ঢাকায় পোস্টিং পেলাম বেশ ক’বছর পর। এফসিপিএস পার্ট ওয়ান হয়ে গেছে। হালকা লেখালেখি করতাম। ইন্টার্নীর সময় থেকেই প্রত্যেক বইমেলায় দুটো বা তিনটা করে বই বের হতো আমার। খুব জনপ্রিয় না হলেও খুব একটা খারাপ চলে নি। এখনো লিখি। ঢাকায় পোস্টিং পাবার পর বেশ কিছু অদ্ভুত মজার ঘটনা ঘটে যায় আমার জীবনে।
ডিউটির ফাঁকে একটি রেস্টুরেন্টে ঢুকে কফি খাচ্ছিলাম। অনেক আগে থেকেই কাছেই একটা টেবিলে একদল ছেলেমেয়ে বসে আড্ডা দিচ্ছিলো। কথা কানে আসছিল। ইন্টার্নশিপ শুরু করতে যাচ্ছে, সবাই ভীষণ উত্তেজিত। কিছুক্ষণ বাদে গ্রুপ্টা উঠে চলে গেলো। গ্রুপের একটা মেয়ে মিনিটবাদেই ফিরে এলো। এসে আমার টেবিলের সামনে দাঁড়ালো এবং বলল, “আমি আপনার একজন ফ্যান। বসতে পারি?”
অপ্রস্তুত ছিলাম। অবাক হয়ে বললাম, “হ্যা, বসুন।” বলার সাথে সাথেই টুক করে বসে পড়ল। উচ্ছ্বসিত ভঙ্গিতে তাকিয়ে রইল। আমি খুবই বিব্রতবোধ করছিলাম। মেয়েটা বলল, “তুমি করে বলুন প্লিজ। আমি আপনার থেকে ছোট।”
কি বলব ভেবে পাচ্ছিলাম না। বললাম, “আমার সবগুলো বই পড়েছ?”
“হুম, সব পড়েছি। একবার না, কয়েকবার করে পড়েছি।”
“ভালো লেগেছে?”
“খুবই, খুবই ভালো লেগেছে? কিন্তু সবগুলো গল্পের শেষটা হয় বিষণ্ণ নয়তবা কোন শেষই থাকে না।”
“ওপেন-এন্ডেড স্টোরি পাঠকের জন্য, শেষটা সে নিজের মনমতো করে গড়ে নেবে। আর বিষণ্ণতাই তো বাস্তব।”
“Pandora’s boxএর মতো শুধু আশাই থাকে ওপেন-এন্ডেড স্টোরিতে।”
“যদি সুখের গল্পই লিখতাম তাহলে কি তোমার মনে দাগ কাটতো?”
মেয়েটি হাসল। কিছু কিছু মানুষের হাসি চেহারা বদলে দেয়। মেয়েটি সেই শ্রেণীর মধ্যে পড়ে, হাসলে অন্যরকম লাগে, মায়াময় লাগে। বলল, “আপনাকে আমার ভীষণ ভালো লাগে।”
আবারো কি বলব বুঝতে পারছিলাম না। মেয়েটিই আবার বলল বেশ অভিমানী সুরে, “আপনি এখনো আমার নামটি শুনতে চান নি।”
একটু হেসে বললাম, “ও হ্যা, তোমার নাম কি?”
“রজনী”
রজনী ওর ব্যাগ খুলে একটা নোটপ্যাড বের করে কলমসহ আমার দিকে এগিয়ে দিলো। আমি আমার নামটা সাইন করলাম। রজনী বলে উঠলো, “শুধু নিজের নামটাই লিখলেন? আমাকে উদ্দেশ্য করে কিছু লিখলেন না।”
তো লিখলাম- ‘রজনীকে অনেক অনেক শুভকামনা।’
তারপর বললাম, “ভাবিনি, আমারো ফ্যান থাকতে পারে।”
“কেন? আগে কাউকে অটোগ্রাফ দেননি?”
“বইমেলায় দিয়েছিলাম।”
“আচ্ছা, আপনি কি সিঙ্গেল? আমি যতোদূর খবর পেয়েছি- আপনি এখনো বিয়ে করেন নি।”
আবারো বিব্রত হলাম। মেয়েটি আমাকে মিনিটে মিনিটে বিব্রত করছিলো।
রজনী আবার বলল, “আমি কি আপনাকে বিরক্ত করছি?”
ভক্তসঙ্গ কার না ভালো লাগে? সত্যি বলতে আমি বিরক্ত হচ্ছিলাম না, কিন্তু বিব্রত হচ্ছিলাম।
রজনী আবার বলল, ” পাত্রী হিসেবে আমি কেমন?”
“ভালোই। Actually তোমার সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না।”
“তো জিজ্ঞেস করুন।”
“কি জিজ্ঞেস করবো?”
“আচ্ছা, জিজ্ঞেস করা লাগবে না। আমিই বলছি, আমার বাবা সরকারি অফিসার। মা স্কুলটিচার। বড়বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। এবার বিয়ের সিরিয়ালে আমি। আর কিছু?”
“না থাক।”
“আপনার কফি তো ঠাণ্ডা হয়ে গেলো।”
ঠান্ডা কফিই একচুমুকে খেয়ে ফেললাম। বললাম, “তুমি কিছু খাও?”
“আপনি খাওয়াতে চেয়েছেন-এতেই আমি খুশি। একটু আগেই তো ফ্রেন্ডদের সাথে খাওয়াদাওয়া করলাম।” তারপর বলল, “দেখুন, ভক্ত হিসেবে আমি অনেক ভালো। আপনার মান-সম্মানের কেয়ার করি, নইলে সিন-ক্রিয়েট তো করতেই পারতাম, তাই না?”
“সিন ক্রিয়েট?!”
“হুম। ভক্তরা কতো কি করে? কখনো জাপ্টে ধরে, আরো কতো কি… খেলার মাঠে ভক্তরা ‘Marry Me’ লিখে বসে থাকে। আমি ওসব কিছুই করি নি?”
মনে মনে ভাবলাম- সেগুলোও কি করার ইচ্ছে আছে নাকি এই মেয়ের। ভয়াবহ…
তারপর হঠাৎ গ্লাসের মধ্য থেকে টিস্যুপেপার বের করে লিখল ‘Marry me’। মুচকি হেসে আমার দিকে টিস্যু এগিয়ে দিলো। বিব্রত হলেও বেশ মজাও পাচ্ছিলাম। বললাম, “আমার তো গার্লফ্রেন্ডও থাকতে পারে, তাই না? তুমি তো জানো না।”
“তো কি হয়েছে? আপনার চার নম্বর কেন চারশ নম্বর ওয়াইফ হতেও আমার আপত্তি নেই।”
এই মেয়ে বলে কি!!!
বললাম, “এসব মুখেই বলা যায়। বাস্তবে কোন মেয়েই সতীন সহ্য করতে পারে না।”
“আপনি তো ভালো মানুষ। সেজন্যই আপনাকে ভালো লাগে। ভালো মানুষেরা একটাই বিয়ে করে।”
“তাহলে তো আমার গার্লফ্রেন্ডকেই করবো, তাই না?”
রজনীকে এবার বেশ আহত মনে হল।
বললাম, “তুমি কি জানো তুমি আমার থেকে অনেক ছোট?”
“ন’বছর”
“আজকাল বয়সের এত ব্যবধানে কেউ বিয়ে করে না।”
“আপনি আসলেই কিছু জানেন না। জানেন, সোফিয়া লরেনের হাজব্যান্ড উনার থেকে ১২বছরের বড়?”
“সোফিয়া লরেন এ জেনারেশনের নয়।”
“আচ্ছা, আমি বের করে আপনাকে জানাবো।”
“আচ্ছা, ততোদিনে আমার উপর থেকে তোমার মোহটাও কেটে যাবে।”
“মোহ? আপনি ‘মোহ’ বলছেন কেন? কতদিন ধরে অপেক্ষা করলে প্রমাণ হবে যে আমার ইমোশন শুধু মোহ নয়?”
“বলতে পারছি না।”
“যাই হোক। আমি কি আপনাকে একটু ছুঁয়ে দেখতে পারি?”
গল্পের বাকী অংশ পড়তে চলে আসুন বইমেলায়, সংগ্রহ করুন “অনুভূতি গেছে অভিসারে”।
১৯টি মন্তব্য
আদিব আদ্নান
সুন্দর ! কিন্তু শিশুতোষ মনে হচ্ছে যে ।
অনেকদিন পর এখানে লিখলেন ।
কৃন্তনিকা
ধন্যবাদ 🙂 আমরা অন্তরে সবাই কিন্তু শিশু 😛
হুম… অনেকদিন পর লিখলাম। মাথায় অনেকদিন পরই এলো গল্পটা…
শিশির কনা
অনেক ভালো লেগেছে আপু । (y)
কৃন্তনিকা
ধন্যবাদ 😀 😀 😀
জিসান শা ইকরাম
দারুন
চুল ছেড়ার আইডিয়াটা নতুন মনে হলো , এটি হালের ট্রেন্ড নাকি ? 🙂
মিলনটি ভালোই লাগলো ।
কৃন্তনিকা
ধন্যবাদ 😀
চুল ছেঁড়ার আইডিয়াটা হুট করেই মাথায় এলো 😛 , হালের ট্রেন্ড কিনা জানি না। অবশ্য ট্রেন্ড হলে মন্দ হয় না… কি বলেন? 😛
জিসান শা ইকরাম
ট্রেন্ড হলে মন্দ হয় না , তবে যিনি চুল ছিরবেন , একমুঠো চুল নিয়ে টান না দিলেই হয় 🙂
শিশির কনা
আইডিয়া পেলাম একটি । বাস্তব প্রয়োগ ঘটবে এবার 😛
কৃন্তনিকা
হুম… করে দেখেন কি হয়? :p
ফলাফল জানাতে ভুলবেন না যেনও… 😉
এই মেঘ এই রোদ্দুর
সুন্দর লাগল
কৃন্তনিকা
ধন্যবাদ 🙂 🙂 🙂
ছাইরাছ হেলাল
আনন্দিত পরিসমাপ্তি ঈদের সময় মন্দ নয় কোনভাবেই ।
কৃন্তনিকা
হুম… ঈদ মানেই আনন্দ। এসময় কারো মন খারাপ করানোর কোন মানে আছে? 🙂
ব্লগার সজীব
আমি কিন্তু কল্পনাই করিনি এটির সমাপ্তি মিলন দিয়ে হবে। ভালো লেগেছে আপু।
কৃন্তনিকা
ধন্যবাদ 😀
সব সমাপ্তি কি আর বেদনার হয় নাকি? :p জীবনে দুঃখ যেমন থাকে, সুখ থাকে। 🙂
বনলতা সেন
যাক ঈদের সময় কঠিন পরিণতি হয়নি দেখে ভালো লাগল ।
ঈদের শুভেচ্ছা আপনাকে ।
কৃন্তনিকা
ধন্যবাদ 😀
ঈদের জন্যই আনন্দের গল্প লিখলাম 🙂 🙂 🙂
আপনাকেও ঈদ মোবারক -{@
প্রিন্স মাহমুদ
ছবি এবং গল্প , দুটোই ফাটাফাটি লেগেছে ।
কৃন্তনিকা
ধন্যবাদ পড়ার জন্য। ফাটাফাটি লেগেছে জেনে আনন্দ হচ্ছে। 😀 😀 😀 প্রথম ছবিটি আমার প্রিয় ফটোগ্রাফার মঞ্জুর আনামের, ২য় ছবিটি আমার ছোট ভাই জিসানের তোলা। জিসানও এখন একজন প্রফেশনাল ফটোগ্রাফার। 🙂