কিছু দেশ জনসংখ্যা ও জন্মহার বাড়াতে পুরস্কার ঘোষণা করে। আর আমাদের মত গরীব দেশগুলোতে কমানোর জন্য পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। এনজিও তে চাকুরীর সুবাদে এ অভিজ্ঞতা অনেক আছে। বাঙালি কি জিনিস মাঠে গেলেই বুঝবেন। বোকা নয় কিন্তু অতি চালাক। সেমিনারের আয়োজন করা হল- জনসচেতনতা, বাল্যবিয়ে, জন্মনিয়ন্ত্রণ এসব নিয়ে। আপনার সমস্ত উপহার সামগ্রী( খাবার দাবার) নেবে। কিন্তু তাদের মত তারা চলবে। তাদের বিশ্বাস “মুখ দেন যিনি খাবারও দেন তিনি”। আর “যা কইস ক তাল গাছটা মোর”।
এসব অন্যদিন আলোচনা করা যাবে। আজ আসি সাম্প্রতিক সময়ের একটা বড় সমস্যা করোনা কালে জন্মহার বৃদ্ধি ও বাল্যবিয়ে।
আমি রান্না করছি কান বারান্দায় দুই প্রবীনের গল্পে। গল্পের বিষয় আশাপাশে নতুন জন্ম নেয়া বাচ্চা ও বিয়ে।
– আম্মা শুনছেন সিফাতের বউএর বাচ্চা হইছে। জমজ আর দুইটাই মেয়ে।
– এই তো সেদিন বিয়ে হল তাতেই বাচ্চা। তাও দুইটা। আজিজলটা এবার মরছে। ওরও তো তিনটা মেয়ে। গতবছর ওর বউএর একটা মেয়ে হইল এবার ছেলের বউএর। খাওয়াবে কি!
– নুরুর বেটারো বেটা ছাওয়া হইছে পরশুদিন।
– ইশ্! সে তো নিজে বাচ্চা। তার আবার বউ- বাচ্চা।
– হ সেটাই। এলা ক্যানবা খালি বাচ্চার খবর। কয়দিন তো কম আছিল। এই ছাওয়াগুলা ঢাকা থাকি আসিয়া এ দশা। আর যতগুলা বিয়া হইল তার তো শ্যাস নাই।
– একটারো তো বিয়ের বয়স হয় নাই।
– এগুলার যে কি হইবে। আর বাচ্চা- কাচ্চার যন্ত্রণায় থাকা যাবার নয়।
আমি শুনছিলাম। যোগ দিলাম একটু তাদের আলাপনে। এ বয়সের দুজন মানুষও শঙ্কিত, তারাও বোঝে করোনা পরবর্তী সময়ে কি পরিমান জনসংখ্যার চাপে দেশ পরতে যাচ্ছে। করোনা কালে চাকরী চলে যাওয়ার কারনে উঠতি বয়সী ছেলেমেয়েরা গ্রামে ফেরত এসেছে। গ্রামেও তেমন কাজ নেই। নিম্নশ্রেণীর মানুষ তখন অন্যপথ বেঁচে নেয়। মেয়েরা বেকার থাকলে নষ্ট হবে আর ছেলেরা বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পরবে। আয়রোজগারের পথ না থাকায় বিয়ের ব্যবস্থা করা হয় বয়স হবার আগেই। যোগান হিসেবে কাজ করে মেয়ের কাছ থেকে পাওয়া যৌতুকের টাকা। আশেপাশের এলাকায় চাঁদা আদায় করে বাবা মেয়ের বিয়ে দেন। আর যৌতুকের টাকায় ছেলেটি রিকসা অটো কিংবা ভ্যান কিনে জীবিকা নির্বাহ করে।
এতটুকুতেই থেমে থাকলে তো ভালোই হত। করোনা কালীন এত বেশী বাল্যবিবাহের ঘটনা ঘটেছে যে, জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার চরম আকার ধারণ করতে বাধ্য। এমনিতেই গবেষণায় বলা হয়েছে, করোনায় সত্তর লক্ষ নতুন শিশু জন্ম নেবে। এটা সাধারণ হিসাব এর বাইরে অনেক বেশি হবে। এবং সেগুলো আমাদের মত গরীব দেশগুলোতে বেশি হবে যা পরবর্তীতে বিরাট সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে।
আমাদের মনে রাখা উচিত, যে কোন দেশে মহামারীর পর আয় কমে যায়। দেশ নানা সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে একটা চরম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার মধ্যে পরে যায়। এ অবস্থায় জনসচেতনতা জরুরি। সরকার ব্যস্ত থাকে মহামারী সামাল দিতে। এ সময় জনগনের উচিত সরকারকে সঙ্গ দেয়া সর্বোপরি অপেক্ষা করা মহামারী শেষ হবার। আদতে এসবের কিছুই হয়না। ছেলেমেয়েরা বেকার বসে থেকে বোর ফিল করে। বিনোদন ও আয় হিসেবে বেচে নেয় বিয়ে করাকে।
মহামারী একদিন শেষ হবে ততদিনে বাল্যবিয়ে ও অপ্রাপ্তবয়স্ক মায়ের সংখ্যা আশংকাজনক হারে বেড়ে যাবে। বিকলাঙ্গ, অপুষ্টিতে ভোগা শিশুর জন্ম হবে। কারন অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলেমেয়েদের কাছে সুস্থ সবল সন্তান আশা করা যায়না। আজকের বাংলাদেশ যে অবস্থায়। তার সৃষ্টি একদিনে হয়নি। একসময় সঠিক স্যানিটেশন ছিল না, এখন হয়েছে। এছাড়াও বাল্যবিয়ে, যৌতুক এসব অনেকাংশে কমে গিয়েছিল। একটা নিয়ন্তিত অবস্থা আবার বিগড়ে গেলে সেটা রিকোভার করা বেশ কঠিনই হবে।
করোনাকালীন বাল্যবিয়ে ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য ধর্মীয় ভিতিও বিরাট বড় ভূমিকা পালন করছে। জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার ইসলাম বিরোধী এটা অনেক মানুষের ধারণা। করোনায় এসব পাপ মানুষ আর করতে চায় না। যেকদিন দুনিয়া আছে তারাতারি ছেলেমেয়েদের বিয়ে দেবে আর বাচ্চা কাচ্চা হল আল্লাহর দান। সেটাতে কোন প্রকার নিয়ন্রন ব্যবস্থা নিয়ে পাপ করা যাবে না।
তাহলে চলেন ইসলামী গল্পে যাই, দেখা যাক ইসলাম কি শিক্ষা দেয়-
একদা মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা) তার সঙ্গী সাথীদের নিয়ে বানিজ্যিক কাজে দুরের পথে(ইরাক)যাত্রা করেছেন। তখনকার দিনে উট ছিল একমাত্র বাহন। পথিমধ্যে মাদীউট এর প্রজনন জনীত সমস্যা দেখা দিল। বারবার পুরুষ উট তার কাছে যাচ্ছে এবং সব এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় মাদী উট গর্ভবতী হলে আরও একটা সমস্যা হবে তা হল পথ অনেক দুরের এবং গিয়ে ফিরতেও অনেক সময় লাগবে। পথিমধ্যে শত্রু দ্বারা আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা রয়েছে তখন গর্ভবতী মাদী উট কোন সাহায্যে আসবে না। বরং বাচ্চা হলে তারজন্য কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। এতে বানিজ্যিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। তাই জরুরি অবস্থার ভিত্তিতে মহানবী (সা) মাদী উটকে কপাটি লাগাতে বললেন।( কপাটি হল একধরনের জন্মনিরোধক ব্যবস্থা, যাতে সঙ্গম হবার পরও গর্ভধারণ হয়না)। এই যদি জরুরী অবস্থা হয় তাহলে জীবন যাপন সুন্দর করে করার জন্য জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি কেন পাপ হবে? কোন পাপ নয়।
দেশটা আমাদের, ভালো রাখা, এগিয়ে নেবার দায়িত্ব নিজেদের। তাই এসময় আমাদের নিজ নিজ সচেতনতা বাড়াতে হবে। নিজ নিজ জায়গা থেকে বোঝাতে হবে মহামারী একপ্রকার ধৈর্য্য পরীক্ষা। আমরা অস্থির হবনা। মহামারী চলে যাবার অপেক্ষা করব। বাল্যবিয়ে দিয়ে জনসংখ্যা বাড়াব না।
সবাই ভালো থাকুন। শুভ কামনা রইলো।🌹🌹
২৬টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
আপ্নে নাস্টেক!!
জন্মকে নিয়ন্ত্রনের কথা বলছেন!!
রোকসানা খন্দকার রুকু
হা হা হা হা। একদম ঠিক বলেছেন।
আমার নানা একজন দাওরা মৌলভী ছিলেন। তিনি ফকিরকে জিজ্ঞেস করতেন কয়টা ছেলেমেয়ে।
বেশি হলে ওরে ভিক্ষা দিতেন না। বলতেন- “তোর সন্তান জন্ম দেওয়ার ক্ষমতা যদি থাকে তাহলে ভিক্ষা করিস ক্যান যা ভাগ কাজ কর।”
ধন্যবাদ ভাইয়া।🌹🌹
আলমগীর সরকার লিটন
খুব সুন্দর লেখেছেন যুগউপযোগি আপু
রোকসানা খন্দকার রুকু
অনেক অনেক ধন্যবাদ।
শুভ কামনা রইলো।
হালিম নজরুল
চমৎকার লিখেছেন। বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
রোকসানা খন্দকার রুকু
ধন্যবাদ ভাইয়া।
শুভ কামনা রইলো।
ছন্দা দাম
ভীষণ প্রাসঙ্গিক একটি লেখা পড়লাম।
অপূর্ব ভাবে এতো জ্বলন্ত একটা বিষয় গল্পের মাধ্যমে উপস্থাপন করেছেন।। অসাধারণ।
রোকসানা খন্দকার রুকু
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ দিদি॥
শুভ কামনা রইলো
সুপর্ণা ফাল্গুনী
সমসাময়িক বিষয়কে দারুন ভাবে উপস্থাপন করেছেন। আসলে এইসব অতি চালাক লোকদের নিয়ে সবার ই সমস্যা আর দেশ তো আরো বড় সমস্যায় পড়বেই। মুখ দিছে আল্লাহ খাবার ও দিবেন তিনি। যত যাই বলেন তালগাছ টা কিন্তু আমার ই। হেলাল ভাইয়ের মতো বলতে হয় আপনি কিন্তু নাস্টেক। শুভ বুদ্ধির উদয় হোক, সবাই যার যার অবস্থান থেকে সচেতন হোক। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন
রোকসানা খন্দকার রুকু
আমি নাস্টেক কথা ঠিক।
আপনার মুল্যবান মন্তব্যে সবসময় অনুপ্রেরণা পাই দিদিভাই।
শুভ কামনা রইলো। শুভ সকাল।😍😍
প্রদীপ চক্রবর্তী
সমসাময়িক বিষয় নিয়ে যথার্থ উপস্থাপন।
করোনাকালে বাল্যবিবাহর মাত্রা বেড়েছে তা নির্দ্বিধায় বলা যায়।
আর দিনদিন তো জন্মহারের সংখ্যা বেড়েই চলছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
আপনি সচেতনমূলক লেখনী উপস্থাপন করেছেন কিছু লোক আছে তা মানতে নারাজ।
জন্ম দিয়েছেন যিনি খাবার দিবেন তিনি!!
তাদের এ মূলবাণী।
রোকসানা খন্দকার রুকু
অসাধারণ মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ দাদা।
শুভ কামনা রইলো।
শুভ সকাল।
রেজওয়ানা কবির
সমসাময়িক বাস্তবতা, যতই সভা সেমিনার করি না কেন? এরা এক কান দিয়ে শুনে আরেক কান দিয়ে বের করে দেয় আর তাদের সিদ্ধান্তে অটল থাকে। মন থেকে সচেতন না হলে কখনো কিচ্ছু হবে না। জেগে জেগে ঘুমালে কিছুই হ্য় না। ভালো লিখেছ আপু।শুভেচ্ছা।
রোকসানা খন্দকার রুকু
সেটাই যতই সেমিনার করিনা কেন লাভ হয়না।
শুভ কামনা রইলো আপুনি।
শুভ সকাল।😍😍
জাহাঙ্গীর আলম অপূর্ব
সুন্দর লেখা উপহার দিলেন
শুভকামনা রইল সতত প্রিয় লেখক
রোকসানা খন্দকার রুকু
ধন্যবাদ ভাইয়া।
শুভ কামনা রইলো।
শুভ সকাল।
তৌহিদ
লেখার অন্তর্নিহিত তাৎপর্য অনেক। ধন্যবাদ সুন্দর করে প্রকাশ করার জন্য।
শুভকামনা সবসময়।
রোকসানা খন্দকার রুকু
ধন্যবাদ ভাইয়া।
শুভ কামনা রইলো।
শুভ সকাল।
জিসান শা ইকরাম
সত্তর লক্ষ যদি গবেষনালব্দ হিসেব হয়, প্রকৃত সংখ্যা হবে প্রায় এক কোটি। এই এক কোটি নতুন শিশুর জন্য দেশ প্রকৃত অর্থে তৈরী হয়নি।
করোনার ক্রান্তিকালে কত যে ক্ষতি হচ্ছে দেশের তা ভবিষ্যৎ বলবে একদিন।
আমাদের দেশের হুজুররা যা বুঝেন তাই বলেন। এদের অনুসারীর সংখ্যাও অনেক। হাদিসে কি আছে তা জানার দরকার নেই, হুজুর কি বলেন সেটাই সত্য। নাস্তিক সম্পর্কে হাদিসে আছে যে কাউকে নাস্তিক বলা যাবে না, যদি সে নাস্তিক না হয় তবে বক্তা নাস্তিক হয়ে যাবে। হাদিসের কথা অনুযায়ী দেশের প্রায় সব হুজুরই নাস্তিক। অনুসারিরাও নাস্তিক।
সমসাময়িক বিষয়ে এমন পোস্ট দেয়ার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।
শুভ কামনা।
রোকসানা খন্দকার রুকু
নিজের মনগড়া সুবিধার কথা বলে একদল। বোকা জনগন সেটাই মেনে নেয়।
শুভ কামনা রইলো ভাইয়া।
শুভ সকাল।
খাদিজাতুল কুবরা
আসলে ডিজিটাল বাংলাদেশ বলে চিল্লাতে থাকে সরকার, জনগণ কিন্তু ধর্মান্ধতা এবং মান্ধাতা চিন্তা ভাবনাই লালন করে। বাল্য বিয়ে এবং জন্ম নিয়ন্ত্রণ ইসলামে ও কাম্য নয়।
নবীজি (সঃ)স্ত্রীর ভরণ পোষণে অসামর্থ্য ব্যাক্তিকে বিয়ে না করে রোজা রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। সাহাবায়ে কেরামকে কম সম্পদ বেশি সন্তান থেকে পানাহ চাইতে বলেছেন।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি নিয়ে সুন্দর আলোকপাত করেছে।
রোকসানা খন্দকার রুকু
সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
শুভ কামনা রইলো আপুনি।
শুভ সকাল।😍😍
কামাল উদ্দিন
এমনিতেই রোহিঙ্গারা ওদিকে জন সংখ্যা বৃদ্ধিতে ভালো একটা ভূমিকা রাখছে। করোনার জন্য যদি এদিকে আমরা বাল্য বিবাহ তথা অপ্রাপ্তবয়স্ক মায়ের সংখ্যা, বিকলাঙ্গ, অপুষ্টিতে ভোগা শিশুর জন্ম যদি বেড়ে যায় তাহলে তো সামনে শুধুই অন্ধকার। আমাদের প্রত্যেককে এই বিষয়ে আরো অনেক বেশী সচেতন হতে হবে।
রোকসানা খন্দকার রুকু
রোহিঙ্গা হল খাল কেটে কুমির আনা।
অনেক ভোগাবে আমাদের।
শুভ কামনা রইলো ভাইয়া।
শুভ সকাল।
আরজু মুক্তা
স্যানিটেশন ব্যবস্থা কই ভালো হইছে? ভ্রমণে বিষয়টা বোঝা যায়। মানুষ নিজে নিজে পণ্ডিত! কিসের সরকার কিসের আইন?
দারুণ পোস্ট সমসাময়িক বিষয় নিয়ে।
শুভকামনা
রোকসানা খন্দকার রুকু
আগে রাস্তায় হাটলে হাগু দেখা যেত সেটা অনেক কম তাও এনজিওর বদৌলতে। বাকিটা সরকারের দেখা উচিত।
সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
শুভ সকাল।😍😍