ঢোলের বাদ্য বাজে তালে তালে, নাচে আকাশ, নাচে বাতাস, নাচে পাখি আর নাচে কাশফুল–ইছামতি নদীর ছোট ছোট ঢেউ ঢোলের সুমুধূর ধ্বনি নিয়ে অলস ভঙ্গিতে গড়িয়ে চলেছে। নদীর দুই ধার আজ সেজেছে মনের মত করে–। বাতাস কাশফুলকে ছুঁয়ে যাচ্ছে-এলোমেলো করে দিচ্ছে তার বাধা সুন্দর সাদা কেশ।
ঢোল বাজে লো
ঢোল বাজে ঢোল
মন রহে না ঘরের ভিতর —
দূর হতে ভেসে আসছে মিষ্টি গান। ইছামতির তীরে হিজল গাছের নীচে দাঁড়িয়ে আছে কোন সে নারী !! কাঁখে মাটির কলসি, পরনে লাল শাড়ি, সিথিতে সিদুর, পায়ে আলতা, হালকা ঘোমটার তলে ডাগর চোখে কেন এত বৃষ্টি গড়িয়ে পড়ছে !!! কার কথা তুমি মনে করহে বধু !! ক্লাস এইটে পড়ুয়া কয়েকটি মেয়ে পূঁজা দেখতে যাচ্ছে, রাজ্যের সব আনন্দ যেন তাদের–। একটি মেয়ে থমকে দাঁড়ায়, বউদি বলে জড়িয়ে ধরে বধুকে –। ভেজা চোখে বধুর রাজ্যের কষ্ট ভেসে উঠেছে –মেয়েটি যেন সব না বলা কথাগুলো বুঝতে পারে,নায়রীর নৌকাখানি দাদা ফিরিয়ে দিয়েছে– ফিরে যাওয়া নৌকা যে পথে চলে গিয়েছে সেদিকেই তাকিয়ে বৃষ্টি ঝরাচ্ছে তার প্রিয় বউদি — বউদির দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে চায় — বধু কোন কথা না বলে চলে যাওয়া ঢেউগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকে-যেদিকে পাল তোলা নৌকা চলেছে সারি সারি —। মেয়েটি বলে, বউদি তুমি আজকে এই কলসি ভাসিয়ে দাও–বল! ওরে কলসি ! সবগুলো কষ্ট তোর ভিতর ভরে পাঠিয়ে দিলাম– তুই চলে যা, তুই ভেসে যা –”বধু ফিক করে হেসে উঠে, তার ডাগর নয়নজোড়ায় আনন্দের ঢেউ খেলে যায় — দুইজন মিলে কলসি ভাসিয়ে দেয়,কষ্ট ভাসিয়ে দেয়—। সবগুলো মেয়ে ঘিরে ধরে তাকে, নিয়ে আসে বাড়িতে, সাজিয়ে দেয় নতুন করে- তার রূপে নতুন সিদুর আর নতুন শাড়ি যেন লজ্জা পাচ্ছে —। ঢোলের বাদ্য ভেসে আসছে, ভেসে আসছে কীর্তন, বধু যখন তার জীবনসঙ্গীর হাত ধরে ইছামতির ধার দিয়ে আলতা পায়ে এগিয়ে চলেছে– তখন নদী আনন্দিত চিত্তে কূলকূল শব্দ করে বয়ে চলেছে দূর অজানায় —
২৪টি মন্তব্য
খসড়া
দেবী থাকবে কতক্ষন দেবী যাবে বিসর্জণ। আমার কিন্তু ঢোলের এই শব্দ খুবই ভাল লাগে।
স্বপ্ন নীলা
আমার ভীষণ ভাল লাগে ঢোলের শব্দ ——-ভীষণ ভাল লাগে ———
আন্তরিক ধন্যবাদ ও শুভকামনা রইল
ব্লগার সজীব
ছোট লেখাটিতে অনেক দিন পরে যেন জেগে ওঠা প্রানের স্পর্ষ পেলাম ।
স্বপ্ন নীলা
আন্তরিক ধন্যবাদ ভাইয়া — ভাল থেক সব সময় —
প্রজন্ম ৭১
একদম ছোট বেলার কথা মনে করিয়ে দিলেন আপু। ঢোলের বাদ্য বাজিয়ে এমন করে নব বধুকে বরন করা আমি দেখেছি। ঢোলের বাধ্য অন্য এক ধরনের মাদকতা আনে মনে। ছোট বেলায় কোন ভেদাভেদ ছিলোনা তেমন হিন্দু মুসলমানে। কত শান্তি, কন্ত আনন্দের দিন ছিলো তখন। ধন্যবাদ আপু।
স্বপ্ন নীলা
ঠিক বলেছেন– আগে ঢোলের বাদ্যে কোনই ভেদাভেদ ছিল না —- এখনই যত ঝামেলা — ভাল থাকবেন
সাইদ মিলটন
মৌসুমী ভৌমিকের ঐ গানের মতো মিষ্টি এবং বিষন্ন লেখা … কে যাসরে ভাটি গাঙ বাইয়া শারদীয় শুভেচ্ছা
স্বপ্ন নীলা
আন্তরিক ধন্যবাদ ও শুভকামনা রইল ——-
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
ঢোল গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য,ঢোলের তালে নাচে মন নাচে বাগবাগিচার ফুল।খুব সুন্দর হয়েছে আপনার অনুভুতি।
স্বপ্ন নীলা
আমার ভীষণ ভাল লাগে ঢোলের বাদ্য — লেখাটি ভাল লেগেছে জেনে মনটা ভাল হয়ে গেল ——শুভকামনা রইল
নুসরাত মৌরিন
খুব সুন্দর মায়াবী একটা লেখা…। শরতের কাশফুলের মত…।
স্বপ্ন নীলা
আপু লেখাটি ভাল লেগেছে জেনে খুবই খুশী হলাম —–ভাল থাকবেন সব সময়
স্বপ্ন
অনুগল্প! অনুগল্পই তো ভালো আপু। এত ছোট অথচ হৃদয় স্পর্শ করা লেখা।
স্বপ্ন নীলা
আন্তরিক ধন্যবাদ অনুগল্পটি পছন্দ করার জন্য ——- শুভকামনা রইল
ছাইরাছ হেলাল
ঢোলের বাদ্য শুনতে শুনতে আপনার ভিন্ন রকমের লেখাটি পড়লাম।
আলতো পায়ে গায়ের বধু……শুনতে হবে।
স্বপ্ন নীলা
২ তারিখেই গ্রামে চলে গিয়েছিলাম — একেবারেই নেটবিহীন ছিলাম– আর তাই উত্তর দিতে দেরী হলো —
অনেক অনেক ধন্যবাদ আর শুভকামনা
স্বপ্নচারী
খুব ভালো লাগলো দিদিভাই … শিউলির গন্ধে পুজোর উচ্ছাসে জানাই শুভ শারদীয়া … আপনার , আপনার পরিবারের পূজা খুব ভালো কাটুক … 🙂
স্বপ্ন নীলা
কাশ ফুলের শুভেচ্ছা — শুভকামনা রইল
কৃন্তনিকা
খুব ভালো লাগলো…
ঐ মুহূর্তের দৃশ্য, শব্দ, গন্ধ সবই খুব মোহনীয়, মায়াময়…
স্বপ্ন নীলা
হুমমম — ঠিক তাই — ছোটবেলায় পূজায় কত মজা করেছি —
ভাল থাকবেন সব সময়
মিসু
খুব সুন্দর লেখা।
স্বপ্ন নীলা
লেখাটি ভাল লাগার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ ——- ভাল থাকবেন সব সময়
মোঃ মজিবর রহমান
মনে ধরেছে লেখাটি।
ভাল লাগলো।
স্বপ্ন নীলা
ভাই অনেক ভাল লাগলো যে আপনি বলেছেন লেখাটি মনে ধরেছে —আন্তরিক ধন্যবাদ ও শুভকামনা রইল