তৃপ্ত (৪র্থ পর্বের শেষ অংশ)

পাগলা জাঈদ ৯ অক্টোবর ২০১৩, বুধবার, ০৫:৪০:৪২অপরাহ্ন বিবিধ ৬ মন্তব্য

শিলা বসে বসে ভাবছিল, কেমন ছেলে এটা ? একটু যেন আলাদা, কিছু একটা আছে এর মাঝে, যা কাছে টানে, ফিরছে না কেন এখনো, ১৩ মিনিট হয়ে গেল, নাকি পালিয়ে বাচল ওর কাছ থেকে ? মুখটা আরও কালো হয়ে গেল ওর । টেবিলে কেউ হাত রাখার পর দেখলো তৃপ্ত এসে বসেছে পাশে। আরেক কাপ চায়ের অর্ডার দিয়ে বলল,
-দেখুন যেতে হবে রিকশায়, কাকরাইল হয়ে মগবাজার দিয়ে যাব, তাহলে সম্ভবত ঝামেলা এড়ানো যাবে, বাস নেই, ট্যাক্সিতে যাওয়া রিস্ক হয়ে যায়, যে কোন সময় পিকেটাররা ট্যাক্সিতে পিকেতিং করতে পারে।
একটু আগের ভাবনার জন্য শিলা নিজে নিজেই লজ্জিত হয়ে উঠল, বলল-
-আপনি তো আচ্ছা মানুষ, একটা মেয়েকে একা ফেলে এভাবে গায়েব হয় কেউ ? বন্ধুর সাথে দেখা করা কি এত জরুরি ছিল ?
-দেখুন, না বুঝে কথা বলবেন না, আমার পকেটে খুব বেশি হলে ৩০ টাকার মত ছিল, আপনাকে নিয়ে কি ৩০ টাকা দিয়ে নাখালপারা পর্যন্ত যাওয়া যাবে নাকি ? তাই বন্ধুর কাছে গিয়েছিলাম টাকা ধার করতে, এখন বলুন খিদে পেয়েছে কিনা, খাবেন কিছু ?
শিলা হতভম্ব, প্রথম দেখায় কোন ছেলে এভাবে অকপটে টাকা ধার করার কথা বলতে পারে কোন মেয়েকে ? এত দেখি সত্যি সত্যি আজব মানুষ, বললো,
-নাহ আমি কিছু খাবনা, আচ্ছা আপনি কোথায় থাকেন ?
-মিরপুরের কল্যাণপুর
-আপনার ফ্যামিলীতে কে কে আছেন ?
-কেউ নেই, আমি একা, চলুন রওনা হই, রাত বেশি হলে মুশকিল হয়ে যাবে।

রিকশাওয়ালা মনে হয় ইচ্ছে করেই গর্তের ওপর দিয়ে রিকশা চালাচ্ছেন, এমনিতেই মেয়েটার বড় একটা ব্যাগ, তৃপ্ত’র খুব কষ্ট হচ্ছে বসতে, মেয়েটাকে ভাল করে বসার সুযোগ দিতে ও একেবারে চেপে এসেছে এক পাশে। আবার যখন আরেকটু চাপতে যাবে তখন শিলা বললো,
-আপনি ফ্রি ভাবেই বসুন, আমরা টুয়েন্টিন্থ সেঞ্চুরি তে আছি, ১৯৪৭ এ নয়,
-আপনি কি সত্যি ই কিছু করেন না ?
-মাঝে মাঝে কিছু কিছু লেখা লেখি করি অবশ্য।
-বাহ, আপনি লেখক ? আপনার ক’টা বই আছে ? নাম বলবেন প্লিজ,
-আমার কবিতা গুলো তো এখনো ছাপা হয়নি, একটা উপন্যাসের পাণ্ডুলিপি দিয়ে রেখেছি প্রকাশককে, ছাপা হবে বলে মনে হয়না।
রিকশাওয়ালা থেমে গেল, মগবাজার চৌরাস্তায় এক সাথে কয়েকটা গাড়িতে আগুন দেয়া হয়েছে, সাইড রোড গুলো ও ব্লক করা, ওরা নেমে যেতে বাধ্য হল। শিলার চোখ দেখে মনে হচ্ছে ঝাপসা হয়ে গেছে তা, কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বললো,
-এখন কি হবে, রাত বাজে প্রায় ১০ টা, এত রাতেও এরা রাস্তায় এভাবে গাড়ি পোড়াবে আমি ভাবতেই পারিনি, কালকের এক্সাম টাও আমার জন্যে খুব গুরুত্বপূর্ণ, আমি এখন কি করবো, এখানকার রাস্তা তো পুরো ব্লক, হেটেও যাওয়া যাবে না।
তৃপ্ত বললো,
-ডান পাশে ঐ যে ৬ ত’লা বাড়িটা দেখতে পাচ্ছেন ওটা আমার বন্ধুর বাড়ি, চলুন ওখানে গয়ে বসি, এখানে থাকাটা মনে হয় ঠিক হচ্ছে না,
বলতে বলতেই ওদের ৮/১০ হাত দুরে একটা বোমা ফাটলো, শিলা আর কিছু বললো না, তৃপ্ত ওর ব্যাগ হাতে নিয়ে আগে আগে চললো, সে পিছনে।

ফারহান তো তৃপ্ত কে দেখে অবাক, বহু বছরের বন্ধুত্বে আজ ই প্রথম ও বাসায় এলো, তাও আবার রূপসী এক তন্বী কে সাথে নিয়ে, হাতে ব্যাগ ও আছে, মুখে আঙ্গুল দিয়ে চুপ করতে বলে ওদের কে নিজের রুম এ এনে বসিয়ে বললো,
-শালা কাহিনি কি ? তুই কমেন আইলি আমার বাসায় ?
তৃপ্ত চোখ ইশারায় শিলা কে দেখাতেই ফারহান জিভে কামড় দিয়ে বলে ফেললো,
-সরি ভাবী, আসলে ও কখনো কারো বাসায় যায়না তো, আমি একটু এলমেলো হয়ে গিয়েছি তাই।
শিলা ফারহানের মুখে ভাবী ডাক শুনে লজ্জায় লাল হয়ে গেল, মুখ দিয়ে কোন কথা বেরোল না, তৃপ্ত বলে উঠলো,
-হারামজাদা, তোর মাথায় ঘিলু নাই জানতাম, এখন দেখি গোবর ও নাই,
সব খুলে বলার পর ফারহান বললো,
-তোরা জানিস না, আজ এখানে পুলিশের গুলিতে এক ছাত্রদল নেতা আহত হয়েছে, পুরো ঢাকাতে আজ অনেক গুলো যায়গায় পুলিশ সহ বি এন পি ও ছাত্রদল, যুবদল কর্মী আহত হয়েছে, ঢাকা আজ কুরুক্ষেত্র, সম্ভবত কাল আবার হরতাল ডাকা হবে, তোরা আজ যেতে পারবি না, থাক আমার এখানেই, কিন্তু একটা সমস্যা আছে রে, (ফিসিফিসিয়ে) তোদের কে বলতে হবে তোরা স্বামী স্ত্রী, জানিসতো আব্বা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজী, আর পুরোন ধ্যান ধারনার মানুষ।
একবার ভাবী শুনেই শিলা যে লজ্জা পেয়েছে তাতে এখনো একটা কথাও বলেনি, এটা শুনলে জানি কি হয়, তৃপ্ত এমনিতেই কথা কম বলে, এমন একটা ব্যাপার আমতা আমতা করে যখন বললো শিলা কে, ওকে অবাক করে দিয়ে শিলা বলে উঠলো,
-ঠিক আছে, আমার কোন সমস্যা নেই।
তৃপ্ত বলল,
-আচ্ছা আমি’ত আপনার নাম ই জানিনা, খালাম্মাদের সামনে আমি আপনাকে ডাকবো কি করে ?
-মানে কি ? আপনি এতখন যাবত আমার সাথে আছেন, আমি কতবার বললাম আমার নাম শিলা, আর আপনার মনে নেই ?
-সরি শিলা, আমি আসলে একটু অমনোযোগী মানুষ।

রাতে ওদের কে থাকতে দেয়া হল ফারহানের রুমে, ফারহান চলে গেল ওর ছোট ভাইর রুমে, দরজা আটকাবার পর তৃপ্ত বললো,
-শালু আপনি বিছানায় শুয়ে পড়ুন, আমি বই পড়বো এখন, একটা বালিশ হলেই চলবে, আমি নিচে শুয়ে পরবো।
-আমার নাম শালু নয় শিলা, আর শুনুন আমি এখন গোসল করবো, তা নইলে আমার ঘুম আসবে না, আপনি কি প্লিজ আধ ঘন্টার জন্যে বাইরে যেতে পারবেন ?
-নাহ পারবো না, খালুজান রাত ১২ টার পর বাইরে যাওয়া পছন্দ করেন না, আর এখন বাজে দু’টো, আমি ব্যালকনি তে গিয়ে বসছি, ভয় নেই, এদিকে তাকাবোও না বা ঘরেও ঢুকব না।

(চলবে)

৪৯৩জন ৪৯৩জন
0 Shares

৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ