ডেস্কটপ কম্পিউটারে বুঁদ হয়ে ক্লায়েন্টের কাজ করছিলাম। অনেকক্ষণ ধরে। ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় জানান দিলো পেছনে তাকাতে। আমার পেছনে থাই এর গ্লাস দেয়া জানালা। সকালে ঘুম থেকে উঠেই ওটা খুলে দেই। আবার বিকেলের আগেই বন্ধ করে দেই। এখনো দুপুর। তাই লাগাইনি। মন বলছে জানালার কাছেই তাকাতে হবে। মনের কথায় পাত্তা না দিয়ে কাজ করা যাচ্ছে না। উজ্জ্বল সূর্যের আলো পড়ে আমার ঘর আলোকিত। আমি পেছন ফিরলাম। এবং বিস্ময়ে আমার চোয়াল ঝুলে পড়লো।
একী দেখছি আমি?
দুজন জোয়ান লোক যাদের উর্ধ্বাংশ উদোম, নিম্নাংশে ট্রাউজার টাইপের পায়জামা পরা আমার জানালার কার্নিশে বসে গ্রীল ধরে দোল খাচ্ছে আর ঘরের ভেতরে নজর তাদের।
আমি তাদের দেখে একদম জমে গিয়েছি। কিন্তু তা বুঝতে না দিয়ে ধমকে উঠলাম, “এই, এই, কে আপনারা? এখানে কেন? কী করছেন হ্যাঁ? ঝুলার আর জায়গা পান না? নামেন। এক্ষণ নামেন।“
কোন ভাবান্তরই হলো না লোকগুলোর। এ সময় চোখে পড়লো ওদের হাতের নাগালের সামান্য বাইরে সোফার উপরে আমি আমার ল্যাপটপ টা রেখেছি। ঘুমোতে যাওয়ার সময় ল্যাপটপ টা প্রতিদিন ডেস্কটপের পাশেই রাখি টেবিলের ওপরে। ক্লায়েন্টের ডিজাইন করার সময়ে টেবিলের ওপরটা মোটামুটি ফাঁকা করে নিলে কাজে আরামবোধ করি।
ছোঁ মেরে ওদের খুব সামনে থেকে ল্যাপটপ টা নিয়ে এসে ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ছাড়লাম। ভাগ্যিস ওরা আমাকে চুলে ধরে টেনে ধরেনি। নিরাপদ দূরত্বে ফিরে এসে এইবার দিলাম চিৎকার। “আবির কোথায় তোমরা? সব যেয়ে মরেছে! এদিকে শুনশান!” প্রথম বাক্যটা চেঁচিয়ে বললেও পরের লাইন দুটো বিড়বিড় করে বললাম।
ধরফর করে জেগে উঠলাম। এখনো শ্বাসের দ্রুত গতির ওঠানামা চলছে। চট করে জানালার দিকটায় চেয়ে দেখলাম। লতানো কাজ করা ফুলের শরীরে জানালায় পর্দা উড়ছে হাই ভলিউমে থাকা ফ্যানের জন্য। ঘরটা আধো আলো আধো অন্ধকার। বালিশের পাশে থাকা মোবাইল ফোন সেটের উপরে হাত নিতেই সময় দেখিয়ে দিয়েছে। বিকেল পাঁচটা বাজতে চলেছে। তাড়াতাড়ি উঠতে হবে বিছানা থেকে। তা নইলে আসরের নামাজের দেরী হয়ে যায়। কিন্তু শরীরে কোন জোরই পাচ্ছি না। ইচ্ছে করছে আবিরকে ফোন করে ডেকে নিয়ে আসি এই ঘরে। যে কাজটা সাধারণত আম্মা আমাদের সাথে করে।
দেয়ালের সাথে প্রচন্ড জোরে ব্যথা পেলাম বাম হাঁটুতে। আমার মিনি সাইজের ব্যাচেলর বিছানায় হাত পা ছড়িয়ে ঘুমানোর উপায় নেই। ডান কাত হতে গেলে হাত টা বিছানার পাশের টুলের উপর বিছিয়ে দিতে হয়। আর বাম হাত কে গুটিয়ে নিজের শরীরের উপরেই না নিয়ে উপায় নেই। ঘুমের ঘোরে ঠুয়া তো নিয়মিত।
ডাকতে হলো না। আম্মা নিজেই এসে হাজির। তার সাথে সাথে ছোট ভাই আবির। আম্মা এসে দরজায় দাঁড়িয়েই জিজ্ঞেস করলো, “কিও? কী পাঠাও খালি মোবাইল টুঙ্গুর টুঙ্গুর করে গানবাজনা করে ডাকে আমারে!” আমি সে কথায় কান না দিয়ে রেগে বলে উঠলাম, “কই থাকো তোমরা? দুই দুইখান উদোম ভূতে নিয়া যাইয়া সারছিলো!”
আম্মা আর ভাই দুজনের পরস্পর চোখাচোখি করতে করতে কথা না বাড়িয়ে মুখ আমসি করে সোফায় বসলো। আর ভাইকে বললাম, “ঐ, আমাকে টেনে তোল। শরীর একেবারে অবশ হয়ে গেছে!”
ভাই দু কান প্রসারিত চওড়া হাসি হেসে বললো, “স্বপ্ন দেখছো?”
কাহিনী খুলে বলতেই আম্মা চিন্তিত মনে জানালার দিকে তাকিয়ে থাকলো। গত কিছুদিন ধরেই বলছিলো, এই জানালা দিয়ে ইন্টারনেট লাইনটা নেয়া ঠিক হয়নি। জানালার লক টা তো লাগানো যায় না।
আমি আগে আমলে নেই নি। আজকে নিজেই বললাম, “লক ডাউন শেষ হলেই আগে জানালার ব্যবস্থা করতে হবে।“ আম্মা চিন্তিত কণ্ঠে বললেন, “কবে যে এই অচলাবস্থা থেকে মুক্তি আসবে!”
ছোট ভাই এর মধ্যে হাতে ধরে ঠিকই টেনে উঠিয়েছে আমাকে। দাঁত কেলিয়ে হেসে টিটকারি মারতে মারতে বলতে লাগলো অত্ত বড় বেটি ভুতের স্বপ্ন দেখে! হে হে হে!
স্বপ্নটা অন্তত একটা কাজ করেছে। সতর্ক করেছে আমায়। স্বপ্নের ভয় ভুলে ছুটলাম ওজু করতে। যিনি রক্ষা করবেন সব রকম বিপদাপদ থেকে তার দেয়া দৈনিক পাঠ আগে শেষ করি।
(সমাপ্ত)
( নোটঃ সংযুক্ত ছবিটির ডিজাইনার হ্যাপি হাসিন)
২৩টি মন্তব্য
ফয়জুল মহী
অসাধারণ লেখা। খুবই ভালো লাগলো।
জাকিয়া জেসমিন যূথী
থ্যাংক ইউ ভাইয়া।
কোন অংশ টা ভাগ লেগেছে? নামকরণ কিভঠিক আছে
সুপর্ণা ফাল্গুনী
খুব ভালো লিখেছো। ভালো থেকো সবসময় শুভ কামনা রইলো
জাকিয়া জেসমিন যূথী
কমেন্ট ভালো লাগে নাই। একই রকম কমেন্ট আমার সব লেখায়। 🙁
সুপর্ণা ফাল্গুনী
আচ্ছা মাঝে মাঝে ভূত হয়ে জানালায় উঁকি মারবোনে।
জাকিয়া জেসমিন যূথী
এহ, সেইটা বলছি নাকি? সবার পোস্টে তোমার বিশ্লেষণী মন্তব্য থাকে। আর আমার পোস্টে কমার্সিয়াল কমেন্ট। খুব খারাপ
সুপর্ণা ফাল্গুনী
কি কও সব একই রকম ! সরি। তাহলে শুনো এসব কিন্তু আমার ক্ষেত্রে প্রায়ই হয়। খুব ভয় পাই চিল্লাই কিন্তু কেউ শুনে না। ঈশ্বরের নাম নিতে নিতেই চোখ খুলি। তখন যে কি অবস্থা হয় তোমারে বুঝাইতে পারুম না আফা। ভূত বিশ্বাস না করলেও কিন্তু মনের কোণে ভয় থাকেই। তুমি খুব টেনশন এ আছো বলেই এমন হচ্ছে কিনা জানিনা তবে আমার ক্ষেত্রে এমনটি হয় । ভালো থাকো আমার মেন্টর।
জাকিয়া জেসমিন যূথী
কি কও সব একই রকম ! সরি। তাহলে শুনো এসব কিন্তু আমার ক্ষেত্রে প্রায়ই হয়। খুব ভয় পাই চিল্লাই কিন্তু কেউ শুনে না। ঈশ্বরের নাম নিতে নিতেই চোখ খুলি। তখন যে কি অবস্থা হয় তোমারে বুঝাইতে পারুম না আফা। ভূত বিশ্বাস না করলেও কিন্তু মনের কোণে ভয় থাকেই। তুমি খুব টেনশন এ আছো বলেই এমন হচ্ছে কিনা জানিনা তবে আমার ক্ষেত্রে এমনটি হয় ।….
কী কও এইসব? আমারে আগে কইবা না? যাই হোক, এইরকম কমেন্ট আমার খুব পছন্দ। অন্য সবার পোস্টে তোমার জনসেবামূলক বিশাল বিশাল কমেন্ট দেখে একই সাথে আমার পোস্টে ফর্মাল কমেন্ট দেখে মন খারাপ হয়েছিলো। এবার ক্ষমা করলাম।
আর এইসব সমস্যা তোমার লাইফে আসলে আমাকে জানাবা। যদিও দৌড়াইয়া তোমার কাছে যাওয়ার সুযোগ নাই এখন।
রেহানা বীথি
বর্তমান পরিস্থিতিতে সবার মনেই একটা আতঙ্ক কাজ করছে। যতই বলি না কেন, আতঙ্কিত হবো না, মনে সাহস রাখবো, মন কি শোনে কথা!
খুব ভালো লাগলো আপনার গল্প।
ভালো থাকুন, নিরাপদে থাকুন সবসময়।
জাকিয়া জেসমিন যূথী
জ্বী আপু। একদম ঠিক। যতই নিজেকে ব্যস্ততার বেড়াজালে রেখে বর্তমান কঠিন সময়কে মন কে ভুলিয়ে রাখতে চাচ্ছি, কিছুতেই সেটা সম্ভব হয়ে উঠছে না।
মন্তব্যটা খুব ভালো লেগেছে। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
ছাইরাছ হেলাল
স্বপ্নেরা শুধু স্বপ্নেই থাকে-না, বাস্তবে এসে হুশিয়ারী দিয়েও যায়।
আবির কে বলুন, ভূতের কাছে ছোট-বড় বেটি/ব্যাটা বলে কিচ্ছু নেই,
কিছু ব্যতিক্রম ভূত- ও আছে শুনেছি, কানপড়ায়!
জাকিয়া জেসমিন যূথী
“স্বপ্নেরা শুধু স্বপ্নেই থাকে-না, বাস্তবে এসে হুশিয়ারী দিয়েও যায়।”
কথাটা ঠিকই বলেছেন। আমাদের বাস্তবের অনেক কিছুই স্বপ্নে এসে জোরালো করেও রেখে যায়।
“আবির কে বলুন, ভূতের কাছে ছোট-বড় বেটি/ব্যাটা বলে কিচ্ছু নেই”
-একদম ঠিক।
বাসায় থাকবেন এবং ভালো থাকবেন। সব সময়। এই কামনা সবসময়।
জিসান শা ইকরাম
ছোট ভাই টিটকারি মেরে ঠিকই বলেছে।
মা আর মেয়ের কথা দেশের কোন অঞ্চলের? এমন কথা তো আগে শুনিনি কখনো।
গল্পটা বেশ ভালো হয়েছে।
শুভ কামনা।
জাকিয়া জেসমিন যূথী
ছোট ভাই টিটকারি মেরে ঠিকই বলেছে।— সারাদিনই পিছনে লেগে থাকে। ওর কাহিনী আসবে সামনে। সিরিজ ধরে লেখার ইচ্ছে আছে।
মা আর মেয়ের ভাষা ঢাকা আর নারায়নগঞ্জের ভাষার মিশ্রণ। আমার নানার বাড়ি নতুন ঢাকা। আর মায়ের দাদা বাড়ি নারায়নগঞ্জ। 🙂
আমার লেখায় সবসময় আপনার গঠনমূলক সমালোচনাই আশা করবো। গল্পটি যদি সত্যিই ভালো হয়ে থাকে, তাহলে আমার জন্য সুখবর।
সবসময় হাসিখুশী থাকুন।
সুপায়ন বড়ুয়া
স্বপ্নগুলো মাঝে মাঝে সত্যি হয়ে যায়
আপনার সুনিপুন হাতের বর্ণনায়।
ভাল থাকবেন। শুভ কামনা।
জাকিয়া জেসমিন যূথী
দারুন করে বললেন তো।
সুপায়ন বড়ুয়া
দাদা বলে কথা
সত্যি বলে যথা।
ভাল থাকবেন আপু। শুভ কামনা।
জাকিয়া জেসমিন যূথী
আসলেই দাদা বলে কথা। হা হা।
ভালো থাকবেন ভাইয়া।
সুরাইয়া পারভীন
আমি তো ভেবেছিলাম সত্যি সত্যিই দুটো চোর জানালা দিয়ে ঘরের ঢুকেছে! দারুণ লিখেছেন স্বপ্ন গল্প ।
ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন সাবধানে থাকবেন সবসময়
জাকিয়া জেসমিন যূথী
আমি তো ভেবেছিলাম সত্যি সত্যিই দুটো চোর জানালা দিয়ে ঘরের ঢুকেছে! দারুণ লিখেছেন স্বপ্ন গল্প ।… আমার কাছেও তাই মনে হয়েছিলো। ভীষণ ভয় পেয়েছিলাম।
এ কথাটা আপনার জন্যেও আপু। ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন সাবধানে থাকবেন সবসময়।
হালিম নজরুল
স্বপ্নের বর্ণনাটা অসাধারণ লেগেছে।
জাকিয়া জেসমিন যূথী
আপনার মন্তব্যোতাও অনেক ভালো লাগলো। ধন্যবাদ, ভালো থাকবেন। নিজেকে সুস্থ রাখার চেষ্টা করবেন।
তৌহিদ
বাপরে! ভয়ই পেয়েছিলাম। ভাগ্যিস স্বপ্ন ছিলো। আসলে এও বিষন্ন সময়ে আমরা অল্পতেই ভয় পাচ্ছি অনেক কিছুতেই। এটাই স্বাভাবিক।
লেখার সাবলীলতায় মুগ্ধ হলাম। নিয়মিত লিখুন আপু। আমরা পড়তে চাই।