নারায়ণগঞ্জ সিটির উন্নয়ন দেখে বহু আগেকার কথা মনে পড়ে যায়, যখন আমরা সপরিবারে নারায়ণগঞ্জ বন্দর থানাধীন আদর্শ কটন মিলস্-এ থাকতাম । সময়টা ছিল স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে, হতে পারে ১৯৭৩ সাল । তখন কারোর জন্য একটি জামা কেনার প্রয়োজন হলে নারায়ণগঞ্জ ছাড়া আর উপায় ছিলনা । তখনকার সময়ে এখনকার মতো যেখানে সেখানে হাট বাজার আর মার্কেট ছিলনা । যা ছিল, তা কেবল সাপ্তাহিক বাজার । কোনোকোনো হাট আবার প্রতি সপ্তাহে দুইদিন বসতো । যেমন: রবিবারে দুই-নম্বর ঢাকেশ্বরী, কাক্কার হাট বাজার, সোমবারে লক্ষ্মণখোলা সোমবাড়িয়া বাজার আর বৃহস্পতিবারে সোনাকান্দা বাজার । এমন আরো অনেক সাপ্তাহিক বাজার ছিল, যা এখন আর সেগুলোর কথা মনে নেই।
তখন খরস্রোতা শীতলক্ষ্ম্যা নদীর পশ্চিম পাড়ে কোনো হাট-বাজারে বা নারায়ণগঞ্জে যেতে হলে প্রথমেই গুদারাঘাটে থাকা খেয়ানৌকায় চড়ে নদী পাড়ি দিতে হতো । গুদারাঘাটের খেয়াঘাটের খেয়ানৌকা ছাড়া যদি কেউ ভিন্ন নৌকা দিয়ে নদী পাড় হতো, তাহলে ওই নৌকার মাঝিকে দিতে হতো ২৫ পয়সা (চার আনা) খেয়াঘাটের টোল (ভাড়া বা জমা) দিতে হতো ৫ পয়সা । তখন খেয়াঘাটের কোনো পাকা সিঁড়িঘাট ছিলনা । যা ছিল, তা হাতে গোনা কয়েকটিমাত্র । ছিল গ্রমের খাল পারাপারে জন্য যেরকম বাঁশের সাঁকো থাকে, ঠিক সেরকম একটা বাঁশের সাঁকো অথবা বাঁশের মাচা দিয়ে তৈরি করা থাকতো খেয়ানৌকা থেকে যাত্রীদেরে ওঠানামা করার জন্য ।
নদী পারাপারের জন্য এখন প্রায় সবকয়টি খেয়াঘাট-ই যাত্রীছাউনি সহ-পাকা সিঁড়ি ঘাটলা তৈরি করে দিয়েছেন সিটি কর্পোরেশন, যাত্রীদের সুবিধার্থে । তাও আবার টাইল বিছানো, যাত্রীদের বসার জন্য চেয়ারের মতো পাকা বসার জায়গা । খেয়ানৌকা আসতে দেরি হলে যাত্রীদের দাঁড়িয়ে থাকতে হবেনা কারোর। বৃষ্টিতে ভিজতে হবেনা । এসব গুদারাঘাটের (খেয়াঘাট) পাকাঘাট আর যাত্রীছাউনি তৈরি হয়েছে সীটি কর্পোরেশনের গৃহীত উন্নয়নমুখী কর্মকাণ্ডের কারণে । এসব যাত্রীছাউনির কথা নারায়ণগঞ্জে মানুষ কখনো ভাবেনি, যা এখন মানুষ বাস্তবে দেখছে । যেমনটা ভাবেনি শীতলক্ষ্ম্যা নদীর পশ্চিমপাড় সোমবাড়িয়া বাজার সংলগ্ন লক্ষ্মণখোলা আর চৌরাপাড়ার মানুষে । তাঁরা ভাবেনি যে কোনোদিন এই গুদারাঘাট পাকা সিঁড়ি হবে, ঘাটে যাত্রীছাউনি থাকবে । সেই স্বপ্নও তাঁদের পূরণ হয়েছে বর্তমান দিনে । শুধু এটি নয়, নারায়ণগঞ্জ সিটির বুকের মধ্যখান দিয়ে বয়ে যাওয়া শীতলক্ষ্ম্যা নদী এপারওপার হওয়ার জন্য যেসব গুদারাঘাট (খেয়াঘাট) আছে প্রায় সবগুলো ঘাট-ই এখন পাকা সিঁড়ি যুক্ত সুবিশাল যাত্রীছাউনি । সবগুলো-ই নারায়ণগঞ্জ সিটি কোর্পোরেশন কর্তৃক গৃহীত উন্নয়নমুখী কাজ, নাহয় আর হতো না ।
হয়নি শুধু ঐতিহ্যবাহী চিত্তরঞ্জন গুদারাঘাট (খেয়াঘাট) । সীটি কর্পোরেশনের নিশ্চয় জানা আছে যে, এটি নারায়ণগঞ্জ সিটি ১০ নং ওয়ার্ড, গোদনাইল এলাকায় চিত্তরঞ্জন কটন মিলস্ আর নিউ লক্ষ্মীনারায়ণ কটন মিলের মাঝামাঝি অবস্থিত । এই ঘাট দিয়ে দৈনিক হাজার হাজার এপার ওপারের মানুষ আসাযাওয়া করে দিনরাত ২৪ ঘন্টা । ওপারে পাকা সিঁড়ি যুক্ত যাত্রীছাউনি গুদারাঘাট, অথচ এপারে বাঁশে সাঁকো । বর্ষাকালে গুদারাঘাটের খেয়ানৌকা থেকে যাত্রীদের বহু কষ্ট করে ওঠানামা করতে হয় । সময় সময় অসাবধানতার কারণে খেয়ানৌকা থেকে ওঠানামা করতে গিয়ে যাত্রীদের সাথে থাকা ছোটছোট শিশুরা এই বাঁশের সাঁকো থেকে ছিটকে নদীতে পড়ে যায় । আবার বৃষ্টিতে ভিজতে হয় অপেক্ষাকৃত যাত্রীদের । বৃষ্টির দিনে বৃষ্টি এলে এই চিত্তরঞ্জন গুদারাঘাটের যাত্রীদের বৃষ্টি থেকে রেহাই পাবার কোনো নিরাপদ স্থান নাই । এই গুদারাঘাট (খেয়াঘাট) দিয়ে ওপারে হাজার হাজার স্কুলকলেজের ছাত্রছাত্রী আসাযাওয়া করে থাকে । সবাই জানে যে, চিত্তরঞ্জন গুদারাঘাটের সাথেই চিত্তরঞ্জন উচ্চ বিদ্যালয় ও লক্ষ্মীনারায়ণ উচ্চ বিদ্যালয় আর গোদনাইল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় । এসব বিদ্যালয়ের অনেক ছাত্রছাত্রী শীতলক্ষ্ম্যা নদীর পশ্চিম পাড় লক্ষ্মণখোলা, চৌরাপাড়ার, দাসের গাঁ গ্রামের বাসিন্দা ।
এসব ছাত্রছাত্রীদের সাথে তাঁদের পিতামাতা, আত্মীয়স্বজন ছাড়াও আছে যারা শীতলক্ষ্ম্যা নদীর পূর্বপশ্চিম পাড়ের বিভিন্ন মিল ইন্ডাস্ট্রিজ-এ কাজ করে । সবাই এই ঐতিহ্যবাহী চিত্তরঞ্জন গুদারাঘাট দিয়েই নদী পারাপার হয়ে থাকে । কিন্ত নারায়ণগঞ্জের বিশাল উন্নয়নের জাঁতায় কেন এই গুদারাঘাটে (খেয়াঘট) বাঁশের সাঁকো থাকবে? এই ঐতিহ্যবাহী গুদারাঘাটখানা কি নারায়োণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়নমুখী কর্মসূচীর আওতাভুক্ত করা যায়না? শীতলক্ষ্যা নদীর এপারওপারের সব গুদারাঘাট যখন আপনি নতুন করে তৈরি করে দিয়েছে, তাহলে এই ঐতিহ্যবাহী গুদারাঘাটখানা নতুন করে পাকা যাত্রীছাঊনি যুক্ত সিঁড়িঘাট তৈরি করার জন্য কি কারো কাছে দাবি জানাতে পারিনা? কিন্তু দাবি জানাই কার কাছে, কে শুনবে আমাদের কথা । দুপারের মানুষদের শীতলক্ষ্ম্যা নদী নিরাপদে নির্বিঘ্নে পারাপার হতে একটি যাত্রীছাউনি যুক্ত পাকা সিঁড়িঘাট নির্মাণ করা এখন দুইপাড়ের মানুষের সময়ের দাবি ।
১৩টি মন্তব্য
জিসান শা ইকরাম
সিটি কর্পোরেশনের কাছেই আবেদন করতে হবে।
দৃষ্টি আকর্ষনের জন্য জাতীয় সংবাদপত্র সমূহে খরব ছাপানোর ব্যবস্থা নিতে পারেন। প্রেসক্লাবে প্রেস কনফারেন্স করে সাংবাদিকদের নজরে আনুন।
বাবু
সম্মানিত গুরু, আপনার পরামর্শমতে আলাকার স্থানীয় প্রভাবশালী কয়েকজনের সাথে এবিষয়ে কথা বলেছি। তারা আমাকে কথা দিয়েছে অচিরেই মেয়রের সাথে কথা বলবে।
দেখি কী হয় গুরু।
ধন্যবাদ ভালো থাকবেন।
নীহারিকা
কর্তৃপক্ষ নিশ্চই আপনাদের এই ঘাটের ব্যাপারে অবগত আছেন। আশাকরি নারায়ণগঞ্জবাসীর এ সমস্যার খুব শীঘ্রই সমাধান হবে।
বাবু
গত ৫ মার্চ যখন আমি সম্মানিতা মেয়রের সাথে দেখা করতে গিয়েচিলাম, তখন আমি এবিষয়ে মেয়রকে অবহিত করেছি। কিন্তু দীর্ঘদিন অতিবাহিত হওয়াতে এ-নিয়ে সোনেলায় একটা পোস্ট লিখলাম, দেখি সিটি কর্পোরেশনের নজরে পড়ে কি-না।
ধন্যবাদ ভালো থাকবেন আশা করি।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
আমার নিকটতম এলাকা।এ সমস্যটি বহু দিন যাবৎ।তবে মেয়র আইভীর নিকট স্বারক লিপি পেশ করতে পারেন। -{@
বাবু
হাঁ মনির দাদা, আপনি ঠিক পরামর্শ দিয়েছেন। দেখি কী হয়। তবে আশা করা যায়, এই ঘটের কাজ মনে হয় অচিরেই ধরে ফেলবে।
আশায় থাকি, দেখিনা কবে নাগাত কাজ ধরে।
ধন্যবাদ দাদা ভালো থাকবেন।
শুন্য শুন্যালয়
সবার স্বাক্ষর সহ স্মারকলিপি জমা দিন সিটি কর্পোরেশনে। এখনো বাঁশ পেড়িয়ে যাতায়াত, কি নিদারুণ কষ্ট। সব যখন পাল্টেছে এটাও পাল্টাবে নিতাই দা। ধৈর্য ধরে এগিয়ে যান।
বাবু
আপনার এবং আপনাদের সকলের পরামর্শমতেই কাজ করা হবে। দেখি আগামীতে কী হয়! এবিষে হাল ছাড়ছি না।
মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
নীলাঞ্জনা নীলা
দাদা আশা করি কর্তৃপক্ষের নেক নজরে আসবে। শুন্য আপুর ওই কথাটার সাথে আমি একমত। ওই এলাকার সকলের স্বাক্ষর নিয়ে সিটি কর্পোরেশনে জমা দিলে কাজ দ্রুত সম্পন্ন হবে।
বাবু
হাঁ দিদি আপনাদের কথামতো কাজ করা হবে।
পরামর্শ দানের জন্য ধন্যবাদ জানাই। ভালো থাকবেন দিদি।
মোঃ মজিবর রহমান
দাদা আপনার এই ইচ্ছা কর্পোরেশনকে স্বারক লিপি দিয়ে জানাতে হবে বাঁ সংবাদ সম্মেলন করতে হবে।
নিতাই বাবু
সম্মানিত মেয়র আইভীর কাছে বলা হয়েছে দাদা । উনি এই বিষয়টি নিয়ে খুবই দুঃখিত । তারপরেও আশ্বাস দিয়েছে এর একটা বিহিত করবে । দেখি কী হয়? ভালো থাকবেন দাদা ।
মোঃ মজিবর রহমান
(y) -{@