পরিণত প্রতিশ্রুতি

সাবিনা ইয়াসমিন ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, বুধবার, ০১:৩৫:১৮পূর্বাহ্ন গল্প ১৭ মন্তব্য

– আমি তোকে খুব ভালোবাসিরে, শুধু বোঝাতে পারি না । আর তুইও পুরো কথা না শুনেই রেগে যাস। এতো রাগ করে থাকলে ভালোবাসা তোর চোখে পড়বে কেমন করে বল ?

– শোন , মনে মনে ভালোবাসার কোনো দাম নেই। মুখে প্রকাশ করতে হয়, কথায়/ কাজে মিল রাখতে হয়। তাহলে ভালোবাসা-বাসি বোঝা যায়। তুই যদি খাবার মুখ দিয়ে না খেয়ে চোখ দিয়ে খাস তাহলে তোর পেট ভরবে ? যত্তসব ফালতু কথা বাদ দিয়ে চল বাড়ি যাই। ফিরতে দেরি হলে মা বকবে।

সন্ধ্যা হয়ে গেছে এখনো মামুনের দেখা নেই। আবার মুখে বড় বড় কথা হুহ ! বলে কিনা, তোর রাগ বেশি তাই ভালোবাসা বুঝিস না। রেগে আগুন হয়ে মনে মনে ভাবছে শিউলী। অনেকক্ষন হয়েছে এখানে এসে মামুনের জন্যে অপেক্ষা করছে। যদিও ওরা কখনো এভাবে দেখা করে না। তবে আজ করতে হবে। আগামীকাল থেকে ওদের আর দেখা হবে না। পরিচিত পথধরে হাটাও হবে না কোনোদিন।

শিউলীর বাবা সরকারি চাকুরি করে। এতোদিন তিনি ঢাকায় একাই থাকতেন। দুইমাস আগে দাদীটা মরে যাওয়ার পর থেকেই সবাইকে নিয়ে ঢাকায় চলে যেতে চাইছেন। শেষ পর্যন্ত রওয়ানা দেবার তিনদিন আগে মামুন নামের ছেলেটি — যে কিনা শিউলীর নবম শ্রেনীতে পড়া সহপাঠিও বটে, সে হঠাৎ করে বলে দিলো ভালোবাসার কথা। ও নাকি শিউলীকে ভালোবাসে ! বলে কি ! আসুক আজ। কথা শেষ করেই ফিরবো, ভাবনা শেষ হওয়ার আগেই কাঁচু-মাঁচু মুখে মামুন হাজির।

– কই একদিনতো দেখলাম না আমাকে একটা ফুল দিতে ? ভালোবাসলি কখন ?

– ভালোবাসতে ফুল লাগে নাকি ? কাল তোকে কতগুলো বাদাম কিনে দিলাম, ওটা বুঝি ভালোবাসা নয় !

– এতো কথায় কাজ নেই। কাল আমরা একেবারের জন্যে ঢাকায় চলে যাচ্ছি। আমাদের আর কোনোদিন গ্রামে আসা হবে না। তাই তোর সাথে শেষ দেখা করতে এলাম। ভালো থাকিস আর ভালো করে পড়িস। এবারো তুই ফার্স্ট হবি আমি জানি।

– তুই চলে গেলে খুব খারাপ লাগবেরে। তবুও কিছু করার নেই। আচ্ছা যা। ভালো থাকিস তুইও। আর কথা দে আমার কথা মনে রাখবি। আমায় ভুলে যাবি না।

– ভুলে যাবো কেন ? আমার সব মনে থাকে, ভুলবো না ।

আজ মাঘ মাসের শেষ তারিখ। কাল থেকে শুরু হবে ফাগুন। বসন্তকাল তাহলে আবার এলো। দশ বছর হয়ে গেছে শিউলীরা গ্রাম ছেড়েছে। বেড়াতে এসেছে দু-একবার। মামুনের সাথে শিউলীর আর দেখা হয়নি। সে নিজেও পড়া-লেখা আর চাকরির সুবাদে ঢাকায় থাকে। গ্রামে আসে সময় পেলেই, মনে ছোট্ট এক আশা নিয়ে। হয়তো এবার আসবে শিউলী, দেখা হবে একটিবার।

গ্রামের মাঝ বরাবর বয়ে চলা একটি সরু খালের পাশেই ছিলো শিউলীদের বাড়ি। এখনো আছে। আর বাড়ির পেছনে সেই বড় আমগাছটিও আছে। গ্রামে এলে শিউলীদের বাড়ির কাছে না গিয়ে থাকতে পারে না মামুন। আজও এসেছে, একটু দুরে দাড়িয়ে বাড়ির উঠোনের দিকে তাকাতেই বুকের ভেতরটা ধ্বক করে উঠলো। চোখে ভুল দেখছে নাতো !

খুব গোপনে ছোট কাকার মেয়ের হাতে করে চিরকুটটা পাঠিয়ে দিলো শিউলী। এবার দেখা না করে ফিরবে না। যখনি খবর নিয়েছে শুনেছে মামুন ঢাকায় থাকে। অথচ ওর ঢাকার ঠিকানা কারো কাছ থেকেই নিতে পারেনি ও। কেমন একটা সংকোচ কাজ করতো। যদি ফিরিয়ে দেয় ! যদি মনে না রাখে !

কোকিল কি বসন্তের প্রথমদিনেই ডাকে না আরো আগে/ পরে ! অনেক চেষ্টা করেও মনে করতে পারছে না মামুন। গলা শুকিয়ে যাচ্ছে বারবার,হাত-পা কাঁপছে। ঐদিকে কোকিল ডেকেই যাচ্ছে করুন স্বরে , থামার কোনো লক্ষন নেই। সে আসছে, বসন্ত হয়ে -বাসন্তি সাজে।

– তোমার জন্যে আনলাম। আসলে কোন ফুল পছন্দ করবে ভেবে পাচ্ছিলাম না তাই এই সিজনের সব ফুলই একটা একটা করে এনেছি।

( কাঁপা হাতে বাড়িয়ে দেয়া ফুলগুলোর দিকে অবাক নয়নে তাকিয়ে )
– তুমি ফুল এনেছো ! মনে রেখেছো ?

– খুব ভালোবেসেছি, ভুলতে পারিনি।

– কখন আনতে গিয়েছিলে? ভোরে?

– হুম, ভোরের ফুল । দেরিতে গেলে সব ফুল পাওয়া যেত না।

– খিদে পেয়েছে ? এই নাও, বাদাম খাও। নিজের হাতে ভেজে এনেছি।

( বাসন্তি গপ্পো )

১১২১জন ১১২২জন
0 Shares

১৭টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ