#পর্ব_৫৮
ভেতরে অগাধ জ্ঞানের সাগর। সমুধুরে বিরাজমান মীরার ন্যায় সুললিত কন্ঠসুর। ললাটে রাজটীকা।আঁচলে যমুনার ভাঁজ।
সরবরে শ্বেত হংস সরস্বতীর রূপবাহিকা। অকাল বোধনে নতুন ছোঁয়া।
স্তব্ধতার সাথে প্রহর গুনতে গুনতে আজ আমি মুহ্যমান।
কাঞ্চনজঙ্গা পাদদেশ ঘিরে কুয়াশা ডাকা রাত্রি। আলো আঁধারে চাঁদের বেশ আনাগোনা। রাত্রি কোলাহলে, ডাকে ডাহুক শেষ আঁধারের কলরবে।
একিভাবে শহরের বুকে আমি অনেকটা একা। যদিওবা একাকীত্ব কখনো আমার বেশ ভালো লাগে। তবে আজ একাকীত্বে বিষন্নতা বোধ করছি। যেহেতু কলমের কালি ফুরিয়েছে,ডায়রির পাতা নেই আর। হাতে কাগজকলম থাকলে আমি নিজেকে কখনো একা ভাবি না। এই কাগজকলমের পথ অনুসরণ করার ফলে আমি একা থেকে সহস্রের পথে উত্তরণ হয়েছি। দিল্লী শহর আমায় অনেককিছু দিয়েছে। কিন্তুু শেষ প্রহরে শহর আমাকে করাঘাতে করছে। আমি অনেকটা নির্বাক। হাতে নেই কলম,নেই লিখবার ডায়রি।
রাত্রি অনেক। শহর জুড়ে মানুষের আনাগোনা। আমি বিছানায় শুয়ে আছি। কিছু লেখবার মতো প্রয়াস পাচ্ছি না। ভাবছি দু-একদিনের মধ্যে কলকাতা ফিরে যাব।
বিনোদ কেমন আছে কি করছে কি না যদিও এসব নিয়ে একটু আমার শঙ্কা জাগে তবে চিন্তার কারণ নেই।
বলরাম দাদা আমাদের কর্ণদ্বার। বাড়ির কেউ জানেনা আমি যে কয়েকদিন ধরে দিল্লীতে প্রস্থান নিয়েছি।
যদি বাবা জানেন তাহলে আমায় বেশ প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে।
কেননা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে ভর্তি হওয়ার পর থেকে আমার আর বিনোদের লেখাপড়ার চাপ একটু বেড়েছে। তাই যেখানে সেখানে অযথা ঘোরাফেরা করা যাবেনা। আমাদের দুজনের লেখা পড়ায় বেশ মনোযোগী হতে হবে। আজ সকালবেলা পার্বতী একখানা পত্র পাঠিয়েছে। দু-একে সে বাড়ি চলে যাবে। তাই আমায় দু-একদিনের মধ্যে কলকাতা ফিরতে। না ফিরলে হয়তো আর কখনো প্রিয় পার্বতীর সাথে দেখা না হতে পারে। পত্রের প্রতি উত্তরে পার্বতীকে জানিয়ে দিলাম শীঘ্রই কলকাতা ফিরছি।
চোখে ঘুম আসছে না। বঙ্কিমচন্দ্রের ন্যায় আমিও ওয়াটারলু যুদ্ধ নিয়ে ভাবছি। আর স্বপ্নঘোরে পার্বতীর স্মৃতি স্রোতে ভাবছি। ভাবতে ভাবতে স্মৃতি স্রোতে ঘুম চলে এসেছে দুচোখ জুড়ে। বঙ্কিম দাদুর চোখে ঘুম নেই।
কিভাবে সমাধা করা যায় এই ভয়ংকর ওয়াটারলু যুদ্ধ।
কত হাজার,কত লক্ষাধিক পদাতিক সৈন্য অশ্বারোহী নিয়ে এই যুদ্ধ রচনা করেছেন কোন সম্রাট।
যার লক্ষভেদে অনেকে সৈন্য মস্তক নত করে। সেখানে সমাধা খুঁজছেন বঙ্কিম দাদু। সে তো বেশ মারাত্মক!
#পর্ব_৫৯
পথিক থামতে জানে না,তাই মজে না পথে প্রেম,
অপেক্ষার প্রহরে চেয়ে থাকে,জাতিস্মর হয়ে কবে আসবে তার ঘনশ্যাম।
হয়তো প্রতিদিন পার্বতী এমন অপেক্ষার প্রহর গুনছে।
শীত শরীরে হেমন্তে হিমেল পরশতা আর কার্নিশ বেয়ে কুয়াশার আবরণ এ দুইই গভীর রাত্রিতে সমসন্ধিতে অর্গলিত হচ্ছে।
কোলাহল রাত্রি হোটেল ঘরের পাশে হিজলের গাছ,ধীরে ধীরে ভোরের আগমন ঝাঁকে ঝাঁকে ডাহুক, সরালি আর কত প্রজাতির পাখি। কলকাকলির কলরবে পরিপূর্ণ পুরো শহর।
হোটেল ঘরের ঠিক পূর্বপাশের মাঠে শস্যক্ষেত। সোনালী রোদ্দুরে ফুল ফুটেছে হাজারো মৌমাছির গুনগুন শব্দে। মৌমাছি কুঁড়ছে রেণু আপনমনে।
কাক ডাকা ভোর থেকে কুয়াশাভেজা স্নিগ্ধ সকাল।
সোনালী সূর্যে দীঘির জলের পূর্ণতা আনে। আনে মায়াবী কোমলতা।
প্রতিদিনের ন্যায় সকালবেলার খাবার আজও বেশ ভালো ছিলো। আজকের খাবার কিছুটা ভিন্ন হলেও অনেক সুস্বাদু।
আগামীকাল চলে যাব কলকাতা। সকালের খাবার খেয়ে কাপড়চোপড় গুছিয়ে নিলাম। আজ কোথাও বের হওয়ার পরিকল্পনা নেই। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম আরও কিছু বই সংগ্রহ করতে হবে।
অটোরিকশা করে হুট করে বেরিয়ে পড়লাম লাইব্রেরির দিকে। যেহেতু ভূতের গল্প পড়া হয়নি তাই চারটে ভূতের গল্প সংগ্রহ করে পুনরায় হোটেলে চলে এলাম।
আজকের দিন বেশ ভালো। রৌদ্রতেজে ভরপুর পুরো শহর।
শীতের ভরদুপুর কাবেরীর পাতায় ছোঁয়ে আছে ঝরে পড়া শিউলি,তার উপর প্রজাপতি বসে স্পর্শতার গন্ধ অনুভব করছে। আর আমি বিছানায় বসে বসে আশাপূর্ণা দেবীর “সুবর্ণলতা” পড়ছি। প্রায় তৃতীয় পর্ব পড়া শেষ। নামে গুণে গল্পে এযে এক অনন্য সৌন্দর্যতা বহমান।
এদিকে কালকে রাত্রিবেলা বঙ্কিম চন্দ্রের ওয়াটারলু যুদ্ধ নিয়ে ভাবনাপঠে আমিও ছিলাম। তবে শেষ মুহূর্তে ভাবনাপঠ থেকে আমি সরে এসেছিলাম। কী জানি বঙ্কিম দাদু এই যুদ্ধের সমাধা কি দিলেন। যদিও যুদ্ধটা কল্পকাহিনী নিয়ে আমাদের ভাবনা। তবে ওয়াটারলু যুদ্ধ আমাদের ভাবনাপঠ থেকে একেবারে ভিন্নরকমের।
কাল চলে যাব কলকাতা তাই স্টেশন থেকে টিকেট সংগ্রহ করতে হবে। টিকেট সংগ্রহ করে পুনরায় চলে এসেছি নিজ রুমে। রাত্রি এগারোটায় ট্রেনে করে দিল্লী শহর ছাড়তে হবে। তার সাথে ছেড়ে চলে যেতে হবে কিছু স্মৃতি। তবুও যেতে হবে।
উত্তর বঙ্গ থেকে আসা ট্রেনে উঠে পড়লাম। কামরার সিট গুলো বেশ ভালো। মনেমনে ভাবছি কলকাতায় বেশ আরামদায়ক ভাবে পৌঁছতে পারব। পাশের সিটে দুজন অহমীয়া মহিলা সাথে ফুটফুটে সুদর্শন চেহারাযুক্ত ছোট্ট একটি শিশু। অনেকক্ষণ সময় এই ছোট্ট শিশুর সাথে আনন্দ করে কলকাতায় পৌঁছে গিয়েছি। স্টেশন চত্বরে বলরাম দাদা ও বিনোদ আমার জন্য অপেক্ষা করছেন। অবশেষে বাড়ি ফিরলাম।
.
ক্রমশ….
৮টি মন্তব্য
মনির হোসেন মমি
এমন উন্নত লেখা গভীর রাতে পড়তে হয় তাতে মনে এক অজানা ভাল লাগার অনুভুতি জাগে । আজ রাতে পড়ব এবং মন্তব্য করব।
প্রদীপ চক্রবর্তী
অপেক্ষায় রইলাম।
অশেষ ধন্যবাদ দাদা।
নিতাই বাবু
শ্রদ্ধেয় দাদা, দীর্ঘদিন যাবত দেখছি, পড়ছি আপনার সুলেখিত “পর্বতকন্যের ইতিকথা”। প্রতিটি পর্বের লেখা পড়ে খুব ভালো লাগে। তবে দাদা, শিরোনামে পর্বতকন্যের ইতিকথা-১ পর্বতকন্যের ইতিকথা-২ এমনভাবে দিলে ভালো হতো না? এটা আমার বুঝে আমি বললাম দাদা, আপনার বুঝ আবার অন্যরকমও হতে পারে। পরবর্তী পর্বের আশায় থাকলাম।
প্রদীপ চক্রবর্তী
সহমত দাদা।
ধন্যবাদ আপনাকে।
শীঘ্রই নিয়ে আসছি পরবর্তী পর্ব।
তৌহিদ
আপনার এই পর্বটি নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। দারণ একটি ধারাবাহিক এটি। মাঝেমধ্যে ভাবি কি করে লেখেন এতসব। কারন লেখক যখন লেখেন তাকে সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে নিজেকে কল্পনা করতে হয়, অনেক হিসেব নিকেশ মিলাতে হয়। ধৈর্যশীল হতে হয়। লেখক হিসেবে আপনি তা পাড়ছেন ভালোই।
শুভকামনা রইলো দাদা।
প্রদীপ চক্রবর্তী
প্রাপ্তি দাদা।
শুভকামনা অহর্নিশ।
মোহাম্মদ দিদার
যতই পরছি ডুবেযাচ্ছি গভীরে,
প্রদীপ চক্রবর্তী
সাধুবাদ দাদা।
শুভকামনা অহর্নিশ।