প্রায়ই নানা ঘটনা শুনি, লেখি এবং নানাকিছু শিখি। কিন্তু নিজের চোখে দেখা অভিজ্ঞতা খুব কম।
আজ ময়মনসিংহ জয়নুল আবেদীন সংগ্রহশালার সামনে দিয়ে যাচ্ছিলাম আমি আর আমার এক বান্ধবী। এমন সময় আমাদের অপর পাশ দিয়ে ক্রস করছিল এক রিকশাচালক। হঠাৎ রিকশাচালক আমার সাথে থাকা মেয়েটার সাথে অসভ্যতা করে জোরে রিকশা চালিয়ে চলে যাচ্ছিল। আমি ঘটনার আকস্মিকতায় এতটাই হতভম্ব হয়ে গেছিলাম যে, বুঝতেই পারিনি ওর সাথে কি ঘটেছে। এরপর ধরে নিলাম হয়ত ওর মোবাইল নিয়ে গেছে। ও রিকশাওয়ালার পেছনে দৌড়াচ্ছে। আমিও তার সাথে দৌড়াচ্ছি, ফ্রেন্ডের বিপদে তো ছেড়ে আসা যায় না। এমন সময় মোটর সাইকেলে এক ভাই পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি ঘটনা আন্দাজ করতে পেরে রিকশাওয়ালাকে ধাওয়া করেন এবং ধরে ফেলেন। এসময় পাশ দিয়ে একজন পুলিশ যাচ্ছিলেন। তিনি ঘটনা শুনে এগিয়ে আসেন এবং ঐ লোকটার রিকশায় উঠে থানায় যান। সেই সাথে, আমাদেরকেও বলেন থানায় যেতে। সেই মোটর সাইকেল আরোহী ও থানায় আসেন। তারপর পুলিশ আমাদের নাম ঠিকানা জেনে নেন। ঐ লোকটার সকল তথ্য জেনে নেন।লোকটাকে হাজতে রাখেন।
এরপর থানার ওসি আসেন। তিনি এসে লোকটাকে কিছুটা সাজা দেন। তারপর লোকটার বৌ বাচ্চার কথা ভেবে ভিকটিম তাকে মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দেয়।
ওসির অনুরোধে আমরা কোন ছবি আপলোড দিলাম না।
*** আমি নারীদেরকে নিয়ে নানা কথা লিখি, সচেতনতা তৈরী করার চেষ্টা করি, নানান পোস্ট শেয়ার করি। কিন্তু কোনদিন কোন আউটপুট পাব, এতটা প্রত্যাশা করিনি। আমার বান্ধবী (ভিকটিম) সবশেষে বললো,
“দোস্ত, তোর প্রোফাইলে Nadia Onie এর লেখা একটা শেয়ার করা স্ট্যাটাস দেখেই আমি এই সাহসটা পেয়েছি। ”
অসংখ্য ধন্যবাদ ময়মনসিংহের ২ নং পুলিশ ফাঁড়ির সকল পুলিশ সদস্যকে, যারা আমাদেরকে সহায়তা করেছেন। আরো যারা সাধারন মানুষ আশেপাশে ছিলেন এবং আমাদেরকে সাপোর্ট দিয়েছেন, তাঁদের প্রতি রইলো একরাশ কৃতজ্ঞতা।
***যারা মেয়েদের পোশাক নিয়ে চুলচেড়া বিশ্লেষণে নেমে যান, তাদের উদ্দেশ্যে বলছি: আমি এবং আমার সাথে থাকা মেয়েটি, কারোরই কোন অশালীন পোশাক ছিলো না।
===================
ময়মনসিংহ,
২/৫/২০১৮
১৯টি মন্তব্য
ইঞ্জা
আপু আমি রিক্সাওয়ালার এই শাস্তি মেনে নিতে পারছিনা, সে একজন নারীর সাথে অসভ্যতা করলো আর আপনার বান্ধবী রিক্সাওয়ালার বউ বাচ্চার কথা চিন্তা করে লগু শাস্তি দিয়ে ছেড়ে দিলো যা খুবই দুঃখজনক, এই ধরণের হাল্কা শাস্তি পেয়ে ছাড় পেয়ে সে আরো মেয়ের সাথে অসভ্যতা করার সুযোগ পেলো। :@
নীরা সাদীয়া
ভাই,সমস্যাটা হলো, একে শাস্তি দিতে গেলে মামলা করততে হবে। মামলা মানে এদেশে কেমন প্রহসন তাতো বোঝেনই! বহুদিন পর মামলার শোনানীর ডেট দিবে। মেয়েটাকে গিয়ে সাক্ষী দিতে হবে! প্রতিবেশী জানবে। পুলিশের যাতায়াত হতে পারে তার বাসায়। লোকেতে লোকেতে ফিসফিশানি বাড়বে। সবশেষে রিকশাওয়ালার সাজা হবে হয়ত, তারতো কোন সম্মান নেই। কিন্তু মেয়েটার সম্মান যতটুকু ছিলো তাও যাবে। বুঝলেন?
এসব ভেবেই সে মামলা করেনি।
ইঞ্জা
এতো কিছু চিন্তা করার কারণেই তো আমাদের মেয়েরা কোণঠাসা, দূর্বৃত্তরা জানে তারা তেমন শাস্তি পাবেনা কারণ আপনাদের লাজলজ্জা বেশি, এতেই তারা বানরের মতো মাথায় উঠে ডুগডুগি বাজায়। :@
জিসান শা ইকরাম
অত্যন্ত প্রশংসনীয় একটি পদক্ষেপ নিয়েছ। এভাবেই সাহস করে এগিয়ে যেতে হবে।
বাংলাদেশের মেয়েরা লজ্জার জন্য অনেক কিছুই সহ্য করে, এটি আমাদের সামাজিক অবস্থার চাপেই হয়।
লজ্জা এবং ভয়কে জয় করে ইভ টিজারদের উচিৎ শিক্ষা দিতে হবে।
ধন্যবাদ এমন লেখার জন্য।
নীরা সাদীয়া
সমাজ তখন মেয়েটিকে কোণঠাসা করে দিবে। টিজার হয়ত করেছে সামান্য কিছু। কিন্তু লোক জানাজানি হলে তারা মুখে মুখে রটিয়ে দেবে, অমুকের মেয়ের রেপ হয়েছে! বোঝেন তখন কী অবস্থা হতো? তখন মেয়েটাকে কে সাপোর্ট দিত? কেউনা। অাপনারা পাত্রী দেখতে গিয়ে এ ঘটনা জেনে পিছিয়ে আসতেন। বলেন, সত্যি কিনা?
যাই হোক, ঐ টিজার এতটুকুও প্রত্যাশা করেনি যে তাকে থানায় যেতে হবে। আমার মনে হয় আরেকটা মেয়ের দিকে হাত বাড়ানোর অাগে এ ঘটনা তার মনে পড়বে!
গালিবা ইয়াসমিন
এভাবেই সব মেয়েকে শক্তিশালী হয়ে উঠতে হবে , ধন্যবাদ আপনাকে লিখাটা প্রকাশ করার জন্য ।
নীরা সাদীয়া
শুভকামনা জানবেন।
মৌনতা রিতু
আমি যদি কখনো রেগে যাই এমন অবস্থায় তবে তাকে মার অবশ্যই খেতে হয়।আমি মারব তারপর আমার শান্তি। মারবই। কলেজে স্কুলে থাকতে আমার এমন অনেক কাহিনী আছে। হুম, অনেকসময় আমার খারাপ লাগে না যে তা না, লাগতো। তবু পিটাইতাম।
ভাল লিখেছো বাস্তব অভিজ্ঞতা। লিখছো কম কেনো? কেমন আছো।? ভাল থেকো সব সময়। (3
নীরা সাদীয়া
তাকে মারার ইচ্ছে ছিলো। কিন্তু তার আগেই পুলিস চলে আসে। যাই হোক।
আমি ভালো অাছি। তবে জবের পড়া নিয়ে বিজি থাকি আপি। তাই কম আসি।
আপনারা সবাই ভালো আছেন তো?
মোঃ মজিবর রহমান
আপু আজ অনেক সচেতন হয়েছে। অনেক পুলিশ সদস্য ভাইয়েরা এগিয়ে আসছে। সামনে আরো অনেক সামাজিক উন্নতি হবে আশা রাখি।
নীরা সাদীয়া
ঠিক বলেছেন ভাই।
শুভকামনা রইলো।
মোঃ মজিবর রহমান
হ্যাঁ দেশে একজন পুলিশ মানে আমি মনে করি ১০ জন সাধারণ মানুষ উজ্জিবিত।
নীরা সাদীয়া
একদম তাই।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
এ ভাবে আপনার মতই এগিয়ে আসতে হবে নারীদের।অভিনন্দন আপনাকে । -{@
নীরা সাদীয়া
ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।
নীলাঞ্জনা নীলা
প্রতিটি নারী যদি এভাবে এগিয়ে আসেন, এ দেশে আর কোনো নারী অত্যাচারিত হবেনা।
আমার মতে প্রতিটি মেয়েরই উচিৎ মার্শাল আর্টে ভর্তি হওয়া।
আপুনি লেখাটা ফেবুতে পড়েছি। তোমাকে এবং তোমার বান্ধবীকে স্যাল্যুট! (y) -{@
নীরা সাদীয়া
ঠিক বলেছেন। ধন্যবাদ, শুভকামনা।
তৌহিদ ইসলাম
আপনার মত সাহসী মানুষ সমাজে থাকলে আরো অনেক কিছুই প্রতিরোধ করা সম্ভব। সবার অনুপ্রেরণা হয়ে থাকুন। শুভ কামনা।
নীরা সাদীয়া
অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনারা ভাইয়েরাও পাশে থাকুন। শুভকামনা রইলো।