পুরুষ বিদ্বেষী ও নারী বিদ্বেষী- দুটোই সমান ক্ষতিকর। সুস্থ ও প্রগতিশীল সমাজ গঠনের জন্য নারী-পুরুষ উভয়েরই সম্মিলিত প্রয়াস দরকার। সমাজের একাংশকে বাদ দিয়ে সমাজের উন্নতি চিন্তা করাই বোকামি। সমাজটা নারী-পুরুষ উভয়েরই। কেউ কারো প্রতিযোগী নয়, বরং সহযোগী। এই মনোভাব গড়ে না উঠলে সমাজ এগোবে না।
রেনেসাঁ ও ফরাসি বিপ্লবের সাম্য-মৈত্রী-ভাতৃত্ব-নারীমুক্তির ঢেউ লেগেছিল ভারতীয় উপমহাদেশেও। যে সংগ্রাম ক্লারা জেটকিন, রোসা লুক্সেমবুর্গরা শুরু করেছিল নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য, সেই সংগ্রাম এখনো বাকি আছে। রামমোহন, বিদ্যাসাগর, রোকেয়াদের হাত ধরে এদেশে নারী জাগরণের জোয়ার এসেছিল।
উপমহাদেশের প্রতিটি সংগ্রামের ইতিহাসে নারীদের নাম জড়িয়ে আছে, তা সে ভারতবর্ষের স্বাধীনতায় প্রীতিলতা, ইলা মিত্র, কল্পনা দত্ত, মাতঙ্গিনী হাজরাদের কথাই বলি বা ৫২-র ভাষা আন্দোলন, ৬৬-র ৬ দফা, ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ, ৯০-এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন, ৯২-এর যুদ্ধাপরাধীর বিচারের দাবীতে গণ আদালত বা ২০১৩-র শাহবাগ আন্দোলন। মাদাম কুরী, আইরিন কুরী, বারবারা, অন্নপূর্ণা, জাহানারা ইমাম, সেলিনা পারভীন, গিরীজা দেবী, সিমন দ্য বোভোয়ারদের মতো হাজারো নারীদের অবদানে সমৃদ্ধ হয়েছে বিশ্ব।
কিন্তু পরিপূর্ণ নারীমুক্তি আসেনি এখনো। অর্থনৈতিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক মুক্তি ব্যতিত নারীমুক্তি সম্ভব না। নারীর ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, মানুষ হিসেবে নারীর ন্যায্য অধিকার হরণ, নারীকে পণ্য বানানো হচ্ছে প্রতিনিয়ত। ধর্ষণ, ইভ টিজিং, বাল্য বিবাহ, যৌতুক, এসিড সন্ত্রাস ইত্যাদি তো আছেই, এমনকি ঘরে-কর্মস্থলে-রাস্তায়, কোথাও নারীর নিরাপত্তা নেই।
যেহেতু পুরুষতান্ত্রিক সমাজে এখন নারীরা নির্যাতিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত, তাই নারী অধিকারের কথা বার বার আসছে। নারী দিবস এলেই না, সব সময়ই নারীর অধিকারের জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে আমাদের। নারী দিবস আমাদের সংগ্রামী হবার শিক্ষা দেয়, নিজের অধিকার আদায়ের প্রত্যয়ে জ্বলে উঠতে উজ্জিবীত করে। নারীকে দমিয়ে রেখে সমাজ কতোদূর এগোবে? তাই নারীর প্রতি সকল সহিংসতা, নির্যাতন, অমর্যাদা বন্ধ করতে একজোট হয়ে কাজ করতে হবে, অধিকার বঞ্চিতদের জন্য লড়াই করতে হবে।
নির্যাতন মেনে নিয়ে সম্মানহীনতায় আর বাঁচা না, লড়াই করে বাঁচো নয়তো লড়াই করে মরো। জাগো নারী, জাগো। সবাইকে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের সংগ্রামী শুভেচ্ছা।
২৪টি মন্তব্য
আদিব আদ্নান
পারস্পরিক সম্মানবোধ যত দিন গড়ে না উঠবে তত দিন কারোই
মুক্তি মিলবে না ।
ফাহিমা কানিজ লাভা
একদম ঠিক বলেছেন।
আমীন পরবাসী
ধন্যবাদ আপনাকে এই মূল্যবান পোষ্টটির জন্য। সহমত পোষণ করলাম।
ফাহিমা কানিজ লাভা
ধন্যবাদ পড়ার জন্য।
খসড়া
——কত বীর দিল প্রান লেখা আছে ইতিহাসে
কত নারী দিল সিঁথির সিঁদুর লেখা নাই তার পাশে।
ফাহিমা কানিজ লাভা
নজরুলের কালজয়ী কবিতাটা মনে পড়ে গেল।
খসড়া
নারীকে অপমানিত ও গৃহবন্দী করার লক্ষ্যেই পুরুষেরা নিজেদের বক্তব্যকে ঈশ্বরের বানী নাম দিয়ে ধর্মগ্রন্থে প্রকাশ করেছে।
ফাহিমা কানিজ লাভা
বেগম রোকেয়ার একটা উক্তি মনে পড়ে গেল।
সাতকাহন
রোকেয়া কারাগার ভেঙে বের হয়ে এসেছেন; কিন্তু কোথাও উগ্রতা ছিলো না তাঁর, রূঢ় নন, কর্কশ নন, তার বিদ্রোহ বড়ই সাহসী, তাঁর সাহস বড়ই শান্ত। ২৯ বছর বয়সে তিনি বিধবা হন, তারপর থেকে কলকাতায় ছিলেন; কিন্তু শহর কলকাতার উন্মুক্ত সাংস্কৃতিক জীবন, তাঁর বিপুল কর্মদ্যোগ কোন কিচুর সঙ্গেই নিজেকে যুক্ত করতে পারেন নি। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের নন, তিনি হলেন সাখাওয়াত মেমোরিয়াল স্কুলের। পথে বের হবেন সে স্বাধীনতা ছিলো না; কিন্তু তাই বলে অন্তপুরের মানসিক কারাবাসকে তিনি কখনো মেনে নেননি, পদে পদে বাঁধা, পদে পদে লংঘন। পরিবেশের অকিঞ্চিতকরতা, পরিস্থিতির বৈরিতা সমস্ত কিছুকে দুহাতে ঠেলে কেমন করে এগিয়ে গেলেন তিনি, অনমনীয়। অমনভাবে বিদ্যাসাগরও একদিন এসেছিলেন। উনবিংশ শতাব্দীর কলকাতাতে।
আর রোজা লুক্সেমবুর্গ নামের সেই মহিয়সী নারীকে হত্যা করেছিলো বর্বর স্ট্যালিন। কারাগারে বসেই শেষ হয়ে গেলো এক প্রতিবাদী নারীর, যিনি কমিউনিস্ট বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী নেতায় পরিণত হয়েছিলেন। কমিউনিস্টদের মাঝেও পুরুষতান্ত্রিকতা প্রবলভাবে আছে, যার শুরু স্ট্যালিনের সময় থেকেই।
ফাহিমা কানিজ লাভা
স্ট্যালিন রোজা লুক্সেমবুর্গকে হত্যা করেছিল- এই তথ্য কোথায় পেয়েছেন?
মা মাটি দেশ
আর কত অধিকার দিলে নারী মুক্তি তা কিন্তু কারো জানা নেই।শুধু নারী মুক্তি নামে সংঘটন করে কেবল কিছু অর্থের অপচয় করা বর্তমানে যারা করণধার তাদের জীবন বিধান কতটুকু ক্লিয়ার তা দেখলেই বুঝা যাবে এ দেশে নারী মুক্তি হয়েছে কি না।যে দেশের কর্ণধার বা রাষ্ট্র পরিচালক বার বার নারী ক্ষমতায়নে সে দেশে এ আন্দোলন কোন প্রয়োজন আছে বলে আমার মনে হয় না।তবে এ কথা ঠিক পূর্বে এর প্রয়োজন ছিল।আন্দোলন নয় সহযোগিতার মনোভাবই নারী পুরুষ উভয়ের কল্যান।কারন সৃষ্টির শুরুতেই স্রষ্টা নারী পুরুষ একে অন্যের উপর পরিপূরক।ভাল লিখেছেন -{@ (y)
ফাহিমা কানিজ লাভা
নারীর ক্ষমতায়ন হলেই নারীমুক্তি পাওয়া শেষ হয়না। তাই যদি হবে, তাহলে ৮৭.৭ ভাগ নারী গৃহে নির্যাতিত হয় কেন? কেন সালিশে মেয়েদের অমানবিকভাবে ফতোয়া দিয়ে মারা হয়? কেন ধর্ষণ-ইভ টিজিং চলছে? সমাজের পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি না বদলালে নারীমুক্তি আসবে না।
বনলতা সেন
আপনাকে পড়ে ভালই লাগে , ভাল লাগে এই সচেতনতা বোধ ।
আমি কিন্তু বিশেষ কোন দিনে আস্থা রাখি না । কেন যেন মনে হয় আমরা আমদের কথা বলতে
যেয়ে অকারণে অজান্তে নিজেদের আবারো বন্দি করছি কোন নির্দিষ্ট দিনে । ব্যাক্তিগত মত বলছি ।
আমরা আমদের মর্যাদা অনেক অনেক সময় বুঝতে অক্ষম ।
ঘটনাক্রমের স্বীকার হই অহরহ । আপনারমতদের চেতনাই হয়ত একদিন আমাদের প্রাপ্য সম্মানের পথ নির্দেশকের
কাজ করবে ।
লিখুন আরও লিখুন ।
ফাহিমা কানিজ লাভা
দিবস পালনটা মূখ্য নয়। মূখ্য হলো নারী দিবসের সংগ্রামী চেতনাটা ধারণ করা। অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার প্রত্যয়ে জ্বলে ওঠা। এসব দিবসের ইতিহাস আমাদের সাহস জোগাবে।
সীমান্ত উন্মাদ
পৃথিবীর প্রত্যেকটি নারীর প্রতি আমার একটাই আবেদন আর চুপ করে বসে থাকা নয়। চিৎকারে করুন প্রতিবাদ। আপনার লিখাটার জন্য ধন্যবাদ এবং শুভকামনা নিরন্তর আপনার জন্য।
ফাহিমা কানিজ লাভা
ঠিক বলেছেন। ধন্যবাদ আপনাকেও।শুভ কামনা রইল।
নীহারিকা
(y)
ফাহিমা কানিজ লাভা
ধন্যবাদ।
রাতুল
আপনার প্রতিটি কথার সাথে একমত…
এখনো নারীদের সত্যিকার মুক্তি আসেনি।
ফাহিমা কানিজ লাভা
নারীদের সত্যিকার মুক্তি আসেনি।
শুন্য শুন্যালয়
নিজের ঘর থেকে যে নারী সভ্যতার মুখোশে চুপ করে থাকে তার আদৌ কি সমাজে মুক্তি আছে? তবু এদিন মনে করিয়ে দেয় কিছু একটা করার আছে.
অনেক ধন্যবাদ লাভা আপনাকে ..
ফাহিমা কানিজ লাভা
সমাজ তাকে এভাবে বড় করেছে যে সে ঘরের বাইরে আসার ইচ্ছাও পোষণ করে না। এই সমাজকে ধিক্কার। মুক্তির স্বাদ নিতে হলে ঘরের বাইরে পা রাখতে হবে।
ছাইরাছ হেলাল
আপনার সাথে একমত হয়েই বলছি যে কোন ধরনের বিদ্বেষ ই আমাদের সমর্থনের বাইরে ।
বিশেষ বিশেষ দিনে এই ‘দিবস’গুলোর বিপক্ষে আমি নই । তবে দিবসের চেতনার প্রলম্বন চাই যাতে দীর্ঘ
সময় ধরে করণীয় কাজগুলোর সমন্বয়ের করা যায় ।
লেখাটির জন্য ধন্যবাদ ।
ফাহিমা কানিজ লাভা
দিবসের চেতনায় উজ্জীবিত করার দায়িত্ব বিবেকবানদের। এখনকার সামাজিক প্রেক্ষাপটে করণীয় কাজগুলো করা দরকার সকলে মিলে। ধন্যবাদ সুচিন্তিত মতামতের জন্য।