বাঁশি বাজছে। হেমন্তের গাঙচিলে ভর করে নিরালায়। শকুন পক্ষীরাজ মাঝরাত অবধি তখনো ডাকে।
হুঁশ বেহুঁশ তালবাহানাগুলো রঙিন কাগজ ছাউনির দোকানগুলোয় ঘুরে ঘুরে বন্দী হয় আমার জানালার করিডরে। আর আমি! চাঁদটাকে প্রদীপ ভেবে ভাসতে থাকি চাঁদ, তারা আর আকাশের ক্যানভাসে। যেন আমরা এক কাপড়ে, এক ছাউনির ছায়াতলে নির্বাচিত রাত্রিযাপন করছি।
মন ঠাঁইঠাঁই রোগের রোগী। চিকিৎসক বাঁশিওয়ালা তখনও নিরবধি। অজান্তেই ভালোবাসায় হোঁচট খেয়ে খুঁড়ে খুঁড়ে হাটছি। তখনও অবধি প্রেম নেশার গন্ধে আঁকড়ে থেকে দেহমধ্যস্থ শুঁকে শুঁকে পঁচে পঁচে কলোনির অর্ধগলিত ময়লা স্তুপে পরিনত।
মহল্লা। কতো রংবেরঙের রং মিশানো পাতলা টিশার্ট, জিন্স প্যান্ট, ফতুয়া – পাঞ্জাবি, চুনট-করা ধুতি, মালকোঁচায় সাজানো প্রেমিকগুলো চোখের কোণে ঘুরপাক খায়। শুধু নেশাতুর চোখে নিশ্বাসের ধোঁয়ায় মানুষটির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আজও কথা বলার সুযোগ হলো না।
অলিগলি, মেস বাড়ি। দোকানের পরতে পরতে দ্বিতীয় মস্তিষ্কে সিগারেটের দাওয়াতে যাওয়া কতো যুবকের ভিন্ন ভিন্ন ইশারা, চোখের হতবিহ্বল, বিষের শিস চোখের মনিকোঠায় আর কানের লতিকা বরাবর নিখুঁতভাবে কতবারই যে সুঁই সুতোয় গেঁথেছে। তার হিসেব মিলাতে গিয়ে মুচকি হেঁসেছি বারংবার।
টিউশনি। আহা! কতো লাজুক লাজুক, নরম-গরম চাহনি, সুদর্শন যুবক, সুপ্রিয় ভাষ্যকার, রংঢং রং মেশানোয় মাখামাখি পারদর্শী ছেলে বাসার চৌকাঠ পেরুলো। কিন্তু সেই বাঁশির কচিকাঁচা সুরের অগোছালো প্রলোভনে প্রেমাসক্ত হয়েও শুন্যস্থান পূরণ হলো না।
কলিং বেল। অবশেষে ষাট সত্তর দশকের পরে মনের ভিটায় টান পড়লো। আচমকাই আচমকাসুন্দরী দরজার ছিটকিনিতে আটকে গেলো। দরজার ছিটকিনি খুলতেই এলোপাতাড়ি এলোমেলো কিছু উষ্ণ আবরণের ছোঁয়াচে শীতল বাতাসে প্রাণ ভরে গেলো।
ঠোঁট। সুমিষ্ট স্বাদের সে ঠোঁটের শিহরণের কিছু দীর্ঘশ্বাস বাঁশির সুর প্রতীকী সাঁজে। আর আমাকে প্রতিনিয়ত সুমিষ্টঘ্রাণে মশগুল করে। সেদিনই প্রথম সাক্ষাৎ আমাদের।
কথা। ঠোঁট দুটো মাঝেমাঝে বাজ হয়ে সুর বাজতো। তখন অবশ্য সরি সরি মিনতির আকুতিতে আমি নিজেও মিষ্টি মিষ্টি হাসতাম। আর ধীরে ধীরে প্রেমের অন্ধকারে ডুবে যেতাম।
স্যার। অবশেষে শরমের খোলস ছেড়ে বুকের পর্দায় উঁকিঝুঁকি দেওয়া গুনগুন কথাগুলো বেজেই উঠলো। বললাম – স্যার আপনিই কি প্রতিরাতে বাঁশি বাজান?
প্রতনু বললোঃ হুমম, কেন বলোতো?
১৮টি মন্তব্য
মনির হোসেন মমি
চমৎকার প্রেমের উপখ্যান।
“দোকানের পরতে পরতে “দ্বিতীয় মস্তিষ্কে সিগারেটের” দাওয়াতে যাওয়া।
মুগ্ধ ভাই আপনার শব্দ আর বাক্যের ব্যাবহার।ওয়েলডান।
নৃ মাসুদ রানা
ধন্যবাদ প্রিয়, ভালো লাগলো। আপনাদের মুগ্ধতায়..
হালিম নজরুল
“টিউশনি। আহা! কতো লাজুক লাজুক, নরম-গরম চাহনি, সুদর্শন যুবক, সুপ্রিয় ভাষ্যকার, রংঢং রং মেশানোয় মাখামাখি পারদর্শী ছেলে বাসার চৌকাঠ পেরুলো। কিন্তু সেই বাঁশির কচিকাঁচা সুরের অগোছালো প্রলোভনে প্রেমাসক্ত হয়েও শুন্যস্থান পূরণ হলো না।”
——————–লেখার কারুকাজ মনোমুগ্ধকর।
নৃ মাসুদ রানা
অনুপ্রাণিত.. সত্যি! আমার খুবই ভালো লাগছে।
সাবিনা ইয়াসমিন
এই না হলে ভক্ত!
আরাধ্যকে কাছে পাওয়ার সবগুলো ধাপ অতিক্রম করে সামনে দাঁড়ানোর আগ মুহুর্ত পর্যন্ত,সময়গুলো কত আকুলতায় ভরা ছিলো সেই কথাই বলে গেলেন অনবদ্য লেখনিতে।
খুব সুন্দর উপস্থাপনা 🙂
শুভ কামনা 🌹🌹
নৃ মাসুদ রানা
এভাবে উৎসাহ দেওয়ার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইলো প্রিয়।
সুরাইয়া পারভিন
ওরে বাপরে কি দুর্দান্ত শব্দ চয়ন। চমৎকার উপস্থাপন
প্রত্যেকটা লাইন অনবদ্য।
সুমিষ্ট স্বাদের সে ঠোঁটের শিহরণের কিছু দীর্ঘশ্বাস বাঁশির সুর প্রতীকী সাঁজে। আর আমাকে প্রতিনিয়ত সুমিষ্টঘ্রাণে মশগুল করে।
জাস্ট আসাম😱😱
নৃ মাসুদ রানা
ধন্যবাদ, ভালো লাগলেই সার্থকতা।
রেহানা বীথি
এক নিঃশ্বাসে পড়লাম। ভীষণ হৃদয়গ্রাহী লেখা।
নৃ মাসুদ রানা
পড়ুন, আশাকরি এভাবেই প্রতিনিয়ত পাশে থেকে উৎসাহ দেবেন।
বন্যা লিপি
গল্প বা কবিতা শব্দচয়নের উপরে গড়ে ওঠে পাঠক টানার ক্ষমতা।যেমন আমি এক তেমন পাঠক।শব্দের পর শব্দ টেনে নিয়ে গেলো শেষপর্যন্ত। এত অল্পতেই শেষ করে দিলেন? তবে এটাই বোধহয় ভালো হলো। মিষ্টি একটা রেশ রয়ে যায়।
খুব ভালো লেগেছে “চিহ্ন”
শুভ কামনা।
নৃ মাসুদ রানা
ধন্যবাদ প্রিয়, আশাকরি পরের অংশটুকুও ভালো লাগবে।
জিসান শা ইকরাম
চমৎকার শব্দ বুননে গাথা গল্প খুবই ভাল লাগল।
নৃ মাসুদ রানা
ধন্যবাদ, এভাবেই সাহস দেওয়ার জন্য।
সঞ্জয় মালাকার
চমৎকার শব্দ মিষ্টিঘ্রাণে গাথা, পড়ে ভালো লাগলো।
নৃ মাসুদ রানা
ধন্যবাদ প্রিয়।
এস.জেড বাবু
ভিন্ন ধাঁচের লিখা- কি দারুণ
তখনও অবধি প্রেম নেশার গন্ধে আঁকড়ে থেকে দেহমধ্যস্থ শুঁকে শুঁকে পঁচে পঁচে কলোনির অর্ধগলিত ময়লা স্তুপে পরিনত।
টিউশনি টা চমৎকার ।
শুভেচ্ছা অশেষ।
নৃ মাসুদ রানা
ধন্যবাদ প্রিয় কবিবর।