বন্ধু মানেই এলিয়ে দেয়া নিরাপত্তার নি:শ্বাস…
বন্ধু মানেই এলিয়ে দেয়া নিরাপত্তার নি:শ্বাস…

 

তিরি-প্রিয়-অহম-রিনী-প্রাঞ্জল-পিউ এবং অতিথিবৃন্দ: কথোপকথন: (**দ্বিতীয় পর্ব**)

অহম – আপনাদের নানা-নাত্নীর আনন্দ, গল্প বলা এতো মজার! খুব ভালো লাগে এমন সম্পর্ক আমার।
তিরি – আপনার নাত্নী! এই বয়সে দাদু, আপনাকে তো দেখে লাগছেই না!
জিসান শা ইকরাম – তিরি আপু বুড়ো হয়েই গেছি, দেখে কি আর লাগে বলুন!
অহম – জানিস তিরি, জিসান ভাইয়ের লেখার হাত অসাধারণ! চোখে পড়বেই, আর পড়ার পর তার রেশ কাটানো অনেকটাই কঠিন। আর ছাইরাছ হেলাল ভাইয়ের কবিতায় চৌম্বকীয় টান আছে।
ছাইরাছ হেলাল – এ আপনার বড়ো মনের মানসিকতা অহম।
অহম – তিরি একটা কবিতা শোন, আমার মুখস্থ হয়ে গেছে। কবিতার নাম ‘শেষের ছাপচিত্র’

হে গ্রন্থিক,
গ্রন্থ খোল,পথচিত্রটি দেখাও,হাতের রেখায় ভাগ্য গণনার ছাপচিত্রে,দেখাও কতটা পথ এলাম আর যেতেই বা হবে কতটা পথ,
কোত্থেকে এলাম এ যাত্রা যাচ্ছিনে সে প্রশ্নে।
দুঃখে দুঃখে, সুখে সুখে, সুখের দুঃখে,দুঃখের সুখে পা টিপে টিপে লাফিয়ে লাফিয়ে এসে হাঁপ উঠে গেছে,দীর্ঘশ্বাসে ভারী এ বুক।
পাচ্ছি না দেখতে ঝাপসা দৃষ্টিতে শেষের ঠিকানা বা ঠিকানার শেষ।

সক্রিয় নিষ্ক্রিয়তায় দূর নিশীথে শুনি স্বজনের সুনিপুণ হারপুন যন্ত্রণার অন্তর্জ্বালার হূহু কান্না।
কান্না,কাঁদো তুমি এবার মন ভরে রক্তঝরা চোখে স্নেহময়ী জনপদবধুর বেশে। কেঁদে পার পাবে ভেবেছ?পাবে না।

প্রতীক্ষারা প্রতীক্ষা করে সোঁদাগন্ধা নরমকঠিন মাটির বুকে কান পেতে,
শুনবে বলে পাখিদের গান নদীর কলতানে সুর মিলিয়ে ব্যথার ইন্দ্রধ্বনীতে।মৃত্যুহীন মৃত্যুভৈরবীর মুখে।

হে গ্রন্থিক,
বয়ে চলা অগ্নিনদীতে বরফনদীর পথ দেখাও,
কাতরতায় দিশেহারা দহন তীব্রতার মানচিত্রের পথচিত্র দেখাও:
এবারে,শুধু এবার,শেষবার।

অহম – হাততালি কেন?
সহযোগে – আপনি এতো ভালো আবৃত্তি করেন?
তিরি – ওর দূর্দান্ত আবৃত্তি করতো একসময়। গানেও বেশ।
অহম – গানে আমি!!! এদিকে যে আমার পাশে দাঁড়িয়ে আছেন উনি হলেন গানের। রবীন্দ্রনাথকে কি বলে ডাকেন উনি জানেন? ‘আমার বুড়ো’ বলে। আচ্ছা ভেবে দেখুন তো কোনো রবীন্দ্রবিশারদ/শিল্পী শোনে যদি ওর খবর করে ছাড়বে না? একটা কথা বলে রাখি, তিরি আমায় আবৃত্তি শিখিয়েছে।
প্রিয় – আরে ভর দুপুরে, এখন আর গল্প না। বেচারা পাকস্থলীকে একটু যত্ন নিতে হবে তো! রিনী এদিকে একটু আসবে প্লিজ? শোনো খাবার অর্ডার করেছি। কিছুক্ষণের মধ্যে চলে আসবে। দু’ ধরণেরই খাবার ইতালিয়ান আর চায়েনিজ, যে যা পছন্দ করে। ঠিক আছে না?
রিনী – ভালোই করেছো। আচ্ছা তুমি ওদিকে দেখো, আমি খেয়াল রাখছি।
প্রিয় – থ্যাঙ্কস রিনী। প্রাঞ্জল তোমার বৌকে একটু খাটিয়ে নিচ্ছি।
প্রাঞ্জল – কবে থেকে এতো ফরমাল হলে?
অহম – হ্যা হ্যা আসুন, ডায়েনিং-এর চেয়ার আপনাদের অপেক্ষা করছে।
প্রিয় – খেতে খেতেই পরিচয় পর্ব চলুক।
ব্লগার সজীব – আমি ব্লগার সজীব।
অহম – লেখা থেমে গেলেই যিনি মামলার ভয় দেখান আমায়। কিন্তু আজও উকিল নোটিশ পাইনি।
ব্লগার সজীব – তার আগেই তো ডেকে নিলেন। এই যে ঘুষ পেয়ে গেলাম। দেখা হয়ে গেলো আপনাদের সবার সাথে। আড্ডাটা পেয়ে যাবো ভাবিনি কোনোদিন। জানেন তিরি আপনার গল্প…
অহম – সজীব আবার ভালো এবং দুষ্টু-মিষ্টি একজন প্রেমিক। তবে উনার লেখায় প্রেম থেকে বাস্তব এবং অনেক ধরণের লেখার উপাদান পাওয়া যায়। আচ্ছা সজীব বলুন, কি নেবেন? নিয়ে নিন প্লিজ।
তিরি – থামিয়ে দিলি কেন অহম? সজীব বলুন না, আমায় নিয়ে লিখছে নাকি অহম আপনাদের ব্লগে?
সজীব – না, তা নয়! মানে আপনার গল্প শুনেছি।
নুসরাত মৌরিন – এই যে এখানে আমিও আছি। আমার পরিচয়টা দিতে চাই, একটু সুযোগ দেবেন সবাই?
তিরি – ওহো, স্যরি স্যরি। আপনি…
নুসরাত মৌরিন – আমি নুসরাত মৌরিন নামে পরিচিত।
অহম – যার কাছে মা-ই সব। এখনও মায়ের হাতে ভাত খান। তিরি তুই উনার লেখা পড়লে চোখ শুধু না, মনও ছলছল করবে।
নুসরাত মৌরিন – আমার পরিচয় ফিরিয়ে নিচ্ছি। এতো প্রশংসায় আমার কেমন কেমন জানি লাগছে! যাক, এই যে আমার পাশে ইনি হচ্ছেন মিথুন।
অহম – আপনি মিথুন! যে একেকটা পোষ্ট দিয়ে যান ব্লগে অনিয়মিত হয়েও। টানে আপনার লেখা। আমায় মিথুন কি বলেছে জানিস তিরি, উনাকে না বললে আমার নাকি খবর হবে।
মিথুন – আসলেই আজ আমায় না জানালে…
অহম – কি করতেন? পোকা-মাকড় পাঠিয়ে দিতেন? ভালোবাসার নামে তো এখন ভয় করে।
মিথুন – ভয় পাবার কিছু নেই। হিংস্র যদি কেউ হয়, তাহলে সেটা মানুষ। এরা কোনদিক দিয়েই হিংস্র নয়।
সীমান্ত উন্মাদ – আর আমি উন্মাদনীয় লেখা নিয়ে আছি। রম্য লিখি।
অহম – আপনার লেখা তিরিকে দেবো। ও আবার রম্য রচনা পড়তে খুব ভালোবাসে। আজই ওকে প্রিন্ট করে দেবো আপনার লেখা। আচ্ছা আমার মনে হচ্ছে আপনি অরণ্য। পাগলীর জন্য মন আনচান করে যার। জানিস তিরি উনার লেখায় অন্যরকম এক ধরণের নেশা আছে। অরণ্য আপনার একটা কবিতা বেশ লাগে আমার। ‘কিছু একটা করা চাই’।

মাথা কাজ করছে না, কিছু একটা করা চাই
কি করি বলো তো?
কিছু একটা বলো।
ঠিক আছে, একটা শব্দ বলো তোমার পছন্দের।

: পাগলামো

বর্গীয় বর্ণের এ খুঁটিতে হাত কেন?
আর কোন অক্ষর নেই, পাগলি কোথাকার!
করছো তো একটি কাজই – সারাক্ষণ!

হেই! বছর তো শেষ হয়ে গেল!
এক শব্দে বছর বলো তো।

:হারালাম

হুম! ভাববার বিষয় তো বেশ!
কিছু বুঝি হারিয়েছ এ বছরে?
নাকি হারালে কাউকে
যাকে খুঁজে পেলেও গ্রহন করবে না কোনদিন?
নাকি হারিয়ে দিলে কাউকে?
কিংবা নিজেই হারালে নিজেকে?
হাসছ কেন?
বলো, হাসছো কেন?

: কিছু একটা করা চাই।
কিছু একটা করা চাই তোমার, বুদ্ধু!

তিরি – বাহ! দারুণ তো!! ওই যে শুধু শুনেই যাচ্ছেন আপনার নাম কি?
স্বপ্ন – আমি স্বপ্ন, স্বপ্ন দেখি এবং দেখাই।
তিরি – তাই বুঝি? তা স্বপ্ন পূরণ করাতে পারেন? নাকি শুধু দেখানই?
স্বপ্ন – পূরণের দায়িত্ত্ব নিইনি তো।
তিরি – স্বপ্ন তো নিজেরাই দেখে নিতে পারি। আচ্ছা তারপরেও আমায় একটা স্বপ্ন দেখান। দেখি কেমন স্বপ্ন দেখাতে পারেন!
স্বপ্ন – আমি যা বলবো, তাই করবেন কিন্তু। তবে খুব তাড়াতাড়ি। চোখ বুঁজুন। কি দেখছেন? যা দেখছেন, সেটা পূর্ণ হবে।
তিরি – সত্যি! আচ্ছা দেখি, অহমকে বলবো পূর্ণ হলে। ও আপনাকে জানিয়ে দেবে। আর আপনি?
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ) – আমি মনির হোসেন মমি।
অহম – এতো লেখা মনের ভেতর খেলে আপনার? অবাক লাগে। আপনার দেশ এবং রাজনৈতিকভিত্তিক লেখাগুলো দারুণ!
ইমন – আমি ইমন।
অহম – ‘Let me live my life first please.’ দেয়া হলো। 😀
জিসান শা ইকরাম – একজনের সাথে কথা বলবেন অহম?
অহম – কে? রিমি রুম্মান?
জিসান শা ইকরাম – কি করে বুঝলেন?
অহম – মনে হলো। উনি তো বাইরে থাকেন। সহজ ভাষায় যেভাবে প্রতিদিনকার চোখে দেখে লেখেন, আমি উনার ভক্ত। কখনো দেখা হবে নাকি, কে জানে! নাহ থাক আশা করি দেখা হবে, তখন অটোগ্রাফও নিয়ে নেবো।
জিসান শা ইকরাম – আর এই যে কবি, তার লেখায় আগুণ জ্বলে।
অহম – নিশ্চয়ই তানজির খান? কিন্তু এই আগুণ তো গভীর আবেগের।
তানজির খান – অহম তাই? আপনি এভাবে বলছেন, তবু যাক রাগী তানজির আখ্যা থেকে কিছুটা মুক্ত হলাম। আচ্ছা আর এই যে আমার পাশে ইনি হিলিয়াম এইচ ই।
অহম – কোথা থেকে পান গল্পের এতো সুন্দর প্লট? আপনি কি জানেন আপনার গল্পের একজন ভক্ত আমি?
হিলিয়াম এইচ ই – মনের ভেতর চলতেই থাকে অনেক অনেক কিছু। ভাবনাগুলোর সব অক্ষরে চোখের সামনে আসেনা, যা আসে সেসবই আপনাদের সামনে নিয়ে আসি। এইতো আমি। আমার গল্প।
তিরি – বেশ বলেছেন। ভালো লাগলো আপনার কথাগুলো।
আদিব আদনান – বাহ রে সবাই সবার মতো পরিচিত হয়ে নিচ্ছে। আমাকে একটু চান্স দেবেন?
তিরি – এইতো ভুল করলেন। কেউ চান্স দেবে না, নিয়ে নিতে হয়।
আদিব আদনান – আমার নাম আদিব আদনান।
অহম – আপনি তো শাকচুন্নীর প্রেমে পড়েছিলেন, তাই না?
আদিব আদনান – এই সেরেছে! এই লেখাটা কারোও মন তেমন করে কাড়েনি। আর আপনি এটাই মনে রেখেছেন?
অহম – কি করবো বলুন! শাকচুন্নী খুঁজছি, পাচ্ছিনা তো!
রিনী – অহম কি বললি এসব! সবাই রাজকন্যা চায়, আর তুই!
পিউ – চিন্তা নেই অহম, আপনার জন্যে খুব শীঘ্রি শাকচুন্নী এনে দেবো।
অহম – আমি ধন্য হবো মিস পিউ।
জিসান শা ইকরাম – অহম, ইনি হচ্ছেন পারভীন সুলতানা।
অহম – আপনার লেখায় নারীদের বাস্তব জীবন যেভাবে তুলে আনছেন, তার জন্যে স্যাল্যুট পারভীন সুলতানা আপা। লিখুন আরোও।
পারভীন সুলতানা – মুক্তিযুদ্ধর পর ভেবেছিলাম নারীদের আর অসম্মানিত হতে হবেনা। কিন্তু দেখেই যাচ্ছি আমার সব ধারণা ভুল। নারী হয়ে যদি নারীদের জীবনের কথা না তুলে ধরি, তাহলে তো নারী জন্মই বৃথা।
তিরি – আপা খুবই লাগলো আপনার সাথে পরিচিত হয়ে। আচ্ছা ওদিকে আরোও খাবার আছে, নিয়ে নিন প্লিজ। এমন সময়ে এলেন সবাই আপনারা কিছুই তেমন করতে পারলাম না।
মারজানা ফেরদৌস রুবা – কোনো চিন্তা করবেন না তিরি, আমরা নিয়ে তো নিচ্ছি।
তিরি – আপনি……?
মারজানা ফেরদৌস রুবা – আমি মারজানা ফেরদৌস রুবা। ব্লগে লিখি।
অহম – আর এতোটাই সুন্দর লেখেন, বাস্তব তুলে আনা অনেক কঠিন জানেন তো? আপনি ১০০ তে ১০০ পেয়েছেন।
মারজানা ফেরদৌস রুবা – ওরে বাবা এ কি বললেন! অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে অহম।
নীতেশ বড়ুয়া – কেউ কি অ্যাটেন্ডেন্স খাতায় আমার নামটা ডাকবেন? তা নইলে তো ক্লাশের মতো হাত তুলে প্রেজেন্টটা দিতে পারবোনা।
অহম – আপনার কথাতেই বুঝে গেছি আপনি নীতেশ বড়ুয়া। তা নতূন মিশনে হাত দিয়েছেন?
নীতেশ বড়ুয়া – আপাতত আবার নিজেকে খুঁজতে শুরু করেছি। তারপর আবার দেখি কোন মিশনে যাওয়া যায়!
তিরি – মিশন বলতে? আপনি কি নাসায় আছেন? নাকি সেনাবাহিনী, গুপ্তচর?
নীতেশ বড়ুয়া – এসব কিছু না। অহম মজা করছে। একটা গল্প লিখেছিলাম, তার কথা বলছেন উনি।
অহম – তা সেদিন আপনার মন্তব্য পড়লাম আপনি নাকি খুব রাগী?
নীতেশ বড়ুয়া – ওসব মজা ছিলো। যে রাগী, সে কি কখনো বলে?
প্রিয় – এই অহম যা অবস্থা উনাদের নিয়ে লিভিং রুমে আসো। এখানে তো বসার জায়গাই নেই। আর ওই যে ওদিকে একজন ভদ্রলোক দাঁড়ানো, প্লেট তো দেখছি খালি!
অহম – আমি আপনাকে চিনি। আপনি মোঃ মজিবর রহমান, তাই না?
মোঃ মজিবর রহমান – কিভাবে চিনলেন?
অহম – ব্লগ আইডিতে আপনার ছবি দেয়া আছে তো।
মোঃ মজিবর রহমান – ওহ তাইতো!
অহম – অনেক কম লেখেন, কিন্তু যা লেখেন সেসব এককথায় মানবিক মন-মানসিকতায় ধাক্কা দেয়।
তিরি – আচ্ছা এখন তো সবাইকে খেতে দে। লিভিং রুমে আসুন সবাই। দাঁড়িয়ে খাচ্ছেন।

ক্রমশ প্রকাশ্য

হ্যামিল্টন, কানাডা
১৫ জুলাই, ২০১৫ ইং।

২০৭৩জন ২০৭২জন
0 Shares

৪৮টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ