
খোলা চুলে সিঁথি যেদিকেই হোক। শাড়ি টাঙ্গাইল, জামদানি, মনিপুরী আর নকশি পাড়ের হোক। কপালের মাঝে একটা টিপ। আভিজাত্য আর শতভাগ বাঙালিয়ানা নিয়ে বই এর পাতা থেকে বের হয়ে আসে লাবণ্য, সুচরিতা, রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা কিংবা বিবি রাসেল। ললনার কপালে টিপের মহিমা এখন শাড়ি, কামিজ কিংবা টপস জিনসের সাথে। টিপ না পরলে মনে হয় ” কী যেনো নেই !” কপালে টিপ বসিয়ে দিলে অজানা আনন্দে মনটা ভরে ওঠে। চেহারায় বেশ নান্দনিকতা ফুটে উঠে। আয়নায় নিজেকে দেখে গানটা মনে মনে না গাইলেও ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজে, ” আয়নাতে ঐ মুখ দেখবে যখন ! ” অথবা সুস্মিতা আনিসের, ” কেউ জানুক আর নাই জানুক — আমি তো জানি! ”
সাজের ধরণধারণ মেনে টিপেও এসেছে নানারকম নকশা। লাল, নীল,সবুজ, হলুদ, কালো, মেরুন আরও কতো রং। একরত্তি টিপের গায়ে ফুটে উঠেছে নানা রকম নকশা, আলপনা, জ্যামিতিক নকশার বাইরে প্রকৃতির বিভিন্ন ফুল, পাখি, লতাপাতা, আবার জড়ি, পুঁথি, পাথরের কাজের টিপও নতুন আঙ্গিকে ফিরে এসেছে।
আবার আকারেও এসেছে ভিন্নতা। কোনটা লম্বাটে, চৌকণা, ত্রিকোণ, ওভাল, ওপরে গোল নিচের অংশ চিকন যেনো পানির ফোটা পরেছে এমন। অনেকেই আবার টিপের ওপর নিজের মতো পেইন্টিং করেও কপালে পরে। কেউ কেউ টিপের ওপর এ্যাক্রিলিক রং দিয়ে নিজে এঁকে নেয় ফ্লোরাল মোটিফ।
কপালের ধরন আর ব্যক্তিত্বের সঙ্গে যায় এমন আকার বেছে খোলা বা বাঁধা চুল ; শাড়ি কিংবা জিন্স : একটা টিপেই উৎসবে বেশ মানিয়ে যায় মায়াময় মুখখানি।
মানুষ কবে থেকে টিপ পরতে শুরু করেছিলো এটার নির্দিষ্ট ইতিহাস জানা নেই। তবে সুপ্রাচীন কাল থেকে কপালে নানা আকৃতির ফোঁটা দিয়ে এসেছে। তবে, কুমকুম দিয়ে টিপ আঁকতেন সেই আদিকাল থেকে। টিপ, কুমকুম, তিলক, পট্টু, সিঁদুর, বিন্দি। দুই ভ্রুর মাঝখানে কপালের এই সংক্ষিপ্ত এবং অপরিহার্য প্রসাধনটুকুর নাম দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আলাদা, হয়তো আবেদনও।
বড় কপাল আর দীঘল চুলের মেয়েরা বড় টিপ পরে কপাল একটু ঢেকে দেয়ার জন্য। ছোট কপালের সঙ্গে ছোট টিপ, বড় কপালের সঙ্গে বড় টিপ। ছোট কপালে আরও সুন্দর দেখায় একটু লম্বাটে টিপ পরলে। তবে, কপাল যদি খুব ছোট হয় তাহলে একটা ছোট টিপ দেয়াই যথেষ্ট। গোল মুখে সব টিপেই মানিয়ে যায়। লম্বাটে মুখে গোল টিপ একটু বড় টিপ পরতে হলে ভ্রুর সামান্য ওপরে পরলে চমৎকার লাগবে। জোড়া ভ্রু যার, তারাও খানিকটা ওপরে। সবসময় উজ্জ্বল রঙ বেছে নেয়াই উত্তম। দেশীয় কাপড়ের সাথে হাতে আঁকা টিপ। জমকালো অনুষ্ঠানে পাথরের টিপ আর পশ্চিমা লুকে চুল হালকা ফুলিয়ে বড় টিপ পরলে মানাবে।
বেশিরভাগ টিপ ওয়ান টাইম। কারুকাজ করা টিপগুলো ব্যবহারের পর নির্দিষ্ট এয়ারটাইট বক্সে রেখে দিতে হবে। পরে বাড়তি আঠার প্রয়োজন মনে করলে সেটি ব্যবহার করতে হবে। না হলে টুপ করে পড়ে যাবে। আর বেমানান লাগবে।
টিপের দোকানগুলোর ভেতরে আছে “বিবি প্রডাকশন”, “সারানা”, “বেগুনি প্রজাপতি “, ” গীতিকা “, ” দয়িতা”, “কথা ” ইত্যাদি টিপের দোকান এবং পেজ। দাম ২০ টাকা থেকে ২০০ টাকা।
যে নামেই টিপকে ডাকা হোকনা কেনো আর মেয়েরা যে অর্থে বা অনর্থেই পরুক না কেনো ; টিপ কিন্তু শিল্প, সাহিত্য বা গানে বিশেষ আদর পেয়েছে।
ফাগুনের হলুদ শাড়ি কিংবা ভালোবাসা দিবসে লাল শাড়ির সাথে টিপ পরে চলুন হয়ে যাই কারও কবিতা।
সবশেষে বলবো, টিপ আসলে মেয়েদের তৃতীয় নয়ন।
২৩টি মন্তব্য
বন্যা লিপি
আহা কিযে লিখলেন! আমার এখন ঘুমুতে যাবার কথা। একবার ঢুঁ মেরে যাই ভেবে ঢুকলাম সোনেলার উঠোনে, এসেই দেখি একি!! কি নিয়ে পোষ্ট পড়লো আরজু মুক্তার? নাবার মুখটা ঢাকা হলেও চিনতে ভুল করিনি। আর ওই লাল হুলুদ টিপ।
এখন যে আমার কাহিনী মনে পড়ে গেলো কতশত!! তার কি হবে??
এখন ঘুম পাচ্ছে ভীষণ….
আরজু মুক্তা
স্মৃতি নাড়িয়ে দিলাম।
নাবার জন্য দোয়া করবেন।
শুভকামনা
বোরহানুল ইসলাম লিটন
ভালো লাগেছে লেখাটি।
সুন্দর শেষ চরণে সমাপ্তি।
প্রতিটি ব্যবহারই আসলে শিল্প।
মুগ্ধতায় শুভেচ্ছা ও শুভ কামনা অন্তহীণ।
আরজু মুক্তা
আপনাদের ভালোলাগা। আর আমার কলম।
ভালোবাসা সবসময়
ছাইরাছ হেলাল
টিপের যে এত টিপস হয় তা এই প্রথম জানলাম,
তবে পরচুলে সিঁথি এঁকে এমুন টিপ দিলে হপে না কিন্তু।
ভাবতে ভাল লাগে আমাদের ও আছেন এক মহান টিপ জ্ঞানী!!
আপনার ছবি-টিপ সোন্দর হইছে!! এক্ষুণি কইবেন এ ছবি আপ্নের না!!
বন্যা লিপি
হা হা হা….. মহারাজ আমি কিন্তু কইয়া দিছি এ ছবি মুক্তার না। তাহার মেয়ে নাবার।
ছাইরাছ হেলাল
মামলা শুরুতেই খতম হয়ে গেল!!
আরজু মুক্তা
একটা হাসি দেই আগে।
পড়ার জন্য ধন্যবাদ। ছবিটা আপনার ভাগ্নির। দোয়া করবেন।
শুভকামনা
আলমগীর সরকার লিটন
বেশ অনুভূতি প্রকাশ মুক্তা আপু
আরজু মুক্তা
ধন্যবাদ ভাই
সুপর্ণা ফাল্গুনী
হুম টিপ সৌন্দর্য কে বাড়িয়ে দেয় বহুগুণে। আমি যেদিন কিছু না দেই সেদিন শুধু টিপ পড়ে বের হই। কত শত নাম জানলাম, ডিজাইন দেখলাম। আপনি হলেন আমাদের গুগল আপা। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। ভালো থাকবেন সতত
আরজু মুক্তা
আপনাদের ভালোবাসাই আমার প্রেরণা। দোয়া করবেন। আপনিও ভালো থাকেন।
শুভকামনা
তৌহিদ
বাঙালি নারী টিপ ছাড়া কেমন বেমানান লাগে আমার কাছে। টিপের ইতিহাস সঠিক আমিও পাইনি, খুঁজছি এখনো। আপনি ব্যতিক্রমী এবং পাঠকপ্রিয় এমন লেখা বরাবরই লিখে চলেছেন সোনেলায়। ধন্যবাদ অশেষ।
শুভকামনা আপু।
আরজু মুক্তা
অগ্রজ যারা তাদের কাছেই শিখা। ব্যতিক্রমি লেখা দিয়ে পাঠক হৃদয় জয় করা। সেই সাথে সেনেলার পাতা।
আপনাদের ভালোবাসা আমার প্রেরণা।
শুভকামনা সবসময়
রোকসানা খন্দকার রুকু
হুম টিপ নিয়ে টিপস তো জানলাম। দু চারপাতা কিনে দিলে ভালো হত।
আরজু মুক্তা
টিপ পরে টিপটপ হন। ঘুরতে যান। দিবো না হয় একপাতা।
শুভকামনা।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
টিপ নিয়ে টিপনামা, সুন্দর লেখা।
আরজু মুক্তা
ধন্যবাদ ভাই।
শুভকামনা
সাবিনা ইয়াসমিন
বাঙালি মেয়েদের অতি পছন্দের অলংকার গুলোর মাঝে টিপ অন্যতম, যদিও অনেকেই এটা নিয়ে বিভিন্ন তর্কে জড়ায়, ধর্ম-অধর্মের টানাটানি এনে টিপের বারোটা বাজিয়ে দেয়। শাড়ি, চুড়ি আর কপালে ছোট্ট টিপ তারপর আসলে আর কিছুর দরকারই হয় না।
ইতিহাস তথ্য সহ চমৎকার উপস্থাপনায় লেখাটি দারুণ হয়েছে। শুভ কামনা নিরন্তর 🌹🌹
আরজু মুক্তা
চমৎকার কমেন্টে আপ্লুত।
ভালো থাকুন সবসময়। কিন্তু আপনি তো বসন্তের মতো আসি আসি করে ব্লগে আসছেন না?
মিস করছি।
শুভকামনা
সাবিনা ইয়াসমিন
ব্যস্ততা আমাকে সময় দিচ্ছিলো না। মনে রাখার জন্য অনেক অনেক ভালোবাসা। পাশে আছি। ভালো থাকুন আপনিও।
শুভ কামনা 🌹🌹
আশরাফুল হক মহিন
টিপ নিয়ে টিপ নামা অসাধারণ লেখা প্রিয় কবি
শুভেচ্ছা এবং ভালোবাসা রইলো আপনার জন্য
আরজু মুক্তা
শুভ কামনা