জীবন!!!০৩

মনির হোসেন মমি ২৫ ডিসেম্বর ২০১৩, বুধবার, ১২:২২:০৪অপরাহ্ন একান্ত অনুভূতি, বিবিধ ১৫ মন্তব্য

মেঘের উপর দিয়ে বিমানের গতিপথ।চলছে সিঙ্গাপুর এয়ার লাইন্স।খোলা জানালার পাশে বসা আনমনে দেখছি স্রষ্টার অপরূপ সৃষ্টি মেঘের খেলা।সংকেত এলো দুর্যগপূর্ণ আকাশঁ তাই যার যার আসনে সিটবেল্টগুলো বেধে ফেলা।আমার পাশে বসা ছিল এক জার্মানী আলাপ প্রসঙ্গে জানতে পারলাম সে যাবে সিঙ্গাপুর ট্যুরে।যেহেতু আমি একেবারে নতুন তাই কিছু খুটিনাটি জানার আগ্রহ দেখিয়ে তার সাথে বেশ কিছুক্ষন আলাপ করলাম এর মধ্যে বিমান সমান্তরাল পথে চলতে শুরু করে এবং আমাদের খাবার আপ্যায়ন করতে থাকে সিং বিমান বালারা।আমার কাছে খাবার আসে তবে দেশী নয় বিদেশী খাবার ।ভাতে মাছে বাঙ্গালী কিন্তু খাবারের আইটেমে ভাতের কোন চিহৃ না পেয়ে একটু মন মরা হয়ে খাবারগুলো নাড়াচাড়া করছি।বিমাল বালা বুঝতে পেরে আমার জন্য বাঙ্গালী খাবার নিয়ে আসে।কিন্তু ভাতের পরিমান অনেক কম।যাক প্রচন্ড খিদে ছিল তাই সব খাবারই সাবার করে ফেললাম,পানির বদলে খেতে হল দু’চিপস হুইচকি।ইতি মধ্যে সাধারন ক্লাশের যাত্রীদের কিছুটা রূঢ শব্দ শুনতে পেলাম।মনে হয় কোন ঝামেলা হইছে।আমার সাথের আরেক জন টুংন্ডা বাবুল সেখানে, তাই উঠে সেখানে গিয়ে জানতে পারলাম এক গ্রামের সহজ সরল বাঙ্গালীর হাস্যরসের কাহিনী। বিমানে যখন খাবার দিল সে ঐ খাবার তেমন একটা ভক্ষন করতে না পেরে বিমানে টয়লেট রুমে, যে টয়লেট ছিল তার ভিতর বাড়ী থেকে মায়ের দেয়া চিড়া ভিজিয়ে রাখে কিছুক্ষন পর যখন সে ঐ টয়লেটে যায় ভিজিয়ে রাখা চিড়া আনতে তখন টয়লেটের ভিতর ছিল এক ইন্ডীয়ান ভদ্রলোক।সে বের হয়ে আসার পর বাঙ্গালী লোকটি ভিতরে ঢুকে ভেজানো চিড়াগুলো আনতে।সে টয়লেটে ঢুকে কমটের তলায় তাকিয়ে দেখে সব ফাকা কিছুই নেই।তার রাগ এসে যায় তার আগে টয়লেট থেকে বের হওয়া ইন্ডিয়ান লোকটির উপর সে দৌড়ায়ে ইন্ডিয়ান লোকটির কাছে এসে বংলায় যা মন চায় তাই বলছে।

-হারামী,তুই আমায় না দিয়ে বাথ রুমে আমার ভিজিয়ে রাখা সব চিড়া খেয়ে ফেললি কেনো?শুয়োরের বাচ্চা আমার চিড়া ফেরত দে।

বিমানে সবাই হাসা হাসি করছে।বলে কি বোকায়?বাথরুমের কমটে চিড়া সে কিভাবে ভিজালো?সে ভেবেছিল কমটের তলাটা দেখতে পটের মতন তাই চিড়াগুলো ভিতরে দিয়ে বোলতের পানি ডেলে সিটে চলে যায়।কিন্তু সে ভাবতে পারেনি অন্যজন কমট ব্যাবহার করলে তা ফাক হয়ে নীচে পড়ে যাবে।গ্রামের অতি সহজ সরল মানুষ দু’বছর দালাল তাকে নেই নিচ্ছি বলে আজ ফ্লাইট করায় হঠাৎ, মায়ের কাছে চিড়া ছিল সে গুলো দিয়ে বলেছি..

-বাবা তুমিতো বিমানের খাবার খেতে পারবা না তাই খিদে লাগলে চিড়াগুলো ভিজায়ে খাবা।

যেমন বাংলার সহজ সরল মা তেমনি সহজ সরল তার ছেলে।তার এখনও মাথায় ঢুকছেনা চিড়াগুলো গেলো কোথায়।পাশের এক বাঙ্গালী তাকে নিয়ে যায় টয়লের সামনে।তাকে সব বুঝিয়ে বলে।

-আরে বোকা,তুমি যখন চিড়া কমটের ভিতর রেখেছ তখনই তা নীচে পড়ে যায় কারন বিমান চলে আকাশে এখানে টয়লেটের ময়লা জমিয়ে রাখার কোন দরকার হয়না তাই লঞ্চ-ষ্টিমারের মত শুনেছি বিমানের কমটের তলায়ও কোন আবরন থাকেনা।লোকটি অবশেষে বুঝতে পেরে ইন্ডিয়ান ভদ্রলোকের কাছে ক্ষমা চায়।

এভাবে ঘটন অঘটনের মধ্যে দিয়ে সাড়ে তিন হাজার ফুট উপর হতে সিঙ্গাপুরের চাঙ্গী ইয়ার পোর্টের কাছাকাছি এসে ধীরে ধীরে নীচে নামতে থাকে সিং এয়ারলাইন্স।জানালায় চেয়ে দেখি নীচে আলোর ঝলকানি।সারা সিঙ্গাপুর যেন মনে হয় লাইটের কোন উৎসবে মেতেছে।অসম্ভব চোখ ধাধানোঁ রাতের সিঙ্গাপুর।এক সময় দীর্ঘ চার ঘন্টা পর বিমান ল্যান্ড করল চাঙ্গী এক নম্ভর টার্মিনালে।আমার সাথে টুন্ডা বাবুল।এক সাথে হাটতে থাকি ইমিগ্রেসনের দিকে।যেতে যেতে অবাক হই তাদের শিল্পশৈলিকতা পূর্ণ বিমান বন্দরের আর্কিটেকচার ডিজাইনে অপূর্ব সাজসজ্জা।কিছুটা পথ হেটে আবার লিফ্টের সমান্তরাল পথে এগুচ্ছি।প্রচুর যাত্রীছিল আমাদের ফ্লাইটে।দুর হতে দেখতে পাচ্ছি সারিবদ্ধ ভাবে ইমিগ্রেসন কাউন্টার পাসিংয়ের দৃশ্য।কাউন্টারের কাছাকাছি আসতেই আমাকে ছেড়ে টুন্ডা বাবুল চলে গেল অন্য এক কাউন্টারে।দালাল যা বলেছিল সেই কথা মতে আমরা দু’জন দুই কাউন্টারে চলে গেলাম।আমি একটি কাউন্টারে সিরিয়ালে দু’তিনজনের পিছনে।আশে পাশে দেখছি অন্য কাউন্টারগুলোর পরিস্হিতি।কাউকে ভিসা দিচ্ছে আবার কাউকে আটকিয়ে ওয়েটিং রুমে বসাচ্ছে।আমার সমস্হ শরীর কেমন যেন থ’ লেগে আছে,আন ইজিতে তৃঞ্চা পেয়ে বসে,ব্যাগের পকেট থেকে বোহল বের করে কয়েক ডোক পানি পান করলাম।অবশেষে আমার পাসপোর্টটা এগিয়ে দিলাম কাউন্টারে ,এক চাইনিজ মহিলার হাতে।সে অনেকক্ষন নেড়ে চেড়ে দেখে ।টিকেটের দিকে নজর দিয়ে আমাকে কিছু প্রশ্ন করতে থাকে।

-অনেক দামী টিকেট কেটেছেন,কি ব্যাবসা করেন?

-জি,ইলেকট্রনিক্সস।

-ওকে,আজ রবিবার, তো আজকে কি কোন কেনা কাটা করবেন?

-না,আজ মার্কেট দেখব সিঙ্গাপুর ত্যাগ করার আগের দিন কেনাকাটা করব।

-ওকে,কত দিন থাকবেন?

-এক সপ্তাহ।

ওকে বলে সে আমার পাষ্টপোর্টে ভিসার সিল হাতে নিয়ে সিল মারবে ,এমন সময় দেখতে পেলাম এক মহিলা স্পেশাল ইমিগ্রেসন অফিসার খুব দ্রুত প্রথম কাউন্টার থেকে সিরিয়ালে সবগুলো কাউন্টার হতে ভারত উপমহাদেশীয় পাসপোর্টগুলো হাতিয়ে নিচ্ছে আমার বেলায় তাই হলো কিন্তু কাউন্টার মহিলাটি কি যেন চাইনিজে বলছে তাকে তখন স্পেশাল অভিসার আমাকে কতগুলো প্রশ্ন করে।

-আপনি,আপনার পাসপোর্টে কত ডলার এনডুস করেছন?

-জি,১৪০০ ডলার।

তারপর সে আমাকে সিসি টিভিতে অন্য কাউন্টারে টুন্ডা বাবুল ইমিগ্রেসন অতিক্রম করছে তা দেখিয়ে প্রশ্ন করল।

-দেখেনতো তাকে চেনেন কিনা?

দালাল শিখিয়ে দিয়েছিল কাউন্টারে কেউ কাউকে চিনেনা সেই ভাব দেখাবেন তা আমার মনে পড়ে যায় পরক্ষনে বলি

-না,আমি তাকে চিনি না।

-আর ইউ কি সিউর?

-ইয়েস,আই এম সিউর।

-বাট,হাউ বি কাম ইউ আর টু পারসনস, স্যাম এড্রেস,স্যাম ডলার এনড্রুস,স্যাম কান্ট্রিস?নো ইউ আর ব্লাফ মি,ইউ আর টকিং টু লাই।সরি,প্লিজ ওয়েট ইন দা ওয়েটিং রুম।

এই বলে সে আমাকে এক সাইট করে দিল।টুন্ডা বাবুলও যেতে পারতনা,তার যে হাতে পাচঁ আঙ্গুলের তিনটি আঙ্গুলই নেই সেই হাত সু করে তার পাসপোর্ট কাউন্টারে জমা দেয়।কাউন্টার অফিসার মনে করেছে ,তারতো হাতের আঙ্গুলি নেই সে কি ভাবে সিঙ্গাপুর গিয়ে কাজ করবে,তাকে কাজ দিবে কে?সেই জন্য হয়তো সেই ফ্লাইটে একমাত্র টুন্ডা বাবুলকেই বাঙ্গালীদের মধ্যে ট্যুরিষ্ট ভিসা দিয়েছিল ইমিগ্রেসন।আর কাউকে দেয়নি আমার মত সবাইকে আটকে দেয়।পরবর্তী সময় এক এক করে যাচাই বাছাই করে আরো বেশ কিছু বাঙ্গালীকে ভিসা দেন ইমিগ্রেসন।আমি ব্যাবসায়ীক যথাযত কাগজপত্র দেখাতে পারিনি আবার আমর মত আরো অনেকেই ব্যাবসায়ীক কাগজপত্র দেখিয়েও কাজ করতে পারেনি।আমাদের ১৫জনের মত শেষ পর্যন্ত ভিসা না দিয়ে হ্যান্ডওভার করে ইমিগ্রেসন পুলিশের কাছে।ইমিগ্রেসন পুলিশ আমাদের ইয়াপোর্টের জেলে একটি মেহমান কামরায় বিশ্রাম নিতে বলেন।সঙ্গে সঙ্গে সকালের নাস্তা মিগুড়িং কুক এসে যায়।আমরা প্রচুর খিদে ছিল তাই দেওয়া মাত্র হাতে নিয়ে খাওয়া শুরু করলাম।ইমিগ্রেসন পুলিশ যাবার বেলায় বলে গেল আজ আমাদের এখানে থাকতে হবে রাত ১২টার পর ফিরতি বাংলাদেশ বিমানে দেশে পাঠাবেন।

আমার অবাক লাগে আমার জীবনে ঘটে যাওয়া প্রতিটি গুরুত্ত্বপূর্ণ ঘটনার তারিখ এবং মাসের মিল দেখে।

এখানে টুরিষ্টে সিঙ্গাপুর যাওয়া বাধা গ্রহস্হ হয় জুনের ২৩ তারিখ,

বিয়ে করি জুনের ২৩ তারিখ,

বাবা পরলোকগমন করেন জুনের ৭ তারিখ,

আবার বৈধ ভাবে সিঙ্গাপুর যাওয়া হয় জুলাইয়ের ৬ তারিখ,

প্রেমে প্রথম ছ্যাকা হয় জুলায়ের ২০ তারিখ,

দেশে প্রথম বৈদেশিক উপার্যিত টাকা মায়ের হাতে পৌছে জুলাইয়ের ১৩ তারিখ,

শেষ পর্যন্ত বিদেশ ফেরত হই জুনের ৫ তারিখ,

ছোট বেলায় পুকুরে ৮/১০ ঘন্টা পানির নীচে ডুবে ছিলাম তাও জুন মাসে।সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

১০৫৪জন ১০৫৪জন
0 Shares

১৫টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ