
লক ডাউনের কারনে আজকে সমস্ত দিনই বাসায়। শুয়ে, বসে, সোনেলা ব্লগ এবং ফেসবুকে বিচরণ। অনেকদিন পরেই কাজহীন আমি।
সকাল থেকেই অঝোর ধারায় বৃষ্টি।বরিশালে নিজের বাসা থাকলেও এখনো থাকি আমি আব্বার বানানো টিনের চালের বাড়ীতে।এই যে বৃষ্টির রিনিঝিনি শব্দ তা একমাত্র টিনের চাল থাকলেই অনুভব করা যায়।
দুপুরে ভাত ঘুম শেষে বৃষ্টি দেখতেই ছেলেদের মা সহ বারান্দায় বসে ছিলাম। বাগানের রঙ্গন গাছের ফুলগুলো বৃষ্টির ছোঁয়ায় প্রাণ ফিরে পাচ্ছে।কামিনী ফুলগুলো হাসছে। মাথার উপরে টিনের চালে বৃষ্টির শব্দ, চাল থেকে গড়িয়ে পরা বৃষ্টির পানি, সামনে বাগানের পাতাবাহার, রঙ্গন আর কামিনী ফুলে বৃষ্টির মাখামাখি। খুবই রোমান্টিক সময় পার করছিলাম।
এমন অবস্থায় মুড়ি ভাজা খেতে ইচ্ছে করলো। বললাম বউকে – মুড়ি ভাজা খেতে ইচ্ছে করছে।আশা করছিলাম সে বলবে ‘ আচ্ছা আমি বানিয়ে আনি।’ কিন্তু সে বৃষ্টি দেখছে তো দেখছেই। অগত্যা আমি আবার বললাম ‘ আচ্ছা আমিই বানিয়ে আনি।’ মনে মনে বলছিলাম ‘ এবার অন্তত বলো যে আমি বানিয়ে আনি। কিন্তু সে বললো ” আচ্ছা বানিয়ে আনো।”
এইডা কিছু হইলো? আমি কখনো মুড়ি ভাজা করেছি? তারপরেও স্মার্টলি বললাম ‘ তুমি বসো, আমি বানিয়ে আনি।’
ছুটলাম রান্না ঘরে। কোথায় মুড়ি, কোথায় হাড়ি? পেলাম অবশেষে। কড়াই চুলায় দিয়ে তেল দেবো তাতে। উপরে তেলের পট দুইটা। কোনটা দেবো? নাকের কাছে নিয়ে দেখি একটায় সরিষার তেল অন্যটায় সোয়াবিন। কি তেল দেবো? বিসমিল্লাহ্ বলে সরিষার তেল দিলাম কড়াইতে। চুলার আচ বেশ বাড়ানো ছিলো বলে মুহুর্তের মধ্যেই তেল গরম। মুরির পট ঢেলে দিলাম কড়াইতে।
পট আটকিয়ে পটের স্থানে রেখে চুলার কাছে আসতেই মুড়ি পোড়া গন্ধ।কাজ সারছে। মুড়ি পুরে কালো হয়ে গিয়েছে অনেক। কি করি কি করি? চুলা থেকে দ্রুত কড়াই উঠিয়ে ফেললাম। কানে স্পষ্ট ভেসে আসলো কার কথা যেন
‘ মুড়ি পুড়েছে ? এবার আর রক্ষা নেই, আমি পালাই।’ যাবার আগে বলে গেলো ‘ এবার পিয়াজ কেটে আর শুকনা মরিচ দিয়ে আবার ভাজতে হবে।’
বউর কাছে তো প্রেস্টিজ পাংচার হয়ে যাবে। দ্রুত পিয়াজের ডালা খুঁজে তিনটা পিয়াজ কাটলাম ছুরি দিয়ে। আঙুল কেটে রক্তারক্তি অবস্থা হয়ে গেলো। এরপর শুকনা মরিচ খোঁজা শুরু। অনেক খুঁজে তাও পেলাম। ঝটপট দুইটা ছিড়ে নিলাম। দুই হাত দিয়ে অত্যন্ত দ্রুততার সাথে পোড়া মুড়ি বাছাই শেষ করলাম। এত দ্রুত কিভাবে বাছাই করলাম আমি? নিজের দ্রুততায় নিজেই মুগ্ধ হয়ে গেলাম 🙂
অবশেষে কড়াইতে আবার তেল দিয়ে, পিয়াজ শুঁকনো মরিচ কিছুটা টেলে সব মুড়ি আবার দিয়ে দিলাম। মাথা কিছুটা ঠান্ডা এখন। চিনিও দিলাম একটু। মুখে নিয়ে দেখলাম সেরাম টেস্ট 🙂 আমি এত ভালো মুড়ি ভাঁজতে পারলাম!
মুড়ি ভর্তি বাটি নিয়ে বারান্দায় ফিরে এলাম। বউ মুখে দিয়ে খেলো, বললো ‘ ভালোই বানাতে পেরেছো, এখন হতে তুমিই মুড়ি ভেজে খাওয়াবে।’
এই লুমান্টিক সময়ে তার কথা ভালোই লাগলো।
১৪টি মন্তব্য
রোকসানা খন্দকার রুকু
ইশরে!সেরাম টেষ্টের মুরি কেনো যে বানাতে গেলেন। এখন দায়িত্ব আরও একটা চাপলো, ল্যাও বাবা। কাছের মানুষগুলো যখন অল্পতেই খুশি হয়ে যায় তখন ভীষন ভালো লাগে।
যাই হোক আমি শিখিয়ে দেই, একদম হাল্কা আঁচে কাঁচা মরিচ লম্বা ফালি করে দিতে হবে জলপাই তেলে। কয়েকটা রসুন কোয়াও থাকবে। বাদামী হলে নামিয়ে মুরি দিয়ে শুধু নাড়লেই হবে। গরম তেলে মিক্স হয়ে সেরাম টেষ্ট হবে!!!!কারন মুরি তো ভাজাই থাকে।।।
শুভ কামনা মুরি উইথ ভাবী!!!!
জিসান শা ইকরাম
এরপর মুড়ি ভাঁজতে তেমন কষ্ট আর হবে না, সব কিছু তো জানাই হলো কোথায় কি থাকে।
” একদম হাল্কা আঁচে কাঁচা মরিচ লম্বা ফালি করে দিতে হবে জলপাই তেলে। কয়েকটা রসুন কোয়াও থাকবে। বাদামী হলে নামিয়ে মুরি দিয়ে শুধু নাড়লেই হবে। গরম তেলে মিক্স হয়ে সেরাম টেষ্ট হবে!! ” — শিখানো পদ্ধতিতে আজই ভাঁজা হবে 🙂
শুভ কামনা।
ছাইরাছ হেলাল
লকডাউন কাউকে কাউকে মুড়ি-ভাজা বিশেষজ্ঞ বানাচ্ছে, মন্দ কী!!
জিসান শা ইকরাম
হ্যা মুড়ি ভাঁজা বিশেষজ্ঞ হয়ে যাচ্ছি 🙂
আরজু মুক্তা
অনেক প্রকৃতি দেখছেন। এবার রান্নাঘর ঘোরেন। বৌ দের কষ্ট একটু হলেও বোঝেন। রোমান্টিক সময় উপভোগ করুন।
জিসান শা ইকরাম
লক ডাউনের সময়টাকে কিছুটা কাজে লাগাচ্ছি,
শুভ কামনা।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
ইস এই রোমান্টিক সময়ে এমন ভাজাভুজি সেইরাম লাগে। যাক শেষপর্যন্ত বৌদি যে খেয়ে প্রশংসা করলো এটাই বড় ভালো লাগলো। তয় আমার সন্দেহ হয় বৌদি কি বৃষ্টিতে বুঁদ হয়ে ছিল নাকি নিজে বানাতে যাবেনা বলেই চালাকি করে ভালো বললো!! যেহারে পুড়ছে তাতে ভালো হবার চান্স শূণ্য পার্সেন্ট 🤪🤪🤪। উনি মনে হয় আপনাকে একটু খাটিয়ে নিলো এই সুযোগে। যাক টোনাটুনি এভাবে ভালো থাকলেই খুশি। ঈশ্বর আপনাদের মঙ্গল করুন। অবিরাম শুভ কামনা রইলো
জিসান শা ইকরাম
নিজে বানাতে যাবে না বলে এই বুদ্ধি। ভেবেছিলো আমি বানাবো না।
পোড়া মুড়ি ফেলে দিয়েছি প্রায় সব, প্রথম যা নিয়েছিলাম তার অর্ধেক পুড়েছে 🙂
দোয়া করো ছোটদি।
শুভ কামনা।
হালিমা আক্তার
টিনের চালে বৃষ্টির রিমঝিম শব্দের সাথে মুড়ি ভাজা। চমৎকার আয়োজন। বারবার বৃষ্টি আসুক আর মুড়ি ভাজা চলতে থাকুক। শুভ কামনা অবিরাম।
জিসান শা ইকরাম
হ্যা মুড়ি ভাঁজা চলছে প্রায় রোজই,
শুভ কামনা আপু।
তৌহিদুল ইসলাম
লেখাটি যেদিন পোষ্ট দিয়েছেন সেদিনই পড়েছিলাম, ব্যস্ততায় মন্তব্যে দেরী হলো ভাই।
আপনি যে চিররোমান্টিক তার প্রমাণ লেখাতেই পেলাম। বৃষ্টি হবে আর লেখকেরা রোমান্টিক হবেনা তাই কি হয়! মুড়ি আর বৃষ্টি যেন অঙ্গাঅঙ্গি জড়িত।
লুমান্টিক শব্দটি পছন্দ হয়েছে।
শুভকামনা ভাইয়া।
জিসান শা ইকরাম
আমি বিভিন্ন ভাবে মুড়ি খাই, মুড়ি ভেঁজে খাওয়া এর একটি ধরন।
হু লুমান্টিক হতে হয় মাঝে মাঝে 🙂
শুভ কামনা।
নার্গিস রশিদ
যাক , তাহলে ঝুম বৃষ্টিতে মুড়ি ভাজা শেখা হল এবং তার সাথে কোন মসলা কোথায় থাকে তাও জানা হল । যেন পরিবেশটা দেখতে পাচ্ছি ।
জিসান শা ইকরাম
হ্যা আপু, মুড়ি আগে কখনো ভাঁজি নি, শেখা হয়ে গেলো।
প্রবাসে ভালো থাকুন আপু।
শুভ কামনা।