আহা! কি আনন্দ,,//

রোকসানা খন্দকার রুকু ৫ নভেম্বর ২০২০, বৃহস্পতিবার, ০১:৪৪:৪৭অপরাহ্ন গল্প ২৩ মন্তব্য

রান্না হয়েছে সুগন্ধি চালের ভাত, খাসির রানের মাংস আর কচি মুরগীর ঝোল। রহিম শেখ তার ছয়ছেলেমেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে দস্তরখানা পেতে খেতে বসেছেন। খাওয়া শেষে মিষ্টি মুখ করে ঢেঁকুর তুললেন। দস্তরখানা আর মিষ্টি দুটোই সুন্নাত। আমাদের নবী অবশ্য পেটের একভাগ খালি রেখে খেতেন। মাঝেমাঝে উপোষ থাকতেন খাবারের অভাবে। করিম শেখের খাবারের অভাব নেই।

করিম শেখ তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করেন তাই গভীর রাতে ওঠেন। এখন ঘুমাবেন যোহরের নামাজের আগ পর্যন্ত। নামাজ পড়বেন মসজিদে জামাতের সাথে এবং ঈশা পর্যন্ত থাকবেন। মসজিদে কওমী ও হেফজ বিভাগ খুলেছেন। সেখানকার বাচ্চাদের তদারকি করবেন। ক্যাশের হিসাবপাতি করবেন। কত কাজ তার আর কি কাজ করবেন।

দাওয়ায় বসে তার মা ভাত খাচ্ছে শাকভাজি, কাঁচা মরিচ চিবিয়ে। খেতে খেতে বারবার খুঁজছে আশেপাশে – কে ওখানে, কে? তরকারী নিয়ে এসেছিস নাকি? গলায় শুকনা ভাত লেগে গেল। ঢকঢক করে পানি খেলেন। মুরগির ঝোল খায়না অনেকদিন। রান্নার গন্ধ ভালোই শুনেছে। আবার দেখলো কেউ নেই, মনের ভুল কিংবা প্রত্যাশা। পরহেজগার, দিনদ্বার মানুষের মা তার কথা শুনবে?  কিন্তু কুলসুম বেওয়া পর্দা করেনা, গ্রামে ঘুরে বেড়ায়। সবার সাথে কথাও বলে। মহিলা মানুষের পর্দা করা ফরজ। যে মহিলা পর্দাহীন সে দাউস। আর দাউসের সাথে মেলামেশা হারাম। তাই মাকে তিনি পরিত্যাগ করেছেন। এতে কোন পাপ নেই! এমন মায়ের পায়ের নিচে বেহেশত কি হবে?

দেশটা রসাতলে যাচ্ছে। সব ইংরেজি শিক্ষার পেছনে ছুটছে। আরবি শিক্ষার প্রতি কারও তেমন গা নেই। তিনি নিজে মোটামুটি এলেম কালাম আয়ত্ব করেছেন। তা ছড়িয়ে দিতেই পাশের মসজিদে হেফজখানা ও কওমী খুলেছেন। দুরদুরান্ত থেকে ছাত্ররা পড়তে এসেছে। তারা বেতনও দেয়। সেটা দিয়ে তিনি একজন শিক্ষক রেখেছেন তার বেতন দেন। গ্রামের প্রায় প্রতি বাড়িতেই একজন করে ছাত্রের খাবারের ব্যবস্থা করা। সকালে খেয়ে, দুপুরের নিয়ে আসে আবার রাতে খেতে যায়। গরীব বাপমায়েরা সপ্তাহে খাবার দাবার নিয়ে আসে। ছাত্ররা যাতে কোন সমস্যায় না পরে তাই করিম শেখ আগে সব বাটি থেকে একটু একটু করে কলিজা, ডিম খেয়ে দেখেন। তারপর ফুঁ দিয়ে দেন।

বেতন ছাড়াও ধান পেকে গেলে ছাত্ররা কয়েকদলে ভাগ হয়ে বাড়ি বাড়ি ধান তোলে। কৃষকের ধান না হলেও সওয়াব ও বেহেশত্ লাভের আশায় তারা বস্তা ভরে ধান দেয়। ধান বিক্রি করে মোটা অংকের টাকা পাওয়া যায়। সবটাই উন্নয়ন কাজে ব্যবহার হয়। উন্নয়ন বলতে সেই শুরুর টিনের দোচালা ঘর মেঝে বাঁধানো তাই আছে। ছাত্ররা শীতেও মেঝেতে ঘুমায়। মাঝখান থেকে করিম শেখের বেড়ার বাড়ি তরতর করে পাকা হয়ে টাইলস্ হয়েছে। এতে পাপ বা হারাম কিছু নেই। এত শ্রম দিচ্ছেন তারও তো হক বা পাওনা আছে। এ জীবন তো আল্লাহর রাহেই চলছে। এই যে বউয়ের আল্লাহ বছর বছর বাচ্চা দিচ্ছে সবই রহমত। আবার তাঁর রহমতেই সংসার চলছে। মৃত্যুর শেষ পর্যন্ত তিনি এ কাজ করতে চান। গ্রামের মানুষ অনেক খুশি। আরবী শিক্ষা হচ্ছে। এজন্য অবশ্য করিম শেখকে অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে।

আশেপাশের চল্লিশ বাড়ি প্রতিবেশী। তাদের দেখভাল করা দরকার। পাশের বাড়ির মরিয়ম নামাজ পড়ে কিনা কে জানে, বেপর্দা মহিলা। স্বামী মারা গেছে দুই মেয়ে রেখে। জমিজিরাত দেখাশোনা হাঁস-মুরগী, গরু-ছাগল পালন করে মেয়েদের কলেজে পড়াশুনা করাচ্ছেন। মেয়েদুটোও মায়ের মত বেহায়া হচ্ছে। মহিলাদের লেখাপড়া আবার কি? আরবি শিক্ষার পরে বিয়ে দিলে বাকি জীবন স্বামী সেবা করে কাটিয়ে দেবে। স্বামীর পায়ের নিচে বেহেশত্। রহিম শেখের সারাক্ষন তাদের বেহায়াপনা দেখতে হয় সাথে অন্যান্য যন্ত্রনা তো আছেই।

কালও মুরগি এসেছিল বিষটোপ দিয়ে মেরে, ফেলে দিয়েছেন। কলাগাছের পাতা-ডাল তার বাড়িতে ছায়া দেয়। তাই অন্ধকারে থোরসহ কলাগাছ কেটে ফেলে দিয়েছেন। গরুর বাছুরটা দড়ি খুলে চলে এসেছে তার বাড়িতে। এ বাড়িতে মরিয়মের ঢোকা নিষেধ। কারন বেপর্দা মহিলার সাথে তার স্ত্রীরও দেখা করা নাজায়েয। আর রহিম শেখের স্ত্রী অতীব সুন্দরী। বাড়িতে ও বোরকা পড়েন। সারাদিন বাছুরের গলায় আধাফাঁস করে বেঁধে রেখেছিলেন। গরুর চিন্তায় মরিয়ম হাউমাউ করে কেঁদেছে। রহিম শেখের ঘুমের ব্যাঘাত হয়েছে। মুমীন বান্দার ঘুমও ইবাদতের সামিল। মরিয়মকে হুমকি দিয়েছে বেশি বাড়াবাড়ি করলে মুরুব্বীদের ডেকে গ্রাম ছাড়া করবেন। সন্ধ্যায় গরুর বাছুর পেয়ে মরিয়ম চুমোয় চুমোয় ভরিয়ে দিয়েছে। সামনে বড় মেয়ের বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি টাকা পাবে কোথায়! এটা থেকেই আসবে।

ছোটমেয়ে কলেজে যাওয়ার পথে কোন ছেলের বাইকের পেছনে চড়েছিল। করিম শেখ সে খবরও পেয়েছেন। বেগানা বলতে কি কিছু নেই? পুরুষ মানুষ একটা মেয়েকে সাথে নিয়ে কি ঠিক থাকতে পারে। আগে সাইকেলে স্কুল যেত। ছেলেদের সাথে ঢলাঢলি গল্পও করে। মাঝেমাঝে একটা ছোকরা বাড়িতেও আসে। মেয়েটার গানের গলা মধুর। মাঝে মাঝে শিষ দিয়ে গান গায়। এসব হারাম কাজ এই মেয়েরে একটা উচিত সাজা দিতে হবে। একদিন কয়জন মুরব্বী ডাকলেন। সবাই সিদ্ধান্ত নিল মরিয়মের বাড়িতে কোন পুরুষ যেহেতু নেই তাই তার বাড়িতে বেগানা পুরুষের আসা নিষিদ্ধ। আর শাস্তি স্বরূপ ছোটমেয়ের চুল ন্যাড়া ও থু ফেলে থু চাটানো হয়েছে।

মরিয়মদের বাথরুম নেই তেমন। টিনের বেড়া দিয়ে পুরোনো কাপড় দিয়ে ঢাকা। করিম শেখ প্রায়ই গোসলের সময় দ্যাখেন। সবগুলার কি টলটলে নিটোল যৌবন। কচি মাংস অনেকদিন খাওয়া হয়না। সেদিন মরিয়ম গেছে মাঠে। করিম শেখের বউ বাপের বাড়ি। মরিয়মের ছোটমেয়ে গুনগুনিয়ে গান গেয়ে গোসল করছে। করিম শেখ অনেকবারই এই মেয়েকে দেখেছে। ন্যাড়া করার পর ছোটছোট কোঁকড়ানো চুলে আরও কি যে সুন্দর লাগছে। আজ ইশারায় ফিসফিসিয়ে বলেই ফেলল। মেয়েও রাজী দুধে-আলতা সুরমা পরা কি সুন্দর দেখতে মানুষটা। তরিঘরি করে করিম শেখ তাকে ডেকে নিল নিজ বাড়িতে। মিনিটকয়েক পরে তার গোঙানিতে আকাশ বাতাস কেঁপে উঠলো। চিৎকারের শব্দ নেই কারন তার মুখ বাঁধা। মরিয়মের ছোট মেয়ে আদর দিতে দিতে আচ্ছা মত বেঁধে ফেলেছে। অতঃপর কোমরে রাখা ধারালো চাকু বসিয়ে দিয়েছে বিশেষ জায়গায়। পুরো কাটেনি কিন্তু বউএর কাছে আর যেতে পারবে না। আর ঘটনাও কাউকে বলতে পারবে না । ডেটল ওষুধ লাগাতে বলে সে শিষদিয়ে গান গাইতে গাইতে বেড়িয়ে এল; “আহা! কি আনন্দ আকাশে বাতাসে,,,,।

ছবি- সংগ্রহ।

১২১৭জন ১০১৪জন
0 Shares

২৩টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ