– আমি তোকে খুব ভালোবাসিরে, শুধু বোঝাতে পারি না । আর তুইও পুরো কথা না শুনেই রেগে যাস। এতো রাগ করে থাকলে ভালোবাসা তোর চোখে পড়বে কেমন করে বল ?
– শোন , মনে মনে ভালোবাসার কোনো দাম নেই। মুখে প্রকাশ করতে হয়, কথায়/ কাজে মিল রাখতে হয়। তাহলে ভালোবাসা-বাসি বোঝা যায়। তুই যদি খাবার মুখ দিয়ে না খেয়ে চোখ দিয়ে খাস তাহলে তোর পেট ভরবে ? যত্তসব ফালতু কথা বাদ দিয়ে চল বাড়ি যাই। ফিরতে দেরি হলে মা বকবে।
সন্ধ্যা হয়ে গেছে এখনো মামুনের দেখা নেই। আবার মুখে বড় বড় কথা হুহ ! বলে কিনা, তোর রাগ বেশি তাই ভালোবাসা বুঝিস না। রেগে আগুন হয়ে মনে মনে ভাবছে শিউলী। অনেকক্ষন হয়েছে এখানে এসে মামুনের জন্যে অপেক্ষা করছে। যদিও ওরা কখনো এভাবে দেখা করে না। তবে আজ করতে হবে। আগামীকাল থেকে ওদের আর দেখা হবে না। পরিচিত পথধরে হাটাও হবে না কোনোদিন।
শিউলীর বাবা সরকারি চাকুরি করে। এতোদিন তিনি ঢাকায় একাই থাকতেন। দুইমাস আগে দাদীটা মরে যাওয়ার পর থেকেই সবাইকে নিয়ে ঢাকায় চলে যেতে চাইছেন। শেষ পর্যন্ত রওয়ানা দেবার তিনদিন আগে মামুন নামের ছেলেটি — যে কিনা শিউলীর নবম শ্রেনীতে পড়া সহপাঠিও বটে, সে হঠাৎ করে বলে দিলো ভালোবাসার কথা। ও নাকি শিউলীকে ভালোবাসে ! বলে কি ! আসুক আজ। কথা শেষ করেই ফিরবো, ভাবনা শেষ হওয়ার আগেই কাঁচু-মাঁচু মুখে মামুন হাজির।
– কই একদিনতো দেখলাম না আমাকে একটা ফুল দিতে ? ভালোবাসলি কখন ?
– ভালোবাসতে ফুল লাগে নাকি ? কাল তোকে কতগুলো বাদাম কিনে দিলাম, ওটা বুঝি ভালোবাসা নয় !
– এতো কথায় কাজ নেই। কাল আমরা একেবারের জন্যে ঢাকায় চলে যাচ্ছি। আমাদের আর কোনোদিন গ্রামে আসা হবে না। তাই তোর সাথে শেষ দেখা করতে এলাম। ভালো থাকিস আর ভালো করে পড়িস। এবারো তুই ফার্স্ট হবি আমি জানি।
– তুই চলে গেলে খুব খারাপ লাগবেরে। তবুও কিছু করার নেই। আচ্ছা যা। ভালো থাকিস তুইও। আর কথা দে আমার কথা মনে রাখবি। আমায় ভুলে যাবি না।
– ভুলে যাবো কেন ? আমার সব মনে থাকে, ভুলবো না ।
আজ মাঘ মাসের শেষ তারিখ। কাল থেকে শুরু হবে ফাগুন। বসন্তকাল তাহলে আবার এলো। দশ বছর হয়ে গেছে শিউলীরা গ্রাম ছেড়েছে। বেড়াতে এসেছে দু-একবার। মামুনের সাথে শিউলীর আর দেখা হয়নি। সে নিজেও পড়া-লেখা আর চাকরির সুবাদে ঢাকায় থাকে। গ্রামে আসে সময় পেলেই, মনে ছোট্ট এক আশা নিয়ে। হয়তো এবার আসবে শিউলী, দেখা হবে একটিবার।
গ্রামের মাঝ বরাবর বয়ে চলা একটি সরু খালের পাশেই ছিলো শিউলীদের বাড়ি। এখনো আছে। আর বাড়ির পেছনে সেই বড় আমগাছটিও আছে। গ্রামে এলে শিউলীদের বাড়ির কাছে না গিয়ে থাকতে পারে না মামুন। আজও এসেছে, একটু দুরে দাড়িয়ে বাড়ির উঠোনের দিকে তাকাতেই বুকের ভেতরটা ধ্বক করে উঠলো। চোখে ভুল দেখছে নাতো !
খুব গোপনে ছোট কাকার মেয়ের হাতে করে চিরকুটটা পাঠিয়ে দিলো শিউলী। এবার দেখা না করে ফিরবে না। যখনি খবর নিয়েছে শুনেছে মামুন ঢাকায় থাকে। অথচ ওর ঢাকার ঠিকানা কারো কাছ থেকেই নিতে পারেনি ও। কেমন একটা সংকোচ কাজ করতো। যদি ফিরিয়ে দেয় ! যদি মনে না রাখে !
কোকিল কি বসন্তের প্রথমদিনেই ডাকে না আরো আগে/ পরে ! অনেক চেষ্টা করেও মনে করতে পারছে না মামুন। গলা শুকিয়ে যাচ্ছে বারবার,হাত-পা কাঁপছে। ঐদিকে কোকিল ডেকেই যাচ্ছে করুন স্বরে , থামার কোনো লক্ষন নেই। সে আসছে, বসন্ত হয়ে -বাসন্তি সাজে।
– তোমার জন্যে আনলাম। আসলে কোন ফুল পছন্দ করবে ভেবে পাচ্ছিলাম না তাই এই সিজনের সব ফুলই একটা একটা করে এনেছি।
( কাঁপা হাতে বাড়িয়ে দেয়া ফুলগুলোর দিকে অবাক নয়নে তাকিয়ে )
– তুমি ফুল এনেছো ! মনে রেখেছো ?
– খুব ভালোবেসেছি, ভুলতে পারিনি।
– কখন আনতে গিয়েছিলে? ভোরে?
– হুম, ভোরের ফুল । দেরিতে গেলে সব ফুল পাওয়া যেত না।
– খিদে পেয়েছে ? এই নাও, বাদাম খাও। নিজের হাতে ভেজে এনেছি।
( বাসন্তি গপ্পো )
১৭টি মন্তব্য
মাহমুদ আল মেহেদী
বসন্ত ছুঁয়েছে আমায় গল্পেটার মধ্য দিয়ে । অনেক ধন্যবাদ এত সুন্দর একটা গল্প উপহার দিলেন যে।
সাবিনা ইয়াসমিন
বসন্ত ছুঁয়ে যাবার কোনো লক্ষনতো দেখছি না মেহেদী ভাই ! নতুন লেখায় বসন্ত নিয়ে আসুন।
ভালো থাকুন, শুভ কামনা।
জিসান শা ইকরাম
ভালোবাসার একটি ছোটো কিউট গল্প।
অত্যন্ত গুছিয়ে লিখেছেন, সুন্দর উপস্থাপনা।
কোকিল আমাদের বসন্তের আগেই ডাকে, তাদের বসন্ত আগে আসে মনে হয়।
বাদাম খাওয়া খায়িটা ভালো লেগেছে খুব, আমিও এটি পছন্দ করি।
বসন্ত এসেছে পুর্ন মাত্রায় সোনেলায়, চলুক।
সাবিনা ইয়াসমিন
হ্যা, সোনেলায় বসন্ত এসে গেছে। তবে কোকিলরা গলা ছেড়ে গাইছে না। বসন্তের লেখা কম দেখছি। আপনি শুরু করে দিন।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ, শুভ কামনা।
শাহরিন আক্তার মুক্তা
অনেক সুন্দর লেখা।
সাবিনা ইয়াসমিন
থ্যাংক্যু আপামনি 😂 আপনার মূল্যবান মন্তব্য পেয়ে খুশিতে পাগল হয়ে গেছি। 😂
ভালোবাসায় ছিলেন, আছেন,থাকবেন ❤❤
শাহরিন আক্তার মুক্তা
আমার ও ভালো লাগছে 😅
ছাইরাছ হেলাল
খুবই সুন্দর গল্প,
তবে ঐ যে লিখিয়ে মনের ভাব চেপে গিয়ে/আড়াল করে লিখলে
যা হয় আরকি!! একটু বেসুরো বা তাল কেটে যাওয়ার মত অবস্থা!!
তবে প্রচুর মনোযোগ আর মুন্সিয়ানা টের পাচ্ছি।
আজকাল কিন্তু চিরকুট সিস্টেম নেই, যেহেতু গল্পের শেষাংশে বর্তমান টেনে এনেছেন,
সেহেতু ফেসবুক/হোয়াটস আপ/ভাইবার প্রয়োগ যথার্থ হতো।
হবে হবে, চালু রাখেন।
আর কিছু বলা বোধ করি ঠিক হবে না!!
কৈতে কিন্তু পারি!!
সাবিনা ইয়াসমিন
আপনি আরো অনেক কিছুই কৈতে পারতেন মহারাজ, গুনে গুনে শব্দ দিয়ে মন্তব্য করা ঠিক না।
ফোন নাম্বার জানা নেই, ফেবু আইডির ঠিকানা নেই, চিরুকুট ছাড়া তাৎক্ষনিক খবর দেয়ার পথ আর মাথায় এলো না। তবে কথায় আছে দরকার পরলে কলাপাতায়ও খাবার খেতে হয়। এখানে চিরুকুট কলা পাতার কাজ করেছে।
চালুতো করেছি সেই লেখক হবো দিয়ে, আর কত চালানোর পরে যে ঐটা হতে পারবো ! শেষে আমার তেল না শেষ হয়ে যায় 🤔
ভালো থাকুন, আর এমনি করে বরফ, খোঁচা, পানি সব ঢালুন। দেখি কতক্ষন বেঁচে থাকতে পারি।
শুভ কামনা।
ছাইরাছ হেলাল
ভীরুর দুর্বলতা নিয়ে বেশি আর কি-ই-বা কৈতে পারি!!
না না, আপনার ভয়ের কোন কারণ নেই, আপনি কবি-লেখক হয়েই আছেন, থাকবেন-ও,
অফুরন্ত তেল আমাদেরও পথের সহায়!
অনন্তের পাখি হয়ে শিস দিয়ে যাবেন, আমরা কান পেতেই থাকব!!
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
বাসন্তীর মনে বসন্তের হাওয়া বুঝি এখনো শেষ হয়নি।যাক সে কথা-বসন্তের হওয়া বয়ে যাক চিরকাল।গল্পটা কিন্তু সেই রকম হয়েছে।
সাবিনা ইয়াসমিন
হাওয়াতো মাত্র শুরু হলো মমি ভাই, এই হাওয়া বৈশাখীর ঝড়ে না পরিনত হয়ে যায় 😂
আপনার শুভ কামনা পেলে ভালো লাগে।
ভালো থাকুন আপনিও।
বন্যা লিপি
এত অল্পতেই শেষ করে দিলেন? মন ভরলোনা যে!! এরপরে আরো বড় করে গল্প চাই।
শুভ কামনা, ভালোবাসা ♥
সাবিনা ইয়াসমিন
ভালো জিনিস কম কম দেখাই ভালো, তাতে ভালো লাগার আমেজ অনেকক্ষন রয়। লিখবো ,মন ভরবে কি না জানি না ,তবে জায়গা ভরে যাবে।
আপনার মগজের বিশ্রাম শেষ হলে বাসন্তি লেখা দিন। পড়ার অপেক্ষায় রইলাম।
শুভ কামনা, ভালোবাসা আছে বন্যা। ভালো থাকুন। ❤❤
ইঞ্জা
দারুণ একটা গল্প, খুব ভালো লাগলো আপু।
সাবিনা ইয়াসমিন
সময় বের করে পড়েছেন দেখে ভালো লাগলো , ধন্যবাদ ভাইজান।
ইঞ্জা
শুভেচ্ছা আপু