যবচ্ছেদ করেছে দেখে।
শুভকামনা,ভাই।
তৌহিদ
অহমিকা পুরুষের যেমন আছে নারীদেরও আছে। কথা হচ্ছে পুরুষ বেশীরভাগ সময় নারীকে হেয় করে নিজেদের পৌরুষত্ব ফলায় সেই আদিকাল থেকেই। তবে নামের সাথে কোন সামঞ্জস্যতা নেই। কারন রহিম যেমন পুরুষ রহিমা তেমন নারী। করিম পুরুষ, কারিমা নারী। দেখলেনতো মহিমান্বিত নাম সবার জন্যই।
শুভকামনা জানবেন।