দুপুর বারোটার পর হসপিটালে পোঁছালো অনিক, নিচে জিজ্ঞেস করলো অপারেশন কোথায় হয়, তয় তলায় শুনে দ্রুত লিফটের দিকে পা বাড়ালো, লিফটে কি সমস্যা কে জানে বারবার দ্বিতীয় তলা তিন তলা করছে দেখে এগুলো পাশের সিঁড়ির দিকে, তৃতীয় তলায় পোঁছে দেখলো সামনে ওয়েটিং রুম, ও ওয়েটিং রুমে উঁকি দিয়ে দেখলো ছায়া সোফায় বসে কোরআন শরীফ পড়ছে, অনিক ভিতরে প্রবেশ করে রুমের আরেক পাশের সোফায় গিয়ে বসলো।
একটু পর ছায়া কোরআন শরীফ বন্ধ করে মুনাজাত করলো, এরপর অনিকের দিকে ফিরে বললো, কেমন আছেন?
হুম ভালো, আনকেলকে কি এনেছে রুমে?
না এখনো অপারেশন চলছে, শুনলাম দুইটার আগে শেষ হবেনা।
সকাল থেকে কিছু খাওয়া হয়েছে?
না খায়নি, ক্ষিদেই লাগেনি।
এইখানে ক্যান্টিন কোথায়?
নিচে।
তাহলে চলো খেয়ে আসি।
না আপনি যান, আমার ক্ষিদে নেই।
আরেহ চলো, এইখানে বসে টেনশন করে লাভ কি আসো, বলেই অনিক দাঁড়িয়ে গেলো।
ছায়া একটু ইতস্তত করে উঠে অনিককে ফলো করলো।
নিচে এসে অনিককে এদিক ওদিক তাকাতে দেখে ছায়া বললো, এইদিকে আসুন।
অনিক ছায়াকে ফলো করে হসপিটালের পিছনে চলে এলো, পিছনে বেশ কয়েকটি রেস্টুরেন্ট, অনিক বললো চলো ঐ মেক্সিকান রেস্টুরেন্টে যায়।
চলুন।
দুজনে মেক্সিকান রেস্টুরেন্টের বাইরে রাখা একটা টেবিল বেছে নিয়ে বসলে ওয়েটার এসে মেনু দিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো।
কি খাবে বলো, সকালে তো কিছু খাওনি, মেক্সিকান স্টেইক খেতে ভালো।
তাই?
হুম।
ঠিক আছে।
অনিক ওয়েটারকে দুইটা টেন্ডারলয়ন বিফ স্টেইক, এক্সট্রা ডিনার রোল (এক ধরণের ছোট ছোট ব্রেড), সাথে পাইনএপ্যাল জুস দিতে বললো।
তা আর কি খবর বলো, অনিক ছায়াকে জিজ্ঞেস করলো।
বুঝতেই পারছেন কি অবস্থায় আছি।
ওহ সরি সরি, আমি অন্য বিষয়ে বলছি, মানে তুমি কোথায় ভর্তি হয়েছো?
আমি, আমি, ইতস্তত করলো ছায়া।
কি হলো, না মানে আমি ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছি।
ওহ, কখনো শুনিনাই এই নাম।
ছায়া অন্যদিকে মাথা ঘুরিয়ে রাখলো।
ওয়েটার এসে খাওয়া দিয়ে গেলে অনিক বললো, চলো শুরু করি।
দুজনে চুপচাপ খেতে লাগলেও দুজনের মন অন্য কথা বলছে, অনিক মনে মনে বলছে “এমন ইউনিভার্সিটি নিউইয়র্ক শহরে কিন্তু আমিই জানিনা”?
ছায়া মনে মনে নিজেকে ধিক্কার দিচ্ছে কেন সে অনিককে মিথ্যে বললো, কিন্তু বললেও তো সমস্যা।
ওয়েটার এসে খাওয়া দিয়ে গেলো ওদেরকে, ওরা খেতে শুরু করলে অনিক বললো, মেক্সিকান স্টেইকের জুড়ি নেই।
ছায়া ডিনার রোলে বাটার লাগিয়ে কামড় দিয়ে বললো, তাই, আমি এই প্রথম মেক্সিকান স্টেইক খাচ্ছি।
ওহ তাই, তাহলে খাওয়ার পরে বলো কেমন লেগেছে।
আপনি কি প্রায় এই ধরণের খাওয়া খেতে অভ্যস্ত, ছায়া জিজ্ঞেস করলো।
তা বলতে পারো, আমি নিজেও এই রান্না পারি।
কি বলেন, সত্যি?
হাঁ, মামা লুসি শিখিয়েছেন।
মামা লুসি মানে?
উনি আমার সেক্রেটারি, আমি মামা (মা) ডাকি, খুব ভালো মানুষ উনি, আমাকে নিজের ছেলের মতনই স্নেহ করেন।
তাই?
হুম।
একটা প্রশ্ন করি, ছায়া তাকালো অনিকের চোখে চোখ রেখে।
অনিক চোখ সরিয়ে নিয়ে বললো, কি প্রশ্ন?
আপনি বিয়ে করেছেন?
অনিক কিছুক্ষণ অন্যমনস্ক হয়ে থাকলো দেখে ছায়া বললো, কি হলো?
না কিছু না, আমি বিয়ে করিনি আর ব্যবসা নিয়ে খুব ব্যস্ত থাকি তো, এইদিকে নজর দেওয়ার সময় হয়নি।
ছায়া কথা না বাড়িয়ে খাওয়াতে মন দিলো।
খাওয়া শেষে অনিক বিল মিটিয়ে দিয়ে ছায়াকে বললো, চলো।
দুজনে যখন হাসপাতালে পোঁছেছে তখন খবর পেলো অপারেশন সাকসেসফুল হয়েছে।
ছায়া জিজ্ঞেস করলো, বাবাকে কি বেডে আনা হয়েছে?
না এখনো নয়, আরো ঘন্টা দুয়েক লাগবে, ঐ যে ডক্টর স্টিভেন্স আসছেন আপনারা উনার সাথে কথা বলুন, জানালো এটেন্ডেন্ট।
ওরা দ্রুত ডক্টরের সামনে গেলো, ডক্টর স্টিভেন হেসে বললো, অপারেশন সাকসেসফুল হয়েছে, আগামী আটচল্লিশ ঘন্টা উনাকে আমরা আইসিইউতে রাখবো যেকোন জরুরী অবস্থার জন্য, অবশ্য উনি এই আটচল্লিশ ঘন্টা উনি ঘুমিয়েই কাটাবেন।
বাবার কি সেন্স এসেছে, ছায়া জিজ্ঞেস করলো।
না না, এতো তাড়াতাড়ি তো সেন্স আসবেনা আর আসলেও উনাকে মেডিকেইট করা হবে ঘুমিয়ে থাকার জন্য।
উনার কোন সমস্যা হবে নাতো?
আশা করি হবেনা, কারণ উনার মাথায় যে ব্লক ছিলো তা খুবই অল্প ছিলো, যা সরিয়ে ফেলা হয়েছে, আচ্ছা আমি আসি এখন বলেই ডক্টর চলে গেলেন।
অনিক ছায়াকে নিয়ে রেস্টরুমে নিয়ে আসলো, ছায়াকে বসিয়ে নিজে গেলো কফি নিতে, কফি ডিস্পেনসারে পাঁচ সেন্ট দিলেই কফি পাওয়া যায়, দুজনের জন্য কফি নিয়ে ফিরে এলো অনিক, একটা কাপ ছায়াকে দিয়ে নিজেরটাতে চুমুক দিলো।
তা এখন কি করবে, অনিক জিজ্ঞেস করলো।
ছায়া তাকালো অনিকের দিকে, চোখে একরাশ শূন্যতা।
তুমি আজ বাসায় যাও, আনকেল তো এখন ঘুমে থাকবেন, তুমি বসে থেকে কি লাভ, বাসায় গিয়ে রেস্ট করো।
আমি এখন যাবোনা, বাবাকে নিয়ে আসুক, এরপর যাবো।
ঠিক আছে, অনিক হাল ছেড়ে দিলো।
আপনি চলে যান আজ, সন্ধ্যা হয়ে আসছে।
না আমি আছি, তোমাকে তোমার বাসায় দিয়ে আসবো।
বাসায় পোঁছে দিয়ে আসবেন?
হুম।
এতো কষ্ট করার কি দরকার, আমি এমনিতেই যেতে পারবো।
থাক, কোন কষ্ট হবেনা।
…………. চলবে।
ছবিঃ গুগল।
২৬টি মন্তব্য
শুন্য শুন্যালয়
বাহ! ক্যাফেটা তো সুন্দর। 🙂
পর্বটা ভালো লেগেছে। গল্প মনে হয়নি, সত্যিকারের ঘটনার মতো লেগেছে।
পড়ছি নিয়মিত ইঞ্জা ভাই।
ইঞ্জা
আপু, আপনাদের কাছে ভাইয়ের লেখা সবসময় জীবন্ত মনে হয়। 😆
সাবিনা ইয়াসমিন
ভাইজান, নেক্সট প্লিজ 🙂
ইঞ্জা
আপু চেষ্টা করবো দ্রুত দেওয়ার জন্য। 😆
সাবিনা ইয়াসমিন
ভাইজান, এমন গল্প একদমে পড়তে মন চায়। হঠাৎ করে থেমে গেলে ভালো লাগা বাড়ে, আবার অতৃপ্তবোধটাও থেকে যায় 🙂
ইঞ্জা
আপু একটা গল্প স্টেপ বাই স্টেপ লেখা বড়ই কঠিন কাজ, সময় একটু লাগেই।
মোঃ মজিবর রহমান
চলুক মজার মজার গল্প। ভাল লাগলো।
ইঞ্জা
ধন্যবাদ অবিরাম ভাই
নীরা সাদীয়া
চলতে থাকুক……
এই গল্পটা শুরু থেকে ভালো লাগছে।
ইঞ্জা
আপু, চেষ্টা করছি প্রেজেন্টেশনটা যেন ভালো হয়, দোয়া রাখবেন।
ছাইরাছ হেলাল
পড়লাম, বেশ তরতর করে এগিয়ে চলছে, চলুক।
ইঞ্জা
আপনারা পাশে থাকলে দৌঁড়ুবে ভাইজান।
ছাইরাছ হেলাল
বুড়োদের দিকে খেয়াল দিতে হবে।
হাঁটু ছিলে না যায়!
ইঞ্জা
😂
তৌহিদ
গল্পটা শুরু থেকেই ভালো লাগছে। সাবলীল লেখার জন্য আপনার গল্প পড়তে আমার খুব ভালো লাগে দাদা।
ইঞ্জা
অশেষ ধন্যবাদ ভাই, আপনাদের অনুপ্রেরণা আমাকে লিখতে সাহায্য করে। 😍
জিসান শা ইকরাম
নিজের চেনা জানা ঘটনার মত মনে হচ্ছে,
গল্প মনে হচ্ছেনা।
সুন্দর উপস্থাপনার কারনেই এমন মনে হচ্ছে।
পরের পর্বের অপেক্ষায়……..
ইঞ্জা
ধন্যবাদ ভাই, এমন সুন্দর মন্তব্য পাওয়া মানেই আমার লেখার গতি বাড়া। 😆
মাহমুদ আল মেহেদী
শুরু থেকে ভালো লাগছে আশা করি শেষটাও এমন করে ভালো লাগবে ।
ইঞ্জা
ভাই আপনারা পাশে আছেন যখন আমার লেখাটাও সুন্দর ভাবে শেষ হবে ইনশা আল্লাহ্।
রেজওয়ান
ভাল লাগছে পড়তে😇বেশ ইন্টারেস্টিং✌
ইঞ্জা
❤💕
কামাল উদ্দিন
অপারেশন সাকসেসফুল হলো জেনে ভালো লাগছে, অন্যথায় এখানে কি না কি ঘটে যেত। আর অনিকের ত্রীশ হাজার ডলারও যেতো……এগিয়ে চললাম ইঞ্জিনিয়ার ভাই।
ইঞ্জা
আনন্দ লাগছে ভাই। 😍
কামাল উদ্দিন
তাহলে আসেন দুজনে মিলে বগল বাজাই 😀
ইঞ্জা
😂😂🤣