ট্রেনে ঢাকা ফিরছিলাম। নতুন গল্পের প্লট নিয়ে ভাবছিলাম। আমার কামরার সঙ্গীটি পঁচিশ-ছাব্বিশের এক তরুণী। শুনেছি, দুটি স্ত্রীলোক একজায়গায় থাকলে বেশিক্ষণ চুপ থাকতে পারে না। আমি চুপচাপ ছিলাম। আমার সাথের মেয়েটি চুপ থাকতে পারল না। ওর নাম ‘অহনা’। ‘জেরিন মির্জা’ পরিচয় দিতেই বলে উঠল,”আপনার হাজব্যান্ডই কি ঐ ফ্রেঞ্চ ফটোগ্রাফার? নাম টা যেন কি?”
“আঁদ্রে পার্কিনস। এক্স-হাজব্যান্ড।”
“সরি, জানতাম না, যে-”
“না জানাটাই স্বাভাবিক। খুব বেশি বিখ্যাত হই নি যে এ খবর পত্রিকায় আসবে। অবাক হচ্ছি আমাকে চেনেন দেখে। বাজারে আমার বই খুব বেশি চলে নি।”
“একটা সাপ্তাহিক ম্যাগাজিনের সাহিত্য পাতায় কলাম লিখতেন আপনি, বিভিন্ন গ্রন্থের সমালোচনা লিখতেন। রেগুলার পড়তাম।”
“ও আচ্ছা ”
“I thought, you people ended like ‘Happily ever after’।”
“There is no such thing. অজানার প্রতি মানুষের আকর্ষণ বরাবর। সেই অজানা-অচেনাকে জানা হয়ে গেলে, কৌতূহল-আগ্রহ ফুরিয়ে যায়, মধ্যকার অমিলের জন্য বিতৃষ্ণা হয়। একে তো ভিনদেশী, ভিনভাষী, তার উপর ভিনধর্মী। শুরুটা রুপকথা হলেও, শেষটা রুপকথা থাকেনি। এই উপমহাদেশের বলেই হয়ত মানিয়ে নিতে পারিনি …”
“আপনার শুনেছি একটা ছেলে আছে ”
“ওর নাম ‘একুশ’, যদিও বয়স একুশ হয় নি। এইতো এবার চারে পা দিল।”
“সুন্দর নাম। কোন ফ্রেঞ্চ নাম রাখেন নি?”
“না। বাংলা ভাষাই পরিপূর্ণ। ধার করবো কেন? ফ্রেঞ্চে ‘ট’ নেই, ইংলিশে ‘ত’ নেই, আরবিতে ‘প’,’ধ’ নেই, হিন্দিতে ‘ঙগ’ এর আধিক্য, বাংলায় তো সবই আছে …”
“হুম, নতুন কিছু লিখছেন?”
“শুরু করি নি। প্লট নিয়ে ভাবছি ।”
“আমি একটা গল্প বলব,যদিও common স্টোরি? কিন্তু আমি মনে করি, কমন স্টোরিকে uncommon করার দায়িত্ব লেখকের।”
“ভাল বলেছেন। বলেন আপনার গল্প। একটা unhappy ending থাকলে ভাল হয়।”
“কেন?!” অবাক হয়ে অহনা জিজ্ঞেস করল।
“যদি happy ending এর জন্য ঘর না ছাড়তাম, তাহলে মৈত্রেয়ী দেবীর মতো জেরিন মির্জার জীবনেও ‘ন হন্য তে’ টাইপ কাহিনী হতো। unhappy ended story পাঠকের মনের মধ্যে happy endingএর আকাঙ্ক্ষা রেখে দেয়। পাঠক বারবার পড়ে, আর ভাবে,’আহা, কেন এমন হল?’। That’s it.”
“ending কেমন বলতে পারছি না।”
“ওকে। শুরু করুন।”
গল্পের বাকী অংশ পড়তে চলে আসুন বইমেলায়, সংগ্রহ করুন “অনুভূতি গেছে অভিসারে”।
২২টি মন্তব্য
ব্লগার সজীব
‘ অজানার প্রতি মানুষের আকর্ষণ বরাবর। সেই অজানা-অচেনাকে জানা হয়ে গেলে, কৌতূহল-আগ্রহ ফুরিয়ে যায়, মধ্যকার অমিলের জন্য বিতৃষ্ণা হয়।’ – অতি সত্যি কথা বলেছেন ।
গল্পের কাহিনীতে ভেরিয়েশন আছে বেশ । চরিত্রগুলো বাস্তব মনে হয়। সব কিছু নিয়ে সুন্দর একটি গল্প ।
কৃন্তনিকা
ধন্যবাদ 😀
গল্প বাস্তব জীবনকে ভিত্তি করেই হয়। হয়ত পুরোটা মিলবে না। কিন্তু মিল থাকবেই।
পাঠকের মনোতুষ্টিতেই লেখকের আনন্দ 🙂
জিসান শা ইকরাম
খুব ভালো একটি গল্প পড়লাম
আপনার আগের গল্প গুলোর মত এটিও বেশ সুন্দর
গল্পের নাম ছোট এবং একটি শব্দ – অসাধারন ।
কৃন্তনিকা
ধন্যবাদ।
গল্পগুলোর প্রত্যেকটাই আপনার ভালো লাগছে-জেনে আমারো অনেক ভালো লাগছে।
“খণ্ডিতা” নামটি দেখেই এর অর্থ বোঝা যায়। এই শব্দটার আসল অর্থও তাই। সেটি হল-‘নায়কের জীবনে দ্বিতীয় নায়িকার আবির্ভাবে ঈর্ষান্বিত প্রথম নায়িকা’। বাস্তবে কোন মেয়েই এই ঈর্ষা থেকে মুক্ত নয়…
বনলতা সেন
আপনি অনেক ভালো গল্প লিখেন । পাঠককে চুম্বকের মত আটকে রাখেন গল্পে । চরিত্র গুলো বাস্তব ।
কৃন্তনিকা
ধন্যবাদ। 😀
প্রশংসা শুনে খুবই দারুণ লাগছে। আমার পরবর্তীগুলোতেও আপনার মত পাঠককে চুম্বকের মত ধরে রাখতে পারলেই বুঝবো গল্পকার হিসেবে আমি আসলেই সফল। 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂
সোনিয়া হক
শুধু বলবো অসাধারন ।
কৃন্তনিকা
ধন্যবাদ
🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 :):) 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂
ছাইরাছ হেলাল
মনোবিশ্লেষক হিসেবে লেখকের শক্তিমত্তার পরিচয় পাচ্ছি ।
লিখতে থাকুন ।
কৃন্তনিকা
ধন্যবাদ 🙂
মনোবিশ্লেষণে আমার অনেক আগ্রহ, আমার বেশির ভাগ লেখাই আবেগ-অনুভূতিকেন্দ্রিক। আশা করি, পরবর্তী গল্পগুলোতেও আপনাদের চাহিদা পূরণ করতে পারব। 😀
প্রজন্ম ৭১
নির্বাচনে পরাজিত হয়ে এসে , এমন সুন্দর একটি গল্প পড়লাম । মন কিছুটা ভালো হয়ে গিয়েছে । অনেক ভালো লিখেছেন গল্পকার ভাই ।
কৃন্তনিকা
আমার গল্প কারো মন কিছুটা হলেও ভালো করতে পারে জেনে খুবই আনন্দিতবোধ করছি। 🙂
আদিব আদ্নান
চালু থাকুক অহো – কথন ,
এত এত ঈর্ষা !
আবারও বলছি আপনি ভালই লেখেন ।
কৃন্তনিকা
ধন্যবাদ 🙂 🙂 🙂
অহোকে নিয়ে এখন আর কিছু লিখছি না(আসলে মাথায় কোন গল্প আসছে না, তবে অন্য গল্প লিখছি)। যদি অহোকে নিয়ে লিখি অবশ্যই সোনেলাতে প্রকাশ করবো। 🙂
হতভাগ্য কবি
লিখেন কিভাবে এত গুছিয়ে? মাশাআল্লাহ 🙂
কৃন্তনিকা
ধন্যবাদ 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂
লেখা হয়ে যায়, জানি না কিভাবে??? 😛
সুখী মানুষ
দেরিতে হলেও পড়লাম আর মুগ্ধ হলাম… দারুন .. (y)
কৃন্তনিকা
মানুষকে মুগ্ধ করতে পারছি… আর কি চাই 😀
ধন্যবাদ 🙂 🙂 🙂
নুসরাত মৌরিন
A perfect daughter, a perfect sister, a perfect friend can never be a perfect beloved because she cannot lie, she cannot cheat.And a perfect beloved is never a perfect wife because of not being a perfect daughter, a perfect sister & a perfect friend.
একদম সত্যি কথা…।
প্রতিটা গল্প পড়ছি এক নিঃশ্বাসে।আর বার বার শুধু একটা কথাই বলতে ইচ্ছে করছে “অসাধারন।
দারুন লিখেন আপনি।
কৃন্তনিকা
পড়ার জন্য ধন্যবাদ। 🙂
কথাটি আমিও মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি। আপনার ভালো লেগেছে জেনে ভীষণ ভালো লাগলো। খুশি হয়ে গেলাম। 😀 😀 😀
নীতেশ বড়ুয়া
১। পাঠককে শেষ বুঝতে না দেওয়া শেষা না হওয়ার আগে
২। পাঠককে স্ট্রাইক করা যাতে লেখাটি বারেবারে পড়ে
৩। পাঠককে লেখক তাঁর প্রতিটি শব্দে চিত্রপটে হাজির করানো
আমার মতে সহজবোধ্য ও সাবলীলতার সাথে এই তিনটি যদি কোন লেখায় থেকে যায় তবে সেই লেখা বা লেখকের লেখনী নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবীদার।
আপনার সিকুয়্যাল, প্রিকুয়াল পড়ে বুঝলাম কোন কিছু লেখার আগে সেই লেখার প্লট ও কী পয়েন্ট বা রেফারেন্স নিয়ে আপনার গবেষণা করা হয় প্রচুর। আপনার লেখনী হতে শেখার আছে প্রচুর। 🙂
কৃন্তনিকা
প্রশংসা পেয়ে অনেক ভালো লাগলো।
একসাথে এত্তগুলো গল্প পড়ার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
এখনো পুরোদমের লেখক হয়ে উঠতে পারিনি… জানি না পারবো কিনা…
তবে সোনেলার পাঠকদের মন্তব্যই আমার লেখার পেছনের ইন্সপিরেশন… 🙂
ভালো থাকবেন। শুভকামনা রইল।