আস্থা (অণুগল্প ২)

নীহারিকা ১২ মার্চ ২০১৭, রবিবার, ১১:৫৫:৪১অপরাহ্ন গল্প ২৪ মন্তব্য

বিকেল ৪ টা বেজে ৩০ মিনিট। রিমি একা বসে আছে পার্কের বেঞ্চে রূপমের অপেক্ষায়। খুশি আর উত্তেজনায় হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে ওর। ভাবছে, দেখা হলে কে আগে কথা বলবে? কি বলবে? সব যেন উত্তেজনায় গুলিয়ে যাচ্ছে। সকালে সূর্যের তেজ থাকলেও দুপুর থেকে আকাশে মেঘের আনাগোনা। কালো হয়ে এসেছে আকাশ। যে কোন সময়ই ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়ে যেতে পারে। ওদের ৫ বছরের সম্পর্কে আজই প্রথম সামনা-সামনি দেখা হবে। রূপম অস্ট্রেলিয়ায় থাকে বলে কখনো দেখা হয়নি ওদের। গত পরশু সে দেশে এসেছে। এতদিন ভালোবাসা, ঝগড়া, মান-অভিমান যাই হোক আজ অবশেষে দেখা হবে। কিন্ত রূপম এখনো আসছে না কেন? কিছু বুঝতে পারছে না রিমি। সাড়ে ৪টার কথাই তো বলেছিলো। ভুলে গেলো কি? কি সব আবোলতাবোল ভাবছে বলে হাসি পেলো ওর। খারাপ আবহাওয়ার জন্য পার্কে লোক চলাচল কমে গেছে। এখন একটু ভয় ভয় করতে লাগলো রিমির। রিমির সংগে রূপমের কথা হয়েছে, পরের ছুটিতে কিছুটা গুছিয়ে এসেই রিমির কথা জানাবে বাড়িতে। তবে তার আগ পর্যন্ত ব্যাপারটা গোপনই রাখতে চায় রূপম। কিন্ত সব কিছুর আগে রিমি চায় রূপমকে একটিবারের জন্য দেখতে। যদিও ভিডিও কলে কয়েকবার দেখা হয়েছে ওদের। এসব ভাবতে ভাবতেই দূরে দেখা গেলো কেউ আসছে। দৃষ্টিসীমার মধ্যে আসতেই রিমি চিনতে পারলো রূপমকে। কোথা থেকে একরাশ লজ্জ্বা এসে ভর করলো তার চোখে মুখে। সরাসরি তাকাতেই পারছে না যেন। রুপম বললো,”কেমন আছো? জ্যামের জন্য আসতে একটু দেরি হয়ে গেলো। আকাশের অবস্থা ভালো না, গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি পড়ছে। চলো কাছে কোন রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসি।” রিমি বললো,”চলো”। বলতে বলতেই হঠাত দুজনেই শুনতে পেলো কে যেন ডাকছে “রূপম! এই রূপম! কি করছিস এখানে?” রূপম দেখে ওরই চাচাতো ভাই রনি এগিয়ে আসছে। কিছু ভাববার আগেই রনি বলে,”কিরে কি করছিস এখানে? কে উনি? পরিচিত? চল চল বৃষ্টি পড়ছে তো”। রূপম কিছুক্ষণ চুপ থেকে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলে,”না, কেউ না। চল।” হতভম্ব রিমি দাঁড়িয়ে দেখতে লাগলো দুজনের চলে যাওয়া। বাতাসের সংগে পাল্লা দিয়ে বৃষ্টির বেগ বেড়ে চলেছে। আজ যেন সব ভাসিয়ে নিয়ে যাবে। বৃষ্টির ফোটার সাথে সাথে ভেসে যেতে লাগলো রিমির অশ্রু, আস্থা, বিশ্বাস আর ৫ বছরের অতি যত্নে লালিত সেই ভালোবাসা….

১জন ১জন
0 Shares

২৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ