ইব্রাহীম, বয়স ৭ বছর। দুষ্ট দুষ্ট চেহারার চমৎকার মিশুক একটা ছেলে। তার বাবার বাজারে একটা ফলের দোকান আছে। মসজিদের সামনে যে খেলার মাঠটা রয়েছে তার দক্ষিণ দিকে তাদের কলোনি। রোজ বিকেলে আজিজ চাচার ছেলে ফারুকের সাথে ঐ মাঠেই খেলে সে। আজিজ চাচাও তাকে অনেক আদর করে। মাঝে মাঝে বাজার থেকে ফিরে আসার সময় ফারুক আর তাকে চকলেট দেয়।
সকালে মাদ্রাসা শেষ করে সে এখন স্কুলেও যায়। সেখানে কত মজার মজার জিনিষ শেখায়। আর খেলার জন্যে কত ধরনের ব্যবস্থা আছে। সময়টা হুট করেই শেষ হয়ে যায়। ফিরে এসে তার ছোট বোনটার কাছে সারাদিন স্কুলে কি দিয়ে কেমন করে খেলে সেটা নিয়ে গল্প করে। তার বোনটা বড় বড় চোখ করে সেই গল্প শোনে আর আম্মুর কাছে গিয়ে বায়না করে তাকেও স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেবার জন্যে। আম্মু ওকে বলে আগামী বছরই ওকে ভর্তি করিয়ে দিবে। তারপর দুই ভাই বোন মিলে একসাথে স্কুলে যাবে।
গত কয়েকদিন ধরে স্কুল যাওয়া বন্ধ, বাড়ি থেকেও বাইরে যাওয়া বন্ধ ঘোষণা করেছে ইব্রাহীমের বাবা। বাইরে নাকি বেশ ঝামেলা চলছে এখন। ঝামেলার ব্যাপারটা ইব্রাহীম ঘরে থেকেও বুঝতে পারে। প্রায়ই বেশ জোরে জোরে শব্দ হয় দূর কোথাও। শব্দের সাথে অল্প অল্প ভূমিকম্প অনুভব করে সে। তার বাবা আর আজিজ চাচা বাইরে বসে কি সব খারাপ সময়ের কথা আলোচনা করে। ঐ ধুপ ধুপ শব্দের সাথে নাকি অনেকের বাড়ি ঘর ভেঙ্গে যাচ্ছে। অনেকে নাকি মারাও যাচ্ছে। হসপিটালে নাকি আহতদের জায়গা দিতে পারছে না ঠিক ভাবে। আশে পাশের অনেকেই নাকি তাদের স্কুলটাতে জায়গা নিয়েছে।
চাচা আরও বলল বাবা যাতে সময় থাকতে সবাইকে নিয়ে আমাদের স্কুলটাতে উঠে আসে। আমাদের কলোনিটা নাকি আর নিরাপদ না। বাবা বলে, সবার যা হবে আমাদেরও তাই হবে। দেখা যাক আর কয়টা দিন। এদিকে নাকি ওরা নাও নজর দিতে পারে। আজিজ চাচা বাবার কথায় তত আশ্বস্ত হতে পারে না। চিন্তিত মুখে বিদায় নিয়ে ফিরে যায়।
আম্মাও আজিজ চাচার কথা গুলি শুনেছে ঘরের ভেতর থেকে। বাবাকে বলল আজিজ চাচার কথা শোনার জন্যে। কয়দিন স্কুলে অবস্থান নিয়ে পরিস্থিতি ঠাণ্ডা হলে আবার ফিরে আসার কথা। বাবা বলে আরও কয়েকদিন দেখে তারপর একটা সিদ্ধান্ত নিবে। এরপর রাতের খাবার খেয়ে আমরা সবাই শুয়ে পড়লাম।
প্রচণ্ড শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায় ইব্রাহীমের। তার বাবার সাথে ঘুমায় সে। বাবা তাকে জাপটে ধরে বাইরে নিয়ে আসে। কলোনির ভেতরে অনেক কোলাহল, সবাই যার যার মত ছুটে বাইরে যাবার চেষ্টা করছে। এরই মাঝে আজিজ চাচা আর তার পরিবারকে দেখে বাবা আমাকে আজিজ চাচার কাছে দিয়ে তাকে বলল, “ওকে নিয়ে এগুতে থাকেন। আমি আপনার ভাবিকে নিয়ে আসছি।” চাচা বাবার কথায় সম্মতি দিয়ে একহাতে ইব্রাহীম আর অন্য হাতে ফারুককে নিয়ে ভীর ঠেলে সামনের দিকে এগুতে থাকে।
খুব বেশি দূর এগুতে পারলো না তারা। তার আগেই প্রচণ্ড শব্দের সাথে একটা ধাক্কা অনুভব করে ইব্রাহীম। চাচার হাতটা খুব জোরে ধরার চেষ্টা করে সে। কিন্তু কেমন করে জানি ছুটে যায়। এর পরপরই আরও একটা শব্দ, সেটা আগের টা থেকেও খুব জোরে। তারপর শুধু উল্টে পড়ে যাওয়ার কথাই মনে আছে তার।
চোখ মেলে দেখে ফারুকের আম্মু তার দিকে ঝুঁকে তাকিয়ে আছে। মাথার বাম পাশে যন্ত্রণা হচ্ছে অনেক। ঝি ঝি একটা শব্দ এখনো কানে লেগে আছে। চোখ মেলতেই আন্টি জোরে চিৎকার দিয়ে বললও “জ্ঞান ফিরেছে!” আজিজ চাচা আন্টির চিৎকার শুনে এক কোন থেকে ছুটে আসলো। কপালে হাত দিয়ে দেখল, বলল আরও কিচ্ছুক্ষণ শুয়ে থাকতে।
চোখ ঘুরিয়ে চেয়ে দেখল তাদের স্কুলের দোতালার সিঁড়ির পাশে যে বড় রুমটা ছিল, ওটাতে আছে তারা। তারা একা নয়, কলোনির অনেকেই আছে। সবাই কেন জানি কান্না করেই চলেছে। গুমোট একটা পরিবেশ এখানে। তার পাশেই আন্টিকে জড়িয়ে ধরে ফারুকও ভয় পাওয়া চোখে তাকিয়ে দেখছে সবাইকে। ফারুকের গালে কালো একটা দাগ দেখতে পেলো সে। তারপর হুট করেই আবার কেমন যেন সব অন্ধকার হয়ে আসলো চারপাশে।
এরপর আবার চোখ মেলে দেখে দিনের আলো দেখা যাচ্ছে। সে এখনো আন্টির কোলেই শুয়ে আছে। আর আন্টি দেয়ালে ঘেঁষে ফারুককে জড়িয়ে ধরে ঘুমাচ্ছে। আস্তে করে উঠে বসলো, আশে পাশে যারা ছিল তাদের প্রায় সবাই ঘুমাচ্ছে। বাইরে কয়েকজন আছে, তাদের ফিসফিসে আওয়াজের কথা শোনা যাচ্ছে। উঠে দিয়ে দরজার সামনে দাড়ায় ইব্রাহিম। তাকে দেখেই আজিজ চাচা ছুটে এসে সামনে হাঁটু মুড়ে বসলো। জিজ্ঞাস করলো খারাপ লাগছে কিনা। উত্তরে বলল “এখন আর মাথায় যন্ত্রণাটা হচ্ছে না”। এদিক সেদিক তাকিয়ে চাচাকে জিজ্ঞাস করল “আব্বু আম্মু ওনারা কোথায়?” আজিজ চাচা ইব্রাহীমকে জাপটে ধরে একটা দীর্ঘনিশ্বাস ছাড়ল শুধু…..
২২টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
আপনি কোন সময়কার গল্প বলতে চেয়েছেন তা কিন্তু বুঝতে পারিনি ।
অলিভার
তাহলে সেটা আমার ব্যর্থতা। তবে ধ্বংসের গল্পে কোন সময় স্থান কাল থাকে না। ধ্বংস সবসময়ই পরিচিত ভুবন নষ্টের একটা স্তূপ রেখে যায়।
ধন্যবাদ কষ্ট করে লেখাটা পড়ার জন্যে।
শুভ কামনা থাকলো ভাইয়া -{@
আজিম
যুদ্ধ-ধ্বংস খুবই করুন। আপনি চিত্র এঁকেছেন খুবই সুন্দর করে, ধন্যবাদ।
অলিভার
ধ্বংসের চিত্র সত্যিই কি সুন্দর হয়? ওটা তো সবসময়ই করুণ একটা পরিস্থিতি তৈরি করে যায়।
সময় নিয়ে লেখাটা পড়ার জন্যে অনেক ধন্যবাদ 🙂
জিসান শা ইকরাম
গল্প ভালো হয়েছে ——– -{@
অলিভার
ধন্যবাদ জিসান ভাইয়া।
শুভ কামনা থাকলো -{@ -{@
লীলাবতী
ভালো লিখছেন ভাইয়া ।
অলিভার
ধন্যবাদ আপু 🙂
খসড়া
আপনা চিত্র স্পষ্ট নয়।এটা গাজার ধ্বংসযজ্ঞ নাকি বিশ্বযুদ্ধ অথবা ধর্মবাদ জাতিবাদ বা বর্ণবাদ।
অলিভার
হ্যাঁ ভাইয়া, এখানে চিত্রটা স্পষ্ট নয়। কারণ আমি নির্দিষ্ট করে কোন ধ্বংসযজ্ঞের স্থান, পাত্র কিংবা বিষয়বস্তুর উপর জোড় দেই নি। আমি শুধু ধ্বংসের একটা গল্প বলতে চেয়েছি। সেই গল্পটা যে কোন স্থানে, যে কোন কারণে হতে পারে।
ধন্যবাদ সময় নিয়ে লেখাটা পড়ার জন্যে 🙂
মশাই
বাক্য গঠনে কিংবা বুননে আরো নজর দিতে পারেন। বাক্যে একাধিক বিশেষ্যের পরিবর্তে সর্বনামের ব্যবহার করতে পারেন।যদিও গল্প লেখা আমার কাছে সবচেয়ে কঠিন কাজ, গল্প লেখাতো দূরের কথা আজও চিন্তাই করতে পারি না।
আপনি ইব্রাহিম ও তার পরিবারের একটি সময়ের বর্ণনা করতে চেয়েছিলেন। যা গল্পের শুরুতেই লক্ষনীয় )ইব্রাহীম, বয়স ৭ বছর। দুষ্ট দুষ্ট চেহারার চমৎকার মিশুক একটা ছেলে। তার বাবার বাজারে একটা ফলের দোকান আছে। মসজিদের সামনে যে খেলার মাঠটা রয়েছে তার দক্ষিণ দিকে তাদের কলোনি।) যা গল্পের তৃতীয় প্যারা পর্যন্ত ঠিকই ছিল। কিন্তু চতুর্থ প্যারাতে এসে লক্ষ্য করলাম (চাচা আরও বলল বাবা যাতে সময় থাকতে সবাইকে নিয়ে আমাদের স্কুলটাতে উঠে আসে।) লেখক তার নিজের কথা বর্ণনা করলেন।
পঞ্চম প্যারার শেষ লাইনেও একই উপস্থাপনা প্রতিয়মান। (***এরপর রাতের খাবার খেয়ে আমরা সবাই শুয়ে পড়লাম।***)
ষষ্ঠ প্যারাতে এসে লেখক খানিকটা গুলিয়ে ফেলেছেন চরিত্রগুলোতে, লেখক ইব্রাহিম কে উপস্থাপনা করতে গিয়ে সেখানে নিজেকেই তুলে ধরেছেন।
****এরই মাঝে আজিজ চাচা আর তার পরিবারকে দেখে বাবা আমাকে আজিজ চাচার কাছে দিয়ে তাকে বলল, “ওকে নিয়ে এগুতে থাকেন। আমি আপনার ভাবিকে নিয়ে আসছি।” চাচা বাবার কথায় সম্মতি দিয়ে একহাতে ইব্রাহীম আর অন্য হাতে ফারুককে নিয়ে ভীর ঠেলে সামনের দিকে এগুতে থাকে। ****
এত কথা আসলে বলতাম না বলেছি এজন্য যে, আপনার গত কয়েকটি লেখা আমি পড়েছি তাতে মনে কিছুটা হলেও বুঝতে পেরেছি আপনার লেখার হাত। তাই ইচ্ছে করেই এই সুন্দর লেখায় কিছুটা বাড়িয়ে, খুটিয়ে খুটিয়ে ভুলগুলো ধরেছি যাতে প্রশংসার আড়ালে লেখাকে যাতে খুন হতে না হয়। আবার ভেবে বসবেন না পণ্ডিত্য দেখাতে এসেছি। একজন সহযোগী হিসেবে যতটুকু জানি তা শেয়ার করতে আমি কুন্ঠিত হইনা। আপনাকে লিখতে হবে কথা দিচ্ছি আমরা সবাই মিলে, এই পরিবারের সবাই অনেক ভাল। এতো কিছু বললাম আপনি আবার রাগ করে বসেন নিতো?
মন্তব্যে নিরুৎসাহিত হবেন না আশা করি। একান্তই ব্যক্তিগত অভিমত। ভুল হতেও পারে। অন্যেরা আরো সুন্দর করে বলবেন হয়তো। তবে গল্পের প্লট সুন্দর। আশা করি লিখবেন ক্রমাগত। নিরন্তর শুভকামনা। -{@
অলিভার
মশাই ভাইয়া, অনেক ধন্যবাদ ভুল গুলি ধরিয়ে দেবার জন্যে। কিন্তু এতে নিরুৎসাহিত হবো কেন? বরং আরও ভালো ভাবে লেখার দিকে নজর দিতে পারবো। আমি শুরুতেই বলেছিলাম আমি নবীন, আপনাদের কাছে অনেক ব্যাপার এখনো শেখার আছে আমার। তাই কেউ যদি এভাবে ভুল গুলিকে ধরিয়ে দেয় সেটা বরং আমার উপকারেই আসবে 🙂
হ্যাঁ, চরিত্রটাকে গল্পের ভেতর একটু গুলিয়ে ফেলেছি। আসলে গল্পটা দুইটি আলাদা সময়ে লিখতে হয়েছিল। প্রথমদিকে একজন ইব্রাহীমের গল্প বলার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু পরের সময়ে গল্পটা লেখার সময় সেখানে ভুল করে ইব্রাহীম চরিত্রটাই গল্প বলতে শুরু করে। ব্যাপারটা একেবারে গল্প শেষে নজরে আসে। তাড়াহুড়া করে চেষ্টা করেছিলাম ইব্রাহীমের চরিত্র থেকে ইব্রাহীমের গল্পতে ফিরে যাবার জন্যে। কিন্তু বেশ কিছু জায়গায় ইব্রাহীমের কথাই রয়ে গেছে।
আশা করছি এমন ভুল গুলি সামনেও একটু কষ্ট করে ধরিয়ে দিবেন 🙂
শুভ কামনা জানবেন ভাইয়া -{@ -{@
মশাই
পাশে থাকব অবশ্যই আপনি লিখতে থাকুন, অনেকে আবার রাগ করে বসে যদি কোন ভুল ধরিয়ে দেওয়া হয় তাই ভয় লাগে, সমালোচনার মাঝে যে লেখক পথ পাড়ি দিতে পারে সেই প্রকৃত লেখক। লিখুন নিরন্তর। শুভ কামনা।
অলিভার
না ভাইয়া। রাগ করার কোন কারণ এই দিক থেকে দেখছি না। বরং সেটা সামনের কাজ গুলির জন্যে আশীর্বাদ হবে মনে করি।
আপনার জন্যেও শুভ কামনা থাকলো 🙂
শুন্য শুন্যালয়
লিখুন আরো। আপনার দৃশ্য বর্ণনা সুন্দর হয়। আরো অনেক গল্প পড়তে চাই। শুভ কামনা।
অলিভার
চেষ্টা থাকবে 🙂
সময় নিয়ে লেখাটা পড়ার জন্যে অনেক ধন্যবাদ।
মা মাটি দেশ
-{@ (y)
অলিভার
ধন্যবাদ ভাইয়া 🙂
শুভ কামনা জানবেন -{@
শিশির কনা
যে কোন ধ্বংশই পরিত্যাজ্য । এতে কোন কল্যান বয়ে আনেনা । আপনি ভালো লিখেন । নিয়মিত লিখুন ।
অলিভার
হ্যাঁ, কোন ধ্বংসই কোন কল্যাণ নিয়ে ফিরে না।
ধন্যবাদ কষ্ট করে পড়ার জন্যে।
চেষ্টা করবো নিয়মিত হবার জন্যে 🙂
শুভ কামনা জানবেন 🙂
আমার আছে নীল
যুদ্ধ, ধ্বংস কল্যাণকর কোন কিছু বয়ে আনে না ।
অলিভার
সত্যিই কোন কল্যাণ নিয়ে আসে না, তবুও কোথাও না কোথাও এই ধ্বংস চলতেই থাকে।