আমি গোটা শহরের সমস্ত ফুলের বাগান তন্নতন্ন করে খুঁজেও তোমার জন্য একটা লাল গোলাপ না পেয়ে সেদিন সাদা গোলাপ এনেছিলাম; অথচ তুমি অভিমান করে সে গোলাপ ছুঁড়ে ফেলেছিলে। বলেছিলে একটা লাল গোলাপ তুমি আনতে পারলেনা!
তুমি কি জানো, তোমার লাল গোলাপের জন্য আমাকে সেদিন তপ্ত রোদে পুড়ে শহরের অলিগলি’র সব দোকান চষে ফেলতে হয়েছিলো? তবু আমি একটাও লাল গোলাপ খুঁজে পাইনি।
সেদিন পিয়ালদের বাড়ির একতলার বারান্দা থেকে তোমার জন্যে একটা লাল গোলাপ চুরি করতে গিয়ে পা পিছলে আমার ডান হাতে আর গালে আঁচড় লেগেছিলো; আমি খুঁড়িয়ে হাটছিলাম। তবুও একটা লাল গোলাপ সেই সময় আমায় ধরা দেয়নি সেদিন।
শহরের সব ফুলের বাগান লাল গোলাপ শুন্য দেখে সরকারি ডাকবাংলোতেও গিয়েছিলাম আমি ; কিন্তু বাগানের মালি মালেক চাচাও সেদিন আমাকে নিরাশ করে হাতে একটা সাদা গোলাপ ধরিয়ে দিয়ে বলেছিলো- বাবারে আজ লাল গোলাপের বড়ই অভাব।
কি হয়েছিলো সেদিন? লাল গোলাপশুন্য ছিলো কেন গোটা শহর? এই শহরে সেদিন নাকি মর্ত্য থেকে নেমে এসেছিলো এক ডানাকাটা পরী! সবাই তাকে একনজর দেখার জন্য ভীর জমিয়েছিলো সে জলসাঘরে আর প্রত্যকের হাতে ছিলো একটা করে লাল গোলাপ।
অথচ শারাব আর শাবাবের লোভকে জলাঞ্জলি দিয়ে সেদিন মালির দেয়া সেই সাদা গোলাপটিই আমি নিয়ে এসেছিলাম তোমার জন্যে। সে কথা জানতে না চেয়ে তুমি মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলে অভিমানে।
তোমার ছুঁড়েফেলা সেদিনের সেই সাদা গোলাপটিকে আমি মাটি থেকে তুলে এনে ঘরের কোনে একগ্লাস পানিতে সজতনে রেখেছিলাম। আজ ঘুম থেকে উঠে দেখি সাদা পাপড়িগুলো লাল হয়ে আছে। এটাকি আমার চোখের ভ্রম? নাকি অন্যকিছু! কি সেটা?
হয়তো হৃদয়ের রক্তক্ষরণে রক্তের ফোঁটাগুলি দিয়ে – একটি সাদা গোলাপ লাল করার অপচেষ্টায় আমি লিপ্ত।
(রোজ ডে উপলক্ষে ২০১৪ সালের লেখা এটি, ডাইরি ঘাটতে গিয়ে পেলাম। ছবিঃ সংগৃহীত)
২৮টি মন্তব্য
মাহমুদ আল মেহেদী
অস্বাধারন লাগলো লেখাটা । চিরসবুজ একটা লেখা যে যুগেই পড়া হোক না কেন।
তৌহিদ
ধন্যবাদ ভাই, এটা কাঁচা হাতের এই লেখা আপনার ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম। শুভকামনা জানবেন।[ছবি মুছে ফেলা হয়েছে]
বন্যা লিপি
ভীষণ ভালো লাগলো, সাদা’র মায়া বুঝলো না, যে তারে লাল গোলাপে ও খুশি করা সহজ নয়। ভালো লাগাটুকু রেখে গেলাম। শুভেচ্ছা।
তৌহিদ
@লিপি আপু যার ভালোবাসায় ফরমালিন মেশানো সে কি আর বুঝবে এর মর্ম? মন্তব্যে অনেক ভালোলাগা রইলো আপু।
মোঃ মজিবর রহমান
ভালো লাগলো তৌহিদ ভাই। অসাধারন। [ছবি মুছে ফেলা হয়েছে]
তৌহিদ
ধন্যবাদ ভাই,আপনারাইতো আমার প্রেরনা। পাশে থাকবেন।
মনির হোসেন মমি
অসাধারণ লাগল লেখাটি।[ছবি মুছে ফেলা হয়েছে]
তৌহিদ
ধন্যবাদ জানবেন ভাইয়া।
রিতু জাহান
বেশ লাগলো। সাদা গোলাপের সাদা পাপড়িতে লেখা যেতো হৃদয়ের যতোকথা। কিছু শব্দে। বুঝে নিত সে।
বা সেইই না হয় লিখে নিত।
তৌহিদ
হৃদয়ের কথা লাল রক্তকালিতে লিখতে চেয়েছিলাম, কিন্তু সে সময়ে একটা কলমের বড্ড অভাব ছিলো আমার, হয়তোবা তারও!
একসময় গোলাপের পাপড়ি শুকিয়ে গেলো, মনের কথা মনেই রয়ে গেলো, একদম অপ্রকাশিত।
জিসান শা ইকরাম
বাপ্রে, এ দেখি কঠিন প্রেম,
কত কস্ট সহ্য করে, প্রলোভন উপেক্ষা করে সাদা গোলাপ নিয়ে যাওয়া, অথচ …….
সাদা গোলাপই লাল হয়ে যাক আমাদের ভালোবাসায়,
তৌহিদ
সাদা গোলাপ লাল হয়েছিলো ঠিকই তবে গ্লাসের পানি উড়ে যাওয়ায় সেই ফুলটিও শুকিয়ে গেছে ভাইসাব। 😃😃
জিসান শা ইকরাম
এমন কাউকে এই ফুল আর দেয়া হবেনা, কান্না কাটি করলেও না 🙂
তৌহিদ
আসলেই সেটা কঠিন প্রেম ছিলো, সহজ হলে অনেক কিছু হতে পারতো। ভাগ্যিস হয়নি।
এখন আমি প্রতিদিন লালগোলাপ তার হাতে দেই একটা করে। আর সে গোলাপ পেয়ে তিনি বিরক্তিকর সুরে উত্তর দেন -ইস ঢং!!
হা হা হা
জিসান শা ইকরাম
হা হা হা
সাবিনা ইয়াসমিন
গোলাপ দিবসে প্রিয়তমা কে উৎসর্গ করার মতো এক অনন্য কবিতা। এই কবিতা পরলে প্রেমিকা ফুলই চাইবে না। কে চায় রক্তাক্ত লালে আচ্ছাদিত ব্যথাভরা মনের অধিশ্বরী হতে ! যে চায় তার মনে প্রেম থাকতে পারে না।
ভালো লেগেছে ভাই, আপনার সব লেখার মতই এটিও সুখপাঠ্য হয়েছে।
ভালো থাকবেন, শুভকামনা।
তৌহিদ
আপু ভাগ্যিস ফুলটা দেয়া হয় নাই। আল্লাহ বাঁচাইয়া দিছে। না হলে আপনার ভাবীরে পাইতাম না।
আমার লেখা আপনার ভালো লাগে জেনে কৃতার্থ হলাম। শুভকামনা অফুরান।
সাবিনা ইয়াসমিন
ঠিক, ভাবির মতো জীবন সাথি আপনার পাওয়া হতো না। ভালো লাগে আপনাদের দুজনকে একসাথে দেখলে। আপনাদের দুজনের প্রতিই অনেক ভালোবাসা আর শুভ কামনা থাকলো ভাই।
তৌহিদ
ধন্যবাদ আপু
শুন্য শুন্যালয়
ডে তো রোজ ডে, রেড রোজ ডে না। 🙂
কী একটা প্রেমিকা পাইছিলেন, আহারে! যাক পাইছিলেন বলেই সুন্দর একটা লেখা পড়লাম।
ডায়েরী এরপর থেকে বেশি করে ঝারাঝুরি দিন। 🙂
তৌহিদ
আভ্যন্তরীণ এই কাহিনী বলে আমি হাটে হাঁড়ি ভাঙতে চাইনা। অমন প্রেমিকা ছিলো বলেই লেখাটি লিখতে পেয়েছিলাম, তবে প্রেমিকারে আর পাইনি বলে আজ আমি সুখি।😃😃
আর ডাইরি ঝারাঝুরি দিলে সমস্যা আছে। কি থেকে যে কি বের হবে? 😂😂
ছাইরাছ হেলাল
না, বলছিলাম কী, যে সময়ের কথা লিখেছেন তা ঠিক আছে।
এখনকার কোন ডে-ডু নাই!! তা নিয়ে কিছু লিখে ফেলুন।
সাবিনা ইয়াসমিন
মহারাজের কি রোমান্টিক লেখা পড়তে মন চাইছে নাকি ?!! 😂
ছাইরাছ হেলাল
লেখা সে যেমন-ই হোক পড়তে অরুচি নেই (খাদক টাইপ), তবে হাতে-গরম হলে আলাদা আনন্দ।
তৌহিদ
রোমান্টিক লেখা আমার ভালোই লাগে।
তৌহিদ
এখন আর ডে ফে নাই, সকালে ঘুম থেকে উঠেই সংসারের চিন্তা।
প্রহেলিকা
একটা লাল গোলাপ এর জন্য এত কষ্ট, অপরজনেরও দোষ নেই। সে তো আর জানতো না কত কি চষে বেড়িয়েছেন। তবে যে ফুল ছুঁড়ে ফেলতে পারে সেখান থেকে দূরে থাকাই ভালো বোধ করি।
সহজ করে লিখলেন, ভালো লেগছে পড়তে, স্মৃতিরা বেঁচে থাকুক ডায়েরির পৃষ্ঠায়।
তৌহিদ
এই গোলাপ আমার জীবনে অনেক পথ দেখিয়েছে। সুন্দর সাবলীল জীবন দিয়েছে।মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।