বিকেল ৪ টা বেজে ৩০ মিনিট। রিমি একা বসে আছে পার্কের বেঞ্চে রূপমের অপেক্ষায়। খুশি আর উত্তেজনায় হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে ওর। ভাবছে, দেখা হলে কে আগে কথা বলবে? কি বলবে? সব যেন উত্তেজনায় গুলিয়ে যাচ্ছে। সকালে সূর্যের তেজ থাকলেও দুপুর থেকে আকাশে মেঘের আনাগোনা। কালো হয়ে এসেছে আকাশ। যে কোন সময়ই ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়ে যেতে পারে। ওদের ৫ বছরের সম্পর্কে আজই প্রথম সামনা-সামনি দেখা হবে। রূপম অস্ট্রেলিয়ায় থাকে বলে কখনো দেখা হয়নি ওদের। গত পরশু সে দেশে এসেছে। এতদিন ভালোবাসা, ঝগড়া, মান-অভিমান যাই হোক আজ অবশেষে দেখা হবে। কিন্ত রূপম এখনো আসছে না কেন? কিছু বুঝতে পারছে না রিমি। সাড়ে ৪টার কথাই তো বলেছিলো। ভুলে গেলো কি? কি সব আবোলতাবোল ভাবছে বলে হাসি পেলো ওর। খারাপ আবহাওয়ার জন্য পার্কে লোক চলাচল কমে গেছে। এখন একটু ভয় ভয় করতে লাগলো রিমির। রিমির সংগে রূপমের কথা হয়েছে, পরের ছুটিতে কিছুটা গুছিয়ে এসেই রিমির কথা জানাবে বাড়িতে। তবে তার আগ পর্যন্ত ব্যাপারটা গোপনই রাখতে চায় রূপম। কিন্ত সব কিছুর আগে রিমি চায় রূপমকে একটিবারের জন্য দেখতে। যদিও ভিডিও কলে কয়েকবার দেখা হয়েছে ওদের। এসব ভাবতে ভাবতেই দূরে দেখা গেলো কেউ আসছে। দৃষ্টিসীমার মধ্যে আসতেই রিমি চিনতে পারলো রূপমকে। কোথা থেকে একরাশ লজ্জ্বা এসে ভর করলো তার চোখে মুখে। সরাসরি তাকাতেই পারছে না যেন। রুপম বললো,”কেমন আছো? জ্যামের জন্য আসতে একটু দেরি হয়ে গেলো। আকাশের অবস্থা ভালো না, গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি পড়ছে। চলো কাছে কোন রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসি।” রিমি বললো,”চলো”। বলতে বলতেই হঠাত দুজনেই শুনতে পেলো কে যেন ডাকছে “রূপম! এই রূপম! কি করছিস এখানে?” রূপম দেখে ওরই চাচাতো ভাই রনি এগিয়ে আসছে। কিছু ভাববার আগেই রনি বলে,”কিরে কি করছিস এখানে? কে উনি? পরিচিত? চল চল বৃষ্টি পড়ছে তো”। রূপম কিছুক্ষণ চুপ থেকে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলে,”না, কেউ না। চল।” হতভম্ব রিমি দাঁড়িয়ে দেখতে লাগলো দুজনের চলে যাওয়া। বাতাসের সংগে পাল্লা দিয়ে বৃষ্টির বেগ বেড়ে চলেছে। আজ যেন সব ভাসিয়ে নিয়ে যাবে। বৃষ্টির ফোটার সাথে সাথে ভেসে যেতে লাগলো রিমির অশ্রু, আস্থা, বিশ্বাস আর ৫ বছরের অতি যত্নে লালিত সেই ভালোবাসা….
২৪টি মন্তব্য
আবু খায়ের আনিছ
সম্পর্কের মাঝে সময়টা কোন ফ্যাক্টর না, পারস্পরিক বুঝাপড়া, জানাটাই হচ্ছে বড় কথা।
নীহারিকা
জি ভাই, একদম ঠিক। পারষ্পরিক বোঝাপড়া, আস্থা, ভরসা যদি না থাকে তবে সম্পর্ক যত দীর্ঘমেয়াদিই হোক ভেংগে যেতে বাধ্য।
ধন্যবাদ আপনাকে।
নীলাঞ্জনা নীলা
ভালোবাসাকে সম্মান দিতে হয়। এখানে রূপম কিন্তু রিমিকে পরিচয় করিয়ে দিতে পারতো শুধু বন্ধু হিসেবে। কিন্তু রূপম যা করেছে তা চরম অপমানের। একে ভালোবাসা বলা যায়না।
ভালো লিখেছেন নীহারিকা আপা।
নীহারিকা
জি আপা। ইচ্ছে করলে অনেকভাবেই পরিস্থিতি আয়ত্বে আনা যায়। যদি রূপমের মত ছেলেরা ভাবে যে, যে কোন পরিস্থিতিতে নিজের পিঠ বাঁচিয়ে পরে স্যরি বললেই সব অপমান রিমি ভুলে যাবে তাহলে সেটা ওর ভুল ধারণা।
মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ আপা।
নীলাঞ্জনা নীলা
রিমির মতো যদি সব মেয়েরা হতো!
ভালো থাকুন।
মৌনতা রিতু
ওমন রূপমের কপালে ঝাড়ু মারি। লেজ বিশিষ্ট একটা বান্দর ওটা। এমন কিছু পুরুষ আছে স্বামী রূপিও রাতের আড়ালে বৌ এর সাথে তার পিরিত উতলে ওঠে আর বাড়ির সবার সামনে বৌকে মনে করে দাসি।
আমি প্রথমবার যখন শশুরবাড়ি গেলাম উনি আমাকে কি যেন একটু বলেছিলেন সবার সামনে, আমার আবার হঠাৎ রাগ! ওমনি আমিও ওনাকে বলে বসলাম,” খবরদার মুখ ওমন করে কখনোই আমার সাথে কথা বলবে না।” শাশুড়ি আমার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে ছিল। সেই থেকে উনি কারো সামনেই কখনো জোরে কথা বলে না। কারণ, জানে উল্টা শুনতে হবে।
আবারো রূপমের কপালে জুতা মেরে শেষ করলাম।
ভাল থাকবেন
নীহারিকা
আপা, আমি এমন অনেক পুরুষদের দেখেছি যারা তাদের সহধর্মিণী বা প্রেমিকাকে যখন তখন যার তার সামনে অপমান করতে। উনারা মনে করেন মেয়েরা আমার থেকে বেশি বুঝে? পরে হয়তো আবার তাদের মিল হয়ে যাচ্ছে বা মেয়েরা এসবে অভ্যস্ত হচ্ছে বা মেনে নিচ্ছে। কিন্ত সবাই অপমান সহ্য করবে তা কিন্ত নয়। সম্পর্কের বা সহধর্মী/সহধর্মিণী বা প্রেমিক/প্রেমিকার সন্মানের ব্যাপারটা উভয় পক্ষ থেকেই দেখা উচিত।
জুতা মারা পছন্দ হইছে 🙂 আমিও জুতা মারলাম।
নীলাঞ্জনা নীলা
আমিও জুতা মারলাম ওই রূপমকে। 😀
মিষ্টি জিন
খুব সুন্দর মিষ্টি গল্প পড়ছিলাম, মেরুদন্ডহীন কাপুরুষ রূপম দিল মাথাটা গরম করে।
রিমির সাথে ওর ভাইর পরিচয় করিয়ে দিলে কিএমন দোষ হোত!!
গল্প ভালো হয়েছে আপু।
নীহারিকা
সে তো আমিও বুঝলাম না আপা। এমন অপমান কিভাবে করতে পারলো সে?
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ আপা।
ছাইরাছ হেলাল
বেশ সুন্দর হয়েছে,
পাঁচ বছরের ভালোবাসা রনির এক ডাকেই শেষ!!
ভালোবাসা ভাল-না।
নীহারিকা
হুম, এক ডাকেই শেষ।
ঠিকই বলেছেন, ভালোবাসা ভালো না। ক্যান যে মানুষ ভালোবাসে তাই বুঝলাম না 🙂
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ভাই।
প্রহেলিকা
প্রথমে ভেবেছিলাম রূপম আসবেই না। পরে এলো বটে তবে মনে হচ্ছে না এলেই বোধহয় ভালো ছিল।
নীলা অপার কথাটা ভালো লেগেছে, ভালোবাসাকে সম্মান দিতে হয়। আসলেই তা। পরিস্থিতি অনেক সময় প্রতিকূলে হয় তবুও যে ভালবাসার সম্মানটা অক্ষুন্ন রাখতে পারে ভালবাসার অধিকার তারই রয়েছে।
কবি অবশ্য বলেছে, ভালবাসা ভাল না।
নীহারিকা
যিনি ভালোবাসা বা ভালোবাসার মানুষকে সন্মান দিতে জানেন না তার আসলে ভালোবাসারই অধিকার নেই।
ধন্যবাদ আপনাকে।
শুন্য শুন্যালয়
কী অদ্ভুত মানুষ! এরা আবার পরে হাতে পায়ে ধরে বোঝাবে কেন সে এমন করলো। আর অনেক মেয়ে বুঝবেও তা কিন্তু এই চরম অসম্মান কেউই কোনদিন ভোলেনা। ঠিকই জ্বলতে থাকে।
ভালো লাগলো গল্পটা। আমিও দিলাম ঝাড়ু রূপম রে 🙂
নীহারিকা
এমন রূপমদের ঝাড়ুর উপরেই থাকা উচিত। 🙂
যে কিনা মানসন্মানের তোয়াক্কা করে না তার ঝাড়ুর মাইরই খাওয়া উচিত।
তোমাকে অনেক ধন্যবাদ শুন্য।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
সম্পর্কটা ছিলো ডিজিটালে তাই ভিত ততটা শক্ত নয়।সুন্দর হয়েছে অনুগপ্লটি।
নীহারিকা
হবে হয়তো!
ডিজিটাল প্রেম হয়তো এমনই হয়।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ভাই।
ব্লগার সজীব
গল্পটির এমন সমাপ্তি হবে বুঝতেই পারিনি। বিচ্ছেদ আসলে ভাল লাগেনা আমার। যে দায়ী তাঁকে ইচ্ছে মত পিটাতে পারলে ভাল লাগত।
ভাল লেগেছে গল্পটি।
নীহারিকা
বিচ্ছেদ কারোরই ভালো লাগে না ভাই। কিন্ত ছোট বড় ভুল, অবহেলা, অপমানেই শেষ হয়ে যায় সম্পর্ক।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।
মেহেরী তাজ
এটা কি হইলো????
এটা কিছু হইলো?
আস্থা, ভালোবাসা, বিশ্বাস এর পরেও থাকা উচিৎ??
নীহারিকা
আমিও চিন্তা করছি, এটা কি হলো ;?
এরপর সবকিছুর সাথে ভালোবাসা গায়েব।
আস্থা, ভালোবাসা থাকার প্রশ্নই আসে না।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ তোমায়।
জিসান শা ইকরাম
এমন রূপম থেকে দূরে থাকা উচিত।
ভাল লিখেছেন।
নীহারিকা
ধন্যবাদ আপনাকে।