কিছুই লিখতে পারছি না,
কলমে কালি নেই তাজা রক্তের উল্লাস
আমাকে উপহাস করে ওরা।
নিদারুন বিষন্ন কিছু শব্দ,
খাতার পাতা ছেড়ে,
আমার চারিদিকে ভুতুড়ে নৃত্য করে।
শব্দেরা চিৎকার করে বলে,
কি লিখতে চাও তুমি? কার কথা?
আমি উত্তর দিতে পারিনা।
আমার মানুষ পরিচয়ই বড় বেশি
লজ্জিত করে আমাকে।
আমি ক্ষমা চাই ওই বিষন্ন শব্দের কাছে।
কেননা ওই বিষন্ন শব্দগুলো
একসময় এক একজন মানুষ ছিলো।
কি ভাবছো তুমি!!
ঠা ঠা হাসিতে কানে হাত চাপা দেই
আমরা তো মানুষ না, শুধুই নারী
গাইবান্ধার ছোট্ট তৃষাকে মনে নেই?
কুমিল্লার তনু অথবা চট্টগ্রামের মিতু?
কাকরাইলের ছোট্ট রিশাকে মনে আছে?
মনে আছে তোমার ?
এখনও স্কয়ার হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে লড়ছি আমি খাদিজা, আমরা সবাই নারী!
জন্মই আমাদের আজন্ম পাপ!
জন্মই আমাদের আজন্ম অভিশাপ!
আমাদের বাড়ির বাইরে যেতে নেই!
আমাদের স্কুলে কলেজে যেতে নেই
আমাদের ইচ্ছার প্রকাশ ঘটাতে নেই!
আমাদের ‘স্ব ‘ বলে কিছু থাকতে নেই!
তবে তুমি কি লিখবে কবিতায়?
কার কথা লিখবে? কতজনের?
কি হবে লিখে? কি হবে? কি হবে?
আমাদের নারীত্বই ওদের হাতিয়ার!
মনে নেই রক্ষকের কাছে ধর্ষিত তৃষার
নারীত্বকে ওরা পতিতা আখ্যা দিয়েছে।
মনে নেই নাটকের মেয়ে তনু নষ্টাই ছিল
মনে নেই মিতুর নারীত্বকে কলুষিত করার
কদর্য চেষ্টার কথা মনে নেই?
এখনও তবে কি লিখতে চাও তুমি?
তবে অপেক্ষা করো আরও কিছুক্ষন,
হয়তো জীবন্মৃত হয়ে থাকার চেয়ে
মৃত্যুই ভাল হবে খাদিজার।
তখন লিখো কিছু শোকগাঁথা!
আত্মার শান্তি চেয়ে অমূল্য কিছু
কথা এখনই না হয় ভেবে রাখো।
তারপর অপেক্ষা করো, মানুষের নয়
অন্য কোন নারীর আর্তনাদ শোনার জন্য।
খুব অপেক্ষা করতে হবে না তোমার
রেডি তো হয়েই গেছে
ফজিলাতুন্নেসার পরোয়ানা!
কি সাহস বিচার চাই সে বদরুলের!!
এটুকুও তো প্রাপ্য নয় নারীর।
বিচার, মানবাধিকার এগুলো
সব তোলা থাক মানুষের তরে।
নারী তো মানুষ নয় শুধুই নারী।
তা না হলে তুমি কেন এতো অসহায়!
তুমি কেন কলম হাতে শব্দ হাতড়াও?
কেন তোমার হাতে চাপাতি নেই?
কেন নেই ক্রশফায়ারের অধিকার?
কোপের বদলে কোপ, কিম্বা এনকাউন্টার!
বিচার হীনতার আনন্দযজ্ঞে ওরা বলীয়ান
তোমার অক্ষম কবিতার কি এতই ধার!
একটুও বদলাতে পারে এই পচাঁ ক্ষতের??
১৪টি মন্তব্য
ইঞ্জা
বেশ বজ্রকণ্ঠের কাব্য, অসাধারণ লিখণী।
সালমা আক্তার মনি
ধন্যবাদ ইন্জ্ঞা ভাইয়া।
ইঞ্জা
-{@
মোঃ মজিবর রহমান
কেন নেই ক্রশফায়ারের অধিকার?
কোপের বদলে কোপ, কিম্বা এনকাউন্টার!
বিচার হীনতার আনন্দযজ্ঞে ওরা বলীয়ান
সালমা আক্তার মনি
সত্যিই উত্তর নেই আমাদের কাছে!
মোঃ মজিবর রহমান
তবুও আপু এই ক্রশফায়ার, এনকাউন্টার যদি সবার জন্য থাক্ত ভাল লাগত।
নীলাঞ্জনা নীলা
মনের মতো একটা কবিতা পড়লাম। (y)
সালমা আক্তার মনি
অনেক ধন্যবাদ নীলাপু।
অনিকেত নন্দিনী
এইসব কেউ শোনেনা।
এমন কোপাকুপির শিকার এমন কত খাদিজা! কেউ কোপ খায় শরীরে, কেউ খায় মনে। বিচার নাই কোত্থাও, বিচার নাই। কে বিচার করবে?
সালমা আক্তার মনি
নন্দিনী আপু আপনার মতো আমিও জানি এসব কেউ শোনে না, পড়েও না! আমাদের তো এর বেশি করার আর কিছুই নেই। কি যে অসহায় লাগে! একের পর এক! কিন্তুু কোন বিকার নেই!
সালমা আক্তার মনি
মজিবর ভাইয়া বড় অসহায় লাগে যখন দেখি দিনে দুপুরে, অনেক মানুষের সামনে ঘটনা ঘটার পরও আমরা খুনিকে সব মানবিক অধিকার গুলো ব্যবহার করতে দেই। জাতি হিসেবে আমরা যদি এতোটাই মানবিক হই তবে উপরোক্ত শব্দগুলোর ব্যবহার কোথায় হয়? এই উত্তর আমাদের বড় বেশি দরকার। এত আইন সংশোধন, পরিবর্তন হয়, তবে চাক্ষুষ সাক্ষী থাকার পরও, দোষী দোষ স্বীকার করে নেয়ার পরও বিচারের দীর্ঘসূত্রিতার প্রয়োজন নেই, এই আইন সংশোধন হয় না কেন?? বিচারহীনতায় যে ওদের সাহস দিনকে দিন লাগামহীন করে দিচ্ছে।
আবু খায়ের আনিছ
শব্দরা যতই ভূতুড়ে নিত্য করুক তবু লিখতে হবে, না লিখলে মানুষ জানবে কি করে? প্রতিবাদ হবে কি করে।
সালমা আক্তার মনি
জীবনটা সত্যিই একঘেয়ে হয়ে গেছে আনিছ ভাইয়া, জাতীয় জীবনে সারাক্ষণই আতঙ্ক! এসব থেকে কি ভাবে যে পরিত্রান পাই? লিখবো কি! লিখলেই তো বিষন্ন কিছুই এসে যায়? এতো বিষন্নতা ভাল লাগে না।
আবু খায়ের আনিছ
দেশ নিয়ে যারা ভাবে তাদের মনে আসলেই শান্তি নেই, দুশ্চিন্তার মেঘ তাদের কপালের ভাঁজে ভাঁজে। কিন্তু লিখতে ত হবেই আপু, নয়ত মুক্তি মিলবে কি করে।