দুপুরের দুঃস্বপ্ন

তৌহিদুল ইসলাম ৮ এপ্রিল ২০১৯, সোমবার, ০৫:৫১:৫৬অপরাহ্ন গল্প ২৫ মন্তব্য

আমি আর শবনম হেঁটে হেঁটে আসছিলাম। কত গল্প খুনসুটি হাসাহাসি আমাদের, ও আমার হাত জড়িয়ে ধরে ছিলো। পথের মাঝখানে কিছু ছেলেমেয়ে জটলা করছে, কার সাথে যেন সেলফি তুলছে। আমি শবনমকে বললাম নিশ্চয় কোন সেলিব্রিটি এসেছে সেখানে, চলো গিয়ে দেখি কে?

আমরা সামনে এগিয়ে যেতেই দেখি হালকা পাতলা গড়নের কালো বরন একটা ছেলে ভিড় ঠেলে বেড়িয়ে এলো। আরে! এতো হিরো আলম; হালের তরুনদের ক্রেজ। ও এখানে মানে রংপুরে কি করছে? যদিও তার আধিখ্যেতা টাইপ ভিডিওগুলি আমার মোটেই পছন্দ নয়। তার নাকি মোটিভেশনাল এনকারেজিং টাইপ একটা বইও প্রকাশিত হয়েছে এবারের বইমেলায়। নামটা ঠিক মনে করতে পারলাম না এই মূহুর্তে।

সামনা সামনি হতেই জিজ্ঞেস করলাম – ভাই ভালো আছো? বয়সে অনেক ছোট বলেই তুমি করে বললাম আমি। সেলিব্রিটিদের কি তুমি করে বলা যায়?

জ্বী ভাই, বলে সে মুখের দিকে তাকালো। কি সুন্দর মায়া মায়া চেহারা। একটা সেলফি তুলি? আচ্ছা, বলেই সে পাশে এসে দাঁড়ালো, আমার মোবাইলে ক্যামেরা ক্লিক ক্লিক শব্দ করে উঠলো দু’তিনবার। শবনমের এসবে আগ্রহ নেই। সে পাশে থেকে দেখছিলো।

রংপুরে কেন? এ কথা জিজ্ঞেস করাতে সে বললো বগুড়া থেকে ডাক্তার দেখাতে এসেছে। সিরিয়াল দেয়াই আছে, কিন্তু ভক্তদের ভিড়ে আটকা পরেছে। তার কথায় বগুড়ার আঞ্চলিক টান স্পষ্ট।

তার চাহনীতে সাহায্য প্রার্থনা দেখতে পেলাম। বললাম – আমার বাসা মেডিকেল কলেজের পাশেই, চাইলে তাকে আমি নিয়ে যেতে পারি।
বাসা কাছেই তাই শবনমকে বাসায় ফেরার জন্য রিক্সা ডেকে দিয়ে আমি নিজের মোটরসাইকেলের দিকে হাঁটা দিলাম।

হিরো আলমের নাকি বাইক চালাতে ভালো লাগে। এ কথা জেনে তাকেই বললাম বাইক চালাতে। সে বাইক চালাচ্ছে আমি পিছনে বসে আছি। আমার ভালো লাগছিলো, একজন সেলিব্রিটির চালানো বাইকের পিছনে বসে আমি যাচ্ছি।

আমি তাকে রাস্তা বলে দিচ্ছিলাম। আমার হাতের বাইক আমি কাউকেই দেইনা, যত ভালোই চালক হোক সে। কিন্তু হিরোকে না করতে পারলাম না। যদিও সে ভালোই ড্রাইভ করছে। বুঝলাম অভিজ্ঞতা আছে তার, পাকা চালক সে!

রাস্তার মানুষ যারা তাকে চিনতে পারছে সবাই হাত নাড়ছে আমাদের দিকে। আর যারা আমাকে চেনে অবাক হয়ে তাকাচ্ছে আমার দিকে। মোবাইলে রিং বেজে উঠছে, নিশ্চয় শবনম বাসায় পৌঁছে ফোন দিয়েছে। পকেট থেকে মোবাইল বের করে দেখি শবনমই।

কথা শেষ করে কি মনে করে হিরো আলমের সাথে তোলা ছবিগুলি দেখতে মোবাইলের গ্যালারীতে ক্লিক করলাম। কিন্তু সেলফিতে তোলা সে ছবিতে আমার মুখ দেখা যাচ্ছে, হিরো নেই সেখানে! মোবাইল ক্যামেরা কি নষ্ট হয়ে গেলো নাকি? অদ্ভুত তো!

আমি বাইকে বসা অবস্থায় আবার দু’জনের কয়েকটি সেলফি নিলাম। চেক করতে গিয়ে দেখি সেই একই জিনিস। ছবিতে আমার মুখ আছে হিরোর নেই! এ কি করে সম্ভব? একটু আগেই শবনম আর আমার তোলা ছবিগুলিতো ঠিকই আছে। তাহলে?

বাইক চালাচ্ছে হিরো, সামনেই একটা ব্রীজ। আমি ধীরে চালাতে বললাম তাকে। কানের পাশ দিয়ে শোঁ শোঁ করে বাতাস কেটে যাচ্ছে। আমি ভাবছি ছবির কথা। এরকমতো হবার কথা নয়, হিরো রক্তমাংসের মানুষ, প্রেতাত্মা নয়। ভয় পেলাম কিছুটা; সে হিরোইতো নাকি হিরো আলমের রুপধারী অন্য কেউ?

ব্রীজ পার হয়ে বাইকের ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে গেলো। কি হলো হঠাৎ? আমি চেক করার জন্য বাইক থেকে নামলাম। এই জন্যই নিজের হাতের জিনিস অন্য কাউকে ব্যবহার করতে দিইনা আমি। তাকে পিছনে বসতে বললাম, আমি বাইক চালাবো। সামনেই মেডিকেল কলেজ, আমরা প্রায় চলে এসেছি।

হিরোকে নামিয়ে দিয়ে আমি নিজেই বাইকের ইঞ্জিন স্টার্ট দিলাম। বাহ! এইতো ঠিক আছে আমার প্রিয় বাইক। ধীরে ধীরে সামনে এগোতেই কি মনে করে ব্রেকে পা দিলাম। সর্বনাশ! ব্রেক ফেইল হয়ে আছে!

আমি আর শবনম এই বাইকেই বাসায় ফেরার কথা ছিলো। নির্ঘাত একটা বড় এক্সিডেন্ট হতে পারতো আজ, তখন কি হতো? ভাগ্যিস সে রিক্সায় বাসায় ফিরেছে। তাহলে হিরো এতক্ষন কি করে বাইকটা চালিয়ে আসলো? ব্রেকতো তখনো কাজ করছিলোনা!

আল্লাহ্‌ আজ বাঁচিয়েছেন, হিরো হয়তো উপলক্ষ ছিলো। মনে মনে কৃতজ্ঞতা জানালাম। হঠাৎ হিরোর কথা মনে হলো, আরে সেতো বাইকের পিছনেই বসা ছিলো; কোথায় গেলো? আমি পঞ্চাশ গজও আসিনি, সেখানে সে নেই। উধাও হয়ে গিয়েছে !

আমি আশেপাশে তাকালাম, যেন হাওয়ায় মিলিয়েছে সে। আশ্চর্য! এভাবে না বলে কেউ যায়, ছেলেটাতো ভীষণ অকৃতজ্ঞ ! তার জন্যই শবনমকে একা একা বাসায় যেতে হলো। কিন্তু গেলো কোথায়? খুব বেশি হলে ত্রিশ চল্লিশ সেকেন্ড পেরিয়েছে। এত তাড়াতাড়ি কোথাও যাওয়াতো সম্ভব না।

আবার মনে সেই কু’ ডাক দিলো, ছবির কথা মনে পড়লো আমার। ছবিগুলিতে আমার মুখ আছে, হিরো অদৃশ্য। তাহলে? সে কি আলৌকিক কিছু? আমাদের এক্সিডেন্ট থেকে বাঁচাতেই কি কেউ তাকে উপলক্ষ করে পাঠিয়েছে? এমনও হয়? এমন নানান প্রশ্নে আমার মন বিচলিত হয়ে উঠলো।

কানে কিছু পরিচিত কন্ঠ শুনতে পাচ্ছি। ছোটখালু আর স্কুলে পড়ুয়া খালাতো ভাইয়ের আওয়াজ পেলাম, আম্মার সাথে কথা বলছে। আমার ঘুম ভেঙে গেলো। এতক্ষন তাহলে স্বপ্ন দেখছিলাম?

দুপুরে ভরপেট খেয়ে একটু ঘুম দিয়েছিলাম; এখন প্রায় সন্ধ্যা। ঘুমের ভাব এখনো যায়নি, বিছানায় বসে ভাবছি স্বপ্নের কথা। এ কেমন স্বপ্ন? তাও আবার হিরো আলম! আশ্চর্য! নিজের মনেই হা হা করে হেসে উঠলাম।

খালু আর ছোট ভাই ডাক্তার দেখাতে শহরে এসেছিলো। রাত হয়ে যাচ্ছে, তাই দেরী না করে চলে যাচ্ছিলো। তাদের বিদায় জানাতে দরজার বাইরে বের হলাম; তারাও বাইকে করে এসেছে। তাদের সে বাইকের দিকে চোখ পড়তেই আমার গা শিউরে উঠলো। এটাতো আমার স্বপ্নে দেখা সেই বাইকটাই যেটার ব্রেক ফেইল হয়েছিলো। আজ স্বপ্নে হিরোও এসেছিলো ডাক্তার দেখাতে ; খালুরাও আসলো ডাক্তার দেখাতে। আমি ভয় পেলাম, প্রচন্ড ভয়!

খালুকে বললাম – ব্রেক চেক করেনতো, সমস্যা আছে কিনা? খালু বললো হুম বাবা, ক’দিন থেকে ব্রেকটা সমস্যা করছে। তবে কাল পড়শুই সার্ভিসিং এ দেবো, চিন্তার কিছু নেই। স্বপ্নের কথা তাকে বললাম না। শুধু সাবধানে বাইক চালাতে বললাম, সাথে বাচ্চাটা আছে যে!

খালু চলে গিয়েছেন প্রায় ঘন্টা দু’য়েক হলো। বাসায় পৌঁছতে তার সর্বোচ্চ ত্রিশ মিনিট লাগার কথা। আমার প্রচন্ড দুশ্চিন্তা হচ্ছে, তার মোবাইলে কল দিচ্ছি বারবার। ওপাশে রিং বেজেই চলেছে অথচ কেউ রিসিভ করছেনা!!

(ছবিঃ গুগল থেকে নেয়া)

৮৭৪জন ৬৮০জন
0 Shares

২৫টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ