[ গল্পটি একটি শর্ট ফিল্ম – এর জন্য লেখা। ]
রেললাইন ছেড়ে সবুজ ধানক্ষেতের মাঝে একজন মানুষ অঝোরে কেঁদে চলেছে। মানুষটির নাম ‘না মানুষ।’ হ্যাঁ ও মানুষ না, না মানুষ । অতীত এবং বর্তমানের কথা ভেবে নিজেকে সান্ত্বনা দিতে না পারা এক মানুষ। ওর কান্না দেখে কেউ একজন বলে চলেছে, ‘কাঁদো, না মানুষ কাঁদো, তোমার মতো হাজারো না মানুষ জীবনের কোন লক্ষ্যই পূরণ করতে পারেনি, জীবনের সবকিছু হারিয়ে তাঁরাও কাঁদছে, তুমিও কাঁদো। এক জীবনে হারাতে হারাতে হারাবার ভয়টুকুও হারাতে ব্যর্থ হয়েছে যারা, আবেগটুকুকেও বিসর্জন দিতে পারোনি যারা, কান্না ছাড়া কি আর আছে তাদের জীবনে? কাঁদো, অঝোরে কাঁদো। জীবনকে যখন বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাতে পারোনি, বিশ্বাস অর্জনে ব্যর্থ হয়েছো ভেনাসের। তোমাকেইতো কাঁদতে হবে, কাঁদো, অঝোরে কাঁদো…সবুজ এই প্রান্তরে মাটির বেদনাকে সঙ্গী করে কাঁদো।
সমতল ভূমে এ জমিনের কান্না চুমে
কাঁদো… তুমি কাঁদো…
চিৎকার করে সবুজের চেতনায় আঘাত হেনে
কাঁদো… তুমি কাঁদো।
না মানুষের জন্ম এক অজ পাড়াগাঁয়ে। অশিক্ষিত একটি সমাজে তার বেড়ে ওঠা। ঘাত প্রতিঘাত পেরিয়ে একদিন বড় হলো সে। বড় মানে শরীরে জোয়ান মদ্দ হলো সে। কলেজে পড়ার সময় একদিন রাস্তা দিয়ে ফেরার সময় নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে একটি দেবতূল্য ছোট্ট শিশুর জীবন বাঁচাতে গিয়ে আঘাত পায় মাথায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রেখে জানলো সে এক দূরারোগ্য মস্তিস্ক রোগে আক্রান্ত। ঠিক এক সপ্তাহের মাঝে খবর এলো তার মা অ্যাকসিডেন্ট করেছে। সহায়-সম্বল বিক্রি করে মায়ের চিকিৎসা করানো হয়। এখনো চলছে। না মানুষ ভুলে গেলো নিজের রোগের কথা। প্রায় প্রতি রাতে ও যন্ত্রনায় ছটফট করতে থাকে, তবুও ভাবতে সাহস করে না নিজের চিকিৎসা করাবে। সে সামর্থ্য তার নেই। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মেধা বিক্রি করে বাসায় ফিরতো না মানুষ। একদিন একজন পরিচিত চিকিৎসক তাকে বিনা খরচে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে জানালো তিনমাস টানা চিকিৎসা চালিয়ে গেলে বেঁচে থাকা সম্ভব,মস্তিস্কে চাপ সৃষ্টি হয় এমন কাজ থেকে বিরত থাকো, নয়তো আস্তে আস্তে সব শেষ হয়ে যাবে। না মানুষ জানে সে পারবে না। রোজ তাই ডায়েরীর পাতায় দু’টি লাইন লিখে রাখে-
আমার সবুজ উদ্যানে সুখপাখি
যন্ত্রনায় ডানাঝাপটে বারবার মরতে জানে।
না মানুষের রোজকার রুটিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মেধা বিক্রি…বাসায় ফিরে রাত কেটে যায় বালিশ চাপা দিয়ে যন্ত্রণা উপশমের ব্যর্থ প্রচেষ্টায়। নিজের চাপা যন্ত্রণাকে সান্ত্বনা দেওয়ার এ এক অদ্ভুত উপহাস। মাঝেমাঝে বিছানা রক্তাক্ত হয়ে থাকে, যখন চেতনা ফিরে পায়, না মানুষ নিজের জীবনকে ঘৃণা জানায়, একদলা থুথু ছিটিয়ে দেয় ঘৃণিত জীবনের উদ্দেশ্যে…
না মানুষ পারে নি নিজের কথা ভাবতে… তার যে একটি পরিবার আছে… মা,বাবা আর একটি আদরের বোন আছে। নিজের কথা ভেবে এদের সুখকে বলি দিতে পারে না সে। অসহায় না মানুষ কেঁদে চলে… যন্ত্রণার সাগরে নিত্য ভেসে চলে… স্মিত হাসি দিয়ে দুঃখগুলোকে উপহাস করে।
না মানুষ জীবনে কখনো প্রেমে পড়ে নি, তার জীবনে প্রেম আসার সময়- সুযোগ হয় নি। কিন্তু একদিন সেটিও এসে গেলো। তখন সবে সে চাকরিতে জয়েন করেছে। নিজের সবকিছু ভাগ করে নেওয়ার একটি অবলম্বন পেয়ে উন্মাদের মতো ভালোবেসে ফেলে , নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখে… কিন্তু ! সবার সব সুখ সয় না…আর না মানুষদেরতো কোন সুখই স্পর্শ করতে পারে না। প্রেম সেতো আরেক অধ্যায়… না মানুষের জীবনে প্রেম, ভালোবাসা, সুখ , শান্তি কিছুই থাকতে নেই…।
তপ্ত প্রখর ঝলসানো আবেগে
না মানুষেরা হারিয়ে যায়
চৈত্রের দাবদাহে প্লাবিত হয় সুখ,
তোমাকে স্পর্শ করে না সুসময়
তুমি-
না মানুষ… না মানুষ।
না মানুষ তখনো অঝোরে কেঁদে চলেছে… ও কেঁদে যাবে… একদিন মায়ের সাথে হারিয়ে যাবে… এই যন্ত্রণাময় পৃথিবীকে আগেই বিদায় জানাতে পারতো… শুধু মায়ের জন্য শত কষ্টেও ওর বেঁচে থাকা…
এভাবেই দিনে দিনে উন্মাদ হয়ে গেলো না মানুষ…
বিঃদ্রঃ এটি কোন গল্প নয়, একজন সত্যিকারের না মানুষের কথা।
১৫টি মন্তব্য
খসড়া
এই করেছ ভাল নিঠুরও হে
এই করেছ ভাল
নীলকন্ঠ জয়
ভালোর কিছুই নেই ভাইজান 🙁
স্বপ্ন নীলা
অসম্ভব ভাল লেগেছে — একটি ব্যতিক্রমী লেখা পড়লাম অনেক দিন পর
নীলকন্ঠ জয়
শুভেচ্ছা রইলো -{@ –
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
না মানুষ নামকরণে স্বার্থক এটাই মধ্যবিত্ত জীবনের ছন্দ।
নীলকন্ঠ জয়
ঠিক বলেছেন মনির ভাই 🙂
পুষ্পবতী
অসাধরন একটি গল্প। তবে না মানুষ নামটা কেমন জানি লাগলো।
নীলকন্ঠ জয়
‘না মানুষ” ণামোটি প্রতীকী। ধন্যবাদ
নীলকন্ঠ জয়
সংশোধনঃ ‘নামটি’
নুসরাত মৌরিন
আমরা সবাই হয়ত না-মানুষই হয়ে যাচ্ছি…।মানুষ এই দুনিয়ায় কয়জনই বা হয় কিংবা হতে পারে… 🙁
নীলকন্ঠ জয়
না মানুষ হওয়াটা গর্বের, কিন্তু অমানুষ না হই যেন।
ব্লগার সজীব
ভালো লেগেছে নীলকন্ঠ জয় ভাই।
নীলকন্ঠ জয়
শুভেচ্ছা জানবেন
শুন্য শুন্যালয়
না মানুষের কস্ট আমাকেও কস্ট দিলো। আপনার লেখার স্বারথকতা এখানেই।
নীলকন্ঠ জয়
অনেক ধন্যবাদ শুন্য…