শীতের বিকেল, ঘড়ির টিকটিক শব্দ ছাড়া পুরো রুম নিস্তব্ধ। বিছানা ছেড়ে আড়মোড়া দিয়ে উঠে শফিক । পাশের রুমে একা ঘুমিয়ে আছে তার স্ত্রী কণা। এককাপ চা খেতে ইচ্ছে করছে কিন্তু কে করে দেবে।স্ত্রীর সাথে কথা হয়নি অনেক দিন, একি ছাদের নিচে থাকে কিন্তু দুজনের মধ্যে অবিশ্বাস্য দুরত্ব।বাথরুম থেকে আসার সময় কণার রুমে উঁকি দিল,কণা কম্বল গায়ে দিয়ে শুয়ে আছে শুধু তার মায়াবী মুখটুকু দেখা যাচ্ছে।নিজ হাতে চা বানিয়ে বেলকুনির চেয়ারে বসলেন শফিক । পাশের বাসার কিছু ছেলে নিচে খেলাধূলা করছে। বন্ধু রহিম মোটরসাইকেলের পেছনে বউকে নিয়ে বন্ধের দিনে হয়তো কোথাও বেড়াতে যাচ্ছে। শফিক বিখ্যাত একটি ঔষধ কোম্পানির সিনিয়র সেলস্ অফিসার হিসাবে কর্মরত আছেন। সারাদিন দৌড়ের উপর থাকতে হয়, সকাল আট থেকে রাত বারটা, হয়তো দুপুরে দুই ঘন্টা বিশ্রাম। প্রায় দশবছর আগের কথা,ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় পরিচয় হয় কণার সাথে। শফিকের দুবছরের জুনিয়র কণা। দুজনের পারিবারিক অবস্থাও ছিল মধ্যবিত্ত। কণা লাজুক প্রকৃতির শফিক ছিল হাস্যজ্জ্বল।কথার ছলে শফিক একদিন প্রেম প্রস্তাব দিয়ে বসে কণাকে, হা না কিছুই বলেনি কণা।তখন কিন্তু সেলফোন মধ্যবিত্তের কাছে স্বপ্নের বস্তু। এক সন্ধ্যায় ছাদের উপর বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিল শফিক, রুমের আরেক বন্ধু এসে বলে যায় শফিক তোর একজন অতিথি এসেছে নিচে, যা দেখা করে আস।নিচে নেমে দেখে হলের বারান্দায় কণা দাঁড়িয়ে আছে হাতে একগুচ্ছ রজনীগন্ধা,মুখের কোণে মিষ্টি হেসে ফুল আর একটি নীল খাম শফিকের হাতে দিয়ে চলে যায়। পড়ার টেবিলের উপর রজনীগন্ধা গুলো রেখে চিঠিটি খুলে পড়ে,যার বিষয় বস্তু ছিলো সে ভালোবাসা দিতে পারে একশর্তে জীবন সঙ্গী হিসাবে গ্রহণ করতে হবে। শফিক তার ভবিষ্যৎ জীবনের পরিকল্পনার কথা গুলো চিঠির ভাষায় লিখে কণাকে দিল। দুজনের কত স্বপ্ন সুন্দর জীবন গড়ার।শফিকের স্বপ্ন লেখাপড়া শেষ করে একটা চাকরি নিয়ে তারপর কণাকে বিয়ে করা। কিন্তু কণাদের ফ্যামিলির চাপে ছাত্র অবস্থাতে বিয়ে করতে হলো কণাকে। প্রথমে তাদের সংসারে কিছুটা আর্থিক সমস্যা হলেও পরে ঔষধ কোম্পানীর চাকরিটা পেয়ে আর তেমন সমস্যা হয়নি।সকালে শফিক কে জাগিয়ে তুলে একসঙ্গে নাস্তা করা,দুপুরে শফিকের জন্য তার পছন্দমত খাবার রান্না করে অপেক্ষায় থাকা। দুজনেই ঠিক করে রাখে ছেলে হলে নাম রাখবে আদনান আর মেয়ে হলে তুর্ণা। বিয়ের প্রায় তিন বছর পেরিয়ে গেল কিন্তু কণা কনসিভ করল না, অনেক ডাক্তার দেখিয়েছে কিন্তু কোন সমাধান হয়নি। সারাদিন বিষন্নতায় ভুগে দুজন,ডাক্তার পরামর্শ দিয়েছিল দুজনের শারীরিক পরীক্ষা করলে জানা যাবে কার সমস্যা, কণা ও শফিক কেউ পরীক্ষা করাতে রাজি না যদি দুজনের মাঝে ভুল বোঝাবুঝি হয়।আরোও বছর খানেক পর শফিককে বাড়ি থেকে আরেকটি বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছিল মা বাবা। শফিক কিছুতেই রাজি না ভালোবাসার মানুষটিকে ছেড়ে দিতে তাই ফ্যামিলির সাথে ও এখন সম্পর্ক নেয়। তবুও কণার মুখের দিকে চেয়ে সব মেনে নেয়।
কিন্তু ইদানিং কণা থাকে অবিশ্বাস করতে শুরু করে। দুপুরে একটু দেরিতে ফিরলে কৈফিয়ত দিতে হয়।রাতে দেখা যায় টেবিলের উপর খাবার রেখে ঘুমিয়ে পড়ে তারপরও কোন প্রতিবাদ করেনি শফিক। একদিন শফিকের মোবাইল বেজে উঠে শফিক তখন বাথরুমে,কণা রিসিভ করে হ্যালো বলতেই ফোন অপরপ্রান্ত হতে কেটে দেয়। কণার মনে সন্দেহ হয়,শফিককে জিগাস করে কে ফোন করেছিল?
-এক মহিলা ডাক্তার, একটা ঔষধের গ্রুপ জানার জন্য।
-ফোন কেটে দিলেন কেন?
-উনারা ব্যস্ততায় থাকে সবসময়, আমাকে ফোনে পায়নি তাই কথা না বাড়িয়ে রেখে দিল আর কি।
-না,এটা অন্য কারও ফোন ছিল,আমি সব বুঝি, তুমি বাহিরে আরেকটা বিয়ে করেছ,না হলে প্রতিদিন ফিরতে এত দেরি হয় কেন?
-দেখ কণা, সবকিছুই একটা সীমা তাকা দরকার, অতিরিক্ত কোন কিছুই ভালো না। তোমার এত দুর্ব্যবহার আমি নীরবে মেনে নিচ্ছি শুধু তোমাকে ভালোবাসি বলে।
শফিক অফিসে চলে যায়, দুপুরে আর ফিরে না। রাতে যখন বাসায় আসে দেখে টেবিলে খাবার নেই। কণা জানায় তার শরীর ভালো না তাই রান্না করেনি।শফিক রেগে গিয়ে বলে শরীর খারাপ আমাকে বলনি কেন, হোটেল থেকে নিয়ে আসতাম।না খেয়ে সোফার উপর ঘুমিয়ে যায় শফিক। কণার মা বাবা কে অনেক বুঝিয়েছে শফিক কিন্তু কণার কোন পরিবর্তন হয়নি।শফিকের সংসারে সুখ নামক বস্তুটা হারিয়ে গেছে। এখন দুজন এক বাসায় থাকলেও গত কিছুদিন ধরে কারও সাথে কারও কথা হয়না। খুব জরুরি প্রয়োজনে হয়তো দুএকটি কথা হয় দুজনের মধ্যে। সন্ধ্যা প্রায় নেমে এলো,শীতের কাপড়ের জন্য ঘরে ঢুকতে দেখে কণা চাদর নিয়ে শফিকের দিকে এগিয়ে আসছে। শফিক দাড়িয়ে যায় ,কণা শফিকের গায়ে চাদর জড়িয়ে দিয়ে তার দুর্ব্যবহারর জন্য মাপ চায়। শফিক কণার হাত ধরে বলে চল আজ আমরা একসাথে সন্ধ্যা আকাশের চাঁদ তারার মেলা দেখব। কণা বলে তুমি বেলকুনিতে যাও আমি চা নিয়ে আসছি।শফিক বেলকুনিতে গিয়ে চাঁদ দেখছে আর কণার জন্য অপেক্ষা করছে।
১৬টি মন্তব্য
শুন্য শুন্যালয়
অল্প কিছু মুহুর্তের এই সময়গুলোকে আমি ভালোবাসা বলতে নারাজ.
এটা আমার মত, প্রতি মুহুর্তের নরক যন্ত্রণা মাত্র কিছু মুহুর্তে শেষ হয়ে যায়না…আপনার লেখা ভালো হয়েছে.
অনুশঙ্কর গঙ্গোম্যাক্সিম
প্রতিকূলতার মাঝে বেঁচে থাকার নাম জীবন। -{@
জিসান শা ইকরাম
ভালো লিখেছেন ।
অনুশঙ্কর গঙ্গোম্যাক্সিম
ধন্যবাদ -{@
তন্দ্রা
সুন্দর একটি বিষয়ের অবতারনা করেছেন, এবং ভালবাসার বন্ধন অটুট রাখার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।
খুব ভাললেগেছে।
অনুশঙ্কর গঙ্গোম্যাক্সিম
ধন্যবাদ। আপনাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা। -{@ -{@
নীলকন্ঠ জয়
ভালো লেগেছে।। -{@
অনুশঙ্কর গঙ্গোম্যাক্সিম
-{@। জয় দাদা।
জিসান শা ইকরাম
সময়ের অভাবে ভালোভাবে মন্তব্য করতে পারিনি , এখন করছি 🙂
এই সব হাসি কান্না মান অভিমান নিয়েই আমাদের জীবন ।
তবে সন্তানের জন্য এমন অবস্থায় অনেকেরই সংসার ভেঙ্গে যায়
আমাদের সমাজ ব্যবস্থার জন্য এক্ষেত্রে সবাই মেয়েকে দোষ দেই
পরীক্ষাও আগে মেয়েকে দিতে হয়।
আমি একটি অতি শিক্ষিত পরিবারকে জানি , যারা বিয়ের ৮ বছর পরেও শুধু মেয়েকে পরীক্ষা করিয়েছেন।
একবারের জন্যও ভাবেননি ছেলের সমস্যা থাকতে পারে।
৯ম বছরে এসে ছেলেকে পরীক্ষা করা হয়েছে , এবং তখন জানা গিয়েছে যে , সমস্যা ছেলের।
অনুশঙ্কর গঙ্গোম্যাক্সিম
সন্তান হলে যে সংসার সুখী হতে হবে এমনতো কোন কথা নেই। প্রকৃতির বাহিরে আমরা তো কেউ যেতে পারিনা। সুতরাং বিষয়টা অন্য ভাবে দেখতে পারি।
লীলাবতী
সামাজিক একটি সমস্যা এটি । লেখা ভালো লেগেছে ।
অনুশঙ্কর গঙ্গোম্যাক্সিম
ধন্যবাদ। -{@
খসড়া
আপনার পোস্ট খুব আনন্দ দেয়। 🙂
অনুশঙ্কর গঙ্গোম্যাক্সিম
আমার লিখাতে এতটুকু যদি আনন্দ পেয়ে থাকেন তাতেই আমি খুশি। শুভেচ্ছা জানবেন। -{@
হতভাগ্য কবি
কি সুন্দর করে সাজানো …
অনুশঙ্কর গঙ্গোম্যাক্সিম
-{@ আপনাকে।