
‘ভুল থেকে যদি ভালো কিছু হয় তবে ভুল করা ভালো’ কথাটা যতোটা সাবলীল সত্য ততোটায় বিপদজনকও বটে। কেনো বিপজ্জনক তা বলি
সম্প্রতি দেশে ঘটে গেলো প্রথম ডিজিটাল পদ্ধতিতে জনশুমারী ও গৃহ গণনা 2022। এ কাজের জন্য আমিও নিয়োগ পেয়েছিলাম একজন তথ্যসংগ্ৰহকারী হিসেবে। স্পেশালি প্রশাসনিক এরিয়াতে কাজ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন ডিডি স্যার। আমিও নির্দেশ মেনে কাজ শুরু করে দিলাম। মোটামুটি দু’দিন কাজ করার পর ডিডি (উপপরিচালক ভারপ্রাপ্ত জেলা পরিসংখ্যান) স্যার জানালেন ডিসি(জেলা প্রশাসক জয়পুরহাট) স্যারের তথ্য নিতে হবে প্রস্তুত থেকো। ব্যস শুরু হয়ে গেলো টেনশন। আমি কাজে অযোগ্য বা ঠিকঠাক প্রশ্ন করে তথ্য নিতে পারবো না এই ভয়ে কিন্তু টেনশন করছি না। টেনশনের কারণ হলো প্রথম ডিসি স্যারের মুখোমুখি হতে হবে আর স্যার ভীষণ রাগী টাইপ মানুষ।
সে যা হোক ভয় পেলে তো আর চলে না। আমাকে যেহেতু দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সেহেতু দায়িত্ব পালন আমাকেই করতে হবে। সুতরাং ভয়কে জয় করতেই হবে। এবার আসলো সেদিন যখন সত্যি সত্যিই তথ্য নিতে যেতে হবে। সময় ছিল রাত ৮:৩০। আমি পাঁচটার থেকে রেডি হয়ে বসে বসে অপেক্ষা করতে থাকলাম।
রাত সাড়ে নয়টায় অপেক্ষার পালা শেষ করে তথ্য নিচ্ছি। প্রশ্ন করলে রিপ্লাই করছি। সমস্ত তথ্য নেওয়ার পর জিজ্ঞেস করলাম স্যার আপনি কি চেক করতে চান? ডিসি স্যার সম্মতি জানানে ট্যাব হস্তান্তর করলাম স্যারের হাতে। এবার ঘটলো আসল বিপত্তি। স্যারের সর্বোচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতাতে ভুল করে ফেলেছি। স্যার বলেছেন (এমএসএসি) আর আমি সেটাই দিয়েছিলাম কি জানি কেমন করে এমডি এতে টিক পড়ে গেছে! মনে মনে দোয়া দরুদ পড়ে নিলাম তারপর চট করে বলেই ফেললাম স্যার এক্ষনি ঠিক করে দিচ্ছি। এডিটের অপশন আছে তো। বলেই টুক করে স্যারের হাতে থেকে ট্যাব নিয়ে ঠিক করে পুনরায় স্যারর হাতে দিলাম। ডিসি স্যার বললেন এডিটের অপশনও আছে? এখানে সবকিছু সুন্দরভাবে হয়ে গেলো ডিসি স্যারও ভীষণ খুশি হলেন তারপর ডিডি স্যারের অনুরোধে ফটোসেশন হলো।
সবই ঠিকঠাক হলো কিন্তু আমি খুশি হতে পারলাম না। মনের মধ্যে খচখচ করছে। নিজের প্রতি রাগ হচ্ছে। ধিক্কার দিতে ইচ্ছে করছে নিজেকে। এতো বড় ভুলটা কেনো হবে আমার? আর তাছাড়া ডিডি স্যার আমাকে ভরসা করেছিলেন আর আমি কি করলাম! যা হোক পরে আমি ডিডি স্যারকে স্যরি বললাম। স্যার আমার অবস্থা বুঝতে পেরে বললেন ব্যাপার না । ভুল করেছিলে বলেই এডিটের অপশন সম্পর্কে স্যার জানতে পেরেছেন। ভুল থেকে যদি ভালো কিছু হয় তবে ভুল করা ভালো। কিন্তু এই একই ভুল যদি অফিস চলাকালীন সময়ে করতে তবে খবর ছিল।
জীবনের প্রথম অভিজ্ঞতা হলো এতো বড় একজন মানুষের তথ্য সংগ্রহ করলাম। এর পর এডিসি রেভিনিউ স্যার, পুলিশ সুপার সহ সকলের তথ্য নির্ভুলভাবে স্মার্টলি সংগ্ৰহ করেছি।
১৩টি মন্তব্য
বন্যা লিপি
আমার তথ্য নিতে না দিতে একশ একটা ভুল আমি নিজে করছি😃😃😃মেয়েটা সুন্দর হেসে আবার সেগুলো ঠিক করে নিয়েছে।
এইতো! এরকম অভিজ্ঞতা ও আমাদের জন্য শেয়ার করবা। খালি কবিতাই লিখতে হয় না বুঝছো?😊😊😊😊
সুরাইয়া পারভীন
আর কি করবো
আমি তো আপনাদের মতো কবিতা লিখতে পারিনে
তাই বাধ্য হয়েই যা ইচ্ছে তাই লিখি😰😰
নাজমুল আহসান
এতদিনের জানা “আদমশুমারি” কবে থেকে যেন জনশুমারি হয়ে গেল!
সুরাইয়া পারভীন
আদমশুমারি এখন জনশুমারী ও গৃহগণনা । বাংলাদেশেই প্রথম ডিজিটাল পদ্ধতিতে জনশুমারী ও গৃহগণনা সম্পূর্ণ হয়েছে।
নাজমুল আহসান
সেটা তো বুঝলাম। কিন্তু এটা আদমশুমারি থেকে জনশুমারি হয়ে গেল কেন?
হালিমা আক্তার
আমি একবার করেছিলাম।ভালোই লাগে। শুভ কামনা।
সুরাইয়া পারভীন
এই কাজে বিভিন্ন রকম অভিজ্ঞতা সঞ্চার করেছি আপু
অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে
রোকসানা খন্দকার রুকু
স্যার বলেছেন (এমএসএসি) ,,,,এটা ঠিক বুঝলাম না।
আর ভুল হবার জন্যই। পৃথিবীর কোন মানুষই নির্ভূল নয়
অনেক সময় বিশেষ ব্যক্তিত্বদের সামনে সামান্য হরবর হয়। এটা কিছু না, সামনের জন্য শুভকামনা।
সুরাইয়া পারভীন
স্যারের শিক্ষাগত যোগ্যতা বলেছিলেন এমএসসি। আর দিয়েছিলাম এমডি
সুন্দর মন্তব্যে জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে
মনির হোসেন মমি
কিছু ভুল জ্ঞানদানও হয়।তাইতো ভুল না করলে শুদ্ধিতা আসে না।
সুন্দর উপস্থাপনা।
সাবিনা ইয়াসমিন
ভুল ঠিক করার পরেও মনের মধ্যে যে হাঁসফাঁস এর সৃষ্টি হয় সেটাই অভিজ্ঞতা। অভিজ্ঞতার আলোকে মানুষ বারংবার ভুল করা থেকে নিস্তার পায়।
অনেক সুন্দর উপস্থাপনা। আপনার সার্বিক সফলতা কামনা করি 🌹🌹
মোহাম্মদ দিদার
এক ধরনের অভিজ্ঞতা!
নার্গিস রশিদ
কবিতার সঙ্গে এই ধরনের লিখা গুলো আরও বেশি ভাল লাগে। যাকে বলে জীবনের অভিজ্ঞতা। তবে আমার অবিজ্ঞতা থেকে বলছি এমন দেশে আছি যেখানে ডিসি , সচিব বা বাংলাদেশে যা বড়ো বড়ো পোস্ট আর তাদের ক্ষমতা দেখান বলে যে কালচার আছে তা এসব দেশে নাই। শুভ কামনা।