আমি আর শবনম হেঁটে হেঁটে আসছিলাম। কত গল্প খুনসুটি হাসাহাসি আমাদের, ও আমার হাত জড়িয়ে ধরে ছিলো। পথের মাঝখানে কিছু ছেলেমেয়ে জটলা করছে, কার সাথে যেন সেলফি তুলছে। আমি শবনমকে বললাম নিশ্চয় কোন সেলিব্রিটি এসেছে সেখানে, চলো গিয়ে দেখি কে?
আমরা সামনে এগিয়ে যেতেই দেখি হালকা পাতলা গড়নের কালো বরন একটা ছেলে ভিড় ঠেলে বেড়িয়ে এলো। আরে! এতো হিরো আলম; হালের তরুনদের ক্রেজ। ও এখানে মানে রংপুরে কি করছে? যদিও তার আধিখ্যেতা টাইপ ভিডিওগুলি আমার মোটেই পছন্দ নয়। তার নাকি মোটিভেশনাল এনকারেজিং টাইপ একটা বইও প্রকাশিত হয়েছে এবারের বইমেলায়। নামটা ঠিক মনে করতে পারলাম না এই মূহুর্তে।
সামনা সামনি হতেই জিজ্ঞেস করলাম – ভাই ভালো আছো? বয়সে অনেক ছোট বলেই তুমি করে বললাম আমি। সেলিব্রিটিদের কি তুমি করে বলা যায়?
জ্বী ভাই, বলে সে মুখের দিকে তাকালো। কি সুন্দর মায়া মায়া চেহারা। একটা সেলফি তুলি? আচ্ছা, বলেই সে পাশে এসে দাঁড়ালো, আমার মোবাইলে ক্যামেরা ক্লিক ক্লিক শব্দ করে উঠলো দু’তিনবার। শবনমের এসবে আগ্রহ নেই। সে পাশে থেকে দেখছিলো।
রংপুরে কেন? এ কথা জিজ্ঞেস করাতে সে বললো বগুড়া থেকে ডাক্তার দেখাতে এসেছে। সিরিয়াল দেয়াই আছে, কিন্তু ভক্তদের ভিড়ে আটকা পরেছে। তার কথায় বগুড়ার আঞ্চলিক টান স্পষ্ট।
তার চাহনীতে সাহায্য প্রার্থনা দেখতে পেলাম। বললাম – আমার বাসা মেডিকেল কলেজের পাশেই, চাইলে তাকে আমি নিয়ে যেতে পারি।
বাসা কাছেই তাই শবনমকে বাসায় ফেরার জন্য রিক্সা ডেকে দিয়ে আমি নিজের মোটরসাইকেলের দিকে হাঁটা দিলাম।
হিরো আলমের নাকি বাইক চালাতে ভালো লাগে। এ কথা জেনে তাকেই বললাম বাইক চালাতে। সে বাইক চালাচ্ছে আমি পিছনে বসে আছি। আমার ভালো লাগছিলো, একজন সেলিব্রিটির চালানো বাইকের পিছনে বসে আমি যাচ্ছি।
আমি তাকে রাস্তা বলে দিচ্ছিলাম। আমার হাতের বাইক আমি কাউকেই দেইনা, যত ভালোই চালক হোক সে। কিন্তু হিরোকে না করতে পারলাম না। যদিও সে ভালোই ড্রাইভ করছে। বুঝলাম অভিজ্ঞতা আছে তার, পাকা চালক সে!
রাস্তার মানুষ যারা তাকে চিনতে পারছে সবাই হাত নাড়ছে আমাদের দিকে। আর যারা আমাকে চেনে অবাক হয়ে তাকাচ্ছে আমার দিকে। মোবাইলে রিং বেজে উঠছে, নিশ্চয় শবনম বাসায় পৌঁছে ফোন দিয়েছে। পকেট থেকে মোবাইল বের করে দেখি শবনমই।
কথা শেষ করে কি মনে করে হিরো আলমের সাথে তোলা ছবিগুলি দেখতে মোবাইলের গ্যালারীতে ক্লিক করলাম। কিন্তু সেলফিতে তোলা সে ছবিতে আমার মুখ দেখা যাচ্ছে, হিরো নেই সেখানে! মোবাইল ক্যামেরা কি নষ্ট হয়ে গেলো নাকি? অদ্ভুত তো!
আমি বাইকে বসা অবস্থায় আবার দু’জনের কয়েকটি সেলফি নিলাম। চেক করতে গিয়ে দেখি সেই একই জিনিস। ছবিতে আমার মুখ আছে হিরোর নেই! এ কি করে সম্ভব? একটু আগেই শবনম আর আমার তোলা ছবিগুলিতো ঠিকই আছে। তাহলে?
বাইক চালাচ্ছে হিরো, সামনেই একটা ব্রীজ। আমি ধীরে চালাতে বললাম তাকে। কানের পাশ দিয়ে শোঁ শোঁ করে বাতাস কেটে যাচ্ছে। আমি ভাবছি ছবির কথা। এরকমতো হবার কথা নয়, হিরো রক্তমাংসের মানুষ, প্রেতাত্মা নয়। ভয় পেলাম কিছুটা; সে হিরোইতো নাকি হিরো আলমের রুপধারী অন্য কেউ?
ব্রীজ পার হয়ে বাইকের ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে গেলো। কি হলো হঠাৎ? আমি চেক করার জন্য বাইক থেকে নামলাম। এই জন্যই নিজের হাতের জিনিস অন্য কাউকে ব্যবহার করতে দিইনা আমি। তাকে পিছনে বসতে বললাম, আমি বাইক চালাবো। সামনেই মেডিকেল কলেজ, আমরা প্রায় চলে এসেছি।
হিরোকে নামিয়ে দিয়ে আমি নিজেই বাইকের ইঞ্জিন স্টার্ট দিলাম। বাহ! এইতো ঠিক আছে আমার প্রিয় বাইক। ধীরে ধীরে সামনে এগোতেই কি মনে করে ব্রেকে পা দিলাম। সর্বনাশ! ব্রেক ফেইল হয়ে আছে!
আমি আর শবনম এই বাইকেই বাসায় ফেরার কথা ছিলো। নির্ঘাত একটা বড় এক্সিডেন্ট হতে পারতো আজ, তখন কি হতো? ভাগ্যিস সে রিক্সায় বাসায় ফিরেছে। তাহলে হিরো এতক্ষন কি করে বাইকটা চালিয়ে আসলো? ব্রেকতো তখনো কাজ করছিলোনা!
আল্লাহ্ আজ বাঁচিয়েছেন, হিরো হয়তো উপলক্ষ ছিলো। মনে মনে কৃতজ্ঞতা জানালাম। হঠাৎ হিরোর কথা মনে হলো, আরে সেতো বাইকের পিছনেই বসা ছিলো; কোথায় গেলো? আমি পঞ্চাশ গজও আসিনি, সেখানে সে নেই। উধাও হয়ে গিয়েছে !
আমি আশেপাশে তাকালাম, যেন হাওয়ায় মিলিয়েছে সে। আশ্চর্য! এভাবে না বলে কেউ যায়, ছেলেটাতো ভীষণ অকৃতজ্ঞ ! তার জন্যই শবনমকে একা একা বাসায় যেতে হলো। কিন্তু গেলো কোথায়? খুব বেশি হলে ত্রিশ চল্লিশ সেকেন্ড পেরিয়েছে। এত তাড়াতাড়ি কোথাও যাওয়াতো সম্ভব না।
আবার মনে সেই কু’ ডাক দিলো, ছবির কথা মনে পড়লো আমার। ছবিগুলিতে আমার মুখ আছে, হিরো অদৃশ্য। তাহলে? সে কি আলৌকিক কিছু? আমাদের এক্সিডেন্ট থেকে বাঁচাতেই কি কেউ তাকে উপলক্ষ করে পাঠিয়েছে? এমনও হয়? এমন নানান প্রশ্নে আমার মন বিচলিত হয়ে উঠলো।
কানে কিছু পরিচিত কন্ঠ শুনতে পাচ্ছি। ছোটখালু আর স্কুলে পড়ুয়া খালাতো ভাইয়ের আওয়াজ পেলাম, আম্মার সাথে কথা বলছে। আমার ঘুম ভেঙে গেলো। এতক্ষন তাহলে স্বপ্ন দেখছিলাম?
দুপুরে ভরপেট খেয়ে একটু ঘুম দিয়েছিলাম; এখন প্রায় সন্ধ্যা। ঘুমের ভাব এখনো যায়নি, বিছানায় বসে ভাবছি স্বপ্নের কথা। এ কেমন স্বপ্ন? তাও আবার হিরো আলম! আশ্চর্য! নিজের মনেই হা হা করে হেসে উঠলাম।
খালু আর ছোট ভাই ডাক্তার দেখাতে শহরে এসেছিলো। রাত হয়ে যাচ্ছে, তাই দেরী না করে চলে যাচ্ছিলো। তাদের বিদায় জানাতে দরজার বাইরে বের হলাম; তারাও বাইকে করে এসেছে। তাদের সে বাইকের দিকে চোখ পড়তেই আমার গা শিউরে উঠলো। এটাতো আমার স্বপ্নে দেখা সেই বাইকটাই যেটার ব্রেক ফেইল হয়েছিলো। আজ স্বপ্নে হিরোও এসেছিলো ডাক্তার দেখাতে ; খালুরাও আসলো ডাক্তার দেখাতে। আমি ভয় পেলাম, প্রচন্ড ভয়!
খালুকে বললাম – ব্রেক চেক করেনতো, সমস্যা আছে কিনা? খালু বললো হুম বাবা, ক’দিন থেকে ব্রেকটা সমস্যা করছে। তবে কাল পড়শুই সার্ভিসিং এ দেবো, চিন্তার কিছু নেই। স্বপ্নের কথা তাকে বললাম না। শুধু সাবধানে বাইক চালাতে বললাম, সাথে বাচ্চাটা আছে যে!
খালু চলে গিয়েছেন প্রায় ঘন্টা দু’য়েক হলো। বাসায় পৌঁছতে তার সর্বোচ্চ ত্রিশ মিনিট লাগার কথা। আমার প্রচন্ড দুশ্চিন্তা হচ্ছে, তার মোবাইলে কল দিচ্ছি বারবার। ওপাশে রিং বেজেই চলেছে অথচ কেউ রিসিভ করছেনা!!
(ছবিঃ গুগল থেকে নেয়া)
২৫টি মন্তব্য
প্রহেলিকা
কি সব ভুতুড়ে টাইপের গল্প, ভয় লাগে।
গল্পে কোথাও কোথাও টুইস্ট আছে। ভালো লাগলো। কবিতার ভুত মাথা থেকে তাড়িয়ে এটা নিয়েই পড়ে থাকুন।
ভালো লিখেছেন।
তৌহিদ
আমার সব স্বপ্ন ইদানিং দুঃস্বপ্নে পরিণত হচ্ছে। নিজেও ভয় পাই কিছুটা ভাই।
কবিতা আমার দ্বারা হবেনা ভাই। দু’লাইন লিখলেই কবি হওয়া যায়না যে!
পাশে থেকে উৎসাহ দেবেন এভাবেই।
প্রথম মন্তব্যকারী হিসেবে অভিনন্দন জানবেন।☺☺
প্রহেলিকা
প্রথম মন্তব্যকারীর অভিনন্দন পেতে পেতে এখন অভ্যাস হয়ে গেছে। ভুলে ফুলে কোনোদিন প্রথম মন্তব্য দেয়া থেকে মিস গেলেও অভিনন্দন জানাতে ভুইলেন না কিন্তুক।
তৌহিদ
সবসময় অভিনন্দন জানবেন ভাই।
রিতু জাহান
কিছু স্বপ্ন কেমন যেনো একটা অদ্ভুত ধরনের ভয় কাজ করে।
আমার শরীর দুর্বল থাকলে উল্টাপাল্টা স্বপ্ন দেখি। গতকাল স্বপ্ন দেখলাম কপালে চোখের কোণে অনেক বড় একটা কাটা দাগ।আমার স্বপ্ন দেখলে শরীরে আর শক্তি থাকে না।
আমার অনেক স্বপ্ন খেটে যায়।
স্বপ্নকে বেশ গুছিয়ে লিখেছেন ভাই।
তৌহিদ
আসলে দুঃস্বপ্ন দেখার পিছনে অনেক কিছুই দায়ী আপু, দুশ্চিন্তা, মানসিক অবসাদগ্রস্থতা, বিভিন্ন অনিয়ম এসব।
নিজের যত্ন নেবেন কিন্তু।☺
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ আপু।
মনির হোসেন মমি
হা হা হা মন্দ হয়নি মনে মনে রসগোল্লা খেলেন।তবে এই হিরো আলমের চেয়ে আপনি কম কিসে।
তৌহিদ
কোথায় হিরুলোম আর কুতায় মুই!!
কি যে কননা বদ্দা!!☺☺
ছাইরাছ হেলাল
ভুতের গল্প পড়তে ভালই লাগে,
লিখতে থাকলে আরও সুন্দর হতে বাধ্য।
তৌহিদ
এখানে ভুত নেই কোথাও, আছে দুঃস্বপ্ন। নিজের দেখা সত্যিকার স্বপ্ন নিয়ে লেখা ভাই।
সাবিনা ইয়াসমিন
ভুত কিনা শেষ পর্যন্ত হিরো আলমের রুপ ধরে এলো!! তা হিরো হবার ইচ্চে হলে সালমান খানের রুপ নিয়ে আসলো না কেন? অবশ্য আপনাকে জিজ্ঞেস করে বিপাকে ফেলতে চাইছি না, কারণ স্বপ্ন / দুঃস্বপ্নের উপর নিজের মর্জি খাটানো যায় না।
গল্পটি আমার ভালো লেগেছে, কল দিয়ে খালুকে পেয়েছিলেন কিনা জানাবেন ভাই। কেন যেন মনে হচ্ছে গল্পটা কাল্পনিক নয়।
তৌহিদ
তাইতো, হিরো আলম না হয়ে সে সালমান কিংবা অন্যকেউ হতে পারতো!
ঠিক বলেছেন আপু, স্বপ্নে দুঃস্বপ্ন এসবে কারো হাত নেই, কে আসে আর কে যায়!
আর হ্যা এটা কিন্তু সত্য গল্প। সত্য স্বপ্ন।☺
হুম খালু ফোন ধরেছিলেন। মোবাইল সাইলেন্স করে রেখেছিলেন নামাজের সময় পরে আর তার মনে ছিলোনা।
নীলাঞ্জনা নীলা
এমনিতেই আমি খুব ভীতু। মানুষের চেয়ে অদৃশ্য ভুতকে ভয় পাই। অন্ধকারে ঘুমাতে পারিনা কখনোই। আর কী বলবো! ভয় তো পাইয়েই দিলেন!
দুঃশ্চিন্তাকে পজিটিভ হিসেবে জায়গা দিন জীবনে, দেখবেন সমাধান কোনো না কোনোভাবে এসেই যাবে। গল্প, তবু যেনো গল্প নয়।
তৌহিদ
আসলে কাজের চাপ বেশি থাকলে উল্টাপাল্টা চিন্তা আসে মাথায় আপু। চেষ্টা করি রিলাক্স থাকার, হয়ে ওঠেনা সবসময়।
শুভেচ্ছা জানবেন আপু।
নীলাঞ্জনা নীলা
তবুও নিজেকে ভালো রাখুন।
তৌহিদ
আপনিও ভালো থাকবেন প্রিয়জন।
মাহমুদ আল মেহেদী
চিন্তায় ফেলে দিলেন। পরের বার আপনার খালুকে ফোনে বা সুস্থ পেয়েছিলেন কিনা জানাবেন।
তৌহিদ
পেয়েছিলাম ভাই, মোবাইল নামাজের সময় সাইলেন্ট করে রেখেছিলেন তিনি। আর আমাদের কত দুঃশ্চিন্তা হচ্ছিলো বলেন?
ভালো থাকবেন ভাই।
শুন্য শুন্যালয়
হিরো আলমকে স্বপ্ন দেখার চাইতে দুঃস্বপ্নের কী আর আছে!! :p
আপনি তো দেখি অসাধারণ গল্প লেখেন। গল্পে রিয়েল নামগুলো ব্যবহার করলে ভূতের গল্প পোক্ত হয় একজন বলছে আমারে। আপনার গল্প পড়েও তাই-ই মনে হচ্ছে। 🙂
কিপিটাপ গল্পাগল্পি, ভূত-প্রেত যে রূপেই হোক।
তৌহিদ
এই স্বপ্নটি যেদিন হিরো গ্রেফতার হয় সেদিন দুপুরে দেখেছি। আমি নিজেও অবাক এরকম স্বপ্নও হয়!
গল্পেই আছি আপু, ধন্যবাদ জানবেন।☺
জিসান শা ইকরাম
গল্পটি একনাগাড়ে কোন বিরতি ছাড়াই পড়ে ফেললাম,
আপনার গল্প লেখার হাত চমৎকার।
এমন রহস্যময় গল্পই আমার প্রথম পছন্দের, পাঠকরা ভাবুক কেন এমন হলো?
এরপর কি?
‘ ছেলেটি মেয়েটি বাদাম খেতে খেতে প্রেমে পতিত হইল, কিছু বাঁধা আসলো প্রেমে। অবশেষে সব বাঁধা অতিক্রম করে তারা বিয়ে করলো।’ এই ধরনের গল্প আমার ভালো লাগেনা আর।
গল্পে নায়ক নায়িকা থাকতেই হবে এমন কোনো কথা নেই। যেমন আপনার এই গল্প।
গল্প চলমান থাকুক।
তৌহিদ
গল্পটি ভালো লেগেছে জেনে আমি নিজেও আনন্দিত হলাম। পাঠকের ভালোলাগা লেখকের পরম প্রাপ্তি।
গল্পেই আছি ভাই। পাশে থাকবেন।☺
ইঞ্জা
ওরে বাবা, এরপর কি খালুদের খবর পেয়েছিলেন, কি হলো এরপর?
তৌহিদ
পেয়েছিলাম দাদা, পথে নামাজের জন্য মসজিদে গিয়েছিলেন। তখন মোবাইল সাইলেন্স করে রেখেছিলেন তিনি, এরপর আর মনে নেই তার যে মোবাইল টোন অফ করতে হবে।
আর আমরা এদিকে কি টেনশনে পরে গিয়েছিলাম। ☺
ইঞ্জা
এ বড়ই আতংকের, বিপদের আশংকায় ফোন করে পাচ্ছেননা, এড্রানিল খরচা হচ্ছে, উফফ।