–আস সাআলাইমু আলাইকুম।
কোন উত্তর নেই ।আবার বললেন তারপরও কোন উত্তর নেই।এবার আজিম সাহেব তার নাক বরাবর করে মাটিতেই বসে পড়লেন হঠাৎ বৃদ্ধ চেচিয়ে উঠেন।
–এ কি করছেন মাটিতে কেন?ঐ তোরা কই সাহেবরে বইতে দে।
এক লোক এসে তাদের বসতে দিল।বৃদ্ধ আবার খেলায় মগ্ন।
–দাদু আমরা আপনার কাছে এসেছিলাম কিছু জানতে…..আপনি কি আমাদের সাথে একটু কথা বলবেন?
বৃদ্ধ হা না কিছুই বলছে না।আজিম সাহেব আবারও বললেন।
–দাদু শুনেছি,আপনি নাকি ভাষা আনন্দোলন করেছিলেন।
–ভূল শুনেছ আমি কোন আন্দোলন ফান্দোলন করি নাই….. কথার লাইগ্গা কথা কইছি।আর ঐ সব জাইন্না কি লাভ?
–দাদু…চেয়ে দেখুনতো…চেয়ে দেখুনতো আমার চোখেঁ আপনার প্রতিচ্ছবি দেখা যায় কি না?
দাদু এবার আজিম সাহেবের দিকে তাকায়।কিছুক্ষন নিশ্চুপ কেবল তাকিয়ে থাকে।পাশে আজিম সাহেবের অন্য একজন ক্যামেরায় দাদুর ছবি বন্দী করে।দাদুর স্নহের সকল মায়া যেন আজিম সাহেবের চোখেঁ জলছবি হয়ে ধরা দিল।
–দাদু.. কিছু না বলুন অন্ততঃ আপনার জম্ম স্হানটা কোথায় তা যদি বলতেন?
দাদুর কাছ থেকে ঠিকানা তার নাম এবং তার বড় ছেলের নাম,বড় ছেলে কোথায় থাকেন কি করেন সব জেনে আজিম সাহেব সব নোট করেন।কিন্তু অবাক হন দাদুর বড় ছেলের নাম শুনে।দাদুর বড় ছেলের নাম এবং দাদুর নাম ঠিক আজিম সাহেবের বাবা এবং দাদার নামের অবিকল,ঠিকানাও মিলে যাচ্ছে……তাহলে এই বৃদ্ধটিই কি তার হারিয়ে যাওয়া দাদু ভাই?কেমন যেন প্যাচ লেগে গেল কাহিনীতে সে ঠিক মিলাতে পারছে না সত্যি কি?
–জানলাম আপনার জম্ম স্হানের কথা,এবার একটু বলবেন আপনার বীরত্ত্বের কিছু কাহিনী?
–বীরত্ত্ব!বীর..তাই যদি তোমরা ভাবতে তাহলে আজ আমাদের মত বীরেরা না খেয়ে অনাদরে প্রান দিতো না।বাঙ্গালী বীরত্ত্বের প্রথম স্বাক্ষী ভাষা আন্দোলন।সেই ভাষা আন্দোলনকারীদের তোমরা কি রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি দিতে পেরেছ ? পারো নি।প্রকৃত শহীদের কিংবা জীবিত ভাষা আন্দোলনকারীদের নামের লিষ্টও তোমরা রাষ্ট্রীয়ভাবে পূর্ণাঙ্গ করতে পারোনি।খোজঁ রাখনি যারা নিজের প্রান দিয়ে মায়ের ভাষাকে রক্ষা করে তোমাদের বাক স্বাধীনতা ফিরিয়ে এনেছিল। তাহলে আর কি জানতে চাও বলো,কি বলব তোমাদের একটি অকৃজ্ঞ জাতির কাছে?
আজিম সাহেব সে দিন আর কোন কথা বলতে পারেননি।তরুন প্রজম্ম হিসাবে নিজেকে নিজের বিবেককে ধিক্কার মনে মেনে নিয়ে চলে এলো।আজিম সাহেব বাসায় আসার সময় বৃদ্ধার তোলা ছবি গুলো প্রিন্ট দিয়ে নিয়ে আসতে ভূল করেননি।ঘরে সংগ্রহে রাখা তার দাদুর পুরনো ছবির সাথে সদ্য তোলা বৃদ্ধার ছবি মিলাতে ব্যাস্ত। তার সদ্য তোলা ছবিতে দাড়ি গোফ একেঁ কম্পিউটারে তা ম্যাচিংয়ের চেষ্টা করেন।এক সময় সে নিজেকে সেটিসফাই মনে করেন যে, এই সেই তার দাদু,,,,বাবার মূখে শুনা হারিয়ে যাওয়া দাদু ভাইটি।নিজেকে নাতী হিসাবে পরিচয় দিয়ে দাদুকে ঘরে আনতে আর যে দেরী সইছেঁ না আজিম সাহেবের কিন্তু ততক্ষনে অনেক রাত হয়ে গেছে তাই এখন নতুন দিনের নতুন সূর্য্যের অপেক্ষায়।
পরদিন ভোরে উঠেই আজিম সাহেব ফিরে পাওয়া দাদুকে ঘরে ফিরিয়ে আনতে তার ছোট মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে বের হয়ে গেলেন।দাদুর আশ্রীত বাড়ীর কাছা কাছি গিয়ে অবাক হন অনেক লোকজন দেখে, কারো কারো মাথায় টুপি,বাহিরে টেয়ারগুলোতে লোক জনের বসা এবং পবিত্র কোরআনের তেলওয়াতের সূর কানে আসছে…ভেবেছেন অন্য কেউ হয়তো ইন্তেকাল করেছেন।ধীরে ধীরে আরো কাছা কাছি লাশের খাটের সামনে দাড়িয়ে লোকজনকে যখন জিজ্ঞাস করে জানতে পারেন এটা ভাষা সৈনিক নাছির সাহেবের লাশ তখন আজিম সাহেব কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন লাশের খাটের পাশে।এলাকার স্হানীয় মাতব্বরদের কাছে আজিম সাহেব লাশের পরিচয় খুলে বলে লাশটিকে নিজ বাড়ীতে নিয়ে যাবার অনুরোধ করেন।মাতাব্বররাও তাই চাইছিল যদি তার কোন আত্ত্বীয় স্বজন থাকে তাহলে তাদের বুঝিয়ে দিবেন।
আজিম সাহেব মুধ্ধার খাটে কাফনের কাপড়ের উপর বাংলাদেশের পতাকার চাদরঁ দিয়ে ভাষা সৈনিককে কাধে তুলে নেন সাথে ছোট মেয়েটি ভারাক্রান্ত নয়নে পিতার সাথে সাথে হাটছে এবং আরো বেশ কিছু ভক্ত এবং এলাকার জনগণ আজিম সাহেবের সাথে হাটছেন জিকিরে সহিত।
“দেশ প্রেমিকের এমন করুণ মৃত্যু যেন আমাদের বিবেকের দরজাকে নাড়া দিয়ে গেল।
আজিম সাহেবের বিশাল অট্ট্রেলিকার খোলা উঠোনে বীর ভাষা সৈনিকের লাশের খাটটি রাখেন। ভারাক্রান্ত অশ্রু ভেজাঁ নয়নে আজিম সাহেব অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকেন সামনের দিকে। আজিম সাহেবের বাবা আকমল হোসেনকে পুলিশ হাতকড়া পড়িয়ে বাসা থেকে নিয়ে আসছেন তা দেখে আজিম সাহেবের ছোট্ট্র মেয়েটি বাবার কাছ থেকে দৌড়ায়ে তার দাদুকে জড়িয়ে ধরে।
-দাদু তুমিও কি বড় আব্বুর মত চলে যাবে?
আকমল সাহেব হাত কড়াঁ হাতে ছল ছল নয়নের জলে নাতিকে বুকে লাগান।সামনের দিকে তাকিয়ে অবাক হন…বাবা!ধীরে ধীরে লাশটির খাটের পাশে এসে একবার আজিম সাহেবের দিকে তাকিয়ে কাফনের খোলা স্হান দিয়ে বাবার নিথর দেহের মূখটি দেখে হঠাৎ আকমল সাহেব বাবা গো বলে চিৎকার দিয়ে খাটের পাশে হাটু গেড়ে বসে পড়েন।অনুসূচনায় চোখে সাগরের জল বয়ে যায়।মায়ার বন্দনে আবেগের কাছে পরাজিত হয়ে কিছু ….অপ্রকাশিত
চলবে…
১২টি মন্তব্য
নীহারিকা
(y)
মা মাটি দেশ
-{@ (y)
রিমি রুম্মান
-{@ অপেক্ষায়…
মা মাটি দেশ
(y) -{@
ছাইরাছ হেলাল
আমাদের বিবেক এখন আর আমাদের নাড়া দেয় না ।
চলুক ।
মা মাটি দেশ
ঠিক বলেছেন ভাইয়া বিবেকের মাঝে খড়া লেগেছে -{@ (y)
শুন্য শুন্যালয়
বিবেক আর আবেগে চলে না ভাইয়া… বড়ই মন খারাপ হয় এমন লেখা পড়লে…
অপেক্ষায় রইলাম…
মা মাটি দেশ
যার মন তারতো খারাপ লাগবেই তবে কষ্ট এখানে যে মুক্তি যুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি ক্ষমতায় তারাও দেখি মাঝে মাঝে রাজাকারের সঙ্গ নেয়….আর মুক্তি যুদ্ধ কিংবা অন্যান্য আন্দোলনে সংগ্রামীদের সঠিক তালিকা তৈরী করছেন না যা করেন তা আবার পরবর্তী অন্য সরকার এলে মুছে ফেলে কিন্তু কেনো?মহান সংগ্রাম গুলির সঠিক তথ্য সংগ্রহে এক হতে পারিনা? (3 (y)
খসড়া
-{@
মা মাটি দেশ
ধন্যবদ
জিসান শা ইকরাম
বিবেক হিমাগারে চলে গিয়েছে আমাদের ।
ভালো লিখেছেন ।
পরের পর্বের জন্য অপেক্ষা —
মা মাটি দেশ
ধন্যবাদ -{@ (y) ভাইয়া…